Connect with us

আন্তর্জাতিক

কাশ্মীর সংকট :৩৭০নং ধারা ও একটি আলোচনা

Published

on

কাশ্মীর সংকট :৩৭০নং ধারা ও একটি আলোচনা

বর্তমান সময়ের আমাদের উপমহাদেশ তথা সারা বিশ্বের অন্যতম  আলোচিত ইস্যু হলো কাশ্মীর সংকট।সত্যি বলতে কি কাশ্মীর সংকট টি এমন একটি সমস্যা যেটা সেই ১৯৪৭ সাল থেকেই চলমান রয়েছে।এই সংকটের মূলে কী রয়েছে সেটা অনুধাবন না করে পরাশক্তির অধিকারী পাকিস্তান আর ভারত নিজেদের শক্তিমত্তা প্রকাশের ক্ষেত্র হিসেবেই বারবার ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীর উপত্যকাকে ব্যবহার করে চলেছে।

গত ৫ই আগস্ট ২০১৯ খৃস্টাব্দে ভারতের বিজেপি সরকার একটি সাংবিধানিক ক্যুর মাধ্যমে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করে  কাশ্মীর সংকটকে  নতুন করে আলোচনায়  নিয়ে আসে।
কেন কাশ্মীরের মানুষের এত ক্ষোভ?কেনইবা কাশ্মীর এমন অগ্নিগর্ভ?কাশ্মীর কি ভারতের অংশ?কিভাবে এই উপত্যকা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলো?কি কি প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে ব্রিটিশদের চলে যাওয়ার পরে কাশ্মিরকে ভারতের সঙ্গে রাখা হলো?এমন অনেক কৌতুহলকে সামনে নিয়েই কাশ্মীর সম্পর্কে লেখার অবতারনা।

ইতিহাসের পাতায় কাশ্মীরঃ


ইতিহাস থেকে যতদূর জানা যায় তাতে দেখা যায় যে,কাশ্মীর কখনোই ভারতের অংশ ছিল না।কাশ্মীর সর্বদাই  ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন স্বাধীন একটি ভূখণ্ড ছিল।আমরা যদি খৃষ্টপূর্ব সময়কাল থেকে আলোচনা করি তাহলে দেখতে পাই যে-
খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোক শ্রীনগর শহর প্রতিষ্ঠা করেন।তাঁর উত্তরাধিকারী জানুক কাশ্মীরের রাজা হন।


খ্রিস্টপূর্ব ৫০ -২০০ কাশ্মীরে রাজত্ব করেন কুষাণ বংশ ।খিষ্টীয় ষষ্ঠ শতকে কাশ্মীর হুন সাম্রাজ্যের অধীনে আসে।৬২৭খ্রিস্টাব্দে কার্কেট রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা দুর্লভ বর্ধন বিয়ের যৌতুক হিসেবে কাশ্মীর রাজ্যের অধিকারী হন। ১৩৩৯ সালে শাহ মির্জা কাশ্মীরের একাংশ দখল করে লোহার বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে আমির শাহ কাশ্মীরের বাকি অংশে নিজের শাসন কায়েম করেন। ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর কাশ্মিরকে মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আনেন। ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে আহমদ শাহ আবদালী কাশ্মীরে আফগান রাজত্বের সূচনা করেন। ১৭৮৯খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীর শিখ রাজত্বভুক্ত হয়। ১৮৪৬ -এ ব্রিটিশদের সাথে যুদ্ধে শিখরা পরাজিত হয়।তখন ব্রিটিশরা এ কাশ্মীর রাজ্য কে ডোগরা রাজ গুলাব সিংহের কাছে ১ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেয়।তবে গুলাব সিংহ চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশ কদর রাজ্য হিসেবে কাশ্মীর কে অন্তর্ভুক্ত করে। কাশ্মীর পরবর্তীতে ব্রিটিশদের সরাসরি শাসনে আর কোনদিনই আসেনি।১৮৫৭-১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কাশ্মীর শাসন করে রনবীর সিং, তারপর প্রতাপ সিং১৮৮৫-১৯২৫, তারপর শাসন করেন হরি সিং১৯২৫ থেকে১৯৪৯খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।


(সূত্র- কাশ্মীরে আজাদীর লড়াই,একটি ঐতিহাসিক দলিল,প্রবীর ঘোষ,পৃষ্ঠা -২২)

দেশীয় রাজ্য বা প্রিন্সলি স্টেটঃ


ভারত বর্ষ যখন ব্রিটিশরা শাসন করেছিল তখন কাশ্মীর সহ আরো বেশ কিছু রাজ্য বৃটিশ কদর রাজ্য হিসেবে সীমিত স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত।এসব কদর রাজ্য সরাসরি এবং পূর্ণ বৃটিশ নিয়ন্ত্রিত হিসেবে বিবেচিত হতো না।এসব রাজ্যকে প্রিন্সলি স্টেট বা দেশীয় রাজ্য বলা হতো।এসব দেশীয় রাজ্যের শাসকদের উপাধি ছিল মহারাজা, রাজা, নিজাম প্রভৃতি।প্রিন্সলি স্টেট বা দেশীয় রাজ্য মোট ছিল ৫৬৫ টি এবং প্রভিন্স ছিল ১১টি।দেশীয় রাজ্যের মধ্যে যেগুলো বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন ছিল সেগুলো কে বলা হতো স্যালুট স্টেইট।জম্মু ও কাশ্মীর এবং হায়দ্রাবাদ ছিল স্যালুট স্টেইটের অন্তর্ভুক্ত।

কাশ্মীর সংকট :৩৭০নং ধারা ও একটি আলোচনা
প্রিন্সলি স্টেট


(সূত্র- কাশ্মীর ওআযাদীর লড়াই,আলতাফ পারভেজ,পৃষ্ঠা – ১৩)
‘ইন্ডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্স এক্ট ১৯৪৭’ অনুযায়ী  ভারতবর্ষে বৃটিশ কর্তৃত্ব অবসানের পর প্রিন্সলি স্টেট গুলো নিজেরাই তাদের স্বাধীন সত্তা বজায় রাখা অথবা ভারত কিংবা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী ছিল।১৯৪৭ এর ৪ ঠা জুন লর্ড মাউন্টব্যাটন এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের ( প্রিন্সলি স্ট্যাইট কর্তৃপক্ষকে)এই বিষয়টি  জানিয়ে দেন।
( সূত্র-কাশ্মীর ও আযাদীর লড়াই,আলতাফ পারভেজ,পৃষ্ঠা -১৩)


ব্রিটিশদের ক্ষমতা ছাড়ার পূর্বে কাশ্মীরের অবস্থাঃ


ভারতবর্ষের অন্যান্য স্থানে যেমন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছিল কাশ্মীরে সরাসরি ব্রিটিশ শাসন না থাকায় ব্রিটিশ বিরোধী কোন আন্দোলন এখানে দেখা যায়নি।কিন্তু কাশ্মীরের শাসক মহারাজা হরি সিংএর অন্যায়, অত্যাচার আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণের প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল।রাজার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৩১ সালের একাধিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।কাশ্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম প্রজার ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদের খুতবার উপর রাজা কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।সেই সাথে  অবমাননা করা হয় মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের।এ দুটি ঘটনা কাশ্মীরের জনগণের দীর্ঘদিনের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দেয়।দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনা আর নিপীড়নের দরুন বিক্ষুব্ধ জনতা এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসে।উত্তাল সে সময় আবদুল কাদির নামক এক প্রতিবাদী যুবক বিক্ষোভ-সমাবেশে মহারাজা হরি সিং এর অন্যায়ের বিরুদ্ধে উত্তেজিত বক্তৃতা প্রদান করায় হরি সিংয়ের সৈন্যরা তাঁকে গ্রেফতার করে।

জনবিচ্ছিন্ন শাসক হরিসিং জনরোষের ভয়ে আবদুল কাদিরের বিচার কার্যক্রম জনসম্মুখে না করে কারাগারের ভিতরে পরিচালনা করে।বিচার চলাকালে নামাজের ওয়াক্ত হলে বিচারিক কার্যক্রম দেখতে আসা এক আগন্তুক মুসলিম আজান দেওয়া শুরু করলে স্বৈরাচারি রাজার নির্দেশে তাকে গুলি করে শহীদ করা হয়।তখন আরেক জন মুসলিম দাঁড়িয়ে আজান শুরু করলে তাকেও তখন গুলি করে শহীদ করা হয়।তখন আরেকজন দাঁড়িয়ে আযান শুরু করে তাকেও গুলি করা হয়। এভাবে এক আজান শেষ করতেই ২২ জন মুসলিম শহীদ হন।
(সূত্র —কাশ্মীর ও আজাদির লড়াই, আলতাফ পারভেজ, পৃষ্ঠা ১৯)
এই ঘটনার নির্মমতায় গোটা কাশ্মীর উপত্যকা শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় এবং এই পরিপ্রেক্ষিতেই গঠিত হয় ‘মুসলিম কনফারেন্স’ নামক একটি রাজনৈতিক সংগঠন।পরবর্তীতে এই মুসলিম কনফারেন্স এর আন্দোলনের মাধ্যমেই কাশ্মীরে রাজার কতেক স্বেচ্ছাচারী নিয়ম-কানুন এর পরিবর্তে গণতান্ত্রিক নিয়ম-কানুন চালু করা হয়।


স্বৈরাচারি রাজার বিরুদ্ধে আন্দোলনঃ


১৯৪৬ সালে কাশ্মীর উপত্যকার জনসাধারণ থেকে শুরু করে খোদ পুলিশ বাহিনীও রাজার স্বৈরতন্ত্র ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।  ১৯৪২ সালে ভারতের ‘কুইট ইন্ডিয়ার ‘আদলে কাশ্মীরেরও রাজতন্ত্রের অবসান চেয়ে আন্দোলন গড়ে ওঠে, যার নাম দেওয়া হয় “কাশ্মীর কো ছোড় দো”।
এই সময় সাম্প্রদায়িক হিন্দু মহাসভা এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ জনগণের এই শান্তিপূর্ণ অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনকে হিন্দু মহারাজার ইন্ধন নিয়ে সাম্প্রদায়িক একটা রূপদান করতে সচেষ্ট হয়।মহারাজাও নিজের ক্ষমতাকে আঁকড়ে থাকার জন্য সাম্প্রদায়িক এই সংগঠনেকে সর্বাত্মক সহায়তা করতে থাকলেন।এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজের গদিকে অক্ষুন্ন রাখতে জনগনের শান্তিপূর্ণএই আন্দোলনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সভ্যদের হাতে নিজের অস্ত্রাগারের অস্ত্র তুলে দিলেন।
(সূত্র -নিউ লাইট অন কাশ্মীর, দুর্গাদাস, পৃষ্ঠা-১৩৩)।
‘কাশ্মীর কো ছোড় দো’ আন্দোলনের নেতা ছিলেন শেখ আব্দুল্লাহ ও তার মুসলিম কনফারেন্স দল।১৯৪৬এর মে মাসে হরিসিং অবৈধভাবে শেখ আব্দুল্লাহ ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেফতার করেন।


বৃটিশদের ক্ষমতা হস্তান্তর ও জম্মুতে মুসলিম গনহত্যাঃ


১৯৪৭ সালের আগষ্ট থেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস, হিন্দু মহাসভা ও শিখ আকালি দল এর লাখ লাখ স্বেচ্ছাসেবক ভারত থেকে জম্মু, কুঞ্জ, মিরপুর, কাঠুয়া ও উদয়পুরে প্রবেশ করে।
১৯৪৭ সালেন ৬ নভেম্বর  হিন্দু চরমপন্থিরা প্রায় ৫ লাখ মুসলমানকে হত্যা করে।৫ও ৬ নভেম্বরের মধ্যবর্তী রাতে ১০০ টির বেশি লড়ি বোঝাই করে নারী-পুরুষ ও শিশুদের কাঠুয়ার জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের উপর হিন্দু চরমপন্থী ও গুন্ডাদের লেলিয়ে দিয়ে এসব অসহায় মুসলিম নর-নারীর প্রতি নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতা  প্রদর্শন করা হয়। হাজার হাজার পুরুষ কে হত্যা এবং মহিলাদের কে ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয়।
ডোগরা সৈন্যরা জম্মুকে মুসলিম জনশূন্য করার প্রচেষ্ঠায় সফল হয় এবং ৫ লাখ মুসলিমকে আযাদ কাশ্মীর ও পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।
(সূত্র-ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক হস্তক্ষেপ, সাহাদাত হোসেন খান,পৃষ্ঠা ৭২)
১৯৪৭ সালের ধর্মের ভিত্তিতে জাতিদাঙ্গার আগে কাশ্মীরে কখনোই আমরা এই ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাস পাইনা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের শাসকরা কাশ্মীরে রাজত্ব করেছেন,তারা রাজত্ব লাভের জন্য যুদ্ধ করেছেন কিন্তু তাদের রাজত্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা জাতিদাঙ্গা ঘটেনি। কাশ্মীরা শান্তিপ্রিয়, অতিথিপরায়ন, সৌন্দর্যপ্রিয় ও অসাম্প্রদায়িক।হিন্দু মুসলিম শিখ ধর্মের মানুষরা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করেছেন। দুর্নীতিপরায়ন, স্বৈরতন্ত্রীর কোনো জাত ধর্ম হয় না -এই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাশ্মিরিদের আন্দোলন।আন্দোলনকারীরা রাজাকে উচ্ছেদের আন্দোলনকে ধর্মীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে স্বৈরতন্ত্র উচ্ছেদের আন্দোলন হিসেবে দেখেছিলেন।
(সূত্র- কাশ্মীরে আজাদির লড়াই একটি ঐতিহাসিক দলিল,পৃষ্ঠা – ২৭ও ২৮)
তখন রাজার এই সাম্প্রদায়িক আচরন ও গনহত্যার খবর পেয়ে মহাত্মা গান্ধী এতটাই বিক্ষুব্ধ হন যে,প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান -এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দায়িত্ব  মহারাজারের।তিনি ক্ষমতায় থাকার অনুপযুক্ত।
(সূত্র- নিউ লাইট অন কাশ্মীর, দুর্গাদাস, পৃষ্ঠা ১৩৩)
১৯৪৭ থেকে ১৯৫১-র মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক হত্যালীলা চালানো হয়েছিল  আরএসএস নেতা মাধোকের নেতৃত্বাধীন ‘জম্মু প্রজা পরিষদের’ তত্ত্বাবধানে।প্রজা পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন মহারাজা হরি সিং।
( সূত্র- ব্লাড অন দ্য ভ্যালি- এ রিপোর্ট  টু দ্যা পিপল  অফ ইন্ডিয়া অন কাশ্মীর, বাই দ্য জয়েন্ট ফাইন্ডিং কমিটি অফ অর্গানাইজেশন ফর ডেমোক্রেটিক রাইটস অ্যান্ড সিভিল লিবার্টি, পৃষ্ঠা ৩৭)।


স্বাধীনতা আন্দোলনে কাশ্মীরের জনগনঃ


১৯৪৭এর জুন মাসে পুঞ্জ অঞ্চলের মানুষজন স্বৈরাচারী রাজাকে কর দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে।অত্যাচারি ডোগরা রাজপুত শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে আশেপাশের অঞ্চলের মানুষেরাও দ্রুত এই দুর্বার আন্দোলনে জড়িয়ে পরে।১৯৪৭ সালের  সেপ্টেম্বরে রাজার সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মহারাজা হরিসিংকে এই বিদ্রোহের খবর জানান।
প্রজা বিদ্রোহে আতংকিত রাজা হরিসিং তৎক্ষনাৎ১৯৪৭সালের১৫অক্টোবর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে টেলিগ্রাম করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিদ্রোহের কথা জানান এবং ব্রিটিশ হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
(সূত্র- কাশ্মীরে আজাদীর লড়াই একটি ঐতিহাসিক দলিল, পৃষ্ঠা- ৩০ )
এদিকে বৃটিশদের থেকে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি নতুন রাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ায়  কাশ্মীরের জনগন নব উদ্যমে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র উৎখাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।মূলত ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্টের পর থেকেই এই বিদ্রোহ রূপ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে।
( সূত্র- কাশ্মীর স্বর্গচ্যুত, সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত, পৃষ্ঠা ১০১)
২৩অক্টোবর১৯৪৭কাশ্মীরের নিপীড়িত প্রজাদের এই মুক্তিযুদ্ধ ব্যাপক আকার ধারণ করে।কাশ্মীরের পুঞ্জ,মিরপুর, মুজাফফরবাদ,গিলগিত,ইয়াসিন,স্বাবড়ু, নগর ইত্যাদি এলাকার সাধারন প্রজারা কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের দিকে মার্চ করে দ্রুত এগুতে থাকে যার ফলশ্রুতিতে  এসব অঞ্চলসমূহ মুক্ত বা স্বাধীন এলাকায় পরিণত হল।
২৪অক্টোবর১৯৪৭সালে পুঞ্চ এলাকার বিদ্রোহিরা স্বাধীনতা ঘোষনা করে এবং সেইসাথে ‘আযাদ কাশ্মীর সরকার’ গঠন করে।সশস্ত্র মুক্তিকামীরা নিজেদের আযাদ কাশ্মীরের সেনাবাহিনী হিসেবে ঘোষনা করলো।পাকিস্তান এই মুক্তিকামীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও পাকিস্তানের এই সহায়তা সরকারিভাবে দেওয়া হয়নি, এই সাহায্য ছিল বেসরকারিভাবে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে।
(সূত্র —কাশ্মীরে আজাদির লড়াই, একটি ঐতিহাসিক দলিল প্রবীর ঘোষ পৃষ্ঠা- ৩১)।
প্রজাদের এই দুর্বার আক্রমণের মুখে হরি সিং শেখআব্দুল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন।শেখআব্দুল্লাহ হরি সিং এর সহায়তায় নিজের সমর্থকদেরকে সাধারন প্রজাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামলেন।উল্লেখ্য শেখ আব্দুল্লাহর মুসলিম সমর্থকগণ হিন্দু রাজার সমর্থনে মুসলিম প্রজাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নামেন।কিন্তু সাধারন জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে খরকুটোর মতন শেখ আব্দুল্লাহ ও রাজা হরিসিংয়ের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ভেসে গেল।
( সূত্র— কাশ্মীরে আজাদির লড়াই একটি ঐতিহাসিক দলিল প্রবীর ঘোষ পৃষ্ঠা ৩২)।
রাজা হরিসিং প্রজাদের এই বিদ্রোহের মুখে প্রথমে পাকিস্তানের সাহায্য প্রার্থনা করেন। কারণ কাশ্মীর ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির ভিত্তিতে পাকিস্তান কাশ্মীরের স্থিতিবস্থা ও সার্বভৌমত্ব স্কীকার করে নিয়ে সমগ্র স্বাধীন কাশ্মীরের ‘ডাক তার ও যোগাযোগ ব্যবস্থা’ পরিচালনা করছিল প্রায় পাকিস্তান তৈরীর জন্মলগ্ন থেকেই।কাশ্মীরের রাজা ও প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থনা খারিজ করে দিয়ে পাকিস্তান সরকার জানিয়েছিল তাদের পক্ষে কোনোভাবেই একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ সম্ভব নয়।
(সূত্র -কাশ্মীরে আজাদির লড়াই একটি ঐতিহাসিক দলিল,প্রবীর ঘোষ,পৃষ্ঠা -৩২)
প্রজাদের এমন দুর্বার বিদ্রোহের মুখে ভীত সন্ত্রস্ত্র রাজা হরিসিং যখন -”কতগুলো শর্ত সাপেক্ষে পাকিস্তানের মধ্যে স্বায়ত্তশাসন নিয়ে থাকার প্রসঙ্গে আপত্তি নেই”-এমন একটি ভাবনা নিয়ে মন্ত্রীদের সাথে আলোচনা করছিলেন,তখন শেখ আব্দুল্লাহ এবিষয়ে ভারতের সাহায্য প্রার্থনা করার পক্ষে নানা যুক্তি দেখিয়ে হরিসিং কে রাজি করিয়ে ফেললেন।
(সূত্র- কাশ্মীরে আজাদির লড়াই একটি ঐতিহাসিক দলিল প্রবীর ঘোষ পৃষ্ঠা ৩৩)।
উল্লেখ্য, শেখ আবদুল্লাহ মুসলিমলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেন উল্টো দিকে কংগ্রেস নেতা জহরলাল নেহেরুকে  ভীষন পছন্দ করতেন।
নেহেরু – হরিসিং চুক্তি ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রদান-
১৯৪৭ সালের ২৪ অক্টোবর ভীত সন্ত্রস্ত্র রাজা হরি সিং সপরিবারে রাজধানী শ্রীনগর ছেড়ে জম্মুতে পালায়ন করলেন।১৯৪৭ সালের ২৫ অক্টোবর রাজা জম্মু থেকে রাজকীয় পরিষদ সমেত রাজধানী দিল্লিতে চলে যান এবং পাকিস্তানি রেডিওতে রাজার দেশ ছেড়ে ভারতে পালনের ঘোষণা প্রচারিত হতে থাকে।২৬অক্টোবর রাজা হরি সিং,শেখআব্দুল্লাহ,জহরলাল নেহেরু ও মাউন্টব্যাটেন দীর্ঘ আলোচনার পর  ‘কাশ্মীর খন্ডের স্বাধীনতা রক্ষায় উৎসর্গকৃত’ মহারাজ কে বিপদ মুক্ত করার মত একটা পথ বের করলেন।নেহেরু ও হরিসিংএর মধ্যে একটি চুক্তি হলো।

সে যুক্তির প্রধান প্রধান শর্তগুলো হলো-


১-কাশ্মীর অঞ্চলের শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা  যোগাযোগ ও বৈদেশিক বিষয়ে ভারত সরকারের হাতে থাকবে।
২- ভারতের সংবিধান কাশ্মীরের উপর প্রয়োগ করা যাবে না।
৩-  কাশ্মীরে আলাদা এবং নিজস্ব সংবিধান থাকবে।
৪- কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী ‘প্রধানমন্ত্রী’ বলেই উল্লেখিত হবেন সর্বত্র, তাকে মুখ্যমন্ত্রী বলে চিহ্নিত করা যাবে না।
৫- কাশ্মীরের নিজস্ব ও পৃথক জাতীয় পতাকা থাকবে যা ভারত থেকে স্বতন্ত্র।
৬-  কোন ভারতীয় কে কাশ্মীরে ঢুকতে হলে অনুমতি পত্র বা পারমিট নিতে হবে ইত্যাদি।


(সূত্র- কাশ্মীর ও আজাদির লড়াই একটি ঐতিহাসিক দলিল, পৃষ্ঠা ৩৩)
“কাশ্মীর- ভারত” চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং কে বলেন, “যে মুহুর্তে কাশ্মীরে আইন-শৃঙ্খলা আবার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং কাশ্মীরের ভূখণ্ড আক্রমণকারীদের হাত থেকে মুক্ত হবে, কাশ্মীরের ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি কাশ্মীরের অধিবাসীদের গণভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে”।
(সূত্র -আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস, প্রফুল্ল কুমার চক্রবর্তী ও সিদ্ধার্থ গুহ রায় পৃষ্ঠা ৩০৪)
দুঃখজনক হলেও সত্য জহরলাল নেহেরু নিজের কথা রাখেনি,চুক্তির সেকথা রাখেননি ভারতীয় কোন শাসকই।সকল শাসকই কেবল অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে কাশ্মীরিদের নিপিড়ন করে চলেছেন ২৭অক্টোবর ভারতীয় সেনারা ঝাঁকে ঝাঁকে শ্রীনগর বিমানবন্দরে নামতে লাগলো।মুক্তিকামী বিভিন্ন কাশ্মীরি উপজাতির সেনারা তখন শ্রীনগর থেকে মাত্র পাঁচ মাইল দূরে ছিল।যুদ্ধে পিছু হটতে লাগলো আজাদ কাশ্মীর বাহিনী।কাশ্মীর রাজার পক্ষে ভারতীয় সেনা নামতেই আজাদ কাশ্মীর সরকার পাকিস্তানের সাহায্য চাইলো ( মুক্ত অঞ্চল নিয়ে একটি  আযাদ কাশ্মীর সরকার গঠিত হয়েছিল)।তারা আরও দাবি করল আজাদ কাশ্মীর সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে কারো সঙ্গে কোনো চুক্তি করার অধিকার পালাতক প্রাক্তন রাজা হরি সিং-র নেই অতএব তাঁর সঙ্গে সম্পাদিত হওয়া ভারতের চুক্তিটি সম্পূর্ণ বেআইনি।মুক্তিকামীদের প্রতি পাকিস্তান সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো এবং সেইসাথে সাহায্য এলো আফগানিস্থান থেকেও।
( সূত্র -কাশ্মীরে আজাদির লড়াই একটি ঐতিহাসিক দলিল, প্রবীর ঘোষ, পৃষ্ঠা ৩৬)
সেই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় লাইন অফ কন্ট্রোলে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করলো।সেই থেকে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রনে আযাদ কাশ্মীর আর ভারতের নিয়ন্ত্রনে জম্মু-কাশ্মীর।


নেহেরু ও হরিসিংএর মধ্যেকার এই চুক্তির ফলে ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মীরকে এক বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হয়।সে বিশেষ মর্যাদা টি হল -প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ ও পররাষ্ট্রনীতি ব্যতীত রাষ্ট্রপরিচালনার বাকি বিষয়গুলোতে জম্মু ও কাশ্মীরে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে ভারত সরকারকে স্থানীয় আইন সভার সঙ্গে সম্মতির ভিত্তিতে তা করতে হবে।সংবিধানে
প্রথমে এই অনুচ্ছেদটি ছিল ৩০৬ এর আকারে।তবে ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে এই অনুচ্ছেদটি ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ হিসেবে পরিচিতি পায়।প্রেসিডেন্টের অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই অনুচ্ছেদটি ভারতীয় সংবিধানে যুক্ত করা হয়১৯৫৪ সালের১৪মে।
বস্তুত ৩৭০ নং অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে৩৫ এর- (এ) অনুচ্ছেদ সংযুক্ত হয়েছিল।৩৫ নং অনুচ্ছেদের (এ)-তে বলা হয়েছে- জম্মু ও কাশ্মীরের আইনসভা কর্তৃক সেখানকার ‘স্থায়ী বাসিন্দা’ নির্ধারণ এবং তাদের বিশেষ মর্যাদা ও অধিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার এবং স্থায়ী বাসিন্দা নয় এমন ব্যক্তিদের ওই অঞ্চলের জমির মালিকানার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের  এখতিয়ার দেওয়া হয়।
(সূত্র-কাশ্মীর ও আযাদির লড়াই,আলতাফ পারভেজ,পৃষ্ঠা -৪৩)


৩৭০ ধারা বিলোপের প্রাক্কালে কাশ্মীরের পরিস্থিতিঃ


সম্পূর্ণ চুপিসরে এবং কাস্মীরি সাধারন জনগন ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদেরকে না জানিয়েই একতরফাভাবে বিজেপি সরকার সংবিধানের এই বিশেষ ধারাটি বিলোপ সাধন করে।তখন কাস্মীর উপত্যকায় যে পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল সেটা হল-


১-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের এক সপ্তাহ আগ থেকে ব্যপাক পরিমাণ নিরাপত্তাবাহিনী মজুত করা হয়েছে, বাতিল করে দেওয়া হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলাম্বীদের তীর্থ কেন্দ্র অমরনাথ যাত্রা।জারি করা হয়েছে  অনির্দিষ্টকালের জন্য শ্রীনগর জুড়ে ১৪৪ ধারা।


২-সরকার উপকত্যার সমস্ত প্রভাবশালী নেতানেত্রীদের গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছে পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতি, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লা এবং ফারুক অবদুল্লা এবং জম্মু কাশ্মীর পিপলস কনফারেন্সের সাজ্জাদ লোন।


৩-সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল, ব্রডব্যান্ড এবং কেবল টিভি পরিসেবা।


৪- সরকার বার্ষিক অমরনাথ যাত্রা বাতিল করে দিয়ে যাত্রী ও পর্যটকদের উপত্যকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল। যদি মিথ্যাচার করে সেনাবহিনী জানিয়েছিল, পাকিস্তানের জঙ্গিরা যাত্রার উপর হামলা চালাতে পারে বলে খবর রয়েছে।


৫- এনআইটি কর্তৃক শ্রীনগরের ছাত্রদের হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।


৬-সরকারে এহেন ঘৃণ্য কার্যকলাপের সমালোচনা করেছেন বিরোধী নেতারা।তখন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর টুইট করে বলেছেন,“জম্মু কাশ্মীরে হচ্ছেটা কী! নেতাদের কেন গ্রেফতার করা হয়েছে কোনও কারণ ছাড়াই! যদি কাশ্মীরিরা আমাদের নাগরিক হন এবং তাঁদের নেতারা আমাদেরই অংশ হন, তাহলে যখন আমরা সন্ত্রাসবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে কার্যকলাপ চালাচ্ছি সে সময়ে তো নিশ্চিতভাবেই মূলধারার সবাইকে আমাদের সঙ্গেই তো রাখা উচিত! তাঁদেরই যদি বাদ দিয়ে দিই, বাকি কে থাকে।”


৭-এর আগে সরকারি এক গুচ্ছ নির্দেশে উপত্যকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে।গত ২৮ জুলাই রেলের এক আধিকারিককে বলা হয় রেলওয়ে আধিকারিকদের চার মাসের রেশন মজুত করে রাখতে,কাশ্মীরে তাঁদের পরিবারের লোকজনকে না রাখতে এবং জরুরি পরিস্থিতির কারণে কর্মীদের ছুটিতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে।সেদিনই আরেকটি নির্দেশে পুলিশ উপত্যকার মসজিদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠায়।


৮- ৩০ জুলাই রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক বলেছিলেন, এসব নির্দেশের কোনটিই প্রামাণ্য নয়,প্রচুর গুজব ছড়াচ্ছে।রেলের পক্ষ থেকে পরবর্তীকালে ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হয়।রেলমন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হয় ওই আধিকারিক এই ধরনের কোনও চিঠি দেওয়ার অধিকারী নন।


৯-সরকার এই রাজ্যে নিরাপত্তাবাহিনীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি করে গিয়েছে।২৫ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ১০০কোম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র আধা সেনা নিয়োগ করেছে।এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা গাড়ি বিস্ফোরণের পর আরো৪০০ কোম্পানি আধাসেনা নিয়োগ করা হয়েছিল।
(সূত্র-বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর)

কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের এক সপ্তাহ আগ থেকে ব্যপাক পরিমাণ নিরাপত্তাবাহিনী মজুত করা হয়েছে, বাতিল করে দেওয়া হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলাম্বীদের তীর্থ কেন্দ্র অমরনাথ যাত্রা।জারি করা হয়েছে  অনির্দিষ্টকালের জন্য শ্রীনগর জুড়ে ১৪৪ ধারা।


২-সরকার উপকত্যার সমস্ত প্রভাবশালী নেতানেত্রীদের গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছে পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতি, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লা এবং ফারুক অবদুল্লা এবং জম্মু কাশ্মীর পিপলস কনফারেন্সের সাজ্জাদ লোন।


৩-সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল, ব্রডব্যান্ড এবং কেবল টিভি পরিসেবা।


৪- সরকার বার্ষিক অমরনাথ যাত্রা বাতিল করে দিয়ে যাত্রী ও পর্যটকদের উপত্যকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল। যদি মিথ্যাচার করে সেনাবহিনী জানিয়েছিল, পাকিস্তানের জঙ্গিরা যাত্রার উপর হামলা চালাতে পারে বলে খবর রয়েছে।


৫- এনআইটি কর্তৃক শ্রীনগরের ছাত্রদের হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।


৬-সরকারে এহেন ঘৃণ্য কার্যকলাপের সমালোচনা করেছেন বিরোধী নেতারা।তখন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর টুইট করে বলেছেন,“জম্মু কাশ্মীরে হচ্ছেটা কী! নেতাদের কেন গ্রেফতার করা হয়েছে কোনও কারণ ছাড়াই! যদি কাশ্মীরিরা আমাদের নাগরিক হন এবং তাঁদের নেতারা আমাদেরই অংশ হন, তাহলে যখন আমরা সন্ত্রাসবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে কার্যকলাপ চালাচ্ছি সে সময়ে তো নিশ্চিতভাবেই মূলধারার সবাইকে আমাদের সঙ্গেই তো রাখা উচিত! তাঁদেরই যদি বাদ দিয়ে দিই, বাকি কে থাকে।”


৭-এর আগে সরকারি এক গুচ্ছ নির্দেশে উপত্যকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে।গত ২৮ জুলাই রেলের এক আধিকারিককে বলা হয় রেলওয়ে আধিকারিকদের চার মাসের রেশন মজুত করে রাখতে,কাশ্মীরে তাঁদের পরিবারের লোকজনকে না রাখতে এবং জরুরি পরিস্থিতির কারণে কর্মীদের ছুটিতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে।সেদিনই আরেকটি নির্দেশে পুলিশ উপত্যকার মসজিদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠায়।


৮- ৩০ জুলাই রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক বলেছিলেন, এসব নির্দেশের কোনটিই প্রামাণ্য নয়,প্রচুর গুজব ছড়াচ্ছে।রেলের পক্ষ থেকে পরবর্তীকালে ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হয়।রেলমন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হয় ওই আধিকারিক এই ধরনের কোনও চিঠি দেওয়ার অধিকারী নন।


৯-সরকার এই রাজ্যে নিরাপত্তাবাহিনীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি করে গিয়েছে।২৫ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ১০০কোম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র আধা সেনা নিয়োগ করেছে।এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা গাড়ি বিস্ফোরণের পর আরো৪০০ কোম্পানি আধাসেনা নিয়োগ করা হয়েছিল।
(সূত্র-বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর)

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ ধারা বাতিল পরবর্তী পরিস্থিতি:


প্রাথমিক অবস্থায় ভারতীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীরকে সাংবিধানিক এই বিশেষ মর্যাদা দিলেও ধীরে ধীরে সব সরকারই সেটার উপর বিভিন্ন বিধি বিধান আরোপ করে সে বিশেষ মর্যাদা খর্ব করতে শুরু করে।ভারতীয় সকল শাসকই কাশ্মীদের প্রকৃত মর্যাদা এমনকি সাংবিধানিক মর্যাদাও দেয়নি বা দিতে চায়নি।ছলে বলে কৌশলে কাশ্মীরের ভূখন্ড দখল করাই যেন ছিল তাদের মূল উদ্দ্যেশ্য।তাই শুরু থেকেই বঞ্চিত কাশ্মীরিরা ভারতীয় শাসকদের প্রতি বিক্ষুব্ধ ছিল।ভারতীয় সরকার সাধারন কাম্মীরি জনগনের ক্ষোভকে প্রশমনের চেষ্টা না করে সকলেই বন্দুকের ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করেছে।
ভারতের কাছ থেকে নিজেদের ন্যায্যও সাংবিধানিক অধিকার আদায় করতে গিয়ে ১৯৪৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ কাশ্মীরি শহীদ হয়েছেন।ভারতীয় সেনাদের পাশবিকতার শিকার  হয়েছেন হাজার হাজার কাশ্মীরি নারী।কাশ্মীরিদের প্রতি ভারতীয় সরকারের রাষ্ট্রীয় এই নিপিড়নের সর্বশেষ আঘাত হল নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ কর্তৃক  জম্মু-কাশ্মীরের সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদা ৩৭০নং অনুচ্ছেদকে বাতিল করনঃ এবং সেইসাথে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিভক্ত করে এটাকে কেন্দ্র শাসিত একটি সাধারণ স্টেটে পরিণত করনঃ।
এটার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিজিপি তাদের পুরাতন সেই ১৯৫০ সালের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করলো।

কাশ্মীর সংকট :৩৭০নং ধারা ও একটি আলোচনা


গত ৫ই আগষ্ট ২০১৯থেকে আজও কাশ্মীর অস্থির ও অস্বাভাবিক।অনেক দিন অতিবাহিত হলেও রাজ্যের প্রশাসন অস্থীতিশীল।তাই নিষেধাজ্ঞার বিস্তর ঘেরাটোপ থেকে মানুষকে অব্যাহতি দিতে প্রশাসনের তীব্র অনীহা।অঘোষিত এক  কারফিউ২৪ ঘণ্টা ধরে চলমান।দিবা-রাত্রী সর্বত্র ভারী বুটের শব্দ।স্কুল খোলা অথচ পড়ুয়া নেই।অফিস খোলা অথচ হাজিরা নেই।ফোনের ল্যান্ডলাইন আজ খোলা তো কাল বন্ধ।হাসপাতাল খোলা অথচ প্রাণহীন। ইন্টারনেট অচল।তাই অকোজে হয়ে পরে রয়েছে অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন কাজ কর্ম ও সেবা।সব কিছুই যেন মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে।সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের হাতে-পায়ে কঠোর বেড়ি পড়ানো হয়েছে। নামী-অনামী কত রাজনৈতিক নেতা যে এখনো বন্দী,তার সঠিক হিসাব কারও কাছে নেই।সরকার এখনো সংখ্যা জানায়নি।রাজনৈতিক কাজকর্ম কবে স্বাভাবিকভাবে করতে দেওয়া হবে তার ইঙ্গিত এখনোও নেই।কোথায় যে কী ঘটছে, অজানা।মুখ থুবড়ে পরেছে ব্যবসা বানিজ্য, বন্ধ হয়ে রয়েছে স্কুল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম।ভূতুড়ে আর অশান্ত এই কাশ্মীরে কত মায়ের বুক খালি করা হচ্ছে,কত বধূ নিজের স্বামীদের হারিয়ে বিধবা হচ্ছে,কত সন্তান তার পিতাকে হারাচ্ছেন আর কত নারী ভারতীয় সেনাদের পাশবিকতার শিকার হচ্ছে তা সম্পূর্নই অজানা।উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে আধুনিক সব যন্ত্রের সাহায্যে কাশ্মীরি জনগনের আপেলের বাগান,ধ্বংস করা হচ্ছে ফসলের মাঠ, মুখ থুবড়ে পরেছে কাশ্মীরের আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন শিল্প।বন্ধ রয়েছে ব্যবসা বানিজ্য,বন্ধ হয়ে আছে শিক্ষা কার্যক্রম, হুমকির মুখে সেখানকার অধিবাসীদের মানুষ হিসেবে নূন্যতম মৌলিক অধিকার।
সামান্য প্রতিবাদ দেখালেই ছোঁড়া হচ্ছে গুলি।এ যেন একটা কারাগার কিংবা এর চেয়ে বেশি কোন কিছু।
কাশ্মীরের রাজনীতিবিদরা দাবি করে থাকেন যে ১৯৮৯ থেকে ২০১৭সাল পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক ব্যক্তি কাশ্মীরে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে।
১৯৪৭ সালের ২৭ অক্টোবর সকাল ৯ টা থেকে ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরের শ্রীনগরে অবতরণ শুরু করে সেই হিসেবে জম্মু ও কাশ্মীরের ভারতীয় সামরিক উপস্থিতির ৮ দশক চলছে এখন। জম্মু ও কাশ্মীরের নির্দলীয় সচেতন নাগরিকদের মানবাধিকার বিষয়ক একটি জোট হল জম্মু-কাশ্মীর কোয়ালিশন অফ সিভিল সোসাইটি বা (JKCCS)।তারা ২০১৫ সালে “স্ট্রাকচার অফ ভায়োলেন্স” নামে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে এবং সেই প্রতিবেদনে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে উল্লেখ করে যে জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতের বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে সাত লাখ রক্ষী রয়েছে এখন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পাদিত এক গবেষণা নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে বর্তমানে প্রতি বর্গমাইলে প্রায় ১০০ জন ভারতীয় সৈনিক কর্মরত।প্রতি ১০ জন নিরীহ বেসামরিক নাগরিক এর বিপরীতে সেখানে কোন না কোন বাহিনীর একজন সৈনিক রয়েছে।অথচ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেপ্রতি ৮০০জনের বিপরীতে একজন সেনা রয়েছে।৩৭০ নং অনুচ্ছেদ রদ করার প্রাক্কালে কাস্মীরে আরো ৪০ হাজার বাড়তি সৈনিক মোতায়েন করা হয়েছে।কাশ্মীরপূ্র্ব থেকেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিকায়ীত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল এখন সেটার পরিধি আরো বিস্তৃত হল।


সাংবাদিক,সংবাদ মাধ্যম, মোবাইল ইন্টারনেটহীন কাশ্মীরকে সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভারতীয় সেনারা কী পরিনাম নির্যাতন করছে সেটা সহজেই অনুমেয়।বেসরকারি ভাষ্যে যা অত্যাচার,নিপীড়ন ও লাঞ্চনা সরকারি ভাষ্যে তা ‘নিছকই গুজব ও রাষ্ট্রদ্রোহ’।সরকার ই যেন সর্বশক্তিমান। সরকারের ( সেনাবাহীনির) সীমাহীন এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে নিছক টুইট করার “অপরাধে” রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ দায়ের হয়েছে সদ্যোজাত রাজনৈতিক দল ‘জম্মু-কাশ্মীর পিপলস মুভমেন্ট’-এর ডাকাবুকো নেত্রী শেহলা রশিদের বিরুদ্ধে।


এই সেই কাশ্মীরি তরুণী, যিনি দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন এবং ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার-উমের খালিদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। সাম্প্রদায়িক সরকারের  তা নজর এড়ায়নি।


মোটকথা, স্বাভাবিকতা বলতে সবাই যা বোঝে, তা যে কবে দৃশ্যমান হবে, কেউ জানে না।
সেই ১৯৪৭ সাল থেকে জ্বলতে থাকা কাশ্মীর উপত্যকা নতুন করে পেট্রোল সমেত আগুন জ্বালিয়েছে মৌলবাদী আমিত শাহ আর নরেন্দ্র মোদি জুটি।এই আরএসএস বাহিনীর এরূপ নগ্নতা আর হিংস্রতা শুধু ভারতেই নয় গোটা দক্ষিন এশিয়াতেই মন্দ প্রভাব রাখবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
অবরুদ্ধ কাশ্মীরের মযলুম জনতা জালিমদের থেকে মুক্তি পাক।পতন হোক ভারতে সকল সাম্প্রদায়িক শক্তির,বেঁচে থাকার অধিকার পাক সকল মানুষ।কোন ধর্ম আর বর্ন নয় কেবল মানুষ হিসেবেই বেঁচে থাকবার আর স্বাধীনতার অধিকার পাক সকল মানুষ।

মোঃ তরিকুল আলম তাসিকুল
সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

রাজনীতি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদ বিরোধী সাম্প্রতিক আন্দোলন ও কিছু কথা

Published

on

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্সাণবাদ বিরোধী সাম্প্রতিক আন্দোলন

খোলা চোখে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদ বিরোধী সাম্প্রতিক আন্দোলন ও কিছু কথা

ঘটনাঃ
জাল নোট ব্যবহারের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনের বাসিন্দা জর্জ ফ্লয়েডকে (৪৬) গত ২৫ মে আটক করে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলি শহরের পুলিশ। আটকের পর ডেরেক চৌভিন নামের এক(শ্বেতাঙ্গ) পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড় হাঁটু দিয়ে সড়কের উপর চেপে ধরলে তিনি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান।এই হত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে পুরো যুক্তরাষ্ট্র।
(প্রথম আলো-২রা জুন ২০২০)

বর্তমান আন্দোলনের পটভূমি-

চলমান এই আন্দোলনটি জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকান্ডই একমাত্র কারন নয়,এই আন্দোলনের পটভূমি হিসেবে ৩ টি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে-
প্রথমত
পুলিশি নির্যাতন এবং হত্যাকান্ড,বিশেষত পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গদের নিহত হবার ঘটনা।
দ্বিতীয়ত
বিচার ব্যবস্থা।গোটা বিচার ব্যবস্থা এবং আইনি বিধি বিধানগুলো সংখ্যালঘু,দরিদ্র এবং বিশেষত কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে না।
তৃতীয়ত
সমাজে বিরাজমান বৈষম্য,যার প্রধান শিকার হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গরা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদ বিরোধী সাম্প্রতিক আন্দোলন

ছবিঃ সংগৃহীত

এসবের সাথে সাথে আরো যে বিষয়টি মার্কিন সমাজে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে তা হলো বর্ণবাদ বিষয়ে সমাজে এবং রাজনীতিতে এক ধরনের অস্বীকৃতির প্রবণতা।সমাজপতি ও রাজনীতিবিদ উভয়েরই মনোভাবটা হলো,এই নিয়ে কথা না বললেই যেন বর্ণবাদ অপসৃত হয়ে যাবে।

সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্তৃক কৃষ্ণাঙ্গ হত্যাকাণ্ড:

  • ২০১৪ সালের ১৭ ই জুলাই নিউইয়র্ক শহরে অভিন্ন পন্থায় শ্বাসরোধ করে এরিক গার্ণারের হত্য।
  • ২০১৪ সালের মিসৌরির ফার্গুসন শহরে মাইকেল ব্রাউনের হত্যা।
  • ২০১৫ সালের বাল্টিমোরে ফ্রোডগ্রের হত্যা।
  • ২০২০ সালের মার্চ মাসে কেনটাকির লুইভিল শহরে একজন কৃষ্ণাঙ্গ নার্সকে নিজ বাড়িতে হত্যা।

(সূত্রঃ প্রথম আলো-২রা জুন ২০২০)

বর্তমান আন্দোলন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রূপ নেওয়ার কারণ:-

সাম্প্রতিক সময়ে আমরা মার্কিন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্তৃক  কৃষ্ণাঙ্গ হত্যাকান্ডের বেশ কয়েকটি ঘটনা দেখলেও সেসব হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলনটা এবারের মতন জাতীয় বা আন্তজার্তিক রূপ লাভ করেনি।ইতিমধ্যেই এই ঘটনাকে বিশেষজ্ঞগণ ১৯৬৮ সালে মার্টিন লুথার কিংয়ের খুনের ঘটনার পর সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার সঙ্গে তুলনা করছেন। সিএনএ,নিউইয়র্ক টাইমসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫ টির বেশি শহর সহ অন্যান্য মহাদেশের বিভিন্ন শহর এখন বিক্ষোভে উত্তাল।

fire in usa racism

ছবিঃ সংগৃহীত

বার্তা সংস্থা এপির মতে, এই পর্যন্ত বিক্ষোভকালে গ্রেফতার হয়েছে সাড়ে চার হাজার মানুষ,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামাতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভ মিলিটারি ফোস ন্যাশনাল গার্ডের ৫ হাজার সদস্যকে।

তো প্রশ্ন হলো এবারের আন্দোলনটা এই জাতীয় বা আন্তজার্তিক রূপ নেওয়ার কারণ কী? বিশেষজ্ঞগন কয়েকটি কারনের কথা উল্লেখ করেছেন। সেসব হল-

১- অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ধীর নীতি গ্রহণ করাঃ-

২৫ মে মে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা সংগঠিত হলেও ঘটনার ৮ দিন পরে এখনো পর্যন্ত অভিযুক্ত ডেরেক চৌভিনকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি।১-০৬-২০২০ ইং তারিখে তাকে আদালতে তোলার কথা থাকলেও  নানা অযুহাত আর টালবাহানায় সেটাকে পিছিয়ে ০৮-০৬-২০২০ তারিখে আদালতে হাজির করার তারিখ নির্ধারন করা হয়।

২- লুইভিলে শহরে কৃষ্ণাঙ্গ নার্সকে হত্যাঃ

Breaonna Taylor black us african women killed in usa

ছবি : সংগৃহীত

গত মার্চ মাসে লুইভিলে শহরে একজন কৃষ্ণাঙ্গ নার্সকে পুলিশ কর্তৃক নিজ বাড়িতে হত্যা করা হলেও সে ঘটনার এখন পর্যন্ত যথাপোযুক্ত কোন বিচার হয়নি।

৩- সাম্প্রতিক সময়ে শ্বেতাঙ্গবাদের প্রবল জোয়ার সষ্টি হওয়াঃ-

সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষত ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে শ্বেতাঙ্গবাদের প্রতি তাঁর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন প্রদান শ্বেতাঙ্গবাদ আরো উস্কে দিচ্ছে।

৪-চীন ও ইরানের প্রকাশ্য মন্তব্য করাঃ-

বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীন ও ইরানের বৈরিতার সম্পর্কের কথা সবারই জানা আছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন,” যুক্তরাষ্ট্র মারাত্মক বর্ণবাদ সমস্যা এবং পুলিশের নিপীড়ন ঘটনায় তুলে ধরেছে এই বিক্ষোভ

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মৌসাভী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে নিজ দেশের জনগনের উপর নিপিড়ন বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান।
( সূত্র: প্রথম আলো- ২ রা জুন ২০২০)

৫-বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারঃ-

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের এই বিক্ষোভকে গৃহযুদ্ধের সাথে তুলনা করা হয়েছে।

এই আন্দোলনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজের গভীর ক্ষতটাই পৃথিবীর সামনে নগ্নভাবে ফুটে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে দশকের পর দশক ধরে বর্ণবাদ চলছে।সাদা কালোর জাহিলি বিভাজন চলমান রয়েছে।ফলে সাম্যবাদ নামক মার্কিন ভন্ডামি আজ সবার সামনে উন্মোচিত হয়ে পড়েছে।এরাই আবার বিশ্বের সামনে মানবতার বুলি কপচিয় সেই সাথে সারাবিশ্বে মানবতার সবক প্রদানের ফেরি করে থাকে।

আজ যেই কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ সারা বিশ্ব উত্তাল হয়েছে এমন পুলিশি নির্যাতনে বর্বর ইসরাইলী কর্তৃক ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে প্রায়শই ঘটে।দুঃখজনক হলেও সেসব নির্যাতনের সরব বা নিরব কোন প্রতিবাদই দেখতে পাওয়া যায় না।তবুও আমরা চাই পৃথিবীর সব অন্যায় আর অবিচারের প্রতিবাদ হউক।সব নিপিড়ন আর যুলুমের অবসান ঘটুক। মানবতা আর মাযলুম জনগোষ্ঠী মুক্তি পাক। মুক্তিপাক নিপীড়িত আরাকান, কাস্মীর, উইঘুর, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন সহ বিশ্বের সকল মাযলুম জনগোষ্ঠী।

লেখক- তরিকুল আলম তাসিকুল
শিক্ষার্থী – সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

আন্তর্জাতিক

নিপীড়িত উইঘুর জনগোষ্ঠীর কথা

Published

on

উইঘুর নিপীড়ন

যদি প্রশ্ন করা হয় বর্তমান সময়ের সবচেয়ে নির্যাতিত নিপীড়িত জনগোষ্ঠী কোনটি? কেউ হয়তো বলবে আরাকানে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের কথা, কেউ বলবে ইহুদি কর্তৃক নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের কথা, কেউ হয়তো বলবে ভারত সরকার কর্তৃক নিপিড়ীত কাস্মীরীদের কথা, কেউ হয়তো বলবে সামাজ্রবাদী কর্তৃক নিপিড়ীত গৃহহারা সিরিয়ানদের কথা,কেউবা বলবে ইয়ামেনের কথা।আর কেউ কেউ হয়তো বলবে উইঘুর মুসলিমদের কথা।পৃথীবির বিভিন্ন প্রান্তে নির্যাতিতত এসব জনগোষ্ঠীর সবাই মুসলিম ধর্মাবলাম্বী।নির্যাতিতি এসকল জনগোষ্ঠী থেকে উইঘুররা একটু বেশিই দুর্ভাগা এই হিসেবে যে,অন্যান্য সম্প্রদায়ের উপর করা নিপীড়নের খবর কিছুটা হলেও বিশ্ব মিডিয়ায় আসে, পৃথীবির লোকজন জানে কিছুটা হলেও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয় কিন্তু উইঘুররদের উপর করা নির্যাতনের কোন খবরই বিশ্ব মিডিয়ায় তেমন একটা আসে না আর পৃথিবীর মানুষও সেসব সম্পর্কে খুব একটা জানে না।এর কারন হিসেবে মিডিয়ার উপর কমিউনিস্ট চীনের ব্যাপক নিয়ন্ত্রণের কথাটাই বলা যেতে পারে।অন্যভাবে বললে উইঘুর মুসলিমদের উপর করা নির্যাতন আর নিপীড়ন ‘মানবতাবাদীদের’ উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার খুব একটা কারন হয়তো হচ্ছে না।

Uyghur Detention Camp
ছবি : সংগৃহীত

উইঘুর জাতির ইতিহাস প্রায় চার হাজার বছর আগের। মূলত,এরা স্বাধীন পূর্ব তুর্কিস্তানের অধিবাসী।পূর্ব তুর্কিস্তান প্রাচীন সিল্ক রোডের পাশে অবস্থিত মধ্য এশিয়ার একটি দেশ,যার চতুর্পাশ্বে চীন, ভারত, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়ার অবস্থান।

 

উইঘুরদের সম্পর্কে পড়াশোনা করতে গিয়ে সেখানে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। চীনে উইঘুর ছাড়াও হুই, কাজাখ, ডংজিয়াং, খালকাস, সালার, তাজিক, বাওন, উজবেক, তাতার মুসলিম রয়েছে। তবে এদের অধিকাংশ ই সেক্যুলার মুসলিম ফলশ্রুতিতে চীনা সরকার উইঘুরদের প্রতি যতটা খড়গহস্ত অন্যান্য মুসলিমদের প্রতি ততটা নয়।কারন হিসেবে বলা যেতে পারে উইঘুরদের চীনা কর্তৃপক্ষ জবর দখল করেছে বাকিদেরকে সেটা করা হয়নি।তাছাড়া উইঘুররা রাজনৈতিক ইসলামকে ধারণ করে বাকিরা সেটা করে না।সম্ভববত পৃথিবীতে সব শাসকরাই এই রাজনৈতিক ইসলামকেই ভয় পায়।কি আমেরিকা,কি ইউরোপ,কি সৌদি বা মধ্যপ্রাচ্য কি বাংলাদেশ বা পাকিস্তান।সব স্থানে একই চিত্র।

 

uyghur muslim
ছবি : সংগৃহীত

উইঘুররা মুসলিম হয়েছিল উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় ওয়ালিদের শাসনামালে।যখন তাঁর বিখ্যাত চার সেনাপতি পৃথিবীর চারদিকে অভিযান পরিচালনা করেছেন।ইতিহাসে আর কোন নৃপতিরা একসাথে এত জন বিজয়ী সেনাপতি ছিল কিনা আমার জানা নেই, এটাও জানা নেই যে এতো বিখ্যাত কোন সেনাপতির এমন করুন অবস্থা হয়েছিল কি না সেটাও।
বিখ্যাত এই চার সেনাপতির মধ্যে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে ৭১১ খৃষ্টাব্দে বিজয় অভিযান পরিচালনা করেছেন মোহাম্মদ বিন কাসেম,মধ্যে এশিয়ায় ৭১২ খৃষ্টাব্দে কুতায়বা ইবনে মুসলিম,তাঁর মাধ্যমে ই এই মাজলুম উইঘুররা ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে।স্পেনে৭১১ খৃষ্টাব্দে তারেক বিন যিয়াদ ও মুসা বিন নুসাইর।ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস এই চারজন দিগ্বিজয়ী সেনাপতিকেই চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছিল।তাদের মতনই যেন তাদের হাতে বিজিত অঞ্চলের মুসলিমরাও আজ চরম নির্যাতন আর নিপীড়নের শিকার।স্পেনে প্রায় ৮০০ বছর মুসলিম শাসন থাকলেও তাদেরকে সেখান থেকে এমনভাবে নিচিহ্ন করা হয়েছে যে কোনকালে এই দেশটি মুসলিমরা আবাদ করেছে সেটা বুঝার আর কোন উপায়ই আজ বাকি নেই।মধ্য এশিয়ার উইঘুররা ছাড়া অন্যান্য দেশসমূহ দীর্ঘদিন সোভিয়েত রাশিয়ার কমিউনিস্ট শাসনাধীন থেকে তাদের করুন অবস্থার কথা ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলালেই বুঝতে পারা যায় আর সেখানকার চেচনিয়া বসনিয়ার কথা আর নাইবা বললাম।বাকি থাকলো আামাদের ভারতীয় উপমহাদেশের কথা,ভারতবর্ষে সুলতানী আমল ও মুঘল আমল মিলিয়ে মুসলমানরা ৮০০ বছর শাসন করেছে,সুলতান আর মুঘলরা এই ভারতবর্ষকে আপন করে সাজিয়েছে কিন্তু বর্তমান সময়ে শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার,ভারতের মুসলিমদের কী অবস্থা, কাস্মীরের কেমন পরিস্থিতি সেটা বোধকরি নতুন করে বলার কিছু নেই।মাঝে মাঝে আমার দেশটির কথা ভাবি,আল্লাহ আমাদেরকে স্বাধীনতার যে নিয়ামত প্রদান করেছেন তা কি আমরা অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবো?ভিনদেশী হায়েনা আর তাদের এদেশীয় দালালদের কার্যক্রম দেখলে বড্ড ভয় লাগে আবার যুবকদের দেশপ্রেম আর স্বদেশপ্রীতি দেখলে মনে আশা জাগে।

 

The History of uyghur muslims
ছবি : সংগৃহীত

উইঘুরদের মুসলিম হওয়ার পরের ধারাবাহিক ইতিহাস :

★‌‌‍৭৫৫ সালে আন লু সান নামের একজন জেনারেল চীনের কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে নিজের অধীনে থাকা অঞ্চলকে স্বাধীন ঘোষণা করলেন।
★চীনের কেন্দ্রীয় শাসক চীনা সম্রাট এই বিদ্রোহ দমনের জন্য উইঘুর খানাতেরর কাছে সাহায্য চাইলেন।(খানাত বা খাগানাত তুর্কি শব্দ যা খান শাসিত একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে)
★সম্রাট উইঘুর খানাতের সহায়তায় আন লু সাং এর বিদ্রোহ দমন করার পরে বিশ্বাসঘাতকতা করে খোদ খানাতকেই দখল করে নিতে উদ্যত হল।
★স্বাধীনচেতা উইঘুর খানাত স্বল্প শক্তি আর স্বল্প জনবল হওয়া সত্ত্বেও বিপুল জনবল আর শক্তিশালী চিনা সেনাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালো।কিন্তু একটা সময় বিপুল সংখ্যক উইঘুর নিহত হবার পরে স্বল্পসংখ্যক বেঁচে থাকা উইঘুর পিছু হটে এবং কোচো রাজত্বে আশ্রয়গ্রহণ করে।সেই থেকে শুরু হয় তাদের টিকে থাকার লড়াই।
★১০০৬ সালে উইঘুরদের ত্রাণকর্তা হয়ে হাজির হলেন তুর্কি বীর ইউসুফ কাদির খান।তাঁর নেতৃত্বেই পুনরায় মুসলিম সালতানাত ‘কারা খানিদ খানাত’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
★১৮ শতকের শেষের দিকে কিং রাজারা জুনগড় এবং তারিম উপত্যকার পূর্বাঞ্চল দখলের মাধ্যমে স্বাধীন উইঘুর রাজ্যকে নিজেদের অধীনে নিয়ে নেয়।
★এবার উইঘুরদের ত্রাণকর্তা হিসেবে হাজির হন তাসখন্দ নিবাসী ইয়াকুব বেগ।এই ইয়াকুব বেগ এর নেতৃত্বে উইঘুররা সংঘটিত হয় এবং কিং রাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কাশগরের আশপাশের অঞ্চল নিয়ে গড়ে তোলে শরিয়াভিত্তিক স্বাধীন কাশগরিয়া রাষ্ট্র।এই কাশগরিয়া রাষ্ট্রকেই আধুনিক পূর্ব-তুর্কিস্তান এর ভিত্তি ধরা হয়।তুরস্কের উসমানি খেলাফতের খলিফা তাঁকে সমর্থন দিয়ে ‘আমিরুল কাশগরিয়া’ উপাধি প্রদান করেন।
★১৮৮৭ সালের ২২ মে ইয়াকুব বেগ মৃত্যুবরণ করেন।তাঁর মৃত্যুর পর পরই চীনের কিং রাজা ও রাশিয়ার জার শাসকরা স্বাধীন ইসলামী উইঘুর এই রাষ্ট্রটিকে দখল করে নিতে উঠেপড়ে লাগে।
★প্রায় সাত বছর লড়াই করার পরে ১৮৮৪ সালের ১৮ নভেম্বর চীনের মাঞ্চু বা কিং রাজা কাশগর কেন্দ্রীক পূর্ব তুর্কিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্রটিকে দখল করে নেয় এবং সেই সাথে ইয়াকুব বেগের চার সন্তান,নাতি নাতনি ও চার স্ত্রীদের সবাইকে বন্দী করা হয়।বিভিন্ন মেয়াদে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে মাত্র ১১ বছরের মধ্যে সবাইকেই শহীদ করা হয়।
( সূত্র -উইঘুরের কান্না-মুহসিন আবদুল্লাহ,পৃষ্ঠা ১১-১৭)
★১৯১১ সালে স্বাধীন তুর্কিস্তানে চীনের মাঞ্চু সাম্রাজ্যের পতনের পর সেখানে প্রত্যক্ষ চীনা শাসন চালু করে এ অঞ্চলকে চীনের জিনজিয়াংয়ের সাথে একীভূত করা হয়।
(সূত্র-দৈনিক যায়যায়দিন, ২৫ মে,২০১৯)

★১৯৩৩ সালে পুনরায় উইঘুর মুসলিমরা কাশগর ও এর আশপাশের এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে স্বাধীন পূর্ব তুর্কিস্তান রাষ্ট্র।

★চাইনিজ জেনারেল শেং শি চাই এর নেতৃত্বে চাইনিজ হানরা এই স্বাধীন রাষ্ট্রটিকে বেশিদিন স্বাধীন থাকতে দেয়নি।দখলদার চাইনিজ (হানদের) ব্যাপক হামলা আর আক্রমণের মুখে অল্প দিনেই এই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়।
★১৯৪৪ সালে তুর্কিস্তান ইসলামী পার্টি নেতৃত্বে তিয়েশান পর্বতমালার ওপারে ঘুলজা এবং এর আশপাশের অঞ্চলে বিপ্লবের মাধ্যমে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয় উইঘুর মুসলিমদের পূর্ব-তুর্কিস্তান।

★১৯৪৯ সালে চীনের গৃহযুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার পর ১৩ ই অক্টোবর চীন সরকার পূর্ব তুর্কিস্তান দখল করে নেয়।

★চীন সরকারের এই দখলদারির বিরুদ্ধে উইঘুররা সশস্ত্র প্রতিরোধ অব্যাহত রাখে। তাদের এই লড়াই ৬ বছর অব্যহত থাকার পরে ১৯৫৫ সালের ১লা অক্টোবর কমিউনিষ্ট বাহিনী পুরো উইঘুর এলাকার দখল নেয়।
(সূত্র -উইঘুরের কান্না- মুহসিন আবদুল্লাহ)

 

Uighur_map_Correction
ছবি : সংগৃহীত

সেই পূর্ব তুর্কিস্থানই আজকের জিনজিয়াং প্রদেশ।সেখানকার স্বাধীন নাগরিক উইঘুর মুসলিমদেরকে কথিত সায়ত্ত্বশাসনের নামে চীনা শাসকরা পরাধীনতার শিকল পরিয়ে রেখেছে যুগ যুগ ধরে।নিজেদের ভূমিতে নিজেদের মত করে থাকতে চাওয়াটা নিশ্চয়ই অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত হবে না?নিশ্চয়ই সেখানে কোন সামাজ্রবাদী আঘাত হানবে না?কিন্তু পৃথিবীতে মুসলিম নিপিড়নের ক্ষেত্রেই আশ্চর্যজনকভাবে প্রায় সকলেই নিরব থাকে। এমনকি মুসলমানদের নেতৃত্বের দাবিদার তারাও।নির্যাতনের এমন কোন উপায় বাকি রাখেনি যেটা চীনা কর্তৃপক্ষ করেনি।
যে জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুররা ছিল শতকরা ৯৫ ভাগ হয়ে সংখ্যাগরিষ্ট অধিবাসী সেখানে আজ চীনা রাষ্ট্রীয় নিপিড়ন আর রাষ্ট্রীয় কূটকৌশলে উইঘুরদের অবস্থান শতকরা ৪৫ ভাগে নেমে এসেছে।রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে ব্যাপক আকারে চীনা হানদেরকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।যারা আজকে সেখানে শতকরা ৪০ ভাগ অধিবাসী হয়ে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হিসেবে উপনীত হয়েছে।কে জানে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এই হানরাই হয়তো সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীতে পৌঁছাবে।
আর বর্তমান অবস্থার কথা আর কীইবা বলবো,কম বেশি সবারই জানা আছে।চীনা সরকার জিনজিয়াং প্রদেশে এই বিপুল সংখ্যক উইঘুরদের কেবল পরাধীনতার স্বাদ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি বরং তাদের উপর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চাপিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।জিনজিয়াংএ তাদের জনসংখ্যার পরিমাণকে অর্ধেকে নামিয়ে আনলো,তাদের মাতৃভাষা উইঘুর ভাষাকে রাষ্ট্রীয় নিপিড়নের মাধ্যমে পিছিয়ে দেওয়া হলো,তাদেরকে কালচার শিখানোর নাম করে বন্ধী শিবিরে আটকে রাখলো। সবচেয়ে ভয়ংকর যে বিষয়টি সেটি হল-
২০১৬ সালে ‘মেকিং ফ্যামিলি’ নামের একটি উদ্যোগ চালু করে বেইজিং সরকার।এর মাধ্যমে উইঘুর পরিবারকে প্রতি দুই মাসে কমপক্ষে পাঁচ দিনের জন্য কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের অতিথি হিসেবে থাকতে দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।মুসলিমদের সাথে পার্টির ‘সুসম্পর্ক সৃষ্টির’ জন্য নাকি এই উদ্যোগ।কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় মুসলিম নারীদের সম্ভ্রমহানির অভিযোগ ওঠে।মানসিকভাবে শিশুদেরও নির্যাতন করা হচ্ছে।তাদের পরিবার থেকে আলাদা করে কমিউনিস্ট পার্টির শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।সেই সাথে শিশুদের মাতৃভাষার পরিবর্তে ম্যান্ডারিন তথা চীনা ভাষা শেখানো হচ্ছে।
( সূত্র- অন্য দিগন্ত-১৯ নভেম্বর, ২০১৯)

 

uighur-us-flag-protest
ছবি : GettyImages

আজকে পশ্চিমা বিশ্ব যে কিছু কিছু কথা বলছে সেটা মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতি, কিংবা মানবতার জন্য বলছে তা না,চীনের সাথে রাজনৈতিক বিরোধিতার জন্য তাদেরকে কোনঠাসা করতেই এসব বলা।মন্দের ভালো হিসেবে তবুও তো বলা।পবিত্র কাবার খাদেম বিন সালমান চায়না সফরে গিয়ে উইঘুর নির্যাতনের বৈধতা দিয়ে আসে,হালের কথিত মুসলিম নেতা ইমরান খান জানেনইনা উইঘুরদের উপর নির্যাতন হচ্ছে কি না,ওআইসি  নিশ্চুপ, জাতিসংঘে এই বিষয়ে আলোচনার কথা উঠলেই খোদ ১৫-২০ টি মুসলিম রাষ্ট্র ই এর বিরুদ্ধাচারণ করে সেখানে পশ্চিমা বিশ্বের এই একটু আধটু কথা বলার বিষয়টি(নিয়ত যেমনই থাকুক না কেন) তো ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে হবে।

আজকে খবরে দেখলাম উইঘুর নির্যাতনের সাথে অভিযুক্তদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য একটি ফাইল ট্রাম্প সাহেবের সাক্ষরের জন্য তার অফিসে পাঠানো হয়েছে।তিনি সাক্ষর দিলেই সেটা আইনে পরিণত হবে।
আমার প্রত্যাশা পৃথিবীর সকল দেশেই জাতিগত নিপিড়ন বন্ধ হউক।সবার মধ্যেই রাজনীতিকে ছাপিয়ে মানবতাবোধ জাগ্রত হউক।সুখে থাকুক পৃথিবীর সব অংশের সব জাতি ধর্ম আর বর্ণের মানুষ।

 

লেখক
তরিকুল আলম তাসিকুল
শিক্ষার্থী, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

আন্তর্জাতিক

অর্থনৈতিক উপনিবেশববাদ ও তৃতীয় বিশ্ব

Published

on

অর্থনৈতিক উপনিবেশববাদ ও তৃতীয় বিশ্ব

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অনেকগুলো দেশ ইউরোপ ও জাপানের উপনিবেশ হতে স্বাধীনতা লাভ করে এবং বিশ্বের স্বাধীন রাষ্ট্রের তালিকায় তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসাবে এদের আর্বিভাব ঘটে। অপরদিকে যুদ্ধপরবর্তী পরাশক্তি আমেরিকাসহ শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে এবং তারা তাদের অর্থনৈতিক বাজার হিসাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে বেছে নেয়। হতদরিদ্র ও নব্য স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোকে উন্নয়নের সহযোগিতার নামে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। আর এভাবে শুরু হয় নতুন উপনিবেশবাদের জয়যাত্রা, যার প্রদান হাতিয়ার হলো অর্থনীতি।

উপনিবেশ স্থাপনের পিছনে প্রধান লক্ষ্য থাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শাসন ক্ষমতা বৃদ্ধি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শাসন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে উপাদানগত পরিবর্তন আসলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিশেষ কোনো পরির্বতন আসেনি। যুদ্ধপূর্ববর্তী সময়ে উপনিবেশভুক্ত অঞ্চলগুলো হতে কাঁচামাল পাচার করে তার দ্বারা উৎপাদিত পণ্য ঐসব উপনিবেশিক অঞ্চলে রপ্তানি করার মাধ্যমে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতো। তেমনি যুদ্ধোত্তরকালে বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে তাদের অর্থনৈতিক বিনিয়োগ বাড়াতে থাকে। দরিদ্র দেশগুলো হতে সস্তায় পাওয়া শ্রম ও জমি (অর্থনীতিতে জমি হলো উৎপাদনের স্থান) বিনিয়োগের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করে উৎপাদন করে থাকে এবং উৎপাদিত পণ্য আবার বিশ্বায়নের দোহাই দিয়ে ঐসব প্রান্তিক দেশগুলোতে বাজারজাতকরন করে থাকে। যার মাধ্যমে প্রান্তিক দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে উন্নত বিশ্বের হস্তক্ষেপের পথ সুগম হয়।

অর্থনৈতিক উপনিবেশববাদ ও তৃতীয় বিশ্ব

ছবি : সংগৃহীত

উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উপর তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার হাতিয়ার হিসাবে বিশ্বায়ন ও বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে গ্রহণ করে। বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশ মুক্ত থাকবে। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোর বহুজাতিক সংস্থাগুলো অনায়াসে তৃতীয় বিশ্বের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার করতে পারছে, কিন্তু এর বিপরীতে তৃতীয় দেশের কোম্পানী অর্থ ও প্রযুক্তিগত সুবিধার অভাবে দিন দিন ঘাটতির মুখে পতিত হতে থাকে। একপর্যায়ে বহুজাতিক সংস্থাগুলো একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে বাংলাদেশের বাজারে দেশীয় সাবান এ্যারোমেটিকের বাজার ধ্বংস এবং অপরদিকে ইউনিলিভারের লাক্সের একচেটিয়া আধিপত্যের কথা বলা যায়। আবার বহুজাতিক সংস্থাগুলোতে চাকরিরত দেশীয় শ্রমিকের চাকরী হারানো, বেকারত্ব বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ স্থগিতের ভয়ে দেশীয় পণ্য রক্ষা এবং বিদেশী বহুজাতিক সংস্থার কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনা। ফলে পরোক্ষভাবে ঐসব কোম্পানীগুলো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হিসাবে আবির্ভূত হয়। উদাহরণস্বরূপ আফ্রিকান দেশগুলোতে চীনের বহুজাতিক সংস্থাগুলো আধিপত্য উল্লেখযোগ্য।

অর্থনৈতিক উপনিবেশবাদ প্রসারের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশে উন্নত বিশ্বের বিনিয়োগ ব্যবস্থা। ১৯৪৬ সালের পর থেকে সদ্য স্বাধীন হওয়া রাষ্ট্রগুলোর আর্থ সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অর্থের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ঠিক তখনি সুযোগটি শক্তিশালী ধনী রাষ্ট্রগুলো কাজে লাগাতে থাকে। তারা তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান এবং এর বিপরীতে কিছু সংস্কারমূলক শর্তারোপ করে। এসব শর্তাবলির মাধ্যমে অনেক সময় বিনিয়োগকারী দেশ বিনিয়োগকৃত দেশের পররাষ্টনীতি ও সামরিক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যেমন ২০১৬ সালের শেষের দিকে চীন শ্রীলংকার হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দর ইজারা নেয়। যার ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ থাকবে চীনের হাতে আর মাত্র ২০ ভাগ থাকবে শ্রীলংকার সরকারের হাতে। যদিও বলা হয়েছে শুধুমাত্র বাণিজ্যের জন্য এ বন্দর ইজারা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে যে এখানে সামরিক নৌঘাঁটি স্থাপন করে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের পদক্ষেপ চীন গ্রহণ করবে তা সহজেই অনুমেয়। এছাড়া অতি সাম্প্রতিককালে চীনের গৃহীত One Belt One Road Policy চীনকে যে এ অঞ্চলের পরাশক্তি হিসাবে পরিণত করছে তা দিন দিন স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে।

অর্থনৈতিক উপনিবেশববাদ ও তৃতীয় বিশ্ব

ছবি : সংগৃহীত

এখন WTO বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংক এর কথা ধরা যাক। এ দুটি সংস্থা অর্থনৈতিক উপনিবেশ বিস্তারের মূখ্য উপাদানের ভূমিকা রাখছে। বিশ্ব বাণিজ্য পরিচালনার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চুক্তিগুলোর দিকে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় এসব চুক্তি উন্নত বিশ্বের জন্য তৈরী।এসব চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুক্ত বাণিজ্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের স্বার্থ হাসিল করা। এর পিছনে উন্নত বিশ্বের উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে তাদের প্রযুক্তি তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো অনুকরণ ও ব্যবহার না করতে পারে। এর ফলে তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতির ওপর উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। আর এ প্রতিযোগিতাপূর্ণ মুক্তবাজারে উন্নত বিশ্বের সাথে বাণিজ্য করে তৃতীয় বিশ্বের দেশ টিকে থাকতে পারেনা। এর ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর বাণিজ্যের ঘাটতির পাশাপাশি আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রেও দীর্ঘমেয়াদী ঘাটতি দেখা দেয়।

এসব ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে বিশ্বব্যাংক এর স্মরণাপন্ন হতে হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রদানের পূর্বে কিছু শর্তারোপ করছে। যার সবগুলো পূরণ করা তৃতীয় বিশ্বের পক্ষে সম্ভবপর নয়, আবার পূরণ করলে দেখা যাচ্ছে ঋণ প্রত্যাশী দেশগুলোর অবকাঠামোগত এমনকি সরকারী নীতি নির্ধারণে বিশ্বব্যাংক এর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক এর অর্থের প্রধান উৎস,কাঠামোগত গঠন এবং পরিচালনার সম্পূর্ণ উন্নত বিশ্বের উপর ন্যস্ত। যেমন বিশ্বব্যাংক এর প্রেসিডেন্ট পদ আমেরিকা আর আইএমএফ এর প্রেসিডেন্ট পদ যুক্তরাজ্যের জন্য নির্ধারিত। অতএব বলাই যায় যে, বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মাধ্যমে উন্নত বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে চলেছে।

এরকম শতাধিক উদাহরণ ও উন্নত বিশ্বের পদক্ষেপ আলোচনা করা সম্ভব যার মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপর নতুন করে অর্থনীতির মাধ্যমে উন্নত বিশ্ব তাদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার কার্য সঠিক ও সফলভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতির এ নতুন কাঠামোই হলো অর্থনৈতিক উপনিবেশবাদ, অর্থনীতি যার মূল চালিকা শক্তি।

অর্থনৈতিক উপনিবেশববাদ ও তৃতীয় বিশ্ব

শাহ্ আলম

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

সর্বাধিক পঠিত