Connect with us

কূটনীতি

চীনের আক্রমণাত্মক উলফ ওয়ারিয়র কূটনীতি

Published

on

চীনের আক্রমণাত্মক উলফ ওয়ারিয়র কূটনীতি

একুশ শতকে এশিয়ার দেশ  চীনের পরাশক্তি হিসেবে উত্থান বিশ্ব রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। সাতদশক আগে যে চীন ছিল কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা, যে দেশটি প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করত নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সাথে আজ সেই দিশটিই পৃথিবীর অন্যতম অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিগুলোর একটি। একুশ শতকের রাজনৈতিক মঞ্চের অন্যতম খেলোয়ার  সেই চীন, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতদেশগুলা তার প্রতিপক্ষ। চীনের এই অভুতপূর্ব উত্থান কেবল বিশ্ববাসীকে হতচকিত করছে তা নয় বরং বিশ্বরাজনীতির গতিপ্রকৃতির পরির্বতন করে দিয়েছে। বিশ্বের তাবৎ পরাশক্তি  যখন করোনা মাহামরীকে মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে তখনও চীন এক অদৃশ্য শক্তির বলে এই মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে এনে তার অগ্রয়াত্রাকে অব্যহত রেখেছে। দূরপ্রাচ্যের এই দেশটি যখন বৈশিক সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজেকে অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা  করে ফেলেছে তখন  কূটনৈতিক অবস্থানকে সুসংহত করতে পূর্বের প্রথাগত রক্ষণাত্মক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন আক্রমণাত্মক ধারারকূটনীতি ‘উলফ ওয়ারিয়র কূটনীতি গ্রহণ করেছে। চীনের এই  নতুন কূটনৈতিক ধারাকে বলা হচ্ছে প্রায়েগিক, প্ররোচক এবং ঊচ্চ পর্যাযের  পর-রাষ্ট্রনৈতিক কৌশল যা  তার পূর্বের রক্ষণাত্মক ও সহিষ্ণু কূটনৈতিক ধারার বিপরীত। এখন প্রশ্ন  হলো, কি এই চীনরে উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি আর কেনই বা চীন রক্ষাণাত্মক কূটনীতির পরিহার করে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে বিশ্বরাজনীতির প্রেক্ষাপটে।

চীনের উলফ ওয়ারিয়র কূটনীতি কি ঃ

২০১৫ ও ২০১৭ সালে চীনা জাতীয়তাবাদের প্রেক্ষপটে নির্মিত হয় দুটি চীনা চলচ্চিত্র  উলফ ওয়ারিয়র  ও উলফ ওয়ারিয়র ২। চলচ্চিত্রদুটি ব্যাপক সাড়া ফেলে চীনে, মিলিয়ন ডলারের ব্যবস্যা করে নির্মাতা উ জিং এর সিনেমা এই সিনেমা । সিনেমার গল্পে দেখা যায় চীনের  পিপলস রিপালিক আর্মির এজেন্ট চীনের বাইরের শত্রুদের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস অপারেশন চালিয়ে চীন বিরোধী কর্মকাণ্ড নস্যাৎ করে চীনের জাতীয় শক্তি বৃদ্ধি করছে। এই চলচ্চিত্র দুটি থেকে অনুপ্রেরণিত হয়ে চীনা কতৃপক্ষ উলফ ওয়ারিয়র কূটনীতি গ্রহণ করেছে। আর চীনের স্বার্থ রক্ষার্থে চীনের এক এক জন কূটনীতিক হয়ে উঠছেন উলফ ওয়ারিয়র। মূলত তারা বিশ্ববাসীকে জানান দিতে চাই, চীন আর আগের মত নমনীয় নয়, শত্রুর কাছে নিজের সক্ষমতা গোপন করে নয় বরং প্রকৃত সক্ষমতা জানান দিতেই তৎপর।  আর এরই মাধ্যমেই চীনের দেও জিয়াওপিং এর তাওগুয়াং ইয়াংহুই কূটনৈতিক  যুগের অবসান হচ্ছে। মূলত দেও জিয়াওপিং এর এই নীতিই ছিলো প্রতিপক্ষের কাছে নিজের সক্ষমতাকে গোপন রাখা।

কেন চীন এই কূটনৈতিক পন্থা অবলম্বন করছেঃ

চীনের কূটনীতিক ধারার হঠাৎই যে পরিবর্তন এসেছে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং ২০১০ সালে চীন যখন জাপানকে অতিক্রম করে জিডিপি হিসেবে পৃথিবীর দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয় তখন থেকেই চীন আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে এবং পররাষ্ট্রনীতিতে  প্রায়োগিক ও প্রত্যয়ী আচরণ শুরু করে। এর পূর্বে চীন দেও জিয়াওপিং এর ‘তাওগুয়াং ইয়াংহুই’ নীতি অনুসরণ করত। যা  মূলত ছিল প্রতিপক্ষ বা শত্রুকে নিজের সক্ষমতা প্রদর্শন না করা। তাকে ভালভাবে বুঝিয়ে আলোচনার টেবিলে বসিয়ে সমস্যার সমাধানের লক্ষে আলোচনা করা। কিন্তু বর্তমানে চীনা কূটনৈতিকরা কেবলই  যে উলফ ওয়ারিয়র কূটনীতি অনুসরণ করে  প্রতিপক্ষের সাথে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে তা নয় বরং আক্রমনাত্মক আচরণও করছে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় এপ্রিলের শুরুতে চীন দক্ষিণ চীন সাগরের প্যারাসেলস আইল্যান্ডের কাছে ভিয়েতনামের একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবিয়ে দেয়। ভিয়েতনাম এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক টুইট বার্তায় জানিয়ে দেওয়া হয় যে ভিয়েতনামের দাবীকৃত অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। চীনের এই যে আগ্রাসনের কূটনীতি তা মূলত তার জাতীয় শক্তিকে সুসংহত করার জন্য। চীনের তার প্রতিবেশী সহ বিশ্বের বাকীদেরকে স্পষ্টত বার্তা দিতে চাই জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় অনড় সে। যদি তার জাতীয় স্বার্থে কোন দেশ  আঘাত হানে তাহলে  চীন ছাড় দিবে না। পূর্বে সে অন্যের কাছে শক্তিমাত্তা প্রদর্শনে আগ্রহী ছিল না কিন্তু এখন সে তার শক্তি সামর্থ্য জানান দিতে আগ্রাসী হয়ে উঠছে কূটনীত ও পররাষ্ট্রনীতিতে।

দ্বিতীয়ত, চীন তার উত্থানের প্রকৃত গল্প বাকীদের বলতে চাই। যত দ্রুতই চীনের উত্থান হচ্ছে, অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী হচ্ছে ততই পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষত শক্তিধর দেশগুলো, চীনের এই উত্থানকে হুমকী হিসেবে দেখছে। এই দেশগুলো চীনের আবির্ভাবকে মেনে নিতে কেবলই যে প্রস্তুত নয় তা নয়, বরং আগ্রহীও নয়। আর তাই তারা চীনের নামের প্রপাগাণ্ডা ছড়ায়।  পশ্চিমা মিডিয়াগুলো বায়াস,তার চীন বিরোধী সংবাদ প্রকাশ করে বলে অধিকাংশ  চীনা নাগরিক মনে করেন।  মূলত উলফ ওয়ারিয়র কূটনীতির দ্বারা চীন বিশ্ববাসীর সামনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে চাই। করোনা ভাইরাস অতিমারী চলাকালীন সময়ও চীন এই কূটনৈতিক পন্থার দ্বারা করোনা মোকাবিলায় সে যে অগ্রগামী ও  পরাশক্তি তা বোঝানোর চেষ্টা করে চলেছে।

চীনের দৃষ্টিভঙ্গি  অনুযায়ী উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি হলে চীনের প্রতি অন্যান্য দেশগুলোর শত্রুতার ও অন্যাযতার মোক্ষম জবাব, বিশেষত মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যাই এই বছরের শুরুতে চীন ও মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র একে অপরে সাংবাদিক বহিষ্কারের প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়। ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের মতামত বিভাগে চাইনা ইজ দ্যা রিয়েল সিক ম্যান অফ এশিয়া নামের কলাম প্রকাশের পর ওয়ালস্ট্রিট কতৃপক্ষ ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানালে চীন তাদের তিনজন সাংবাদিক চীন থেকে বের করে দেয়। এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ অল্প সময়ের ব্যবধানেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের পাচটি মিডিয়া আউটলেটকে তাদের কর্মকর্তাদের নিবন্ধন করার নোটিশ দেয় এবং কর্মকর্তাদের সংখ্যা কমিয়ে দেয়। এরও প্রতিক্রিয়া জানাতে চীন আরো আমেরিকান সাংবাদিকদের তাদের দেশ থেকে বের করে দেয়।

তৃতীয়ত,চীন তার জাতীয় শক্তি ও নমনীয় শক্তি (Soft power) সক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা  করতে এই কূটনৈতিক পন্থা অবলম্বন করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের সর্বদা কূটনীতিক লাড়াই বিরাজ মান। তার একে অপরকে দোষারোপের খেলায় নিযোজিত যখন তাদের করোনা ভাইরাসের মত বিষয় মোকাবেলা করতে একত্রে কাজ করা উচিত ছিলো।
জাতি হিসেবে চীন প্রাচীন ঐতিহ্য ও সভত্যা ও সম্মৃদ্ধির অধিকারী তাই চীনের উচিত নিজেকে বিনয়ী, পরোপকারী আর মহানুভব হিসেহে গড়ে তোলা। কিন্তু এক্ষেত্রে বাধা সেই পশ্চিমা শক্তি সমূহের চীনা বিরোধী মনোভাব, যারা মনে করে চীনের রাজনৈতিক, মতাদর্শ ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতা পৃথিবী বাকী দেশগুলার জন্য হুমকী স্বরুপ। আর তাই চীন তার নমনীয় শক্তি আর জাতীয় শক্তি সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খুজে বের করতে চাই।

বিংশ শতকে যে চীন ছিলো কৃষিপ্রধান দেশ, অর্থনীতিতে মাঝারি মানের দেশ, এক একবিংশ শতকে সেই চীন পরাক্রমশালী হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। চীন পূর্বের তার সেই প্রথাগত নমনীয় কূটনীতি থেকে বেরিয়ে এসে আগ্রাসী কূটনীতি অনুসরণ করছে তার জাতীয় শক্তিকে সুসংহত করতে, বিশ্বব্যাপী চীনের প্রতি যে নেতিবাচক মনোভাব আছে তা বদলে দিতে। চীনা কূটনৈতিকদের প্রত্যেকে আজ এক একজন উলফ ওয়ারিয়র যারা জাতীয় স্বার্থের জন্য প্রতিপক্ষকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন দেখার বিষয় চীনের এই আগ্রাসী কূটনীতি তথা পররাষ্ট্রনীতি কতটা চীনের উত্থানের পথকে সুসংহত করে একবিংশ শতকের রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

কূটনীতি

স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে সমাজতন্ত্র মোকাবেলায় মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের ধারকনীতি

Published

on

স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে সমাজতন্ত্র মোকাবেলায় মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের ধারকনীতি

আন্তজার্তিক রাজনীতির ইতিহাসে স্নায়ুযুদ্ধ একটি অন্যতম ঘটনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) এর মধ্যে আদর্শগত দ্ব›দ্ব ইতিহাসে স্নায়ুযুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৯১৭ সালে সাড়াজাগনো রুশ বিপ্লবের দ্বারা রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা পায়। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল পুজিবাদী আর্দশের অন্যতম ধারক ও বাহক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন মিত্রপক্ষে যুদ্ধ করে সম্রাজ্যবাদী জামার্ণ জাপান এবং ইতালীকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটায়। কিন্তু যুদ্ধের শেষ হওয়ার পর মিত্রপক্ষের এই দুই শক্তি আরেক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে আর যেটি ছিল বিশ্বব্যাপী নিজ নিজ আর্দশ প্রতিষ্ঠাকরণের যুদ্ধ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পুঁজিবাদী আর্দশের অনুসারী হোক আর সোভিয়েত ইউনিয়ন চাইত অধিকাংশ দেশ তার সমাজতন্ত্রের আর্দশে সরকার ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলুক। আর্দশ বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি , ঠান্ডা লড়াই বা স্নায়ু যুদ্ধ বলেই পরিচিত ( ইংরেজিতে ক্লোড ওয়্যার) ।

স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে সমাজতন্ত্র মোকাবেলায় মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের ধারকনীতি
ছবি :সংগৃহীত


পঞ্চাশের দশকের সোভিয়েত ইউনিয়ন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ ছিল না বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক অগ্রসরমান ছিল। পর পর দুটি বিশ্বযুদ্ধ এশিয়া,ইউরোপ, আফ্রিকা লাটিন আমেরিকা সহ সারা পৃথিবীর অর্থনীতিকে নাজুক করে দিয়েছিল। পৃথিবী ব্যাপী দুর্বল অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আর্দশের ব্যাপক বিস্তারের মনোযোগী ছিল। এসময়কালে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, পশ্চিম ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার দেশ সমূহ সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকতে থাকে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করত সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক আদর্শ ডোমিনো ইফেক্টের মত অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়বে। অর্থাৎ কোন একটি দেশে সমাজতন্ত্রীরা ক্ষমতাসীন হলে তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে সমাজতন্ত্র ছড়িয়ে পড়বে। অনেকগুলো তাসকে পাশাপাশি দাড় করিয়ে রেখে একটিকে টোকা দিলে যেমন বাকি তাসগুলোও একটির পর একটি পড়তে থাকে এই ডোমিনো ইফেক্ট অনুযায়ী সমাজতন্ত্র ছড়িয়ে পড়বে।

স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে সমাজতন্ত্র মোকাবেলায় মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের ধারকনীতি
ডোমিনো ইফেক্ট অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে সমাজতন্ত্রের বিস্তার, ছবি :সংগৃহীত


সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রী আদর্শের এই ডোমিনো ইফেক্ট মোকাবেলা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে যে নীতি গ্রহণ করে তাই হল ধারকনীতি। ধারকনীতির ধারনাটি পাওয়া যায় তৎকালীন মস্কোতে নিয়োজিত মার্কিন কূটনীতিক জর্জ এফ কেনানের কাছ থেকে। তিনি ১৯৪৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানকে এক বার্তায় বলেন ,
“মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র হিটলারে সমারিক পরিকল্পনার চাইতে ভয়ংকর ও দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে চলেছে”


ইতিহাসে এই বার্তাটি লং টেলিগ্রাম নামে পরিচিত। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে কেনান ফরেন এ্যাফেয়ার্সে মিস্টার এক্স নামে দ্যা সোর্চ অফ সোভিয়েত কনফ্লিক্ট শিরোনামে তার এ নীতি প্রকাশ করেন। যেখানে বলা হয় যেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় সামরিকভাবে শক্তিশালী এবং সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক আর্দশের সম্প্রসারণ হচ্ছে তাই সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবেলার জন্য মার্কিন নীতি হওয়া উচিত দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রতিরোধমূলক। পরবর্তীতে কেনানে এই মতবাদ বা দৃষ্টিভঙ্গিকে মার্কিণ প্রশাসন ধারকনীতি হিসেবে গ্রহণ করে।


মোটাদাগে মার্কিন প্রশাসনের এই ধারকনীতি গ্রহণের পিছনে বেশ কিছু কারণ ছিল যেগুলো হলো


 ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক সরকার অবৈধ। অবৈধ সমাজতান্ত্রিক সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থি। এই সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে পুঁজিবাদী আর্দশের সম্প্রসারণ করতে হবে।

 সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক আর্দশ কিংবা চীন, কিউবার মত দেশগুলোর সমাজতান্ত্রিক আর্দশকে তাদের সীমানার মধ্যেই আটকে রাখতে হবে তা যেন ডোমিনো ইফেক্টের মত অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে না পড়ে।

 পারমানবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা, সামরিক প্রতিযোগিতা , এবং মহাকাশ প্রতিযোগিতার দ্বারা সোভিয়েত ইউনিয়নকে কোণঠাসা করে রাখা যাতে সমাজতান্ত্রিক আর্দশের সম্প্রসারণে যথেষ্ট সুযোগ না পায়।

 হোয়াইট হাউজ, ক্রেমালিন হট লাইন স্থাপন বিভিন্ন ইস্যুতে আলাপ-আলোচনা, সল্ট-১, সল্ট-২ এবিএম ট্রিট্রি, এনপিটি , পিটিবিটি মত নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্রহ্রাস চুক্তি প্রভৃতি সহায়তার দ্বারা সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ।

 ধারকনীতির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়েনের অভ্যন্তরে গন্ত্রতন্ত্র,মুক্তচিন্তা, বাক-স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উন্নত জীবনযাত্রার চিত্র-প্রচার করা। যাতে সমাজতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। মিখ্ইাল গর্ভাচেভের গ্লাসনস্ত-পেরেস্ত্রইকা নীতি গ্রহণের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্দেশ্যের বাস্তবায়ন হয়েছিল।

উল্লেখিত উদ্দেশ্যে গুলো বাস্তবায়নের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ধারকনীতির বাস্তবায়ন করে।

ট্রুম্যান ডকট্রিন :


ধারকনীতি বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ ছিল ট্রুম্যান ডকট্রিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের এ নীতির মূল কথা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমাজতান্ত্রিক আদর্শের হুমকী এবং কতৃত্বাবাদী আর্দশের হুমকীতে থাকা সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে রাজনৈতিক , সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা করবে।

১৯৪৭ সালের ১২ মার্চ মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ভাষণের মাধ্যমে এ নীতি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন যেসকল দেশ অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং বহি:চাপ মোকাবেলা করতে বদ্ধ পরিকর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদেরকে সহায়তা করবে। এ সময় ট্রুম্যান গ্রীস ও তুরস্ককে সোভিয়েত কমুনিস্ট প্রভাব হতে মুক্ত করতে ৪০০ মিলিয়ন অর্থনৈতিক সাহায্যের প্রস্তাব করে।

স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে সমাজতন্ত্র মোকাবেলায় মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের ধারকনীতি
১৯৪৭ সালের ১২ মার্চ মার্কিন কংগ্রেসে ট্রুম্যান ডকট্রিন প্রস্তাব, ছবি :সংগৃহীত


ট্রুম্যান ডকট্রিনের দ্বারাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে। কেবল গ্রীস এবং তুরস্ককের জন্য অর্থসহযোগিতার প্রস্তাব করা হলেও অধিকাংশ বলকান দেশ এবং পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহে এ নীতির বাস্তবায়ন করে মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপে তার মিত্ররাষ্ট্র তৈরী হওয়ার পাশাপাশি সোভিয়েত বিরোধী পক্ষ তৈরী করতে সমর্থ হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে সমাজতন্ত্র মোকাবেলায় মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের ধারকনীতি

মার্শাল পরিকল্পনা :


দুই বিশ্বযুদ্ধের ফলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ইউরোপীয় অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে ইউরোপে কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্রের প্রসার ঘটছিল। বিশেষত পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহের অর্থনৈতিক দুর্দশা ও বিপর্যয়ের সুযোগ নিয়ে কমিউনিস্টরা বিশেষ জনপ্রিয় ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে। আর তাই পশ্চিম ইউরোপের ১৬ টি দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে দ্বারা সমাজতন্ত্রকে মোকাবেলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্শাল প্লান ঘোষণা করে যা ছিল ১৭ বিলিয়ন ডলারের (বর্তমান প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার) অর্থসহায়তা। মার্শাল প্ল্যান ইউরোপিয়ান বিকভারি প্লান নামেও পরিচিত।

আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রী জর্জ মার্শাল ১৯৪৭ সালের ৫ জুন ‘হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের” প্রবেশিকা অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে তার বিখ্যাত মার্শাল প্ল্যান ঘোষণা করেন এবং তিনি বলেন- বিশ্বের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। অন্যথায় শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিরতা কোনটিই সম্ভব নয়।

স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে সমাজতন্ত্র মোকাবেলায় মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের ধারকনীতি
১৯৪৮ -১৯৫২ মার্শাল প্লানের বিভিন্ন দেশে ব্যয়িত অর্থ , ছবি :সংগৃহীত

প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ১৯৪৮ সালে ৩ এপ্রিল এ মার্শাল প্লানের অনুমোদন দেন। মার্শালের প্লানের অর্থের ২৪% ব্রিটনে, ২১% ফ্রান্স, ১১%ইতালী, ১১%পূর্ব জার্মাণী, ৮%নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ,গ্রিস অস্ট্রিয়াসহ অন্যান্য দেশে জন্য ২৫ % ব্যয় করা হয়।

স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে সমাজতন্ত্র মোকাবেলায় মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের ধারকনীতি
বিভিন্ন দেশে মার্শাল প্লানের ব্যয়িত অর্থ , ছবি :সংগৃহীত


মার্শাল প্লান শুধু ইউরোপে কমিউনিস্ট প্রসারে ভূমিকা পালন করেনি বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরাশক্তি হিসেবে ইউরোপীয় শক্তি ব্রিটেন, ফ্রান্স, নেদাল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালী সহজেই মেনে নেয় এবং সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট মিত্র হয়ে উঠে।

ন্যাটো, সিয়েটো ও মিডো প্রভৃতি সামরিক জোট প্রতিষ্ঠা:


ট্রুম্যান ডকট্রিন , মার্শাল প্ল্যান ছিল মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের ধারকনীতির অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপ। ১৯৪৮ সালে বার্লিনে মুদ্র সংস্কারকে কেন্দ্র করে সোভিয়েত ইউনিয়ন বালির্ন ব্লকেড দিলে মার্কিন প্রশাসনে চূড়ান্তভাবে অনুধাবন করে যে কেবল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে সোভিয়েত ইউনেয়িনকে আটকানো সম্ভব নয় । কার্যকরভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক এবং আদর্শিক প্রভাব থেকে ইউরোপ এবং উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলকে মুক্ত রাখতে গেলে সামরিক পদক্ষেপ অনিবার্য।

স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে সমাজতন্ত্র মোকাবেলায় মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের ধারকনীতি
ছবি :সংগৃহীত


সমাজতন্ত্রের চাপ যেন তীব্র না হয় এজন্য যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপী ও উত্তর আটলান্টিক দেশ কানাডা ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালী আইসল্যান্ড, বেলজিয়াম , ডেনমার্ক, নরওয়ে,পর্তুগালকে নিয়ে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠা করে (Nato ) প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তী জামার্নী, গ্রীস তুরস্ক এই সামরিক জোটে যোগদান করে। পশ্চিম ইউরোপে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্ভাব্য সামরিক আক্রমণ প্রতিহত করতে ন্যাটো ফরওয়ার্ড স্ট্রাটেজি গ্রহণ করে।


মধ্যপ্রাচ্যকে সমাজতন্ত্রের প্রভাব থেকে ম্ক্তু রাখতে মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্র ধারকনীতি অনুযায়ী মিডিল ইস্ট ডিফেন্স অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠা করে।

স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে সমাজতন্ত্র মোকাবেলায় মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রের ধারকনীতি
সিয়েটো চুক্তিভুক্ত দেশসমূহ, ছবি : সংগৃহীত


ইন্দোচীন লাওস ভিয়েতনাম কম্বোডিয়ায় সমাজতন্ত্রের প্রভাব মোকাবেলায় ১৯৬৮ সালে বৃটেন, ফ্রান্স, ফিলিপাইন থাইল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া পাকিস্তানকে নিয়ে সাউথ ইস্ট এশিয়ান ট্রিট্রি অর্গানাইজেশন (সিয়েটো) প্রতিষ্ঠা করে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক অনুসৃত ধারকনীতির এ সকল পদক্ষেপের প্রভাব বেশকিছু দেশে লক্ষ্য করা যায়। পঞ্চাশের দশকে কোরিয়া যুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়াকে সমর্থনের মাধ্যমে পুজিবাদী বøকে সমর্থন করতে থাকে। ধারকনীতি অনুযায়ী সামরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে দক্ষিণ কোরিয়াকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি কোরীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ৩৮ ডিগ্রি অক্ষরেখা বরাবর কোরিয়া বিভক্ত করে। উত্তরকোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া নামক দুটো দেশের সৃষ্টি হয় যেখানে উত্তরকোরীয়া সমাজতান্ত্রিক দেশ এবং দক্ষিণ কোরিয়া পুজিবাদী দেশ।

১৯৬২ সালে কিউবার মিসাইল সংকটের কথা বলতে গেলে দেখা যায় যে সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবায় মিসাইল স্থাপন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নিকট হুমকী সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র কিউবাকে আক্রমণ করার নীতি থেকে সরে আসে। ধারকনীতি অনুযায়ী হট লাইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ সময় হোযাইট হাইজ এবং ক্রেমালিন যোগাযোগ স্থাপন হয়।
৬০ ও ৭০ এর দশকে ভিয়েতনামে মার্কিণ আগ্রসানের কারণে দেশটি উত্তর ভিয়েতনাম দক্ষিণ ভিয়েতনাম দুই ভাগে বিভক্ত হয়। উত্তর ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম পুজিবাদী সরকার গঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ সময় ধারকনীতি বাস্তবায়নের জন্য সামরিকভাবে ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ও বোমাবর্ষণ করতে থাকে।

সার্বিক প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত ধারক নীতির লক্ষ্য সমাজতন্ত্রের প্রভাব রোধ করা হলেও এর অন্তরালে ছিল মার্কিন আধিপত্য বিস্তার করা এবং বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটানো। যুক্তরাষ্ট্র তার এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কখনো ট্রুম্যান ডকট্রিনের মত কূটনৈতিক নীতি গ্রহণ করেছে, কখনো মার্শাল প্ল্যানের মত অর্থনৈতিক সহায়তার নামে নিজ ব্লকের দলভারি করেছে, কখনো বা ন্যাটো গঠনের মত সামরিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে মার্কিন ধারক নীতি ছিল মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সুনিপুণ কৌশলের বহিঃপ্রকাশ।

তথ্যসূত্র

Kennan and Containment, 1947

The History of Containment Policy- George Kennan and American Foreign Policy During the Cold War – https://www.thoughtco.com/

Truman Doctrine Facts & Worksheets – https://kidskonnect.com/

Marshall Plan- HISTORY.COM EDITORS

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

আন্তর্জাতিক

মোদীর পররাষ্ট্রনীতি এবং বাংলাদেশ-ভারত অমীমাংসিত বিষয়বলী

Published

on

মোদীর পররাষ্ট্রনীতি এবং বাংলাদেশ-ভারত অমীমাংসিত বিষয়বলী

বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় অতিক্রম করছে বলে ভারত ও বাংলাদেশের নেতারা দাবী করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের নিরঙ্কুশ সমর্থন না পাওয়া, তিস্তা সহ ৫৪ টি অভিন্ন নদীর পানি বন্ঠন সমস্যা এবং আসামের সাম্প্রতিক সময়ের নাগরিক পঞ্জী বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের সোনালী অধ্যায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছেন। রোহিঙ্গা সংকটের সমধানে ভারতের সমর্থন, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবন্ঠন সমস্যা সহ অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান আমারা কেন পেলাম না তা বুঝতে গেলে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির আর্দশ ও গতি, প্রকৃতি অনুধাবন জরুরী।

মোদীর পররাষ্ট্রনীতি এবং বাংলাদেশ-ভারত অমীমাংসিত বিষয়বলী
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রাণালয়ের মুখপাত্র রাভিস কুমার দুইদেশের সম্পর্কে সোনালী অধ্যায় অভিহিত করে টু্ইট করেছেন , ছবি :সংগৃহীত


ভারত তার পররাষ্ট্রনীতি বা বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতবর্ষের সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধান অমাত্য কোটিল্যর একটি শিক্ষাকে অনুসরণ করে থাকে।

“ক্ষমতা অর্জনের লোভ ও অন্য দেশ বিজয়ের আকাক্সক্ষা কখনও মন থেকে মুছে ফেল না এবং সীমান্তবর্তী সবাইকে শত্রু বলে মনে করবে।”

নিজস্বার্থে প্রতিবেশী ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের উপর আধিপত্যমূলক কর্তৃত্ব পরায়ণতা বজায় রাখতে চায় ভারত, যা ছিল চাণক্য অর্থশাস্ত্রের বিদেশনীতির মূলকথা।

অখন্ড ভারতের স্বপ্নদ্রষ্টা পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’ বইয়ে বহুল প্রচলিত ‘ইন্ডিয়া ডকট্রিন’ (নেহেরু ডকট্রিন)-এ তিনি বলেন, ভারত অবশ্যই তার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করবে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবে।


ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান শঙ্কর চৌধুরীর বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে দিল্লীর রাডারের নিয়ন্ত্রন থেকে কোনভাবেই বের হতে দেওয়া যাবে না। ।


সুতরাং ঐতিহাসিকভাবে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ভারত কর্তৃত্ববাদ ও প্রয়োগবাদ অনুসরণ করে। কর্তৃত্ববাদ রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে একচ্ছত্র আধিপাত্যকে নির্দেশ করে থাকে। মূলত প্রয়োগবাদ ( Pragmatism) রাষ্ট্রের ব্যবহারিক, ফলপ্রসূ এবং কার্যকর দিকগুলোর উপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। প্রয়োগবাদ দার্শনিক মতবাদ হিসেবে যতটা না বেশি পরিচিত তার বেশি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বেশি স্বীকৃত। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত তার পররাষ্ট্রনীতির দ্বারা সর্বোচ্চ অর্জন করতে চাই আর তাই তার পররাষ্ট্র নীতির দার্শনিক ভিত্তি ও কার্যকর পদ্ধতি হল প্রয়োগবাদ ও কর্তৃত্ববাদ।

ভারতের সংবিধানের ৫১ নং ধারা ও নির্দেশাত্মক নীতির বিদেশনীতিতে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা বলা হয়।


অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পারিক শ্রদ্ধা, একে অপরের বিরুদ্ধে অনাক্রমণ,সমতা ও পারস্পারিক সুবিধা অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এই পাঁচটি বিষয়কে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মূল স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হত, যাকে পঞ্চশীল নীতি বলা হত । ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চশীল নীতির বদল করেছেন। বিজেপি এর ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটি পূর্বের পঞ্চশীল নীতিকে পঞ্চামৃতে রূপান্তর করেছে। সম্মান, ( Dignity ) সম্মবাদ ( Dialogue) সম্বৃদ্ধি (Shared prosperity) সুরক্ষা (Regional  & Global Security ) সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক ভিত্তি ( Cultural & Civilization link ) এই পাঁচটি নীতিকে বর্তমান মোদী সরকার পররাষ্ট্র নীতির নতুন প্রয়োগবাদী পাঁচ স্তম্ভ ব্যবহার করে সর্বোচ্চ অর্জন দ্বারা শক্তিশালী ভারত গঠনে বদ্ধ পরিকর।

শক্তিশালী ভারত গঠনের ডাক দিয়ে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের বিজেপী সরকার। পূর্বে ভারত তার পররাষ্ট্রনীতি তথা বৈদেশিক নীাতিতে লুক ইস্ট বা পূর্বে তাকাও নীতি অনুসরণ করত অর্থাৎ ভারত তার সম্মৃদ্ধি,বাণিজ্য, বিনিয়োগ তথা বৈদেশিক ক্ষেত্রে পূর্বে দেশ চীন, জাপান এবং কোরীয়াকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করত। মোদী সরকার দুই দশকের “লুক ইস্ট” পলিসি বা পূর্বে তাকাও নীতি থেকে বেরিয়ে আসে। অ্যাক্ট ইষ্ট পলিসি (নিজেকে পূর্বের দেশ চীন,জাপান, কোরীয়ার সমকক্ষ মনে করছে ভারত) গ্রহন করেছে যা তাকে ভবিষ্যত পরাশক্তি মর্যাদা ( সম্মান, ) দিবে বলে ধারণা করা হয়।

ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে ‘গুজরাল ডকট্রিন’ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ইন্দ্রকুমার গুজরালের গুজরাল ডকট্রিন বলা হয়েছে আঞ্চলিক কানেকটিভিটির কথা, ট্রানজিটের কথা। মোদী এই নীতির নিজেস্ব সংস্কারণ দাঁড় করিয়েছেন যাকে বলা হয় মোদী ডকট্রিন। এ নীত অনুযায়ী উপআঞ্চলিক সহযোগীতা, আঞ্চলিক যোগাযোগ তথা ট্রানজিট এবং কানেক্টিভিটিকে ব্যবহার করে সম্বৃদ্ধি অর্জন করতে চাই ভারত। প্রথম মেয়াদে মোদীর পররাষ্ট্রনীতি বা মোদি ডকট্রিনের প্রতিবেশী প্রথম নীতির মাধ্যমে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটিও ট্রানজিট সুবিধা আাদায় করে নেয়। যার মধ্যে উল্লেযোগ্য হল বাংলাদেশের ট্রানজিট প্রদান,সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে দেওয়া, ভারতীয় পন্য পরিবহনের জন্য সোনালী চতুর্ভুজ করিডোর, ৩৩০০ কি.মি. বিস্তুৃত পূর্ব পশ্চিম করিডোর,১৩৬০ কি.মি জুড়ে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সংযোগকারী ত্রিপাক্ষিক সড়কযোগাযোগ ব্যবস্থা ভারত মিয়ানমারের মধ্যে কলাদান মাল্টিমডেল প্রজেক্ট এবং ২৮০০ কি.মি বিস্তুৃত বাংলাদেশ,চীন,ভারত ও মিয়ানমার সংযোগকারী-অর্থনৈতিক করিডোর।

দ্বিতীয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদী প্রতিবেশীর প্রথম নীতি থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিবেশীর প্রতিবেশী নীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে ভারত প্রচুর জ্বালানী তেলের প্রয়োজন রয়েছে। বৈরী প্রতিবেশ পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের প্রতিবেশী খনিজ তেল সম্বৃদ্ধ ইরানেরা সাথে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রেখে স্বার্থ আদায় করতে চাই মোদী। চীনের প্রতিবেশী রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে সেপ্টেম্বরে মোদীর রাশিয়া সফর করে এবং ভ্লাদভস্টক থেকে চেন্নাই পর্যন্ত নতুন সমুদ্র পথের প্রস্তাবনা করে। একই ভাবে চীনের আরেক প্রতিবেশী সাংহাই কোরঅপারেশনের সভাপতি দেশ কিরগিস্তানের সাথেও সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি লক্ষ্যণীয়। চীন দক্ষিণ চীন সাগর থেকে শুরু করে ভারত মহাসাগর দিয়ে তার মহাপরিকল্পা বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বাস্তবায়ন করতে চাই।

ভারত মহাসাগের চীনের উপস্থিতি ভারতকে রীতিমত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। চীনের প্রভাব বৃদ্ধিরোধে এবং এই অঞ্চলের সুরক্ষা তথা বৈশ্বিক নিরাপত্তা জোরদার করতে ভারত অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারত মহাসাগরে মলবার প্রণালীতে মালবার মহড়া চালায় যাকে চতুভূর্জ উদ্দ্যোগ বা কোয়ার্ড ল্যাটেরাল ডিপ্লোমেসি বলা হয়ে থাকে।
প্রথম মেয়াদে মার্কিন ইন্দোপ্যাসিফিক স্ট্রাটেজির অনত্যম সমর্থক ছিল এবং এ নীতি বাস্তবায়নের অন্যতম সহায়ক ছিল মোদীর ভারত। কিন্তু একবিংশ শতকের বহুমেরু কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় ভারত সামষ্টিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে বেশী প্রাধ্যান দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ভারত উন্নত দেশের জোট জি-২০ কে গুরুত্ব দিচ্ছে। সামষ্টিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে ৩টি বিষয়ের কথা বলে সেগুলো হলো ১. সামুদ্রিক নিরাপত্তা/সহযোগিতা ২.সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ৩.রপ্তানি বহুমুখীকরণ। এই ৩টি ক্ষেত্রে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি হলো প্রয়োগবাদী পররাষ্ট্রনীতি।

এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য ইন্দো-মার্কিন পরমানু চুক্তি ও মালবার প্রণালীতে মালবার মহড়া ভারতের প্রয়োগবাদী পররাষ্ট্রনীতির প্রকাশ করে।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান থেকে যেন সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার প্রবেশ না করে এজন্য সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরে অবকাঠামোগত ও রাজনৈতিক পরিবর্তন করছে ভারত এবং আফগানিস্তানের সাথে অংশীদারীত্বমূলক সম্পর্ক করছে।


রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে পশ্চিমা দেশসহ,আফ্রিকা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশের সাথে বানিজ্য সম্পর্কোন্নয়ন করতে প্রয়োজনে করতে বার্ডেন শেয়ার করতে রাজি ভারত।
মহাত্মা গান্ধীর অহিংস ভারত জহরলাল নেহেরুর নিপপেক্ষ ভারত একবিংশ শতকের রাজনীতিতে মোদীর প্রয়োগবাদী এবং কতৃত্বাবাদী ভারতে পরিণত হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় আমার মোদীর ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে প্রয়োগাবদী পররাষ্ট্রনীতি বলতে পারি।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বর্তমান সময়কে সোনালী অধ্যায় বা গোল্ডেন এজ যা কিছুই বলি না কেন প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সমর্থণ, পানি বন্ঠন সমস্যার সমাধান কিংবা আসামের নাগরিক পঞ্জী সহ বিভিন্ন বিষয়ে আমদের শঙ্কার অবসান হবে তা বলা যাবে না।


রোহিঙ্গা সংকটে ভারতের নিরঙ্কুশ সমর্থন না পাওয়ার অন্যতম কারণ হল ভারতের প্রয়োগবাদী এ্যক্ট ইস্ট নীতি এই নীতির মূল কেন্দ্রে রয়েছে মিয়ানমার। মিয়ানমারে ভারতের ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে, সামরিক সম্পর্ক রয়েছে এবং ভারত মিয়ানমারের থেকেই পূর্বে দেশ চীন, জাপানের সমকক্ষ হয়ে উঠতে চাই। আর এই কারণেই ভারতে জাতিসংঘে ভোটদানে বিরত ছিল। রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশ সমর্থণ দিয়ে ভারত কখনই মিয়ানমারকে চীন, রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিবে না।


তিস্তার পানি সুষ্টু পানি বণ্ঠণে প্রশ্নে বারবার চুক্তি হওয়ার প্রতিশ্রæতি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোন চুক্তিই স্বাক্ষরিত হয় না। তিস্তার পানির বদলে আমরা তোর্ষার পানির প্রস্তাব পায়। আর এবারের চুক্তি অনুযায়ী আমরা তো ফেনী নদীর ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের অনুমতি ভারতকে দিয়ে এলাম। শুকনো মৌসুমে পানি প্রত্যাহার এবং বর্ষার মৌসুমে বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টি করা ভারতের কর্তৃত্ববাদের বহি:প্রকাশ বৈ আর কিছুই না।


ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্ববৃন্দ বিভিন্ন সময়ে বলে থাকে আসামের নাগরিক পঞ্জী থেকে বাদ পড়াদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। পরারাষ্ট্রমন্ত্রী জয়সংকর বাংলাদেশ সফরে এসে বলেন এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা এমনি নিউইয়র্কে সাইডলাইন বৈঠকে মোদী প্রধান শেখ হাসিনাকে বলেন এটি ভারতে অভ্যন্তরীণ সমস্যা এ নিয়ে বাংলাদেশের ভাবনার কিছুই নেই। অথচ প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে এই বিষয়ে খুব বেশী আলোচনা হয়নি বলে জানা গেল। কিন্তু ভারত এই নাগরিক পঞ্জীকেই ডায়াসফোর কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারে অর্থাৎ কৌশলে তাদেরকে বাংলাদেশের বিছিন্ন জনসংখ্যা প্রমাণ করে পুশ ব্যাক করতে পারে।


প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে পূর্বের ন্যায় ৭টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হল কিন্তু বাংলাদেশ ভারত অমীমাংসিত বিষয়গুলোর স্থায়ী সমাধান অর্থাৎ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের সহযোগীতা, ৫৪ টি অভিন্ন নদীর পানি বন্ঠন, আসামের নাগরিক পঞ্জীর শঙ্কার কিংবা সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার মত বিষয়গুলোর স্থায়ী সমাধান হওয়ার বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বর্তমান ক্ষমতাসীন মোদীর সরকারের কতৃত্ববাদী ও প্রয়োগবাদী পররাষ্ট্র নীতি।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

সর্বাধিক পঠিত