Connect with us

বাংলাদেশ

নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা

Published

on

নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা

দেশের বৃহত্তম এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের প্রধান; জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নতি এবং অগ্রগতিতে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী  এবং পরবর্তী যেকোনো সময়ের তুলনায় এগিয়ে গেছে বহুগুণে। শেখ হাসিনা যথার্থই আমাদের গৌরবজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকবর্তিকা, নারী-পুরুষ বিভেদে সমগ্র জাতিকে একবিংশ শতাব্দীতে সম্মানজনক এবং মর্যাদার পরিচয়ে উত্তরণের কাণ্ডারি। তার নেতৃত্বের জীয়নকাঠির স্পর্শে সমগ্র জাতি আজ নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা, আশা-আকাঙখা, স্বপ্ন ও প্রেরণায় জেগে উঠেছে।

নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা
কৃতি নারীদের বেগম রোকেয়া পদক প্রদান, ছবি :সংগৃহীত

জননেত্রী শেখ হাসিনার হাজারো সাফল্যের মধ্যে অন্যতম হয়ে আছে নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর ক্ষমতায়ন বলতে, একজন নারীর পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ জীবনমান অর্জন- যার ভিত্তিতে নারী তার একক স্বাধীনতায় নিজের জীবনে অন্য কারো মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজ যোগ্যতায় জীবনকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে। আমাদের বর্তমান সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন বলতে- শিক্ষাব্যবস্থা, একটি চাকরীর যোগান, নিরাপত্তা এবং জীবনমান বহাল রাখার অন্যান্য মৌলিক অধিকার প্রদান করাকে বুঝায়।

নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা
ছবি : সংগৃহীত

নারীর ক্ষমতায়নের বলে বাংলাদেশের নারীরা এখন সাবলম্বী হয়ে উঠেছে, আত্মবিশ্বাসী এবং আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠেছে বহুগুণে। নিজেদের লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে প্রস্ফুটিত করে জীবনকে আপন মহিমায় মহিমান্বিত করে তুলছে।


নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা সরকার যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য- সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যথাযথ নীতি গ্রহণ এবং উন্নয়নের মূল ধারায় মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করা, নারী শিক্ষা প্রসারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান, এবং অনগ্রসরদের অবস্থার উন্নতির জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ, নারী সমাজের কল্যানের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন, রাজনীতিতে নারীদের অবস্থার সম্প্রসারণ ইত্যাদি।

নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা

“নারী জাতির উন্নয়ন জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত”- এই ধারাকে অব্যহত রেখে “জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১”- এর তিনটি ভাগে সকল ক্ষেত্রে নারীর সমসুযোগ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নীতির প্রণয়ন করেছেন শেখ হাসিনা সরকার। এদের মধ্যে রয়েছে- নারীর মানবাধিকার ও সংবিধান আইন, পারিবারিক সহিংসতা আইন, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, নারীনির্যাতন প্রতিরোধ আইন, কন্যা শিশুর উন্নয়ন, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, নারীর প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। উল্ল্যেখযোগ্য এই পদক্ষেপগুলো ছাড়াও নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো অনেক পরিকল্পনা ও উদ্যেগ গ্রহণ করেছেন।

নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে কৃতি নারীদের সাথে প্রধানমন্ত্রী, ছবি : সংগৃহীত

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নারীদের নিজ যোগ্যতা এবং প্রতিভার বলে বিশ্বের বুকে নিজেকে নতুনভাবে তুলে ধরার ক্ষমতাকে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করেছেন। গ্রামীণ নারী, নারী উদ্যেক্তা, মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থা, চাকরীক্ষেত্রে নারীদের অবাধ বিচরণ, রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং অন্যান্য প্রশাসনিক সেক্টরে নারীদের সাফল্যের নমুনা ক্রমশই স্পষ্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সামাজিক নিরাপত্তা উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মেইনস্ট্রিমে নিয়ে আসার জন্য বহুমুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, যেমন- ভিজিএফ, ভিজিডি, শিশু মৃত্যুহার রোধ, মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান, নারী ভাতা, গ্রামের নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের সুবিধা ইত্যাদি।

বর্তমানে ৩০ লাখের বেশি নারী কেবল পোশাক কারখানায় কাজ করে নির্বাহ করতে পারছে তাদের জীবিকা। রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নকে আরও জনমুখী করতে সরকার জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০টি করেছেন। স্থানীয় পর্যায়ে নারীদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে মনোনয়ন দেয়ার মাধ্যমে। প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সরকারের শেষ পর্যায়ের ইউনিয়ন পরিষদেও নির্বাচনে ১২ হাজারের বেশি নারী জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। বিশ্ব লৈঙ্গিক বৈসাদৃশ্য রিপোর্ট ২০১২ অনুযায়ী, বিশ্বে নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্রমে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৮ম স্থানে।

নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা
ছবি সংগৃহীত

পারতপক্ষে, নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনার অবদান বলে শেষ করবার নয়। নারী শিক্ষা ও নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রগতি অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান “গ্লোবাল সামিট অব উইমেন”- এর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্জন করেছেন “গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ”। এছাড়াও জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদের সভায় নারীর ক্ষমতায়নের জন্য “প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন” এবং “এজেন্ট অব চেঞ্জ” এ্যাওয়ার্ড- এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আর নারীর ক্ষমতায়নকে আরও বেগবান করেছেন তিনি।

নিজেদের লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে প্রস্ফুটিত করে জীবনকে আপন মহিমায় মহিমান্বিত করে তুলছে।
নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা সরকার যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য- সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যথাযথ নীতি গ্রহণ এবং উন্নয়নের মূল ধারায় মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করা, নারী শিক্ষা প্রসারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান, এবং অনগ্রসরদের অবস্থার উন্নতির জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ, নারী সমাজের কল্যানের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন, রাজনীতিতে নারীদের অবস্থার সম্প্রসারণ ইত্যাদি।

“নারী জাতির উন্নয়ন জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত”- এই ধারাকে অব্যহত রেখে “জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১”- এর তিনটি ভাগে সকল ক্ষেত্রে নারীর সমসুযোগ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নীতির প্রণয়ন করেছেন শেখ হাসিনা সরকার। এদের মধ্যে রয়েছে- নারীর মানবাধিকার ও সংবিধান আইন, পারিবারিক সহিংসতা আইন, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, নারীনির্যাতন প্রতিরোধ আইন, কন্যা শিশুর উন্নয়ন, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, নারীর প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। উল্ল্যেখযোগ্য এই পদক্ষেপগুলো ছাড়াও নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো অনেক পরিকল্পনা ও উদ্যেগ গ্রহণ করেছেন।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নারীদের নিজ যোগ্যতা এবং প্রতিভার বলে বিশ্বের বুকে নিজেকে নতুনভাবে তুলে ধরার ক্ষমতাকে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করেছেন। গ্রামীণ নারী, নারী উদ্যেক্তা, মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থা, চাকরীক্ষেত্রে নারীদের অবাধ বিচরণ, রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং অন্যান্য প্রশাসনিক সেক্টরে নারীদের সাফল্যের নমুনা ক্রমশই স্পষ্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সামাজিক নিরাপত্তা উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মেইনস্ট্রিমে নিয়ে আসার জন্য বহুমুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, যেমন- ভিজিএফ, ভিজিডি, শিশু মৃত্যুহার রোধ, মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান, নারী ভাতা, গ্রামের নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের সুবিধা ইত্যাদি। বর্তমানে ৩০ লাখের বেশি নারী কেবল পোশাক কারখানায় কাজ করে নির্বাহ করতে পারছে তাদের জীবিকা।

রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নকে আরও জনমুখী করতে সরকার জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০টি করেছেন। স্থানীয় পর্যায়ে নারীদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে মনোনয়ন দেয়ার মাধ্যমে। প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সরকারের শেষ পর্যায়ের ইউনিয়ন পরিষদেও নির্বাচনে ১২ হাজারের বেশি নারী জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। বিশ্ব লৈঙ্গিক বৈসাদৃশ্য রিপোর্ট ২০১২ অনুযায়ী, বিশ্বে নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্রমে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৮ম স্থানে।

নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা

পারতপক্ষে, নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনার অবদান বলে শেষ করবার নয়। নারী শিক্ষা ও নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রগতি অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান “গ্লোবাল সামিট অব উইমেন”- এর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্জন করেছেন “গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ”। এছাড়াও জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদের সভায় নারীর ক্ষমতায়নের জন্য “প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন” এবং “এজেন্ট অব চেঞ্জ” এ্যাওয়ার্ড- এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আর নারীর ক্ষমতায়নকে আরও বেগবান করেছেন তিনি।

দেশ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সত্তর দশকের প্রথমভাগ থেকেই তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার নারী উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য পিতার সুযোগ্য সন্তান হয়ে নিরলস প্রচেষ্টায় নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে শিক্ষিত- সুন্দর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তার এই অসামান্য অবদান নারীদের আরও আত্মপ্রত্যয়ী এবং দেশের জন্য উদ্যমী হওয়ার অনুপ্রেরণা দিবে নিঃসন্দেহে।

নুসরাত জাহান

– ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, ৪র্থ বর্ষ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

বিংশশতকের নব্বয়ের দশকে জন্ম হয়েছিলো যমুনা নদীর শহর টাঙ্গাইলে এবং স্থায়ী ঠিকানা ভৈরব নদীর শহর যশোরে। জলের ধারে জন্ম, জলেই স্থায়িত্ব; এদিক থেকে বলা যায় জলের জাতক। বাংলাদেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ শহর ঘুরে প্রবাহের মত বেরে ওঠা। । ছোট গল্প-সাহিত্য বোঝার পর থেকেই কথাসাহিত্য এবং সংগ্রামী মূলক লেখা পড়ার প্রতি ঝোকটা বেশি । জীবনের প্রতিটি ছোট ছোট মূহূর্ত নিয়েই সাজানো যায় কবিতা। আবার একগুচ্ছ ছোটবড় মূহূর্ত আর কল্পনা মিলিয়ে রূপ নেয় উপন্যাস। এইবোধ থেকেই হাতে কলম ধরা। ভীষণ কল্পনাপ্রবণ জীবন, বাস্তবের পাশাপাশি কল্পনায় প্রিয় মানুষদের সাথে কথোপকথনে সময় কাটাতে পছন্দ বেশি। বাতাসে কবিতার ঘ্রাণে কবিতাপ্রেমী হয়ে সময়ের সাথে কল্পনা এবং বাস্তবের মাঝামাঝি অনুভূতি নিয়েই আপনমনে জন্ম নিয়েছে কবিতার বুননশিল্প। প্রকাশিত হয়েছে প্রথম কবিতাগ্রন্থ "একজন পাণ্ডুলিপি বলছি"। প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে পড়াশুনা, লেখালেখির নেশা ধমনীর শিরা ও উপশিরায়। প্রকৃতিপ্রেম ও কবিতার মিশেলেই একজন সাদামাটা মানুষ।

বাংলাদেশ

দেশীয় চিনিশিল্পের পথিতযশা অবস্থা

Published

on

দেশীয় চিনিশিল্পের পথিতযশা অবস্থা

 

পূর্বের অবস্থা যা ই হোক না কেন এটার বর্তমান অবস্থা যে খুব সোচনীয় তা আমরা আঁচ করতে পারছি খুব ভালো ভাবে এই আলোচনার মাধ্যমে। আবার আমরা এটাও জানতে পেরেছি যে চিনি শিল্পের এই মন্দাবস্থা সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়ে জনসাধারণের সহানুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যদিও এই করুন অবস্থার জন্য দায়ী মূলত শিল্পের সাথে জড়িত নীতিনির্ধারকরা।

আমরা জেনেছি যে বাংলাদেশে সরকারী ১৫ ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২ টি চিনিকল রয়েছে, এবং ৫ টি চিনি পরোশোধনাগার রয়েছে। এই শিল্পের সাথে ১২.৫ লক্ষ পরিবারের প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকা জড়িত রয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের আখ চাষ এবং চিনি আহরণের হার খুবই কম। দেশে প্রতি একরে আখ উৎপাদন হয় মাত্র ১৫ মেট্রিক টন যা হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে ৭০ মেট্রিক টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। আবার চিনি আহরিত হয় মাত্র ৭.৪ % যা অস্ট্রেলিয়া ১৫.৭ % পর্যন্ত হয়ে থাকে।

দেশীয় চিনিশিল্পের পথিতযশা অবস্থা

চিনিশিল্প

চিনি শিল্পে ধস মোটামুটি শুরু হয়েছে ২০০০ সালের পরবর্তী সময় থেকে। অথচ ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে কিন্তু বাংলাদেশে মোট আখ উৎপাদিত হয়েছিলো ২০ লাখ ৯৬ হাজার ২০০ মেট্রিক টন এবং চিনি উৎপাদন হয়েছিলো ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬২ মেট্রিকটন। যা প্রায় ৮.৭৭ %। কিন্তু ২০০০-০১ মৌসুমে সেটা কমে হয় ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৬ মেট্রিকটন এবং চিনি আহরিত হয় ৯৮ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন। যা কমে হয় ৭.১১ %।

মূলত জলবায়ু পরিবর্তন,তুলনামূলক কম সূর্যালোক ঘণ্টা, আগাম আখ চাষের জমির পরিমাণ হ্রাস, নিচু জমিতে আখ চাষ, উচ্চ চিনি আহরণযুক্ত ইক্ষু জাতের অভাব, অপরিপক্ক আখ মাড়াই, পুরাতন যন্ত্রপাতি ও মিলের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কমতে থাকে চিনি আহরণ হার ও মোট চিনি উৎপাদন।

২০১০ সাল পরবর্তী সময়ে চিনি আহরণ হার ও মোট চিনি উৎপাদন হটাৎ এমন খাপছাড়া কেন হয়ে যাওয়ার পেছনে যে কয়েকটি কারণ মূখ্যভাবে দায়ী তা হলো ‘ চাষীরা আখ বিক্রির টাকা সময় মতো না পাওয়া, আখের বদলে অন্য ফসল চাষে তুলনামূলক বেশী লাভ, চিনি মিল গুলোর কাছে চাষীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আটকে থাকা, পাওয়ার ক্রাশারের আগমন, এবং সরকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল আচরণ না করা।

চিনি উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে রয়েছে মানসন্মত আখের অভাব, মাটি ও আবর্জনা যুক্ত আখ মিলে সরবরাহ, ধারণ ক্ষমতার চাইতে বেশি আখ মাড়াই করে রস ড্রেনে ফেলা, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্লাটফর্মে ও মাঠে আখ শুকানো, আখ থেকে রস ঠিকমত বের না করা, সর্বপরি দক্ষ জনবলের অভাবে চিনি আহরণে ব্যাপক গড়মিল তৈরি হচ্ছে।

শুধু চিনি উৎপাদনেই লোকশান হচ্ছে না। অদক্ষ জনবল, পরিকল্পনার অভাব, নিম্নমানের আখ চাষ, ক্রয় বিক্রয়ে দুর্নীতি, অপ্রয়োজনীয় খরচ, ব্যায়ের খাত বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অনিয়ম যেন বাসা বেঁধে বসেছে চিনিকলগুলিতে।ফলে কিছু কিছু কর্মকর্তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটলেও চিনিকলগুলির এবং শ্রমিকদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি।

চিনি শিল্প একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানিকারী পণ্য হতে পারে এবং কতগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাংলাদেশ এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করতে পারে, যেমনঃ কারখানাগুলির আধুনিকীকরণ, পূর্ণমাত্রায় আখ উৎপাদন, সহজশর্তে আখচাষীদের ঋণ প্রদান, রিফাইনারিগুলিকে পূর্ণমাত্রায় চিনি উৎপাদনের জন্য অনুমতি প্রদান, আখ চাষে ও চিনি উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ ব্যবহার, অব্যবস্থাপনা প্রতিরোধ, মিল কর্মচারীদের অপকর্ম থেকে বিরত রাখা এবং চিনিকলগুলি থেকে উৎপাদিত উপজাত পণ্যের (by-products) সঠিক ও ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করা।

লিখেছেনঃ
মারুফুজ্জামান
৪৬ তম আবর্তন
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

বাংলাদেশ

জাতির জনকের শাসনকালঃ দেশনীতি ও বিদেশনীতি

Published

on

Bangabandhu-Sheikh-Mujibur-Rahman
আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে দেখেছি, যিনি জ্ঞানে ও নেতৃত্বে হিমালয় সম” -বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর এই বাণী ই জাতির জনক সম্পর্কে অজানা বিষয় জানতে কৌতূহলী করে তোলবে যেকোনো মুজিবপ্রেমী ব্যাক্তি কে। বঙ্গবন্ধু সোনার  বাংলা  গরে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সময় পান নি, কিন্তু সদ্যস্বাধীন দেশটি নিয়ে তাঁর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফলশ্রুতিতেই আজকে আমাদের এই দেশ বিশ্বের অনেক দেশের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি প্রিয় নেতা পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১১ জানুয়ারি অস্থায়ী সংবিধান আদেশের মাধ্যমে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার সূত্রপাত এবং মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার কাঠামো প্রবর্তন করেন। আজকের এই দিনে স্বল্পসময়ে জাতির জনকের গৃহীত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক  বিভিন্ন পরিকল্পনা, পররাষ্ট্র নীতি সহ সংক্ষেপে তাঁর  শাসন কাল আলোকপাত করা হলো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের প্রিয় এই নেতা খুব অল্প সময়েই আলোচিত উঠেন তাঁর বন্ধুত্বপূর্ন আচরণ,বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সময়োপযোগী  সিদ্ধান্ত দক্ষতার মাধ্যমে। এই স্বল্প সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠন যেমন জাতিসংঘ, ওআাইসি সহ ১২৬ দেশের স্বীকৃতি এনে দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র নেতার সান্নিধ্য লাভ করতে পেরেছিলেন। তাছাড়াও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বেসামরিক  মুক্তিযোদ্ধাদের নিরস্ত্রীকরণ, অবাঙালিদের রেখে যাওয়া শিল্প কারখানায় দেশের জনগণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণ, ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা,স্বীকৃতি ও সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা করা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু অসামান্য অবদান রেখে গিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশ্ব নেতাদের ক্রোধের ফল সরূপ সৃষ্ট  ভয়াবহতা অনুধাবন, পাকিস্তানের শাসন,নির্যাতনের বিরুদ্ধ আন্দোলনের সম্মুখযোদ্ধা  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়নে উদ্বুদ্ধ করে। সকল দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে প্রিয় বাংলা কে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হবে হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাইতো তিনি ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি গ্রহন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী ভারতের সাথে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব স্থাপন করেন বিপরীত দিকে তাঁর  গৃহীত কৌশলপূর্ণ নীতির কারণে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতাকারী চায়না আজকের বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম সহযোগী হয়ে উঠেছে।মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার বিরোধী ভূমিকা সত্ত্বেও ১৯৭৪ সালের ১ অক্টোবর আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড  আর ফোর্ডের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে মিটিং করেন।১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত নিরপেক্ষ আন্দোলন এর শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তিতে ন্যামের সদস্য রাষ্ট্রদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে তাদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহন করেন। পরবর্তীতে তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত কূটনৈতিক কৌশল সফল হয়। ফলে ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভের মাধ্যমে প্রিয় দেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অঙ্গনে নিজস্ব স্থান তৈরি করে নেয়।এবং ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু যা সারা বিশ্বের অধিকারহারা শোষিত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman in United Nations নব্যস্বাধীন দেশ বিধায় তখনো রাষ্ট্রের সামাজিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান ছিলো নানাবিধ অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিধান। অভ্যন্তরে ছিলো পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের মিত্রদের বিচারের দাবী অন্যদিকে দেশের স্বীকৃতি অর্জনে পাকিস্তানের মিত্র দেশগুলোর বিরোধিতা। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের বিপ্লবী মনোভাব জাগ্রত করতে সহায়তা করে। স্বাধীনতা অর্জনের ১ বছরের মধ্যে ই আওয়ামী লীগের ছাত্র সমাজের একাংশ গড়ে তোলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল(জাসদ)। দ্বিধা বিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি গুলো দেশে এনজিও এর মাধ্যমে সহযোগিতা  কার্যক্রম চালু রাখে যা পরবর্তী তে দেশে প্রধান শক্তি হয়ে উঠে। আওয়ামী লীগের ওপর ছিল দেশ পুনর্গঠনের সামগ্রিক চাপ কিন্তু কাজের ফলাফল ছিল ধীর।  এই সময়ে অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ ওঠে এবং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রবল হয়ে উঠে যা উগ্রপন্থী যুব নেতৃত্ব  ও মধপ্যন্থী মতাদর্শে বিভক্ত হয়ে পড়ে।এ পরিস্থিতিতে সরকার পাকিস্তানি সেনাদের মুক্তি দান করে ও আওয়ামীপন্থী বিশ্বাসীদের নিয়ে উগ্র পন্থীদের দমনে রক্ষী বাহিনী গঠন করে। নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র থেকে আমরা জানি,প্রতিটি ক্রিয়ার ই সমান ও বিপরীত ক্রিয়া থাকে,তেমন জাতির জনকের শাসন কালেরও আলোচনা ও সমালোচনা রয়েছে, তাই বলে একটি রাষ্ট্রের জন্ম যার হাত ধরে তাঁর পরিবারের এমন নৃশংস হত্যাকান্ড কখনো গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman family photo 15 august দেশগঠনে অকৃত্রিম প্রচেষ্টা কারী এই রাষ্টনায়কই কতিপয় সেনাবাহিনীর অফিসারের রোষের কবলে পড়ে প্রিয় পুত্র শেখ রাসেল,২ পুত্রবধূ, সকল বিপদে সাহস প্রদানকারী স্ত্রী সহ পরিবারের আরো সদস্য নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। প্রিয় বাংলার শোষিত জনগণের কল্যাণে আত্ননিয়োগকারী রাষ্ট্র নায়ক,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজ তম মৃত্যুবার্ষিক,তাঁর প্রতি জানাই পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

বাংলাদেশ

জ্ঞানহীন এক জাতির করোনা কাহিনী

Published

on

জ্ঞানহীন এক জাতির করোনা কাহিনী
১.লেখার শুরুতে একটা হাসির গল্প বলে নিতে চাই। করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলেও চালু রাখতে হচ্ছে ব্যাংকিং ব্যবস্থা। এক ব্যাংক কর্মকর্তা আর গ্রাহকের কথোপকথন হচ্ছে। গ্রাহকটি ব্যাংকে মোটামুটি অংকের টাকা তুলতে এসেছেন। কর্মকর্তাটি গ্রাহককে প্রশ্ন করলেন সবকিছু বন্ধের মধ্যে তিনি কেন টাকাগুলো তুলছেন? গ্রাহক জানালেন, লকডাউনে বাসায় বসে থাকতে গিয়ে বিরক্ত তিনি। বাইরের পরিবেশ দেখতে আর বিরক্তি কাটাতে ব্যাংকে চলে এসেছেন । হাতে চেক বই দেখে রাস্তায় পুলিশও তাকে কিছু বলেন নি। কর্মকর্তাটি গ্রাহকের এমন বক্তব্যে হতবাক হয়ে গেলেন। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে টাকাগুলো গুনে নিয়ে দ্রুত সেই লোকটিকে বাড়ি চলে যেতে বললেন কর্মকর্তাটি।লোকটি আরো অবাক করে দিয়ে তাকে জানালেন, গোনার দরকার নেই। টাকাগুলো যেভাবে আছে সেভাবেই কাল এসে জমা দিয়ে যাবেন তিনি। ব্যাংকগুলো খোলা রাখায় লকডাউনের বিরক্তি কাটাতে সুবিধা হয়েছে তার। ব্যাংকেও আসা হয় বাইরের পরিস্থিতিও নিজ চোখে দেখা যায়! এই গল্পটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে আমার নজরে আসে। সারাদেশের কার্যত লকডাউনের মধ্যে ব্যাংক খুলে রাখায় ক্ষুব্ধ ব্যাংকিং খাতে কাজ করা মানুষেরা। তাদেরই একজন গল্পটি ছড়িয়ে দিয়েছে৷ আর তাঁর কল্যাণেই এমন নিদারুণ হাস্যরসের গল্পটি জানতে পেলাম। আশা করছি গল্পটি মিথ্যা হবে। বৈশ্বিক বিপর্যয়ের এই সময়টাতে কোনো মানুষ গল্পের গ্রাহকের মতো কাজ করবে না বলে বিশ্বাস করতে চাই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই আরেকটা ভিডিও দেখে এই জাতিকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো। একজন পুলিশ সদস্য একা একা মাইকিং করে এই করোনা বিপর্যয়ের সময়টাতে সবাইকে ঘরে থাকার আহবান জানাচ্ছেন। আশেপাশের সবাই তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে সে কেনো হাতে লাঠি নিয়ে আসে নি! লাঠি না নিয়ে কেন সে মানুষকে বোঝাতে আসলো সেটা অনেকের মনে দুঃখ দিয়েছে। আসলেই কি আমরা এমন জাতি যাদের পিঠে লাঠির আঘাত না পড়লে নিজেদের ভালোটুকু বুঝবো না?
জ্ঞানহীন এক জাতির করোনা কাহিনী

২.

আমি যে মুহুর্তে এই লেখাটা লিখছি তখন সারাবিশ্বে করোনায় মারা গেছেন এক লক্ষ মানুষ। পুরো পৃথিবীটাই এক প্রকার ঘরে বন্দী অবস্থায় আছে। এই অবস্থায় সবাই মিলে ঘরে থাকার ফলে প্রকৃতির ওপর প্রভাব পড়েছে অসাধারণ। বাতাসে দূষণ কমে গেছে, আশপাশ পরিষ্কার হয়েছে। দীর্ঘদিন পর অনেকটা দূর থেকে নাকি হিমালয় দেখা যাচ্ছে, কক্সবাজারে ডলফিন ফিরে এসেছে। নেটিজেনরা ( ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অংশ হওয়া মানুষদের এই শব্দ দিয়ে অভিহিত করা হয়) মজা করে বলছে, প্রকৃতির এত কিছু ফিরে আসার মধ্যে মানুষের জীবনে হারিয়ে যাওয়া প্রেমিক/প্রমিকারাও হয়তো ফিরে আসবে! তবে জীবনে পুরনো প্রেমিক/প্রেমিকারা ফিরে না আসলেও সমাজের পুরনো একদল মানুষ কিন্তু ঠিকই ফিরে এসেছে। তারা হচ্ছেন ত্রাণের চাল চোর সম্প্রদায়। এই মুহুর্তে দেশের মোট করোনা শনাক্ত মানুষের চেয়ে সরকারি ত্রাণের চাল চুরি করা মানুষের সংখ্যা বেশি। সারাবিশ্ব যেখানে মৃত্যুভয়ে থমকে গেছে সেখানে আমাদের চাল চোরেরা পুরনো প্রতাপে খবরের শিরোনাম হচ্ছে। সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুহার বাংলাদেশে৷ কোভিন ১৯ শনাক্ত মানুষের চেয়ে নিশ্চিত ভাবে এই রোগে মৃতের সংখ্যার তারতম্য খুব বেশি নয়৷ এমন একটা ভয়ানক সময়ে দাঁড়িয়ে এইসব চাল চোরদের জন্য আমার কেন জানি মায়া হয়! স্রষ্টা না করুক করোনা ভাইরাসেই যদি চাল চোরেরা মারা যায় তবে চুরিকরা এসব চালগুলোর জন্য তাদের আফসোস হবে। মৃত্যুর পরেও তাদের আফসোসের কথা ভেবেই আমার খারাপ লাগছে।

জ্ঞানহীন এক জাতির করোনা কাহিনী
৩.

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকটি ভিডিও আমার বেশ মনোযোগ আকর্ষণ করলো। সেই ভিডিওতে দেখলাম এক ইউপি সদস্য করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ নিতে আসা কিছু বেরোজগার মহিলার ওপর চোটপাট করছে। তাঁর চোটপাট এবং হুংকারের কারণটা জেনে আমি নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম। আহারহীন মানুষদের তিনি জোর গলায় শাসাচ্ছেন এবং ত্রাণ দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। কারণ ত্রাণ সহযোগিতা তিনি তাদেরকেই করবেন যারা নাকি তার নিজ রাজনৈতিক দলের অনুসারী! ভিডিওটা দেখে মর্মাহত হলাম। মনে মনে বিশ্বাস করতে চাইলাম আমার দেখাটা যেন ভুল হয়। করোনা ভাইরাস কোন দল চেনে না। সে চেনে মানব দেহ। তাঁর সংস্পর্শে যে শরীরটা আসবে তাকেই সে আক্রমণ করবে৷ করোনার আক্রমণ থেকে যদি নিজেদের নিরাপদ রাখতে হয় তবে মানুষকে ঘরে রাখতে হবে৷ কিন্তু ঘরে খাবার না দিয়ে তো আপনি তাদের ঘরে রাখতে পারবেন না। কারণ কষ্টকর সত্য হচ্ছে এই যে পেটের ক্ষুধা করোনা ভয় মানে না। সারাবিশ্বকে থামিয়ে দিলেও করোনা মানুষের পেটের ক্ষুধা থামাতে পারে নি। আর সেই ক্ষুধার যন্ত্রণায় প্রথমে বাইরে বের হবে আয়হীন মানুষ, তারপর বের হবে নিম্ন আয়ের মানুষ, তারপর স্বল্প আয়ের। এভাবে করে ঘরে যাদের খাবার কিছুই থাকবে না তারা সবাই রাস্তায় বের হয়ে যাবে৷ আর বাস্তবতা হচ্ছে এই করোনা আক্রমণ থেকে নিজে বাঁচতে হলে অন্যদের নিয়েও বাঁচতে হবে। কারণ এই ভাইরাসটি কেবলমাত্র তখনই থামবে যখন সংক্রমণের জন্য একটি মানবদেহও আর সে খুঁজে পাবে না। আর মানবদেহগুলোকে যদি ভাইরাস থেকে দূরে রাখতে হয় তবে সেগুলোর পেটের ক্ষুধার সংস্থান করাও আবশ্যক। মানুষদের খাবারের দুঃশ্চিন্তা নির্মুল করে বাইরের সমাজ থেকে দূরে রাখতে হবে। কিন্তু সেই চিন্তা দূর করার পদক্ষেপে যদি অতিউৎসাহী এসব ইউপি সদস্যদের উপস্থিতি বেশি হয়ে দাঁড়ায় তখন কিন্তু গন্ডগোল।যারা কিনা মনে করে গণমানুষের মতামত নিয়ে তারা নিজেদের সরকার বাহাদুর নাম রেখেছে। সেই বাহাদুরকে কিন্তু এইসব চ্যালাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার বাহাদুরি দেখাতে হবে। বাহাদুরি দেখাতে হবে চাল চোরদের শায়েস্তা করার ক্ষেত্রেও। নয়তো দলকানা ইউপি সদস্য আর চাল চোর চেয়ারম্যানরা মিলে জনগণ নামক বস্তুটিকে খেপিয়ে তুলবে।শুনেছি ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আর আইয়ুব খানের শাসন’ দুটোই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন বস্তু ছিল। বাঙালী খেপে গিয়ে কিন্তু আইয়ুব খানের কঠিন সামরিক শাসনকেও বুড়ো আঙুল দেখিয়েছিলো।

জ্ঞানহীন এক জাতির করোনা কাহিনী
৪.

পৃথিবীব্যাপী করোনাক্রান্ত লাখ খানেক মৃত্যুর মধ্যে চিকিৎসা সেবায় জড়িত অনেকেও কিন্তু মারা গেছেন৷ করোনা বিপর্যয়কে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ধরে প্রতিটি দেশের মৃত চিকিৎসা পেশার মানুষদেরকে দেওয়া হচ্ছে শহীদের খেতাব। কারণ সবাই জেনে গেছে এই যুদ্ধে সেনাপতি – সৈনিক যুদ্ধাস্ত্র হাতে নিয়ে বিরোধী শিবিরে গুলি চালানো কেউ নয়। অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে দিনরাত মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাওয়া লোকগুলোই এই যুদ্ধে আমাদের বড় শক্তি। এদেশে প্রথমেই যখন করোনায় মৃত্যুর মিছিল শুরু হলো তখনই আক্রান্ত হওয়া শুরু করলো একে একে ডাক্তারেরা। আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের চিকিৎসা সেবায় বিশেষ জায়গা দখল করে আছে কমিউনিটি ক্লিনিক। সাংবাদিকতার সূত্রে আমার জেলার কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো এই সময়ে কেমন সেবা দিচ্ছে সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছিলাম। যে ভয়াবহ তথ্য জানতে পারলাম সেটা উল্লেখ করতে চাচ্ছি। করোনায় শুরুতেই ঢাকা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে লোক এদিকটায় এসেছিলেন৷ লকডাউনের শুরু হলে কিছু কিছু সরকারি হাসপাতাল সহ অধিকাংশ বেসরকারি ক্লিনিক গুলোয় রোগী দেখা সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময়টাতে অধিকাংশ অসুস্থ রোগীরা চিকিৎসা নিয়েছে এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে। মৌসুম পরিবর্তনের কারণে রোগীদের বেশিরভাগই ছিল সর্দি-জ্বর, কাশি- গলাব্যথা সহ করোনার অন্যান্য উপসর্গ সমৃদ্ধ। এ পর্যন্ত ঘটনা সাধারণ চোখে এক প্রকার ঠিকই ছিল। কিন্তু ভয়াবহ কথাটা জানা গেলো এরপরে। আমার জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা এই লেখাটার সময় পর্যন্ত কোনো ধরনের জীবাণুরোধী ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী (পিপিই) পান নি। সম্পূর্ণ অনিরাপদ অবস্থায় তারা রোগী দেখেছেন। এমন চিত্র আমি মনে করি সারাদেশের। সাধারণ স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে বড় চিকিৎসক সবাইকেই একটু বেশি নিরাপত্তায় রাখতে হবে আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই। যদিও তাদের কিছু অংশের কার্যক্রম নিয়ে খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবুও এটা ভুলবাবর কোন জো নেই যে স্রষ্টার পর আমাদের এই বিপদে রক্ষাকর্তা তারাই।বেঁচে থাকলে চিকিৎসকদের কাজের সমালোচনা করার অনেক সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু এই সময়ে অন্তত তাদেরকে অনুপ্রেরণা দেই। নিজেদের প্রয়োজনে তাদের সাহস যোগাই। হয়তো চিকিৎসা অব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যখাতের খারাপ দশা, স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোভাব সব মিলেমিশে একাকার হয়ে চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। তবে যেটাই হোক এর মধ্যেই বাঁচার চেষ্টা করে যেতে হবে। নিজে বাদে অন্য সবার দোষ ধরে আমাদের সময়টা কেটে যেতে পারে কিন্তু বাঁচতে হলে এসবের মধ্যেই লড়াই করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা প্রতিরোধক কোনো যথার্থ চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিষ্কার না হয় ততদিন যারই দোষ ধরি না কেন মৃত্যুর মিছিল থামাবার কোনো উপায় নেই। এই বাস্তবতা বাংলাদেশ কিংবা আমেরিকা সব জায়গাতেই এক। তাই ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ আদর্শই ধারণ করতে হবে। নিজে যথাসম্ভব সঙ্গ বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। যত খারাপই লাগুক সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে, মানাতে হবে৷নিজেদের কাণ্ডজ্ঞানের অভাবে ‘এই শহরে আর কেউ বেঁচে নেই’ – এমন বাক্য আমরা কেউই শুনতে চাই না।

লেখক: শফিক মুন্সি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট। 

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

সর্বাধিক পঠিত