Connect with us

বাংলাদেশ

বাঙালীর স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু যেভাবে (শেষ পর্ব)

Published

on

বাঙালীর স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু যেভাবে (শেষ পর্ব)
৭ই মার্চের শেখ মুজিবের ভাষণ ইয়াহিয়া ও তাঁর তাবেদারদের অপ্রস্তুত করে দেয়। ভাষণে মুজিব সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা না করলেও তাঁর মনের ইচ্ছা বুঝতে বাকি নেই জান্তা সরকারের৷ ‘অপারেশন ব্লিৎজ’ নিয়ে একটু শঙ্কা তৈরি হয় ইয়াহিয়ার মনে। আরো বড় নারকীয় কিছুর পরিকল্পনা করতে হবে। আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে বাঙালীর হাতে ক্ষমতা দেবার কলা দেখিয়ে। শেখ মুজিব আর আওয়ামীলীগকে ব্যস্ত রাখতে হবে আলোচনা আলোচনা খেলায়। আর প্রস্তুতি শেষ হলে পুরো বাঙালীকে আচ্ছা টাইট দিয়ে সোজা করতে হবে৷ কতভাবে সোজা করবে সেটা ভেবেই কিছুটা অস্থির হয়ে গেলো ইয়াহিয়া খান। শ্যামবর্ণের বাঙালী মেয়ে গুলো ইয়াহিয়ার অস্থিরতা দূর করতে পারবে না। কচি মেয়ে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করলে এসব অস্থিরতা দূর হবে। আর সেই কচি-কুমারী মেয়েগুলোকে হতে হবে পাঞ্জাবি অথবা সিন্ধ। ঢাকায় বসে এ ধরনের কচি মেয়ে না পেয়ে মনটা আনচান করছে ইয়াহিয়ার। বারবার মনে পড়ছে আকলিমের কথা। আকলিমের কাছে এসব মেয়ে পাওয়া দুমিনিটের ব্যাপার। আকলিমের মুখে মুখ লাগিয়ে কতদিন হয় শরাব পান বন্ধ! মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় বসে ইয়াহিয়া ভাবছেন বাঙালীদের একটা শিক্ষা দিয়েই তিনি করাচি উড়াল দেবেন। উড়ে গিয়ে পড়বেন একদম তাঁর পেয়ারের বেশ্যারানী আকলিমের কোলে। আকলিমের সঙ্গে ইয়াহিয়ার অতি দহরম – মহরমের কারণে এই নারীর নাম হয়ে গেছে জেনারেল রানী।১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন ইয়াহিয়ার মতো পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমি কোন শক্তিই মেনে নিতে পারে নি। এমনকি কেউ ভাবতেও পারে নি ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন আওয়ামীলীগ অর্জন করবে৷ নির্বাচনের আগে গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর রিপোর্টে বলা হয়েছিল সবমিলিয়ে ৮০-৯০ টা আসন আওয়ামীলীগ পেতে পারে৷ বড় দল পাকিস্তান পিপলস পার্টিও একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হবে বলে রিপোর্ট এসেছিলো। এসব রিপোর্ট দেখে ইয়াহিয়া নিশ্চিত হলেন ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে, কেউই পূর্ণ ক্ষমতার দাবি করতে পারবে না। তখনই নির্বাচন দিলেন কারণ ঝুলে থাকা দুটি দলকে সে নিজের পিছনে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে পারবেন৷ রাষ্ট্রপতি পদ ছাড়ার কোন কারণ থাকবে না৷ কিন্তু নির্বাচনের পরেই সব গেলো গুলিয়ে। এখন তাঁর গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চুল টেনে ছিঁড়তে ইচ্ছা করছে। শালারা ঠিকঠাক রিপোর্ট দিতে পারলে কি তিনি কোনোদিন নির্বাচন দিতেন! কিন্তু তিনিও প্রতিজ্ঞা করেছেন, এই বাঙালী কালো জানোয়ারদের পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। তাতে যা যা করার তিনি করবেন। যত রক্ত ঝড়াতে হয় তিনি ঝড়াবেন৷
বাঙালীর স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু যেভাবে (শেষ পর্ব)
সেই রক্ত ঝড়াতেই ‘অপারেশন ব্লিৎজ’ এর অংশ হিসেবে জেনারেল টিক্কা খানকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বেলুচিস্তানের কসাই খ্যাত টিক্কাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসকের। বেলুচিস্তানে এক আন্দোলন দমনে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিলেন জেনারেল টিক্কা। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের শায়েস্তা করতেও তাঁর বিকল্প খুঁজে পান নি ইয়াহিয়া। টিক্কার সহযোগি করে গভর্নরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাও ফরমান আলীকে। এদের দুজনকে দিয়ে বন্দুকের নলের সামনে ফেলা হবে বাঙালী জাতীকে। তবে মার্চের ৭ তারিখ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে যেভাবে আন্দোলিত হয় সাধারণ জনতা তাতে খানিকটা এলোমেলো হয়ে যায় তাদের পরিকল্পনা। যতটুকু শায়েস্তা করলে বাঙালী সোজা হবে বলে ভাবা হয়েছে এখন দেখছে আরো বড় কিছু করতে হবে৷ একদিকে ইয়াহিয়া আর তাঁর দোসরেরা ভাবছে কতবড় ধাক্কা দেওয়া যায় বাঙালীকে। অন্যদিকে ৭ই মার্চের পর দেশব্যাপী শুরু হয়েছে অহিংস অসহযোগ। মানুষ এখন আর সরকারের কথা শুনছে না। তারা শুনছে তাদের বঙ্গবন্ধুর কথা। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের পরপরই তারা সকল সরকারি কার্যক্রম এক প্রকার বন্ধ করে দিয়েছে৷ আমলা কিংবা সরকারি কর্মকর্তারাও তাকিয়ে আছে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে কি প্রেস নোট আসে সেটার দিকে। রাষ্ট্র ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর না হলেও জনগণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামীলীগকেই যেন এদেশ পরিচালনার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। ৭ই মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সরকারি খাজনা বন্ধ, অফিস ও কোর্ট বন্ধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ৯ই মার্চ এই অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কিত সংশোধিত নির্দেশ জারি হয়। আওয়ামীলীগ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ জানান, কলকারখানার কাঁচামাল কেনা এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংক কাউকে টাকা দিতে পারবে না৷ এছাড়া হরতাল – অবরোধ অব্যাহত থাকবে। পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে শুরু হয় জান্তা সরকার বিরোধী গণজাগরণ।
বাঙালীর স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু যেভাবে (শেষ পর্ব)
আওয়ামীলীগের প্রণীত এ অসহযোগ আন্দোলন চারিদিকে সমর্থিত ও সাফল্য লাভ করতে থাকে। মার্চের ১১ তারিখ তাজউদ্দীন আহমদ জনতাকে এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানান। তবে পরদিন সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় দেশের অভ্যন্তরে অরাজকতা সৃষ্টি করছে কিছু ভারতীয়। তারা কয়েকজনকে পাকড়াও করেছে বলেও দাবি করা হয়৷ তবে এটা ছিল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ঘোলাটে করার জন্য ইয়াহিয়ার চাল। যে চালের অংশ হিসেবে সে ইতোমধ্যে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে দিয়ে পোষা কুকুরের মতো ঘেউঘেউ করাচ্ছে। মার্চের ১৪ তারিখ ভুট্টো বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানের দাবি মোতাবেক পার্লামেন্টের বাইরে সংবিধান সংক্রান্ত সমঝোতা ছাড়া ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে পৃথকভাবে দুটি সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক”। ভুট্টোকে দিয়ে একথা বলিয়ে ইয়াহিয়া রওনা দিয়েছিলেন ঢাকার পথে৷ বড় ধামাকা করার শেষ প্রস্তুতি হিসেবে তাকে ঢাকায় আসতে হয়। শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনা – আলোচনা খেলার ফাঁকে সৈন্যদের তৈরি করে ফেলতে হবে বাঙালীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। বাঙালীর কতটুকু রক্ত ঝড়াবে সেটা হিসেব কষতে কষতেই ইয়াহিয়ার মন অস্থির হয়ে ওঠে৷ আকলিমের কথা মনে পড়ে তাঁর, মনে পড়ে কচি মেয়ের কথা। তারও আগে মনে পড়ে শ্যাম বর্ণের মিসেস শামিমের কথা। যে শামিমকে বার কয়েক বিছানায় ধ্বস্ত না করতে পারলে তার কাজে মন বসবে না।মার্চের ১৬ তারিখ ইয়াহিয়া – মুজিবের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন বসে দ্বিতীয় বৈঠক। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের মূল মন্ত্র ৬ দফার ভিত্তিতে সংবিধান চায় বঙ্গবন্ধু। বাঙালী জনগণ চায় পশ্চিম পাকিস্তানী শোষণের হাত থেকে মুক্তি। কিন্তু ইয়াহিয়া মনে মনে ভাবে শুধু আকলিমের কথা। আকলিমকে সে ভালোবেসে ‘মোটি’ নামে ডাকে৷ বাঙালী জনা কতেক নারীকে নিয়ে বিছানায় সময় কাটাতে গিয়ে তাঁর কামুক মন আকলিমকে কল্পনা করেছে৷ ১৭ তারিখ বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দর সঙ্গে আলোচনার খেলা শেষে সামরিক জেনারেলদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ইয়াহিয়া তাদের জানিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত করে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করে ফেলবে৷ সুতরাং জরুরী ভিত্তিতে কিছু করা প্রয়োজন৷ জেনারেল টিক্কা খান জিওসি মেজর জেনারেল খাদেম হোসেন রাজাকে সামরিক আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে বলে৷ ‘অপারেশন ব্লিৎজ’কে পাশে সড়িয়ে প্রণীত হয় বাঙালী হত্যার নীল নকশা ‘অপারেশন সার্চ লাইট ‘। বঙ্গবন্ধুর এদিন ছিল ৫১ তম জন্মদিন। ইয়াহিয়া মনে মনে ভাবে নিচু কালো জাতের বাঙালীকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখানো শেখ মুজিবের জন্মদিনে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ হবে সবচেয়ে বড় উপহার। স্বাধীনতার আশায় জেগে ওঠা বাঙালীর ওপর ‘অপারেশন সার্চলাইট ‘ প্রয়োগের প্রাক প্রাথমিক পরীক্ষা করা হয় ১৯ মার্চ। সেদিন সামরিক বাহিনী জয়দেবপুরে গুলিবর্ষণ ও কারফিউ জারি করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু বিদ্রোহী কন্ঠে বলেন, “তারা যদি মনে করে থাকে যে বুলেট দিয়ে জনগণের সংগ্রাম বন্ধ করতে সক্ষম হবে, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে “। তারা যে সত্যি সেদিন বোকার স্বর্গে বাস করছিল তা তারা বুঝতে পারে ৯ মাস পর।
বাঙালীর স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু যেভাবে (শেষ পর্ব)
২০ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু – ইয়াহিয়া চারবার বৈঠক করে ফেলেন। কিন্তু বারবার ইয়াহিয়ার অসৌজন্যমূলক আচরণে তাঁর বুঝতে বাকি থাকে না যে এসব আলোচনার কোন ফল নেই। অহিংস পথে বাঙালীকে শোষণের হাত থেকে মুক্ত করার আর পথ নেই। পূর্ব নির্ধারিত ২৫ মার্চের জাতীয় পরিষদ অধিবেশন পুনরায় স্থগিত করা হতে পারে বলেও সন্দেহ করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি পরদিন তাঁর বাসভবনের সামনে অপেক্ষমাণ বিরাট জনতার সামনে ভাষণ দেন। সেখানে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ” সাড়ে সাত কোটি মানুষের দাবি পশ্চিম বাংলার শাসনের ভার নিজেদের কাঁধে নেওয়া। এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের গতি কোনোভাবেই মন্থর করা যাবে না”। এ ঘোষণার পর ২২ মার্চ এক অসাধারণ ঘটনার সাক্ষী হয় সবাই। প্রতিটি সংবাদ পত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার ছবি ছাপা হয়। এমন অসাধারণ ঘটনার পরপরই জল্পনা কল্পনা ভেঙে দিয়ে পূর্বঘোষিত পরিষদের অধিবেশন পুনরায় স্থগিত করা হয়। বাঙালী বুঝে যায় শোষণের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন ভাবে কিছু ভাবতে হবে৷ রাজনীতি সচেতন মানুষের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও কায়েমি জান্তা সরকারের ধোঁকা বুঝতে পারে। সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করলেও বাঙালীর নেতাকে যে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে দেওয়া হবে না তা সবাই বুঝতে শুরু করে। কিন্তু এসব ধোঁকার কথা চিন্তা করলেও সাধারণ মানুষ কখনো বুঝতে পারে নি সামনে তাদের জন্য কতবড় ভয়ানক এক অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে।বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম নিজ হাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ২৩ মার্চ, তাঁর নিজ বাসভবনে। তিনিও সম্পূর্ণ বুঝে যান এখন আর সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না। বাঙালী যদি মুক্তি চায়, নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে চায়, একটু ভালো থাকতে চায়; তবে বড় কিছু করতে হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামীলীগকে অন্য দিকে মনোযোগ সড়িয়ে রাখতে ইয়াহিয়া খান ভিন্ন আঙ্গিকে একটি কাজ করেন। ২৪ মার্চ সকাল ও সন্ধ্যায় ইয়াহিয়ার পরামর্শদাতাদের সঙ্গে দুদফা বৈঠকে ব্যস্ত রাখা হয় তাদের। তাদের ব্যস্ত রাখা হয় এ কারণে যে সামনে বাঙালীদের জন্য কতটা ভয়ানক পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে সেটা বুঝতে না দেওয়া।

২৫ শে মার্চ, বাঙালীর ভাগ্য আকাশে চিরদিন মনে রাখার মতো অন্ধকার নিয়ে আসে৷ সেদিন রাতের ভয়াবহতা সারাবিশ্বের কাছে জাতিগত নির্যাতনের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হিসেবে উত্থাপিত হয় আজ। ঢাকায় সেদিন রাত থেকে শুরু হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক নারকীয় গণহত্যা। এমন এক ভয়ানক অধ্যায়ের সাক্ষী কোন মুক্তিকামী জনতাকে হতে হবে তা কেউ কল্পনা করতে পারে নি৷ সারা শহরজুড়ে নির্বিচারে হত্যা করা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, মুহাম্মদ আবদুল মুকতাদির, শরাফত আলী, মোহাম্মদ সাদেক সাদত আলীকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা৷ বাঙালীকে মেধাশূন্য করা এ প্রক্রিয়া পাকিস্তানি শাসকেরা চালিয়ে যায় যুদ্ধের যবনিকা ঘটার আগ পর্যন্ত। সে কালো রাতে গ্রেপ্তার করা হয় বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা বনে যাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কিন্তু গ্রেপ্তার হবার পূর্বেই তাঁর কাছে বাঙালীর দীর্ঘদিনের চাওয়াকে তিনি পূরণ করে যান৷ তিনি ঘোষণা দিয়ে যান,”এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহবান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিকটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে”। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা বাংলাদেশের সর্বত্র ওয়্যারলেস, টেলিফোন ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে প্রেরিত হয়।

বাঙালীর স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু যেভাবে (শেষ পর্ব)

২৫শে মার্চ রাত থেকেই ঢাকার পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসার বাহিনী সশস্ত্র গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুরু করে। এই প্রতিরোধ থেকেই ধীরে ধীরে বিভিন্ন পট পরিবর্তনের মাধ্যমে বাঙালী সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়। পরদিন ২৬ শে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকেও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রটি পাঠ করা হয়। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন চট্টগ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা এম এ হান্নান। একই জায়গা থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে পুনরায় স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান। তিনি ঘোষণা দেন ২৭ মার্চ। ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে ২৭ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক গণহত্যার দরুন মুষড়ে পড়ে পুরো বাঙালী জাতি। এমন সশস্ত্র হামলার বিরুদ্ধে তেমন কোন সামরিক – রাজনৈতিক প্রস্তুতি ছিল না কারো৷ এদিকে পুরো দেশ যে মানুষটার কথায় এতদিন সমস্ত সিদ্ধান্ত নিতো সেই বঙ্গবন্ধুর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বেঁচে আছেন নাকি হত্যার শিকার হয়েছেন সেটাও জানতো না কেউ। এমন বিপর্যস্ত অবস্থায় নিরাপত্তার জন্য দিকবিদিকশুন্য হয়ে ছুটতে লাগলো সবাই। প্রথমে শহর থেকে গ্রামে তারপর গ্রাম থেকে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে। ভারতীয় সিমান্ত বাংলাদেশীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সেই থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অবদানের শুরু তাদের। প্রথমে হাজারে হাজার তারপর লাখে লাখে সর্বশেষ কোটির সংখ্যায় গিয়ে দাঁড়ায় সীমান্তে নিরাপত্তার খোঁজে হাজির হওয়া বাঙালীর সংখ্যা। আর এখানেই ভুল করে ফেলে ইয়াহিয়া। পূর্ব পাকিস্তানে নরকের আগুন জ্বালিয়ে তিনি প্রিয়তম বেশ্যা সর্দারনী আকলিম আর চিত্র নায়িকা তারানার কোলে ঢলে পড়েন। কিন্তু নিরাপত্তার অভাবে দেশছাড়া মানুষদের দেশে ফিরতে হলে সশস্ত্র সংগ্রামে জড়ানো ভিন্ন অন্য কোনো পথ তিনি রাখেন নি। দেশে ফিরতে মুখিয়ে থাকা কোটির ওপর বাঙালীর তাই কঠিন স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া উপায় ছিল না। অন্যদিকে এত পরিমাণ শরনার্থীর চাপ সামলাতে, ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং চিরবৈরী পাকিস্তানকে শায়েস্তা করতে বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হয়। ভারত সরকারের সরাসরি সহযোগিতার ফলেই সেবছরের মাঝামাঝি সময়ে বাঙালীর স্বাধীনতা যুদ্ধ তার সমাপনী আখ্যান শুরু করে। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের এ সামরিক – রাজনৈতিক অবদানের পিছনে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের ভূমিকা উল্লেখ না করলেই নয়। বিশেষ করে ৩১শে মার্চ কলকাতার রাজপথে বিশাল মিছিল করে ভারতীয় নাগরিকেরা।তাদের দাবি ছিল ভারতীয় সরকার যেন বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ায়। যার ফলশ্রুতিতে সেদিনই ভারতীয় লোকসভা বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে। তবে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে কূটনৈতিক সহযোগিতা না পেলে স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র প্রচেষ্টা চালানো যেতো না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করেই সেসময়কার পরাশক্তি আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হয়। আর সেই সুযোগে আরেক পরাশক্তি সোভিয়েত ভারতের পাশে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে এই বৈশ্বিক রাজনীতির চাল পরিবর্তন ইতিহাসকেও রাঙিয়ে গেছে ভিন্ন রঙে।

তথ্যসূত্র :

১/ দ্য ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ : আর্চার কে ব্লাড।
২/ দ্য আলটিমেট ক্রাইম : সরদার মুহাম্মদ চৌধুরী।
৩/ ম্যাসাকার : রবার্ট পেইন৷
৪/ জেনারেল ও নারীরা : আনিসুল হক।
৫/মূলধারা একাত্তর : মঈদুল হাসান।
৬/ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপঞ্জি : মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
৭/ নাগরিকদের জানা ভালো : মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
৮/জিয়াউর রহমান কীভাবে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ হতে পারেন? :শেখ আদনান ফাহাদ

লেখক : শফিক মুন্সি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট। 

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

বাংলাদেশ

দেশীয় চিনিশিল্পের পথিতযশা অবস্থা

Published

on

দেশীয় চিনিশিল্পের পথিতযশা অবস্থা

 

পূর্বের অবস্থা যা ই হোক না কেন এটার বর্তমান অবস্থা যে খুব সোচনীয় তা আমরা আঁচ করতে পারছি খুব ভালো ভাবে এই আলোচনার মাধ্যমে। আবার আমরা এটাও জানতে পেরেছি যে চিনি শিল্পের এই মন্দাবস্থা সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়ে জনসাধারণের সহানুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যদিও এই করুন অবস্থার জন্য দায়ী মূলত শিল্পের সাথে জড়িত নীতিনির্ধারকরা।

আমরা জেনেছি যে বাংলাদেশে সরকারী ১৫ ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২ টি চিনিকল রয়েছে, এবং ৫ টি চিনি পরোশোধনাগার রয়েছে। এই শিল্পের সাথে ১২.৫ লক্ষ পরিবারের প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকা জড়িত রয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের আখ চাষ এবং চিনি আহরণের হার খুবই কম। দেশে প্রতি একরে আখ উৎপাদন হয় মাত্র ১৫ মেট্রিক টন যা হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে ৭০ মেট্রিক টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। আবার চিনি আহরিত হয় মাত্র ৭.৪ % যা অস্ট্রেলিয়া ১৫.৭ % পর্যন্ত হয়ে থাকে।

দেশীয় চিনিশিল্পের পথিতযশা অবস্থা

চিনিশিল্প

চিনি শিল্পে ধস মোটামুটি শুরু হয়েছে ২০০০ সালের পরবর্তী সময় থেকে। অথচ ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে কিন্তু বাংলাদেশে মোট আখ উৎপাদিত হয়েছিলো ২০ লাখ ৯৬ হাজার ২০০ মেট্রিক টন এবং চিনি উৎপাদন হয়েছিলো ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬২ মেট্রিকটন। যা প্রায় ৮.৭৭ %। কিন্তু ২০০০-০১ মৌসুমে সেটা কমে হয় ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৬ মেট্রিকটন এবং চিনি আহরিত হয় ৯৮ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন। যা কমে হয় ৭.১১ %।

মূলত জলবায়ু পরিবর্তন,তুলনামূলক কম সূর্যালোক ঘণ্টা, আগাম আখ চাষের জমির পরিমাণ হ্রাস, নিচু জমিতে আখ চাষ, উচ্চ চিনি আহরণযুক্ত ইক্ষু জাতের অভাব, অপরিপক্ক আখ মাড়াই, পুরাতন যন্ত্রপাতি ও মিলের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কমতে থাকে চিনি আহরণ হার ও মোট চিনি উৎপাদন।

২০১০ সাল পরবর্তী সময়ে চিনি আহরণ হার ও মোট চিনি উৎপাদন হটাৎ এমন খাপছাড়া কেন হয়ে যাওয়ার পেছনে যে কয়েকটি কারণ মূখ্যভাবে দায়ী তা হলো ‘ চাষীরা আখ বিক্রির টাকা সময় মতো না পাওয়া, আখের বদলে অন্য ফসল চাষে তুলনামূলক বেশী লাভ, চিনি মিল গুলোর কাছে চাষীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আটকে থাকা, পাওয়ার ক্রাশারের আগমন, এবং সরকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল আচরণ না করা।

চিনি উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে রয়েছে মানসন্মত আখের অভাব, মাটি ও আবর্জনা যুক্ত আখ মিলে সরবরাহ, ধারণ ক্ষমতার চাইতে বেশি আখ মাড়াই করে রস ড্রেনে ফেলা, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্লাটফর্মে ও মাঠে আখ শুকানো, আখ থেকে রস ঠিকমত বের না করা, সর্বপরি দক্ষ জনবলের অভাবে চিনি আহরণে ব্যাপক গড়মিল তৈরি হচ্ছে।

শুধু চিনি উৎপাদনেই লোকশান হচ্ছে না। অদক্ষ জনবল, পরিকল্পনার অভাব, নিম্নমানের আখ চাষ, ক্রয় বিক্রয়ে দুর্নীতি, অপ্রয়োজনীয় খরচ, ব্যায়ের খাত বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অনিয়ম যেন বাসা বেঁধে বসেছে চিনিকলগুলিতে।ফলে কিছু কিছু কর্মকর্তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটলেও চিনিকলগুলির এবং শ্রমিকদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি।

চিনি শিল্প একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানিকারী পণ্য হতে পারে এবং কতগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাংলাদেশ এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করতে পারে, যেমনঃ কারখানাগুলির আধুনিকীকরণ, পূর্ণমাত্রায় আখ উৎপাদন, সহজশর্তে আখচাষীদের ঋণ প্রদান, রিফাইনারিগুলিকে পূর্ণমাত্রায় চিনি উৎপাদনের জন্য অনুমতি প্রদান, আখ চাষে ও চিনি উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ ব্যবহার, অব্যবস্থাপনা প্রতিরোধ, মিল কর্মচারীদের অপকর্ম থেকে বিরত রাখা এবং চিনিকলগুলি থেকে উৎপাদিত উপজাত পণ্যের (by-products) সঠিক ও ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করা।

লিখেছেনঃ
মারুফুজ্জামান
৪৬ তম আবর্তন
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

বাংলাদেশ

জাতির জনকের শাসনকালঃ দেশনীতি ও বিদেশনীতি

Published

on

Bangabandhu-Sheikh-Mujibur-Rahman
আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে দেখেছি, যিনি জ্ঞানে ও নেতৃত্বে হিমালয় সম” -বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর এই বাণী ই জাতির জনক সম্পর্কে অজানা বিষয় জানতে কৌতূহলী করে তোলবে যেকোনো মুজিবপ্রেমী ব্যাক্তি কে। বঙ্গবন্ধু সোনার  বাংলা  গরে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সময় পান নি, কিন্তু সদ্যস্বাধীন দেশটি নিয়ে তাঁর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফলশ্রুতিতেই আজকে আমাদের এই দেশ বিশ্বের অনেক দেশের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি প্রিয় নেতা পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১১ জানুয়ারি অস্থায়ী সংবিধান আদেশের মাধ্যমে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার সূত্রপাত এবং মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার কাঠামো প্রবর্তন করেন। আজকের এই দিনে স্বল্পসময়ে জাতির জনকের গৃহীত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক  বিভিন্ন পরিকল্পনা, পররাষ্ট্র নীতি সহ সংক্ষেপে তাঁর  শাসন কাল আলোকপাত করা হলো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের প্রিয় এই নেতা খুব অল্প সময়েই আলোচিত উঠেন তাঁর বন্ধুত্বপূর্ন আচরণ,বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সময়োপযোগী  সিদ্ধান্ত দক্ষতার মাধ্যমে। এই স্বল্প সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠন যেমন জাতিসংঘ, ওআাইসি সহ ১২৬ দেশের স্বীকৃতি এনে দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র নেতার সান্নিধ্য লাভ করতে পেরেছিলেন। তাছাড়াও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বেসামরিক  মুক্তিযোদ্ধাদের নিরস্ত্রীকরণ, অবাঙালিদের রেখে যাওয়া শিল্প কারখানায় দেশের জনগণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণ, ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা,স্বীকৃতি ও সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা করা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু অসামান্য অবদান রেখে গিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশ্ব নেতাদের ক্রোধের ফল সরূপ সৃষ্ট  ভয়াবহতা অনুধাবন, পাকিস্তানের শাসন,নির্যাতনের বিরুদ্ধ আন্দোলনের সম্মুখযোদ্ধা  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়নে উদ্বুদ্ধ করে। সকল দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে প্রিয় বাংলা কে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হবে হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাইতো তিনি ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি গ্রহন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী ভারতের সাথে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব স্থাপন করেন বিপরীত দিকে তাঁর  গৃহীত কৌশলপূর্ণ নীতির কারণে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতাকারী চায়না আজকের বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম সহযোগী হয়ে উঠেছে।মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার বিরোধী ভূমিকা সত্ত্বেও ১৯৭৪ সালের ১ অক্টোবর আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড  আর ফোর্ডের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে মিটিং করেন।১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত নিরপেক্ষ আন্দোলন এর শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তিতে ন্যামের সদস্য রাষ্ট্রদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে তাদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহন করেন। পরবর্তীতে তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত কূটনৈতিক কৌশল সফল হয়। ফলে ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভের মাধ্যমে প্রিয় দেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অঙ্গনে নিজস্ব স্থান তৈরি করে নেয়।এবং ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু যা সারা বিশ্বের অধিকারহারা শোষিত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman in United Nations নব্যস্বাধীন দেশ বিধায় তখনো রাষ্ট্রের সামাজিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান ছিলো নানাবিধ অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিধান। অভ্যন্তরে ছিলো পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের মিত্রদের বিচারের দাবী অন্যদিকে দেশের স্বীকৃতি অর্জনে পাকিস্তানের মিত্র দেশগুলোর বিরোধিতা। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের বিপ্লবী মনোভাব জাগ্রত করতে সহায়তা করে। স্বাধীনতা অর্জনের ১ বছরের মধ্যে ই আওয়ামী লীগের ছাত্র সমাজের একাংশ গড়ে তোলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল(জাসদ)। দ্বিধা বিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি গুলো দেশে এনজিও এর মাধ্যমে সহযোগিতা  কার্যক্রম চালু রাখে যা পরবর্তী তে দেশে প্রধান শক্তি হয়ে উঠে। আওয়ামী লীগের ওপর ছিল দেশ পুনর্গঠনের সামগ্রিক চাপ কিন্তু কাজের ফলাফল ছিল ধীর।  এই সময়ে অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ ওঠে এবং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রবল হয়ে উঠে যা উগ্রপন্থী যুব নেতৃত্ব  ও মধপ্যন্থী মতাদর্শে বিভক্ত হয়ে পড়ে।এ পরিস্থিতিতে সরকার পাকিস্তানি সেনাদের মুক্তি দান করে ও আওয়ামীপন্থী বিশ্বাসীদের নিয়ে উগ্র পন্থীদের দমনে রক্ষী বাহিনী গঠন করে। নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র থেকে আমরা জানি,প্রতিটি ক্রিয়ার ই সমান ও বিপরীত ক্রিয়া থাকে,তেমন জাতির জনকের শাসন কালেরও আলোচনা ও সমালোচনা রয়েছে, তাই বলে একটি রাষ্ট্রের জন্ম যার হাত ধরে তাঁর পরিবারের এমন নৃশংস হত্যাকান্ড কখনো গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman family photo 15 august দেশগঠনে অকৃত্রিম প্রচেষ্টা কারী এই রাষ্টনায়কই কতিপয় সেনাবাহিনীর অফিসারের রোষের কবলে পড়ে প্রিয় পুত্র শেখ রাসেল,২ পুত্রবধূ, সকল বিপদে সাহস প্রদানকারী স্ত্রী সহ পরিবারের আরো সদস্য নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। প্রিয় বাংলার শোষিত জনগণের কল্যাণে আত্ননিয়োগকারী রাষ্ট্র নায়ক,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজ তম মৃত্যুবার্ষিক,তাঁর প্রতি জানাই পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

বাংলাদেশ

জ্ঞানহীন এক জাতির করোনা কাহিনী

Published

on

জ্ঞানহীন এক জাতির করোনা কাহিনী
১.লেখার শুরুতে একটা হাসির গল্প বলে নিতে চাই। করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলেও চালু রাখতে হচ্ছে ব্যাংকিং ব্যবস্থা। এক ব্যাংক কর্মকর্তা আর গ্রাহকের কথোপকথন হচ্ছে। গ্রাহকটি ব্যাংকে মোটামুটি অংকের টাকা তুলতে এসেছেন। কর্মকর্তাটি গ্রাহককে প্রশ্ন করলেন সবকিছু বন্ধের মধ্যে তিনি কেন টাকাগুলো তুলছেন? গ্রাহক জানালেন, লকডাউনে বাসায় বসে থাকতে গিয়ে বিরক্ত তিনি। বাইরের পরিবেশ দেখতে আর বিরক্তি কাটাতে ব্যাংকে চলে এসেছেন । হাতে চেক বই দেখে রাস্তায় পুলিশও তাকে কিছু বলেন নি। কর্মকর্তাটি গ্রাহকের এমন বক্তব্যে হতবাক হয়ে গেলেন। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে টাকাগুলো গুনে নিয়ে দ্রুত সেই লোকটিকে বাড়ি চলে যেতে বললেন কর্মকর্তাটি।লোকটি আরো অবাক করে দিয়ে তাকে জানালেন, গোনার দরকার নেই। টাকাগুলো যেভাবে আছে সেভাবেই কাল এসে জমা দিয়ে যাবেন তিনি। ব্যাংকগুলো খোলা রাখায় লকডাউনের বিরক্তি কাটাতে সুবিধা হয়েছে তার। ব্যাংকেও আসা হয় বাইরের পরিস্থিতিও নিজ চোখে দেখা যায়! এই গল্পটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে আমার নজরে আসে। সারাদেশের কার্যত লকডাউনের মধ্যে ব্যাংক খুলে রাখায় ক্ষুব্ধ ব্যাংকিং খাতে কাজ করা মানুষেরা। তাদেরই একজন গল্পটি ছড়িয়ে দিয়েছে৷ আর তাঁর কল্যাণেই এমন নিদারুণ হাস্যরসের গল্পটি জানতে পেলাম। আশা করছি গল্পটি মিথ্যা হবে। বৈশ্বিক বিপর্যয়ের এই সময়টাতে কোনো মানুষ গল্পের গ্রাহকের মতো কাজ করবে না বলে বিশ্বাস করতে চাই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই আরেকটা ভিডিও দেখে এই জাতিকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো। একজন পুলিশ সদস্য একা একা মাইকিং করে এই করোনা বিপর্যয়ের সময়টাতে সবাইকে ঘরে থাকার আহবান জানাচ্ছেন। আশেপাশের সবাই তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে সে কেনো হাতে লাঠি নিয়ে আসে নি! লাঠি না নিয়ে কেন সে মানুষকে বোঝাতে আসলো সেটা অনেকের মনে দুঃখ দিয়েছে। আসলেই কি আমরা এমন জাতি যাদের পিঠে লাঠির আঘাত না পড়লে নিজেদের ভালোটুকু বুঝবো না?
জ্ঞানহীন এক জাতির করোনা কাহিনী

২.

আমি যে মুহুর্তে এই লেখাটা লিখছি তখন সারাবিশ্বে করোনায় মারা গেছেন এক লক্ষ মানুষ। পুরো পৃথিবীটাই এক প্রকার ঘরে বন্দী অবস্থায় আছে। এই অবস্থায় সবাই মিলে ঘরে থাকার ফলে প্রকৃতির ওপর প্রভাব পড়েছে অসাধারণ। বাতাসে দূষণ কমে গেছে, আশপাশ পরিষ্কার হয়েছে। দীর্ঘদিন পর অনেকটা দূর থেকে নাকি হিমালয় দেখা যাচ্ছে, কক্সবাজারে ডলফিন ফিরে এসেছে। নেটিজেনরা ( ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অংশ হওয়া মানুষদের এই শব্দ দিয়ে অভিহিত করা হয়) মজা করে বলছে, প্রকৃতির এত কিছু ফিরে আসার মধ্যে মানুষের জীবনে হারিয়ে যাওয়া প্রেমিক/প্রমিকারাও হয়তো ফিরে আসবে! তবে জীবনে পুরনো প্রেমিক/প্রেমিকারা ফিরে না আসলেও সমাজের পুরনো একদল মানুষ কিন্তু ঠিকই ফিরে এসেছে। তারা হচ্ছেন ত্রাণের চাল চোর সম্প্রদায়। এই মুহুর্তে দেশের মোট করোনা শনাক্ত মানুষের চেয়ে সরকারি ত্রাণের চাল চুরি করা মানুষের সংখ্যা বেশি। সারাবিশ্ব যেখানে মৃত্যুভয়ে থমকে গেছে সেখানে আমাদের চাল চোরেরা পুরনো প্রতাপে খবরের শিরোনাম হচ্ছে। সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুহার বাংলাদেশে৷ কোভিন ১৯ শনাক্ত মানুষের চেয়ে নিশ্চিত ভাবে এই রোগে মৃতের সংখ্যার তারতম্য খুব বেশি নয়৷ এমন একটা ভয়ানক সময়ে দাঁড়িয়ে এইসব চাল চোরদের জন্য আমার কেন জানি মায়া হয়! স্রষ্টা না করুক করোনা ভাইরাসেই যদি চাল চোরেরা মারা যায় তবে চুরিকরা এসব চালগুলোর জন্য তাদের আফসোস হবে। মৃত্যুর পরেও তাদের আফসোসের কথা ভেবেই আমার খারাপ লাগছে।

জ্ঞানহীন এক জাতির করোনা কাহিনী
৩.

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকটি ভিডিও আমার বেশ মনোযোগ আকর্ষণ করলো। সেই ভিডিওতে দেখলাম এক ইউপি সদস্য করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ নিতে আসা কিছু বেরোজগার মহিলার ওপর চোটপাট করছে। তাঁর চোটপাট এবং হুংকারের কারণটা জেনে আমি নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম। আহারহীন মানুষদের তিনি জোর গলায় শাসাচ্ছেন এবং ত্রাণ দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। কারণ ত্রাণ সহযোগিতা তিনি তাদেরকেই করবেন যারা নাকি তার নিজ রাজনৈতিক দলের অনুসারী! ভিডিওটা দেখে মর্মাহত হলাম। মনে মনে বিশ্বাস করতে চাইলাম আমার দেখাটা যেন ভুল হয়। করোনা ভাইরাস কোন দল চেনে না। সে চেনে মানব দেহ। তাঁর সংস্পর্শে যে শরীরটা আসবে তাকেই সে আক্রমণ করবে৷ করোনার আক্রমণ থেকে যদি নিজেদের নিরাপদ রাখতে হয় তবে মানুষকে ঘরে রাখতে হবে৷ কিন্তু ঘরে খাবার না দিয়ে তো আপনি তাদের ঘরে রাখতে পারবেন না। কারণ কষ্টকর সত্য হচ্ছে এই যে পেটের ক্ষুধা করোনা ভয় মানে না। সারাবিশ্বকে থামিয়ে দিলেও করোনা মানুষের পেটের ক্ষুধা থামাতে পারে নি। আর সেই ক্ষুধার যন্ত্রণায় প্রথমে বাইরে বের হবে আয়হীন মানুষ, তারপর বের হবে নিম্ন আয়ের মানুষ, তারপর স্বল্প আয়ের। এভাবে করে ঘরে যাদের খাবার কিছুই থাকবে না তারা সবাই রাস্তায় বের হয়ে যাবে৷ আর বাস্তবতা হচ্ছে এই করোনা আক্রমণ থেকে নিজে বাঁচতে হলে অন্যদের নিয়েও বাঁচতে হবে। কারণ এই ভাইরাসটি কেবলমাত্র তখনই থামবে যখন সংক্রমণের জন্য একটি মানবদেহও আর সে খুঁজে পাবে না। আর মানবদেহগুলোকে যদি ভাইরাস থেকে দূরে রাখতে হয় তবে সেগুলোর পেটের ক্ষুধার সংস্থান করাও আবশ্যক। মানুষদের খাবারের দুঃশ্চিন্তা নির্মুল করে বাইরের সমাজ থেকে দূরে রাখতে হবে। কিন্তু সেই চিন্তা দূর করার পদক্ষেপে যদি অতিউৎসাহী এসব ইউপি সদস্যদের উপস্থিতি বেশি হয়ে দাঁড়ায় তখন কিন্তু গন্ডগোল।যারা কিনা মনে করে গণমানুষের মতামত নিয়ে তারা নিজেদের সরকার বাহাদুর নাম রেখেছে। সেই বাহাদুরকে কিন্তু এইসব চ্যালাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার বাহাদুরি দেখাতে হবে। বাহাদুরি দেখাতে হবে চাল চোরদের শায়েস্তা করার ক্ষেত্রেও। নয়তো দলকানা ইউপি সদস্য আর চাল চোর চেয়ারম্যানরা মিলে জনগণ নামক বস্তুটিকে খেপিয়ে তুলবে।শুনেছি ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আর আইয়ুব খানের শাসন’ দুটোই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন বস্তু ছিল। বাঙালী খেপে গিয়ে কিন্তু আইয়ুব খানের কঠিন সামরিক শাসনকেও বুড়ো আঙুল দেখিয়েছিলো।

জ্ঞানহীন এক জাতির করোনা কাহিনী
৪.

পৃথিবীব্যাপী করোনাক্রান্ত লাখ খানেক মৃত্যুর মধ্যে চিকিৎসা সেবায় জড়িত অনেকেও কিন্তু মারা গেছেন৷ করোনা বিপর্যয়কে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ধরে প্রতিটি দেশের মৃত চিকিৎসা পেশার মানুষদেরকে দেওয়া হচ্ছে শহীদের খেতাব। কারণ সবাই জেনে গেছে এই যুদ্ধে সেনাপতি – সৈনিক যুদ্ধাস্ত্র হাতে নিয়ে বিরোধী শিবিরে গুলি চালানো কেউ নয়। অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে দিনরাত মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাওয়া লোকগুলোই এই যুদ্ধে আমাদের বড় শক্তি। এদেশে প্রথমেই যখন করোনায় মৃত্যুর মিছিল শুরু হলো তখনই আক্রান্ত হওয়া শুরু করলো একে একে ডাক্তারেরা। আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের চিকিৎসা সেবায় বিশেষ জায়গা দখল করে আছে কমিউনিটি ক্লিনিক। সাংবাদিকতার সূত্রে আমার জেলার কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো এই সময়ে কেমন সেবা দিচ্ছে সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছিলাম। যে ভয়াবহ তথ্য জানতে পারলাম সেটা উল্লেখ করতে চাচ্ছি। করোনায় শুরুতেই ঢাকা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে লোক এদিকটায় এসেছিলেন৷ লকডাউনের শুরু হলে কিছু কিছু সরকারি হাসপাতাল সহ অধিকাংশ বেসরকারি ক্লিনিক গুলোয় রোগী দেখা সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময়টাতে অধিকাংশ অসুস্থ রোগীরা চিকিৎসা নিয়েছে এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে। মৌসুম পরিবর্তনের কারণে রোগীদের বেশিরভাগই ছিল সর্দি-জ্বর, কাশি- গলাব্যথা সহ করোনার অন্যান্য উপসর্গ সমৃদ্ধ। এ পর্যন্ত ঘটনা সাধারণ চোখে এক প্রকার ঠিকই ছিল। কিন্তু ভয়াবহ কথাটা জানা গেলো এরপরে। আমার জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা এই লেখাটার সময় পর্যন্ত কোনো ধরনের জীবাণুরোধী ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী (পিপিই) পান নি। সম্পূর্ণ অনিরাপদ অবস্থায় তারা রোগী দেখেছেন। এমন চিত্র আমি মনে করি সারাদেশের। সাধারণ স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে বড় চিকিৎসক সবাইকেই একটু বেশি নিরাপত্তায় রাখতে হবে আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই। যদিও তাদের কিছু অংশের কার্যক্রম নিয়ে খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবুও এটা ভুলবাবর কোন জো নেই যে স্রষ্টার পর আমাদের এই বিপদে রক্ষাকর্তা তারাই।বেঁচে থাকলে চিকিৎসকদের কাজের সমালোচনা করার অনেক সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু এই সময়ে অন্তত তাদেরকে অনুপ্রেরণা দেই। নিজেদের প্রয়োজনে তাদের সাহস যোগাই। হয়তো চিকিৎসা অব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যখাতের খারাপ দশা, স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোভাব সব মিলেমিশে একাকার হয়ে চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। তবে যেটাই হোক এর মধ্যেই বাঁচার চেষ্টা করে যেতে হবে। নিজে বাদে অন্য সবার দোষ ধরে আমাদের সময়টা কেটে যেতে পারে কিন্তু বাঁচতে হলে এসবের মধ্যেই লড়াই করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা প্রতিরোধক কোনো যথার্থ চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিষ্কার না হয় ততদিন যারই দোষ ধরি না কেন মৃত্যুর মিছিল থামাবার কোনো উপায় নেই। এই বাস্তবতা বাংলাদেশ কিংবা আমেরিকা সব জায়গাতেই এক। তাই ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ আদর্শই ধারণ করতে হবে। নিজে যথাসম্ভব সঙ্গ বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। যত খারাপই লাগুক সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে, মানাতে হবে৷নিজেদের কাণ্ডজ্ঞানের অভাবে ‘এই শহরে আর কেউ বেঁচে নেই’ – এমন বাক্য আমরা কেউই শুনতে চাই না।

লেখক: শফিক মুন্সি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট। 

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

সর্বাধিক পঠিত