Connect with us

ইতিহাস

কাশ্মীরের ইতিহাস : ভূস্বর্গ থেকে রণক্ষেত্র

Published

on

কাশ্মীরের ইতিহাস : ভূস্বর্গ থেকে রণক্ষেত্র

 কাশ্মীর নামটি চোখে পড়লেই মনের কোণে ভেসে আসে এর অপরূপ সৌন্দাযের বিমোহিতকর দৃশ্যসমূহ।শ্রীনগর উপত্যকার মনোরম দৃশ্য মুগ্ধ করবে যে কোন প্রকৃতি প্রেমীকে। পর্বতের উপর পতিত সূর্যের আলো ও ভাসমান মেঘ মন ভোলাবে আপনকে, গভীর নীল আকাশ মনকে শান্ত এবং সতেজ করে তুলবে। তাছাড়া ডাল হ্রদ, হজরত বল মঠ, (দরগাহ) শালিমার বাগ এবং নিশাত বাগের অবস্থানের কারণে কাশ্মীর একটু ভিন্ন ভাবেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত। অভ্য়ারণ্য রোপওয়ে, এবং অপূর্ব ট্র্যাকিং রূট সহ পহলগাও, অত্যন্ত সুন্দর উপত্যকা এবং কাশ্মীরের রয়েছে গুলমার্ক,স্কি রিসোর্ট এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ গলফ মাঠ যা যেকোন পর্যটককেই মুগ্ধ করবে নি:সন্দেহ।

কাশ্মীরের ইতিহাস : ভূস্বর্গ থেকে রণক্ষেত্র
প্রাকৃতিক পরিবেশ, ছবি: ইউস্প্লাস

এই সকল সৌন্দার্য মন্ডিত স্থানের কারণেরই হয়তো মোঘল সম্রাটদের  নিকট এটি “ভূ-স্বর্গ”গান্ধিজির নিকট আলোর কিরণ”কিংবা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নিকট ‘শাহরগ’ নামে পরিচিত।

কাশ্মীরের ইতিহাস : ভূস্বর্গ থেকে রণক্ষেত্র
ডাল হ্রদ কাশ্মীর, ছবি : ইউস্পালাস

কাশ্মীর মধ্য হিমালয়ে অবস্থিত, যার দৈর্ঘ্য ১৩৫ কিলোমিটার। এখানে বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম, তবে মাঝে মাঝে বৃষ্টির  দেখা মেলে।

কাশ্মীরের ইতিহাস : ভূস্বর্গ থেকে রণক্ষেত্র
লাদাখের দৃশ্য, ছবি : ইউস্পালাস

ওয়াল্টার ও লরেঞ্জের বর্ণনায়, “কাশ্মীর হলো, কালো কালো পর্বত মালার মধ্যে সাদা পায়ের ছাপের মতো একখন্ড জমিন”।

হিন্দু মিথোলজি অনুসারে, ‘কাশ্চাপ’ নামক একজন সাধু তীর্থযাত্রা কালে স্বতিস্বর নামে জলাশয় সম্পর্কে জানতে পারেন যা ছিল ভূতের দখলে। সাধুর ইচ্ছায় দেবী সারিকা পক্ষীর আকারে সেখানে উপস্থিত এবং স্বর্গীয় পাথরের সাহায্যে ভূতদের বিতড়িত করেন। পরবর্তীতে ঐ পাথর থেকে সৃষ্টি হয় পর্বতমালার যা বর্তমানে “কাশ্মীর “ নামে পরিচিত।

তবে, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুসারে,রাশিয়ান প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেটর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে এই উপত্যকা সৃষ্টি হতে পারে।

বর্তমান পরিসংখ্যান অনুসারে কাশ্মীরে ৬৮.৩% মুসলিম, ২৮.৪% হিন্দু,১.৯% শিখ, ০.৯% বৌদ্ধ এবং ০.৩% খ্রীস্ট ধর্মের মানুষ বাস করে। কাশ্মীরে ইসলাম ধর্মের আগমণ ঘটে বিভিন্ন সূফী ও পীরদের মাধ্যমে যা সরাসরি আরব থেকে মধ্য এশিয়ার ভায়া হয়ে কাশ্মীরে পৌছেছে।

১৮৮৯ সালে কাশ্মীর দখল করে শিখরা। তাদের মূল দরবার ছিল লাহোরে এবং রাজা ছিলেন রঞ্জিত সিং, ১৮৩৯ সালে রঞ্জিত সিং মৃত্যুবরণ করেন এবং শিখ সামাজ্র্য দুর্বল গহয়ে পড়ে।

১৮৪৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর ব্রিটিশ জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। শিখ সম্রাজের অধীনে জম্মুর ভোগরা জমিদার গুলাব সিং শিখদের কোন সাহায্য করেনি। ফলে এ যুদ্ধে ব্রিটিশরা জয়লাভ করে এবং শিখ সাম্রাজ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অন্তর্গত হয়। ব্রিটিশদের প্রতি আনুগাত্য প্রকাশের পুরস্কার হিসেবে ১৮৪৬ সালের ১৬ মার্চ, অমৃতসরে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ৭৫ লাখ রুপির বিনিময়ে গুলাব সিংকে কাশ্মীরের কয়েকটি পাহাড়ি জেলার মালিকানা দেয়া হয়। এই কেনা বেচাকে মহাত্ম গান্ধী “ডিড অব সিল” আখ্যা দিয়েছেন। ১৭০ বছর অতিক্রম হয়ে গেলেও ৭৫ লাখ রুপির এই ক্রয় চুক্তি “কাশ্মীর সমস্যার মূল হিসেবে বিবেচিত হয়।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন অবসান কালে ৫৬২ টি  ‘প্রিন্সলি স্টেট” কে ভারত কিংবা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে তিনটি স্টেট হায়দ্রাবাদ, জুনগর, এবং জ্ম্মু-কাশ্মীর স্বাধীনত থাকতে চায়। জুনগর ও হায়দ্রাবাদের জনগন ছিল হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ট তবে রাজা ছিল মুসলিম।জনগণ বিক্ষোভ করে ভারতের সাথে অন্তর্ভূক্তির জন্য। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এ্যাকশানে দুটি রাজ্য ভারতের দখলে চলে আসে। এবং গণভোটের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হয়। অন্যদিকে জ্ম্মু ও কাশ্মীর মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ট কিন্তু রাজা ছিল হিন্দু হরি সিং। হরি স্বাধীন থাকতে চেয়েছিল এবং কাশ্মীরকে “ এশিয়ার সুইজারল্যান্ড “ হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু বাদ সাধে তখন যখন একরাতে হঠাৎ করে পাকিস্তান এসে আক্রমণ করে দখল করে নিতে চায় কাশ্মির। হরিচন্দ্র উপায় না দেখে ভারতের কাছ থেকে সাহায্য চান। ভারত তত্পর হয়ে ওঠে সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে। আর ঠিক এই সময় থেকে শুরু হয় ভারত-পাকিস্তানের ভেতরে কাশ্মির নিয়ে চলা বিখ্যাত যুদ্ধগুলোর প্রথমটি।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৪৭)

১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর মহারাজা হরিচন্দ্র ভারতকে কাশ্মিরের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার ক্ষমতা প্রদান করেন। ফলস্বরূপ ২৭ অক্টোবরেই কাজে নেমে পড়ে ভারত। একটু একটু করে এগোতে থাকে কাশ্মিরকে নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের ভেতরে শুরু হওয়া প্রথম যুদ্ধ। পাকিস্তানের ভাষ্য মতে, কাশ্মিরের অধিকাংশ জনগণ যেহেতু মুসলিম, সুতরাং কাশ্মিরের পাকিস্তানের ভেতরেই যাওয়া উচিত।

যুদ্ধের কোন আনুষ্ঠানিক ফলাফল না হলেও কাশ্মীরের দুই-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে সক্ষম হয় ভারত আর পাকিস্তানও তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয় এক-তৃতীয়াংশ।

কাশ্মীরের ইতিহাস : ভূস্বর্গ থেকে রণক্ষেত্র


ততোদিনে কাশ্মিরের ক্ষমতা চলে গিয়েছিল শেখ আবদুল্লাহের হাতে। যিনি ভারতের পক্ষে ছিলেন। মূলত, কাশ্মিরের জনগণও ভারত আর পাকিস্তান প্রসঙ্গে দু-ভাগ হয়ে গিয়েছিল। বিষয়টি শেষ অবধি এতোটাই বাজে অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ায় যে, ভারত বাধ্য হয় জাতিসংঘকে সবকিছু জানিয়ে সমস্যা সমাধান করার অনুরোধ জানাতে। যদিও শেখ আবদুল্লাহের কোনোরকম ইচ্ছে ছিল না জাতিসংঘকে এই যুদ্ধের ভেতরে আনার। কিন্তু জাতিসংঘ এসে পড়ে। ১৯৪৮ ও ১৯৪৯ সালে দু-দেশকে নিয়ে বসে একটি সমঝোতা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনোকিছুতেই কোনো লাভ হয় না।

চীন-ভারত যুদ্ধ বা সিনো-ইন্ডিয়ান ওয়ার (১৯৬২)

পাকিস্তানের পর কাশ্মিরের ওপর নিজেদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়ে ওঠে চীন। ১৯৬২ সালে ভারত আর চীনের সামরিক বাহিনী কাশ্মিরের নির্দিষ্ট একটি স্থানের দখল নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধে খুব সহজেই জিতে যায় চীন, আর দখল করে নেয় তাদের নামাঙ্কিত আকসাই চীন নামক স্থানটিকে। এছাড়াও কাশ্মিরের ট্রান্স-কারাকোরাম নামক আরেকটি স্থানকে নিয়েও চীন পাকিস্তানের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই স্থানটির ওপর ভারতও নিজের খানিকটা মালিকানা দাবি করে আসছে অনেকদিন ধরে। এই পুরো স্থানটিতে ভারত, পাকিস্তান আর চীনের ভেতরে একটি সীমানা টানা আছে। যাকে আমরা চিনি লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল নামে।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৬৫)

১৯৪৭ সালে কাশ্মীর দখলে ব্যর্থ হয়ে ১৯৬৫ সালে আবারো কাশ্মীর দখলের চেষ্টা করে পাকিস্তান। ‘অপারেশন জিব্রাল্টার’ নামক এ অপারেশনের নামকরণটি করা হয় খ্রিস্টান অধ্যুষিত স্পেন দখলে আরবদের যুদ্ধ, যা জিব্রাল্টার প্রণালীর পাশে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো তার অনুকরণে তবে অপর্যাপ্ত সামরিক শক্তিতে ভারতের পরাক্রমশালী সামরিক বাহিনীর সাথে এ যুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিলো মাত্র ১৭ দিন। তবে এ যুদ্ধটিও পায়নি কোন কাক্সিক্ষত ফলাফল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় যুদ্ধটি অসমাপ্ত অবস্থাতেই শেষ হয়।

কারগিল যুদ্ধ (১৯৯৯)

কাশ্মিরকে নিয়ে সবচেয়ে বড় যে যুদ্ধটি সংঘটিত হয় ভারত-পাকিস্তানের ভেতর, সেটি হচ্ছে ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ।লাইন অব কন্ট্রোল বর্ডারের ওপর দিয়ে প্রচণ্ডরকম গোলাগুলি হতে থাকে এ সময়। এতে মারা পড়ে সেখানকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। মৃতের ভেতরে কিছু ছিল সৈন্য, আর বেশিরভাগই ছিল সাধারণ মানুষ। পুরোবিশ্বকে হতচকিত করে দেয় হঠাত্ করে সংঘটিত হওয়া এই যুদ্ধ। ১৯৪৮ ও ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি গুলি বিনিময় হয় এই যুদ্ধে। কারগিল যুদ্ধের জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করলেও পাকিস্তান তা মানতে রাজি হয়নি মোটেও। কারগিলের সেই ভয়াবহ যুদ্ধ এতোটাই ভয় পাইয়ে দিয়েছিল সবাইকে যে, এখনো মানুষ আশঙ্কা করে থাকে কাশ্মিরকে নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের কোনো বিধ্বংসী যুদ্ধের!

কাশ্মীরের ইতিহাস : ভূস্বর্গ থেকে রণক্ষেত্র
কারগিল যুদ্ধ, ছবি : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

যুদ্ধগুলোর ফলে ভূ-স্বর্গ কাশ্মীর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং সাধারণ কাশ্মীরিদের জীবনে নেমে শোচনীয় পরিণতি, যুদ্ধে প্রাণ যায় লক্ষ লক্ষ কাশ্মীরের সাধারণ জনগণের।

কাশ্মীরি গ্লোবালের এক প্রতিবেদনে  অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ পর‌্যন্ত গত তিন দশকে ৯৫ হাজার ২৩৮ জন কাশ্মীরিকে হত্যা করেছে ভারতীয় বাহিনী। সাত হাজার ১২০ জনকে  কারাবন্দি রেখেছে ভারত সরকার এই দীর্ঘ সময়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের ১১ হাজার ১০৭ নারী ভারতীয় বাহিনীর নিগৃহের শিকার হয়েছেন। এক লাখ ৯ হাজার ১৯১টি আবাসিক ভবন ও স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে।

এছাড়া ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই সময়ে আট হাজার কাশ্মীরিকে কারা হেফাজতে নেয়ার পর এখন পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি।

কাশ্মীরের ইতিহাস : ভূস্বর্গ থেকে রণক্ষেত্র
জম্মু-কাশ্মীরের ২০০৮-২০১৮ সময়কালে মৃতের সংখ্যা, ছবি : দ্য ডিপ্লোম্যাট

শুধু চলতি বছরেই ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরের পিএইচডি গবেষক, প্রকৌশল বিদ্যার শিক্ষার্থীসহ ৩৫০ জনকে হত্যা করেছে।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- হুররিয়াত নেতা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রাফি ভাট, ড. মান্নান বসির ওয়ানি, ড. সবজার আহমাদ সোফি, ড. আবদুল আহাদ ঘানি, এমফিল গবেষক আদিমাদ ফয়েজ মালি, ২৪ বছর বয়সী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইশা ফাজালি, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সাইয়েদ ওয়াশি সফি শাহ, আসিফ আহমেদ মালিক, মীর হাফিজুল্লাহ, তারিক আহমেদ ঘানি।

কাশ্মীরের ইতিহাস : ভূস্বর্গ থেকে রণক্ষেত্র
স্বজন হারিয়ে ক্রন্দন রত কাশ্মীরি নারী , ছবি :মুসলিম মিরর

এ বছরেই শিশু, তরুণ, শিক্ষার্থী, নারী ও হুররিয়াত নেতাসহ দুই হাজার ৩৪৮ জনকে আটক করা হয়েছে।

এত কিছুর পরও ভারত সরকার ক্ষান্ত হয়নি। বরং সম্প্রতি তাদের সবর্র্নিকৃষ্ট কৌশলটিই বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরী করেছে। ৫ আগস্ট ২০১৯ সোমবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্য সভায় অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের প্রস্তাব উত্থাপন করেন যা সংখ্যাগরিষ্টদের সমর্থন অর্জন করে এবং পরে লোকসভায়ও পাশ হয়।নতুন করে কাশ্মীরের রাজ্য মর‌্যাদা ছিনিয়ে নিলিএবং কাশ্মীরের মানচিত্রকে দ্বিখন্ডি করল।আর কূটকৌশল বাস্তবায়নের জন্য অবরুদ্ধ করে রেখেছে কাশ্মীর বাসীকে লক্ষ লক্ষ সেনা ও নিরাপত্তা সদস্য মোতায়ন করে।নতুন করে অত্যচারের খড়ক নেমে এসছে কাশ্মীরিদের উপরে।

কাশ্মীরের ইতিহাস : ভূস্বর্গ থেকে রণক্ষেত্র
ভারতীয় সৈন্যদের মোকাবেলায় সাধারণ কাশ্মীরিরা, ছবি :হিন্দুস্তান টাইমস

গত সাত দশক ধরে চলমান বঞ্চনা,নিযার্তন থেকে বের হয়ে আসার লক্ষ্যে কাশ্মীরি যুবক, বৃদ্ধ তথা সকল জনগণ আন্দোলন করে আসছে বিভিন্ন বিছিন্নতাবাদী গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে,মৃতের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে,ঝিলামের স্বচ্ছ পানির ধারা যেন রক্তের বণ্যায় বয়ে চলেছে ,নতুন নতুন গণকবরের সন্ধান মিলছে। কিন্তু কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হয়নি। ভূ-স্বর্গ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে গত সাত দশ থেকে।ভারতীয় সংবিধান ৩৭০ ধারা বাতিলে মাধ্যমে ভূ-স্বর্গ কাশ্মীরকে আবারো রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে ভারত সরকার। আর সেই রণক্ষেত্রে প্রবল প্রতাপের ভারতীয় সেনাবহিনীর প্রতিপক্ষ নিরীহ কাশ্মীরি শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, সর্বোপরি আবালবৃদ্ধবণিতা সকলেই।

তথ্যসূত্র :

ঝিলাম নদীর দেশে-বুলবুল সরওয়ার,

কাশ্মীরি গ্লোবাল,

দৈনিক ইত্তেফাক,

দ্যা ডিপ্লোম্যাট

হিন্দুস্তান টাইম,

টাইমস অফ ইন্ডিয়া।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

ইতিহাস

প্রতিনায়ক ও রহস্য পুরুষ সিরাজুল আলম খান

Published

on

রহস্য পুরুষ সিরাজুল আলম খান

সিরাজুল  খানের সাথে এদেশের অধিকাংশ নবীন পাঠকের পরিচয় ঘটে মহিউদ্দিন আহমদের” জাসদের উত্থান পতন,অস্থির সময়ের রাজনীতির ” বইটির  মাধ্যমে।এতো বিশাল পরিমাপের একজন রাজনীতিবিদ সংগঠক কিন্তু আমাদের দেশীয় ইতিহাসে তাঁকে নিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়েছে অন্তত আমার চোখে খুব বেশি পরিলক্ষিত হয়নি।পাঠকের সাথে আরেকটু ভালো করে পরিচয় ঘটে “আমি সিরাজুল আলম খান বলছি” বইটির মাধ্যমে।

বাংলাদেশে নামক রাষ্ট্রটির বিস্ময়কর  উত্থান হলাে একটি জনগােষ্ঠীর জেগে ওঠার মহাকাব্য। এর প্রতিটি  পরতে আছে যুগ যুগ ধরে মানুষের সংঘবদ্ধ  সংগ্রাম।সেই যুথবদ্ধ প্রয়াসে রয়েছে অনেক কারিগর, অনেক বীর। সিরাজুল আলম খান তেমনই একজন,একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, যিনি শ্রম-ঘাম-মেধা দিয়ে বাংলাদেশের উত্থানপর্বে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন।গড়ে তুলেছিলেন নিজের সংগঠনিক মেধা দিয়ে বিশাল কর্মী বাহিনীর এক সুবিন্যস্ত নেটওয়ার্ক।

বঙ্গবন্ধুর এই যে উত্থান বা এদেশের মানুষের কাছে তাঁকে পৌঁছানো সেটার অন্যতম কারিগর ছিলেন সিরাজুল আলম খান,যার সাংগঠনিক মেধা আর সক্ষমতায় বঙ্গবন্ধু গুণমুগ্ধ হয়ে তাকে  সুপারম্যান আখ্যা দিয়েছিলেন।বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে যার ছিল আরেকটি নিজস্ব একটি বলয় যেটাকে পরবর্তীতে ইতিহাস নিউক্লিয়াস নামে আবিস্কার করেছে। নিউক্লিয়াস, মুজিব বাহিনী, জাসদ কিংবা পঁচাত্তরের নভেম্বরের অভ্যুত্থান,বিপ্লব কিংবা রাজনৈতিক পটপরিবর্তন সবগুলোর সাথেই ছিল তাঁর একান্ত নিবিড় যোগাযোগ। কিন্তু জনসম্মুখে খুব কমই আসতেন কাজ করতেন পিছনে থেকে।আর এই কারনেই হয়তো পাওয়ার পলিটিক্সে কখনোই প্রবেশ করেননি।

যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মনি ছিলেন তাঁর খুব কাছের বন্ধু,দুজনের মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শের সুক্ষ্ম বিরোধ ছিল,বিরোধ ছিল চলার পথটিও নিয়েও তবে সেসব বিরোধ ব্যক্তিগত সম্পর্কে কখনোই চিড় ধরেনি।

সিরাজুল আলম খানের নায়ক বা গুরু  ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। মুজিবে মােহমুগ্ধ ছিলেন তিনি। একসময় তিনি বিদ্রোহ করলেন।ভাঙ্গন ধরলো গুরু শিষ্যের সম্পর্কে তাই বলে সিরাজুল আলম খানের জন্য বঙ্গভবন বা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের দরজা কখনোই বন্ধ ছিল না,সর্বদা খোলাই ছিল।

সর্বহারা গ্রুপের সিরাজ সিকদারকে যখন ক্রসফায়ারে দেওয়া হলো বঙ্গবন্ধু আপন শিষ্য সিরাজুল আলম খানকে বললেন,” তুই দেশ ত্যাগ কর”।গুরুর আদেশ মেনেই দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে গেলেন।স্বাধীনতা পূর্ব এবং উত্তর সময়ে বঙ্গবন্ধুর পরে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগঠক হিসেবে সিরাজুল আলম খানের নাম বললে একটুও অত্যুক্তি হবে না কিন্তু রাজনীতির সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি না করতে পারা কিংবা স্থিরতার বড্ড অভাব বা অনীহার কারনে ক্ষমতার হালুয়া রুটির ভাগ বসাতে আসেননি।অনেকটা সমরেশ বাবুর কালবেলা- কালপুরুষের অনিমেষের মতন। সঙ্গীদের চোখে তিনি হলেন প্রতিনায়ক। তৈরি হলাে তাঁর কাল্ট। অর্থশাস্ত্রে মার্জিনাল ভ্যালু বা প্রান্তিক উপযােগিতার তত্ত্ব আছে। কালের পরিক্রমায় সঙ্গীরা একে একে তাঁকে ত্যাগ করায় তার প্রান্তিকমূল্যমান ঠেকে শূন্যের কোঠায়।

যার হাত ধরে এদেশে অসংখ্য অসংখ্য নেতৃত্ব, নেতা,মন্ত্রী, এমপি সৃষ্টি হয়েছে,যার সান্নিধ্যে থাকা অসংখ্য লোক দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দেশকে সেবা দিয়েছে সেই মহাগুরুত্বপূর্ণ লোকটি এখন ‘রেচিড অব পলিটিকস’—রিক্ত, পরিত্যক্ত।এটা যতটানা বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তারচেয়ে বেশি নিজের খাম খেয়ালিপূর্ণ মনোভাবের কারনে।

তাঁর হাত ধরেই উঠে এসছিল আজকের হাসানুল হক ইনুর মতন অসংখ্য জাদেরেল রাজনীতিবিদরা।হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতন একদা তাঁকে ঘিরে যারা বিপ্লবের মন্ত্র জপেছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগ এখন দলীয় রাজনীতি থেকে অবসরে। বাকিরা নানান শিবিরে বিভক্ত। একদা স্বপ্নবাজ অ্যাংগ্রি ইয়াংম্যানরা’ এখন ইতিহাসের জাবর কাটেন।

তবে তাঁর সমালোচনাও করে থাকেন কেউ কেউ,হাজার হাজার স্বপ্নবাজ তরুনকে স্বপ্ন দেখিয়ে তাদেরকে বিপদগামী করেছেন,একটা সময়ে তাদেরকে ত্যাগও করেছেন।স্বাধীনতার পরবর্তীতে যে কয়েকটি ঘটনা দেশের রাজনীতির মোড় পরিবর্তন করে দিয়েছিল সেটার অন্যতম হল ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এম মনসুর আলীর সরকারী বাসভবন ঘেরাওর ঘটনা।রহস্যময় উক্ত ঘটনায় ৫০ জন জাসদ কর্মী সেখানেই মৃত্যু বরণ করেন যদিও সরকারি হিসেবে আরো কম।সেই ঘটনার পরেই জাসদ আর নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে থাকতে পারেনি বরং আন্ডারগ্রাউন্ডে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল।১৭ তারিখের এই ঘটনাটি নাহলে হয়তো বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস ভিন্নতর হতে পারতো।কিন্তু হয়নি কিংবা যেভাবে হওয়ার সেভাবেই হয়েছে।

ইতিহাসের এই নায়ক কিংবা প্রতিনায়ক নিজের শেষ ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন এইভাবে-

“আমার মৃত্যুর পর কোনো শােকসভা হবে না। শহীদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ। যত দ্রুত সম্ভব নােয়াখালীর বেগমগঞ্জে আমার গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে হবে মরদেহ, যা ঢাকা থাকবে একটা কাঠের কফিনে। মায়ের একটা শাড়ি রেখে দিয়েছি। কফিনটা শাড়িতে মুড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে, মায়ের কবরে।”

মহিউদ্দিন আহমদেকে ধন্যবাদ ইতিহাসের জীবন্ত এই কিংবদন্তিকে আলোচনায় নিয়ে আসার জন্য। রহস্যময় এই মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

ইতিহাস

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন ফ্যাক্ট ও একটি আলোচনা

Published

on

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন ফ্যাক্ট ও একটি আলোচনা

স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্ট এক মর্মান্তিক ঘটনায় স্বপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন ফ্যাক্ট ও একটি আলোচনা

তাঁর এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বাংলাদেশতো বটেই সারা বিশ্বের অন্যতম আলোচিত রাজনৈতিক হত্যাকান্ড হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু এতো বড় একটা ঘটনা নিয়ে যতটা নিরপেক্ষ আলোচনা বা লেখালিখি হওয়ার দরকার ছিল ঠিক ততটা হয়নি,যেটুকুইবা হয়েছে তার অধিকাংশ ই অনিরপেক্ষ কিংবা রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট।

বাংলাদেশে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে কয়েকটি পুস্তক নিরপেক্ষতার মানদণ্ডে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত তার মধ্যে অন্যতম হল অধ্যাপক আবু সাইয়িদের – ‘ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ফ্যাক্টস্ এন্ড ডকুমেন্টস্

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ফ্যাক্টস্ এন্ড ডকুমেন্টস্

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বইটিতে মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী ঘটনাবলী থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা,বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভের কথা,৭২-৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুর শাসন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা করেছেন।
তবে নিঃসন্দেহে বইটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর স্ব পরিবারে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি।

বইটিতে লেখক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ক্ষেত্রে   অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন,যেমন-

ক.গণবাহিনী

অধ্যাপক আবু সাযিদ নিজের বইয়ের ১৩৫ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন যে-
,”অন্য এক তথ্য হতে জানা যায়, শেখকে হত্যা করার পরামর্শ দেয় গণবাহিনীর নেতৃবৃন্দ। অভ্যুত্থান এক সঙ্গে যৌথভাবে ঘটানোর কথা ছিল কিন্তু মোশতাক চক্র পূর্বেই ঘটনাটি ঘটিয়ে ফেলে”।
অধ্যাপক সাহেব যে সূত্রের কথা বলেছেন সেটা হল আলোচিত বই-
WHO KILLED MUJIB,IBID,PAGE 38।

খ.মোশতাকগং-

১৯৭৪ সালের শেষের দিকে খন্দকার মোশতাক আফগানিস্তান ও ইরান সফরে যান। ইরানে তিনি চীনা নেতাদের সাথে বৈঠক করেন এবং সেই সফরেই জেদ্দায় পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সাথে ও বৈঠক করেন।
(ঐ- পৃষ্ঠা -৮৬)

গ.সেনাবাহিনীরএকাংশ-

বঙ্গবন্ধু হত্যার নেতৃত্বদানকারী ফারুক রশীদরা ১৯৭৩ সালের শেষ থেকেই নিজেদের কার্যক্রম শুরু করে।
তারই ধারাবাহিকতায় ঘাতকরা ১৯৭৪ সালের শেষ থেকেই নিজেদের পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপন করেছে।
ঘাতকদের ৭৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চূড়ান্ত আঘাত হানার দু’টি নির্ধারিত সময়সূচী ছিল কিন্তু নানা কারনে সেসব বাস্তবায়ন করা যায়নি। সর্বশেষ ৭৫ সালের ১২ ও ১৫ ই আগষ্টের মধ্যবর্তী সময়কে বেছে নেওয়া হয় এবং সেনাবাহিনীর সে অংশটি সফলও হয়।
(ঐ- ৮০ও৮১ নং পৃষ্ঠা)

ঘ. সি আই এ সহ নানা মহল তৎপর ছিল-

দেশকে অস্থিতিশীল করা ও সশস্ত্র লড়াই সংগঠিত করতে জাসদ নেতৃত্ব সি আই এ এর লোক বলে কথিত জনৈক পিটার কাস্টারের নিকট হতে ৪০ লাখ টাকা গ্রহণ করে।
(ঐ- পৃষ্ঠা -৫৯)

ঙ-আওয়ামীলীগে উপদলীয় কোন্দল –

১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনেরপরে পরই ক্ষমতাসীন আওয়ামিলীগের মধ্যে উপদলীয় কোন্দল চরমভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে যা – প্রকারান্তে বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তিকে বহুলাংশে ক্ষুণ্ন করে।
( ঐ- পৃষ্ঠা ৬২)

চ- মনি- তোফায়েল গ্রুপের বিরোধ

কেন্দ্রে মনি- তোফায়েল উপদলীয় কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্নভাবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু রাশিয়ায় থাকাকালীন ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে( তোফায়েল আহমেদ সমর্থিত শফিউল আলম প্রধান কর্তৃক) সূর্যসেন হলের ৭ জন ছাত্রের নৃশংস হত্যাকাণ্ড।এই হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এম মুনসুর আলী বলেছেন,” এই পরিকল্পিত  ছাত্র হত্যা ছিল একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।যার লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর সরকারের উৎখাত।
(ঐ- পৃষ্ঠা -৬২)

এমনকি শেখ ফজলুল হক মনি তোফায়েল আহমেদকে বিদেশী গুপ্তচর হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
( সূত্র- কনফিডেনসিয়াল ডায়েরি,বিক্রমাদিত্য,পৃষ্ঠা -৭)

ছ-আওয়ামীলীগ নেতাদের বিশেষ বাহিনী, লাল বাহিনীর জনগণের উপর অত্যাচার-

১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি ২১ তারিখের লড়াই নামক পত্রিকার ১ম সংখ্যার উপশিরোনাম ছিল এরূপ- “কোরবান আলীর ঘাতক বাহিনী” ‘ মুজিবরের নয়া মন্ত্রীসভার তথ্যমন্ত্রী কোরবান আলী তার এলাকায় একটা ঘাতক বাহিনী তৈরি করেছে।এলাকার দাগী আসামী,খুনী চোর ডাকাতদের দিয়ে গঠন করা হয়েছে এই বাহিনী।  শুধু কোরবান আলী নয়, ঢাকার গাজী গোলাম মোস্তফা থেকে শুরু করে বরিশালের হাসানাত পর্যন্ত সমস্ত আওয়ামী ও যুবলীগারদের নিজস্ব বাহিনী আছে’।
এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন-

” একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে,জেলায় জেলায় ক্ষমতাসীন চিহ্নিত আওয়ামিলীগ নেতাদের বিশেষ বিশেষ বাহিনী, লাল বাহিনী জনগনের উপর অত্যাচার চালিয়েছে।তাদের সন্ত্রাসে জনগণ প্রতিবাদহীন আক্রোশে হয়েছে নির্বাক নিশ্চুপ।”

(ঐ- পৃষ্ঠা -৬২)

 

এগুলো ছাড়াও রক্ষী বাহিনী, ভারতের সাথে চুক্তি,দুর্ভিক্ষ, সেনাবাহীনির সাথে দূরত্ব, আন্তর্জাতিক রাজনীতিসহ নানা বিষয় বঙ্গবন্ধুর হত্যারকাণ্ডে ফ্যাক্ট হিসেবে কাজ করেছে।

কিছু একটা ঘটবে সে সস্পর্কে অনেকেই জ্ঞাত থাকা

বঙ্গবন্ধুর সরকার যখন ধীরে ধীরে অজনপ্রিয়তার দিকে চালিত হচ্ছিলো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছিলো তখন “কিছু একটা ঘটবে” এমন বিষয়টি সম্পর্কে অনেকেই জ্ঞাত ছিলেন।
তবে ” কিছু একটা ঘটা” যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা সে সম্পর্কে বোধকরি কেউই ভাবতে পারেন নি।
খন্দকার মোস্তাক বাদে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচরেরা সে বিষয়ে কে কতটুকু জ্ঞাত ছিলেন সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো।

ক- জনাব কামরুজ্জামান সাহেবের জ্ঞাত থাকা-

ফেক্টস এণ্ড ডকুমেণ্টস ভইয়ের লেখক অধ্যাপক আবু সাইয়িদ সাহেব নিজের বইয়ের ২৮৩ নং পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভা ও পরবর্তীকালের খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রীসভার অন্যতম সদস্য জনাব অধ্যাপক ইউসুফ আলীর একটি সাক্ষাতকার ছাপিয়েছেন।
সেখানে অধ্যাপক ইউসুফ আলী বলেন যে –

“হেনা ভাই(মন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান)আমাকে জানান বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে হেনা ভাইয়ের তিন নম্বর রোডের( ধানমণ্ডির) বাসায় ডালিম তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়েছিল।ডালিম তাঁকে ডেকেছে।হেনা ভাই নামেননি।হেনা ভাই বললেন, ডালিম আমার সাথে আগেও যোগাযোগ করেছিল এবং প্রস্তাবও নিয়ে এসছিলো।তাই জানতাম,সে কি কথা বলতে এসেছিল।তাই দরজা খুলিনি।
হেনা ভাই আমাকে বললেন,”ডালিমরা জানিয়েছিল এ রকম একটা ঘটনা ঘটবে।বঙ্গবন্ধুকে খুন করা হবে তা বলেনি তবে তাকে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া হবে এবং  আবার হেনা ভাইয়ের নেতৃত্বে পাওয়ার( ক্ষমতা) নেওয়া হবে।হেনা ভাই আমাকে বললেন,আমি তাতে তখন রাজি হয়নি।১৪ আগষ্ট তারিখে তাই নীচে নামিনি।ডালিম পরে গালাগালি করে চলে যায়”।

খ- জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবের জ্ঞাত থাকা-

একই সাক্ষাতকারের শেষের দিকে ইউসুফ আলী সাহেব বলেন যে,আগষ্টের ১৩ বা ১৪ তারিখে তিনি তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জেলহত্যার অন্যতম শহীদ জনাব  সৈয়দ নজরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে সেখানে তাঁকে ভীষণ রাগান্বিত অবস্থায় দেখতে পান।
উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধু সবাইকে তুমি করে সম্বোধন করলেও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে আপনি বলে সম্বোধন করতেন।
ইউসুফ সাহেব যখন জিজ্ঞেস করলেন স্যার কী হয়েছে জবাবে সৈয়দ সাহেব জানালেন-

” আমার কাছে লোক আসছিলো আমার কাছে পাওয়ার নেবার প্রস্তাব নিয়ে আসছিলো “

( ফ্যাক্টস এণ্ড ডকুমেন্টস, পৃষ্ঠা -২৮৬)

” আমি ( ইউসুফ সাহেব) বললাম, ৩২ নাম্বার যান সেখানে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলেন। দেখেন কী করতে পারেন”।

” সৈয়দ সাহেব বললেন, না তিনি(বঙ্গবন্ধু)  যখন সব কথা খুলে বলতে চাননা,তখন আর কী করবো”।

“তখন আমি বললাম, আজকে যাবেন? তিনি বললেন না। তারপর ঠিক হলো পরদিন উনি যাবেন। সে সুযোগ আর হয় নাই”

গ- সেনাবাহিনীর সিনিয়র নেতৃত্বের অবগত থাকা-

৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্টের রক্তাক্ত অধ্যায়ের পর১৯শে আগষ্ট সেনা প্রধান ঢাকাসেনাসদরে
একটি কনফারেন্স ডাকেন।সেখানে ফারুক রশীদ উপস্থিত হয়ে ( কথিত) অভ্যুত্থান সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান শুরু করেন।রশীদ নিজেদের কর্মের ব্যাখ্যায় একটা পর্যায়ে বলে উঠেন,” সেনাবাহিনীর সব সিনিয়র অফিসার এই অভ্যুত্থানের কথা আগে থেকেই জানতেন, এসনকি ঢাকা বিগ্রেড কমাণ্ডারও।”
রশিদ দাবি করলেন যে,প্রত্যেকের সঙ্গে তাদের আলাদা আলাদা সমঝোতা হয়েছে পূর্বেই।তখন উপস্থিত সিনিয়র কোন অফিসারই এর প্রতিবাদ করেননি।একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি কেউ।
উল্লেখ্য সে বৈঠকে সেনা প্রধান শফিউল্লাহ সাহেব,উপ সেনা প্রধান জিয়াউর রহমান সাহেব এবং সিজিএস বিগ্রেডিয়ার জনাব খালেদ মোশাররফ সহ সিনিয়র অফিসারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু ঢাকা পতাদিক ব্রিগেডের আধিনায়ক কর্ণেল সাফায়েত জামিল রশিদের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে বলে উঠেন

” You are all liars,mutineers and deserters, you are all murders.Tell your Moshtaque that he is an unsurper and a conssipirator.
He is not my president. In my first opportunity I shall dislodge him and you all will be tried for your crimes”.

( ঐ- পৃষ্ঠা -৩১৪)

বইয়ের ৮১ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে যে ঘাতকরা ১৯৭৪ সালের শেষ থেকেই নিজেদের পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপন করেছে।
তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা বা গ্রেফতার করার পর ক্ষমতা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে রাখার জন্য সেনাবাহিনীর একাংশ (যারা এই কর্মটি সাধন করেছে) বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও তৎকালীন মন্ত্রী জনাব কামরুজ্জান, উপরাষ্ট্রপতি জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম সহ বিভিন্ন জনের কাছে গিয়েছিল। সেই সুবাদে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচরেরাও বিষয়টি জানতেন কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য তাঁরা কেউই বঙ্গবন্ধুকে বিষয়টি অবহিত করেননি কিংবা করার সুযোগ পাননি কিংবা অবহিত করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেননি।

বর্তমান সময়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনায় এসব বিষয়ে তেমন উল্লেখ থাকেনা বললেই চলে বরং একটি স্রোতেই মর্মান্তিক এই ইতিহাসকে প্রবাহিত করার চেষ্টা পরিলক্ষিত করা হচ্ছে।

এতে করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডটি কেবল রাজনীতিক ফায়দা হাসিলেরই মাধ্যমই হচ্ছে, নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সবকিছু জনা সম্পর্কে প্রজন্মকে দূরে সড়ানো হচ্ছে।

আমরা চাই বিশদ আকারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হউক।নির্দিষ্ট কোন দৃষ্টিকোণ কিংবা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের আলোচনা না হউক।বঙ্গবন্ধুর বিশালতাকে কুক্ষিগত করে না রাখার জন্য এসব আলোচনা অত্যন্ত জরুরী। বঙ্গবন্ধু কোনো দলীয় সম্পদ নয় বরং তিনি সবার। তিনি বাংলাদেশের। তাঁর সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করাই হচ্ছে তাকে প্রকৃত শ্রদ্ধা আর সম্মান দেখানো।

আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যত তাড়াতাড়ি বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করবেন ততই জাতির জন্য মঙ্গল জনক হবে।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

ইতিহাস

ইন দ্যা লাইন অব ফায়ার ও এ সম্পর্কে পাঠ প্রতিক্রিয়া

Published

on

ইন দ্যা লাইন অব ফায়ার ও এ সম্পর্কে পাঠ প্রতিক্রিয়া
পৃথিবীতে সব মানুষই নিজের কাজকর্মকে যৌক্তিক মনে করে থাকেন।পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ও সেটার ব্যতিক্রম নন।তাঁর লেখা ‘ইন দ্যা লাইন অব ফায়ারে’নিজের সব কাজকেই তিনি যৌক্তিকতার কালিতেই ব্যখ্যা করেছেন। বইটিতে নিজের শৈশব থেকে একেবারে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হওয়ার যে ঘটনা প্রবাহ সেটার একটা ধারাবাহিক বর্ননা দিয়েছেন।ফলে রাষ্ট্র গঠনের পর থেকে পাকিস্তানের সকল শাসক,সামরিক বাহিনী ও রজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণের বিস্তারিত একটা বর্ননা রয়েছে। বইটিকে আমার কাছে পারভেজ মোশারফের এক ধরণের কৈফিয়ত দেওয়া মনে হয়েছে।তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল সমালোচনা বা অভিযোগের একটা জবাব তিনি বইটিতে দিয়েছেন। এতো বিশাল বইয়ে তাঁর আলোচিত যে বিষয়গুলো নিয়ে আমি আলোচনা করবো সেগুলো হলো- ১- আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি – ২- তাঁর সেনাপ্রধান হওয়া – ৩-কারগিল যুদ্ধ ও যুদ্ধ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ- ৪- সেনা প্রধান থেকে রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে আর্বিভূত হওয়া- ৫-যে পরিস্থিতে ৯/১১ পরবর্তী আমেরিকার দোসর হয়ে তালেবান ও আল-কায়দা বিরোধী যুদ্ধে শামিল হওয়া- ৬-পরমাণু অস্ত্র ও সেটার জনক আবদুল কাদির খানকে গৃহবন্দী করা-

মহান মুক্তিযুদ্ধ

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা প্রাপ্তির বিষয়টি তিনি পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনীতিবিদ বিশেষ করে জুলফিকার আলী ভুট্টাে ও কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার অপরিনামদর্শী কর্মকান্ডের ফলাফল সেই সাথে পিছন থেকে ভারতের ছুরি চালানোর বিষয় হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।বাংলাদেশীদের প্রতি করা বৈষম্যের বিষয়টিও তিনি স্বীকার করেছেন। আবদুল্লাহ খান নিয়াজি নিজের “দ্যা বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান” বইতেও পাকিস্তান ভাঙ্গার পিছনে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের দায় দেখেছেন। তিনি বারবারই বলার চেষ্টা করেছেন সমস্যাটা ছিল রাজনৈতিক সুতরাং সমাধানটা রাজনৈতিকভাবেই হওয়া দরকার ছিল।রাজনৈতিক সমস্যাবলী সামরিকভাবে কখনোই টেকসই সমাধান আনতে পারে না। নিযাজি বা পারভেজ মোশাররফ কিংবা পাকিস্তানের সাধারণ জনগন সবাই ই একটা বিষয়ে একমত যে,পাকিস্তান ভাঙ্গার পিছনে ভারত ব্যাপক ইন্ধন যুগিয়েছে। মুনতাসীর মামুনের  “পাকিস্তানি জেনারেলের মনোভাব “বইটিতেও এমন বক্তব্যই দেখতে পাই। ভারতকে পিছন থেকে ছুরি চালানোর সুযোগটি পশ্চিম পাকিস্তারের মাথামোটা রাজনীতিবিদরাই করে দিযেছে।নিয়াজী কিংবা পারভেজ মোশাররফ তাঁরা কেউই এটাকে সামরিক বিপর্যয় হিসেবে মানতে নারাজ তারা বরং এটাকে রাজনৈতিক বিপর্য়য় হিসেবেই উল্লেখ করতে আগ্রহী। ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বরের পাকিস্তানিদের পরাজয়ের বিষয়টি তৎকালীন সেনা সদস্যদের আজও ব্যথিত করে। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য,সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদেরই দোষারোপ করেছেন। আমরা প্রত্যাশা করবো শুধু দোষারোপ ই নয় তাদের এই জুলুম অত্যাচার আর নিপিড়নের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের নিকট ক্ষমা চাইবেন তাহলেই  তাদের প্রকৃত অনুভব আর অনুভূতির বিষয়টি প্রকাশ পাবে।

সেনা প্রধান হওয়া

১৯৯৮ সালের ৭ ই অক্টোবর সন্ধ্যায় হুট করেই পারভেজ মোশাররফকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ ডেকে পাঠান।তখনই তিনি জানতে পারেন যে জেনারেল জাহাঙ্গীর কারামতকে অবসরে পাঠিয়ে তাঁকে সেনা প্রধান করা হয়েছে।কয়েকদিন আগে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী একক কর্তৃত্ববলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছেন। ভারত থেকে বাস্তুভিটা হারিয়ে এক মোহাজির পাকিস্তানের সেনা প্রধান হওয়াটা এক আশ্চর্যের বিষয় ই বটে।কোন অভিজাত পরিবারের না হওয়া ও এই মোহাজির পরিচিতির কারনেই নওয়াজ শরীফ হয়তো ভেবেছিলেন তাকে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই পরিচালিত করতে পারবেন।কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই নেওয়াজ শরীফের করা সে ধারণাটি ভুল প্রমানিত হয়। প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ছোটখাটো সমস্যা বা বিরোধ দেখা দিলেও কারগিল যুদ্ধ ও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কাছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফের সৈন্য সমর্পনের ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে সেটা প্রকট আকার ধারণ করে।

কারগিল যুদ্ধ ও যুদ্ধ সম্পর্কিত অভিযোগ

ইন দ্যা লাইন অব ফায়ার ও এ সম্পর্কে পাঠ প্রতিক্রিয়াকারগিল হল পাকিস্তানের উত্তর সীমান্তের বরফাবৃত দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল।এখানে ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী নিয়ন্ত্রণ রেখা রয়েছে।১৯৭১ সালের সিমলা চুক্তির মাধ্যমে এই সীমান্ত রেখা চিহ্নিত করা রয়েছে যদিও ভারতীয় সেনারা সুযোগ পেলেই সেটা অতিক্রম করতো। ১৯৯৯ সালের মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কারগিল সীমান্তে ভারত পাকিস্তানের সেনাদের মধ্য সংঘর্ষ বাঁধে এবং একটা পর্যায়ে পাকিস্তানের সেনারা স্থানীয় স্বাধীনতাকামীদের নিয়ে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাস্মীরের ৫০০ বর্গমাইলের অধিক এলাকা দখল নেয়। (মুসকোতে ২৫০ বর্গ মাইল,ড্রাসে ৪০বর্গ মাইল,কাকসারে২০ বর্গ মাইল, বাট্টালিকে ৮০ বর্গ মাইল এবং শিওক এলাকায় ২৩ বর্গ মাইল)। পুরো মে-জুন জুড়ে সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। ভারতের তুলনায় পাকিস্তানী সেনাদের তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থান থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কাছে আকস্মিকভাবে পাকিস্তানের আত্মসমর্পনের ঘোষণা দেয়।ফলে সেনা প্রধান পারভেজ মোশাররফ ও প্রধানমন্ত্রীর নেওয়াজ শরীফের মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপক তিক্ততা সৃষ্টি হয়। কারগিল যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সেনাপ্রধান পারভেজ মোশারফের  বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ উত্থাপিত হয়। যার প্রথমটি হল,’রাজনৈতিক নেতৃত্বের আগোচড়ে সেনাবাহিনী যুদ্ধে জড়িয়েছে’,এর জবাবে পারভেজ মোশাররফ বলেন সীমান্তে ভারতীয় ব্যাপক সেনা সমাবেশের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে ৯ ই জানুয়ারি,৫ ফেব্রুয়ারি,১২ ই মার্চ ব্রিফ করা হয়।এমনকি যুদ্ধ চলাকালে ১৭ মে,২ রা জুন ও ২২ জুন ও প্রধানমন্ত্রীকে ব্রিফ করা হয়। দ্বিতীয়টি হল,’ পাকিস্তানের সেনাদের অবস্থান নাযুক দেখেই প্রধানমন্ত্রীকে ওয়াশিংটন ছুটে যেতে হয়েছিল’।জবাবে তিনি বলেন,২রা জুলাই সেনা প্রধান নিজে প্রধানমন্ত্রীকে পরিস্থিতি ব্রিফ করে পাকিস্তানী সেনাদের সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার বিষয়টি অবহিত করেছেন।তখন পুনরায় ৫ জুলাই পরবর্তী মিটিং হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।কিন্তু হুট করেই প্রধানমন্ত্রী ৩ রা জুলাই আমেরিকার ফ্লাইট ধরেন। তৃতীয়টি হল,’সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এই যুদ্ধ সম্পর্কে জানতেন না’।এর জবাবে তিনি বলেন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বৃন্দ এই যুদ্ধ সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই জ্ঞাত ছিলেন।কারন তাদের অজ্ঞাতে এতোবড় অভিযান অকল্পনীয়। চতুর্থটি হল, ‘উভয় দেশকে পরমানু যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করানো’।এটারও জবাব তিনি দিয়ে বলেন তখনও পর্যন্ত পাকিস্তান পুরোপুরি পরমানু অস্ত্রের কার্যকর অবস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।

সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্র প্রধান

সেনাপতি পারভেজ মোশাররফ রাষ্ট্রীয় এক সফরে কলম্বো ছিলেন। ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর তিনি পাকিস্তানে ফেরার পথে  বিমান যখন আকাশে তখনই জানতে পারেন যে তাঁর পাকিস্তানে ফেরত আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।কন্ট্রোল রুম থেকে তাঁর বিমানের পাইলটকে পাকিস্তান আর দুবাই ছাড়া পৃথিবীর যেকোন দেশে বিমান অবতরন করতে বলা হয়। সন্ধ্যার এই ফ্লাইটিতে তিনি ছাড়াও আরো ১৯৮ জন বেসামরিক যাত্রী ছিল। বিমান যখন মাঝ আকাশে তখনই তাঁকে সেনা প্রধান থেকে অবহ্যতির ঘোষণা দিয়ে নতুন সেনা প্রধান হিসেবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউদ্দিন বাটের নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পারভেজ মোশাররফের অনুগত সৈনিক আর অফিসাররা তাদের সেনা প্রধানের বিরুদ্ধে এমন অবিচার মেনে নেয়নি। তারা দ্রুতই করাচী বিমান বন্দর সহ প্রধানমন্ত্রীর ভবন,রাষ্ট্রপতির ভবন,রেডিও টেলিভিশনের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং নওয়াজ শরীফকে উৎখাত করে পারভেজ মোশাররফ কে ক্ষমতার মসনদে বসায়। ক্ষমতাচ্যুত নেওয়াজ শরীফের অনুরোধে তাকে নিজ পরিবার সহ সৌদি আরবে নির্বাসনে পাঠানো হয়। আর এভাবেই নাটকীয় ভাবে দেশভাগের রিফিউজি এক শিশু ৫২ বছর পরে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত হন।

যেভাবে আমেরিকার দোসর ও আলকায়দা বিরোধী অবস্থান নেওয়া

৯/১১ যখন আমেরিকায় ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা হলো তখন পারভেজ মোশাররফ করাচীতে কায়েদা আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সমাধি সংলগ্ন বাগান পরিদর্শন করছিলেন।হটাৎ করে তাঁর সামরিক সচিব আমেরিকার টুইন টাওয়ারের সন্ত্রাসী হামলার তথ্য দিলেন। পরেরদিন সকালে তিনি গভর্নর হাউজে একটা মিটিং এ ছিলেন তখন সামরিক সচিব এসে পারভেজ মোশাররফ কে জানালো আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেটস জেনারেল কলিন পাওয়েল ফোনে রয়েছেন,তিনি পারভেজ মোশাররফের সাথে কথা বলতে চান।কলিন পাওয়েলের দিক থেকে এতোটাই তাড়াহুড়ো ছিল যে মিটিং শেষ করা পর্যন্ত তার অপেক্ষা করার ধৈর্য ছিল না,মিটিং রেখেই পারভেজ মোশাররফ ফোনটি রিসিভ করেন।জেনারেল কলিন পাওয়েল কোন রাখঢাক না রেখে সরাসরিই বলে দিলেন,”তোমরা হয় আমাদের সাথে থাকবা নাহয় আমাদের বিরুদ্ধে”।মানে আমেরিকার সাথে না থাকার অর্থ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা ধরা নেওয়া হবে। পরেরদিন ফোনে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিচার্ড আর্মিটেজের সাথে যোগাযোগ হয়।তিনিও পারভেজ মোশাররফ কে জানায়, “তোমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তোমরা আমেরিকার সাথে থাকবা নাকি সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে ,যদি সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকো তাহলে বোমা হামলায় প্রস্তর যুগে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থেকো”।পারভেজ মোশাররফ এটাকে সর্বকালের সেরা কূটনীতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কথা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অব্যহত এমন হুমকীর পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারভেজ মোশাররফ যে বিষয়গুলো ভাবলেন সেটি হল- ★ পাকিস্তানের সামরিক শক্তি যা আমেরিকার তুলনায় নগন্য। ★পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুর্বলতা যা মার্কিন আক্রমনে টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। ★পাকিস্তানের সামজিক বহুমাত্রিকতা রয়েছে যা যুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। তাছাড়া জাতীয় বিষয়ের দিক থেকে তিনি যে বিষয়গুলো ভেবেছেন সেসব হল- ★পাকিস্তান মার্কিনীদের সহায়তা না করলে বৈরি রাষ্ট্র ভারত সহায়তা করবে এবং ইতোমধ্যে মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতীয় ঘাঁটি ব্যবহারের প্রস্তাবও দিয়ে দিয়েছে,ভারত হয়তো এই সুযোগে আমেরিকার সহায়তায় কাস্মীরকে বাগিয়ে নিবে। ★ একটি মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তানের পরমানু অস্ত্র নিয়েও আমেরিকা নতুন কোন টালবাহানা শুরু করতে পারে। ★ গত ৫০ বছরে তিল তিল করে গড়ে উঠা অর্থনৈতিক কাঠামো পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়বে। ★তাছাড়া তালেবানদের জন্য পাকিস্তান কেন আত্মত্যাগ করবে? আত্মত্যাগ করার মতন তালেবান পাকিস্তানের জন্য এমন কী করেছে? এসব কিছু ভেবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে পারভেজ মোশাররফ তালেবান বিরোধী মার্কিন জোটে শরীক হন।

পরমাণু অস্ত্র ও আবদুল কাদির খানকে গৃহবন্দী

১৯৭৪ সালে ভারত সর্বপ্রথম পরমানু বোমা পরিক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায়।এর ব্যাখ্যায় ভারত বলে যে এটা হলো শান্তিপূর্ণ বিস্ফোরণ।সারা বিশ্ব কিছু লোক দেখানো হইচই করলেও সবাই ই এটা মেনে নেয়।কিন্তু চির বৈরি প্রতিবেশি পাকিস্তানে ব্যাপক উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার জন্ম নেয়।তাই ১৯৭৫ সালে নেদারল্যান্ডসের ‘ইউরেনকা’ নামের একটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় কাজ করা বিশিষ্ট ধাতুবিদ পাকিস্তানী বংশদ্ভূত ড.এ কিউ খানকে নিজ দেশে(পাকিস্তানে) ফেরত আসার আহ্বান জানানো হয়।দেশের ডাকে তিনি পাকিস্তানে আসেন এবং সাথে করে’সেন্ট্রিফিউজ’এর কিছু ড্রইং নিয়ে আসেন।পাকিস্তান পরমাণু সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় তাঁর ব্লুপ্রিন্ট অনুযায়ী কাজ শুরু করে।সেই সময় থেকে পরবর্তী বছরগুলোতে প্রয়োজনীয় সকল কাঁচামাল ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক থেকে সংগ্রহ করা হয়।আর ভারতও নিজেদের পরমানু কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলো সমানতালে।তবে এটা ঠিক ভারত পরমানু বোমায় অভিলাষী না হলে হয়তো পাকিস্তানও সে পথে হাঁটতো না।ভারতের চিন্তায় হয়তো আঞ্চলিক ক্ষমতা প্রদশর্ন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় নিজের আধিপত্য বিস্তারের একটা উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল কিন্তু পাকিস্তানের ছিল চির বৈরি প্রতিবেশী থেকে আত্মরক্ষার জন্য।সে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায় ভারতের অভিপ্রায় ছিল আক্রমণাত্মক এবং আগ্রাসী আর পাকিস্তানের ছিল আত্মরক্ষামূলক। যদিও বিশ্বশক্তি পরমাণু কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে ক্রমাগতভাবে পাকিস্তানকেই চাপ প্রয়োগ করেছিল অথচ ভারতের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিশ্ববাসী  ছিল নিরব। ড. এ কিউ খান পরমাণু কর্মসূচীর গোপনীয়তা রক্ষার্থে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির সাথে এই বিষয়টি নিয়ে সরাসরি যোগাযোগ রাখতেন কোন এজেন্সি বা সংস্থার মাধ্যমে নয়।অর্থ বরাদ্ধ ও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা সেভাবেই আসতো।ফলে জুলফিকার আলী ভুট্টাে,জিয়াউল হক সরাসরিই তাঁর সাথে যোগাযোগ করতেন।তারপরে গোলাম ইসহাক খান ক্ষমতায় আসলে তিনি বেসামরিক লোক হওয়ায় যোগাযোগের দায়িত্বটি সেনা প্রধানের কাছে ন্যস্ত করা হয়। ১৯৯৮ সালের ১১ ও ১৩ মে ভারত যখন পাঁচটি পরমানু বোমার সফল বিস্ফোরণ ঘটায় তখন পাকিস্তান ১৯৯৮ সালের ২৮ ও ৩০ মে ছয়টি পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ড.এ কিউ খানের সাথে ইরান,  কোরিয়া,লিবিয়া সহ আরো কয়েকটি দেশ বা সংস্থার সাথে ইউরেনিয়াম পাচারে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পরে পারভেজ মোশাররফের সরকার পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থে তাঁকে গৃহবন্দী করে। বইটিতে পাকিস্তানের জন্মের পর থেকে এই পর্যন্ত রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর বারংবার হস্তক্ষেপ ও সেটার কারন,গনতন্ত্রের বিকাশ না হওয়ার বিষয়াবলী বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।তাছাড়া অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর রাষ্ট্র হওয়ার পিছনে কাস্মীর ও আফগানিস্তানের অস্থিতিশীলতাকে দায়ি করা হয়েছে।পারভেজ মোশাররফ নিজের এই বইটিতে নিজের সকল কার্যক্রমকেই একটা যৌক্তিকতার আলোকে ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। প্রথম জীবনে পারভেজ মোশাররফ বাংলাদেশী এক মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন কিন্তু মেয়ের পরিবার হুট করেই করাচি ছেড়ে বাংলাদেশ চলে আসায় সেটা আর সামনে এগোয়নি। ভারত ভাগের পর থেকে পাকিস্তানের রাজনীতি সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে বইটি অবশ্যই সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

সর্বাধিক পঠিত