Connect with us

অন্যান্য

মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বিড়ম্বনা

Published

on

মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বিড়ম্বনা

I disapprove of what you say but I will defend to the death your ritght to say it.

-Voltaire

এক.
অবাধ তথ্য প্রবাহের এই স্বর্ণযুগে ¯স্রোতস্বিনী নদীর ন্যায় তথ্যের প্রবাহ যেমন চলছে ঠিক তেমনি চলছে বিভিন্ন বিষয়ে মতামতের আদান-প্রদান। তথ্যের এই প্রবাহ পূর্বেও ছিল (যদিও গতি ছিল মন্থর) তবে বিভিন্ন বিষয়ে যে কোন ব্যক্তির মতামত প্রদানের বিষয়টি সাম্প্রতিককালে বেশি বিস্তার লাভ করেছে। আর এই মতামত দানের সুযোগ আমাদের হাতের নাগালে এনে দিয়েছে টেলিভিশনের ফোনোলাইভ, টকশো, আউটডোর রিপোর্টিং সহস্রাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল, জনপ্রিয় সব সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ, টুইটার, ইউটিউব, লিংকডইন, ব্লগ) অফলাইনে পড়ার সুযোগ সংবলিত স্মার্টফোন, প্রমোশনাল ই-মেইল ও মেসেজসহ বিবিধ মাধ্যম। বর্তমান উদারনৈতিক বিশ্বে যে সকল রাষ্ট্রে গণতন্ত্রকে শাসনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে সে সকল প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রের সংবিধানেই নাগরিকদের মতামত প্রদানের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। বলাই বাহুল্য পূর্বেও এই স্বাধীনতা ছিল কিন্তু মতামত প্রদানের এত সুযোগ তথা মাধ্যম ছিল না।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বিড়ম্বনা

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হলো রাষ্ট্রের সকল নাগরিক যে কোন বিষয়ে মতামত প্রদান করতে পারবে। যেহেতু বর্তমানে মতামত প্রদানের মাধ্যম ও পরিধি উভয়ই বেড়েছে তাই অবশ্যই বর্তমানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো আরও অনেক সুশৃংখল, গঠনমূলক ও উদারনৈতিক হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকালে আমরা এর বিপরীত অবস্থাই দেখতে পাই। এসব রাষ্ট্রে মতামত প্রদানের এই অবাধ সুযোগে মাঝেমধ্যেই ভয়াবহ গুজব ছড়িয়ে পড়েছে – যা রাষ্ট্রকে বিশৃংখল করছে, ভুয়া সাংবাদিকতার (প্রমিত বাংলায় হলুদ সাংবাদিকতা) বিস্তার ঘটছে। সর্বোপরি এসব অসত্য ও অল্পচিন্তিত মতামতের ফলে বিপদজনক জনমত গড়ে উঠছে। এমতাবস্থায় তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে- এত মতামতের আসলেই কি দরকার?

দুই.
আবহমান বাংলার প্রাচীন সমাজে যখন প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক প্রবলভাবে বিরাজমান ছিল তখন বিচার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সমাজের যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত একটি বিশেষ শ্রেণীর (মূলত মাতব্বর শ্রেণী নামে পরিচিত) নিকট থেকে আসত। যাদের মধ্যে গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি, স্বশিক্ষিত জ্ঞানবান থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মৌলভী এবং মন্দিরের পুরোহিতরা থাকতেন। এরা সমন্বিত বা আলাদা আলাদাভাবে সমাজের যাবতীয় বিষয়ে মতামত ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। বোধশক্তি তাঁর আদর্শ রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা দার্শনিক রাজার উপর অর্পণ করেছিলেন। প্লেটোর মতে – দার্শনিক রাজা হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি সর্বোত্তম জ্ঞানের অধিকারী, বোধশক্তি তীঘ্ন, প্রকৃত অস্তিত্ব সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান আহরণের জন্য যার থাকবে গভীর আগ্রহ এবং যিনি বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁর যুক্তি ও জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বিড়ম্বনা

একজন প্রকৃত দার্শনিকের সঙ্গে একজন কৃত্রিম দার্শনিকের তফাৎ কি – এ প্রসঙ্গে প্লেটোর বক্তব্য হলো একজন প্রকৃত দার্শনিক যতক্ষণ পর্যন্ত কোন বস্তুর চূড়ান্ত স্বরূপ আবিষ্কার করতে না পারেন ততক্ষণ তিনি বিরত হন না, তার অনুসন্ধান প্রয়াস চালিয়ে যান। কিন্তু একজন অপ্রকৃত দার্শনিক উক্ত বস্তু সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন। রিপাবলিকের মধ্যে প্লেটো তাই লিখেছেন, “যে পর্যন্ত দার্শনিকেরা তাঁদের দেশের শাসক না হচ্ছেন কিংবা যারা শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তারা জ্ঞানের দ্বারা অনুপ্রাণিত না হচ্ছেন অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে দর্শনের মিলন সাধিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে মুক্তির কোন আশা নেই।” অর্থাৎ প্লেটো এখানে স্পষ্টতই বোঝাতে চেয়েছেন যে, আদর্শ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান তথা দার্শনিক রাজা যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে তার বোধশক্তি, জ্ঞান ও যুক্তিকে ব্যবহার করবেন এবং প্রচলিত ধারণাকে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ব্যতীত গ্রহণ করবেন না। যদি এর ব্যতয় হয় তবে রাষ্ট্রে বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। এখন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মালিক হচ্ছে জনগণ (অন্তত সংবিধানে এমনটাই বলা থাকে) আর এটা যদি সত্যি হয় তাহলে আবহমান প্রাচীন বাংলার সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বিশেষ শ্রেনীর বিশেষজ্ঞতা এবং প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের দার্শনিক রাজার মত জনগন যদি তার বোধশক্তি, জ্ঞান, যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ প্রভৃতি ব্যতীত কোন মতামত প্রদান করে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায় তবে তা সমাজে বিশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে বাধ্য।

সচেতন জনগণ মাত্রই সেটা আপনারা উপলব্ধি করতে পারছেন। ব্যক্তিগত বিষয়গুলো বাদই দিলাম – রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে আমরা প্রতিনিয়তই সে বিষয়ে কোন প্রকার বিশেষজ্ঞতা ছাড়া বা আপাদমস্তক না জেনে শুধুমাত্র সংবাদপত্র, টেলিভিশনের হেডলাইন দেখে বা ফেসবুক, টুইটার বা ইউটিউবে অন্যের শেয়ার করা খবর দেখে নিজের মতামত প্রকাশ করছি। এক্ষেত্রে যেহেতু কোন প্রকার বিশেষজ্ঞতা, যুক্তি বা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ব্যবহৃত হচ্ছে না সেহেতু এসব ঢালাওভাবে আসা মতামত প্লেটোর বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্রের ন্যায় বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। যার নিদর্শন আমরা প্রায়শই দেখতে পাচ্ছি।

যদি এর ব্যতয় হয় তবে রাষ্ট্রে বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। এখন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মালিক হচ্ছে জনগণ (অন্তত সংবিধানে এমনটাই বলা থাকে) আর এটা যদি সত্যি হয় তাহলে আবহমান প্রাচীন বাংলার সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বিশেষ শ্রেনীর বিশেষজ্ঞতা এবং প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের দার্শনিক রাজার মত জনগন যদি তার বোধশক্তি, জ্ঞান, যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ প্রভৃতি ব্যতীত কোন মতামত প্রদান করে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায় তবে তা সমাজে বিশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে বাধ্য। সচেতন জনগণ মাত্রই সেটা আপনারা উপলব্ধি করতে পারছেন। ব্যক্তিগত বিষয়গুলো বাদই দিলাম – রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে আমরা প্রতিনিয়তই সে বিষয়ে কোন প্রকার বিশেষজ্ঞতা ছাড়া বা আপাদমস্তক না জেনে শুধুমাত্র সংবাদপত্র, টেলিভিশনের হেডলাইন দেখে বা ফেসবুক, টুইটার বা ইউটিউবে অন্যের শেয়ার করা খবর দেখে নিজের মতামত প্রকাশ করছি। এক্ষেত্রে যেহেতু কোন প্রকার বিশেষজ্ঞতা, যুক্তি বা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ব্যবহৃত হচ্ছে না সেহেতু এসব ঢালাওভাবে আসা মতামত প্লেটোর বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্রের ন্যায় বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। যার নিদর্শন আমরা প্রায়শই দেখতে পাচ্ছি।

তিন.
পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধানে নাগরিকের চিন্তা ও বিবেক, বলার ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার ও নিশ্চয়তা দেওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগের মৌলিক অধিকার অংশের ৩৯ নং অনুচ্ছেদের (১) নং ধারায় বলা আছে – “প্রত্যেক ব্যক্তির চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হলো।” ২(ক) ধারায় বলা আছে “প্রত্যেক নাগরিকের বলার ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হলো।” তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা, নৈতিকতা রক্ষার স্বার্থে বা আদালত অবমাননা, মানহানি বা কোন অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা দিতে পারে এসব ক্ষেত্রে উক্ত অধিকার গুলোর ওপর আইন অনুসারে যুক্তিসঙ্গত বিধি নিষেধ আরোপ করা যাবে।
অর্থাৎ স্পষ্টতই এখানে রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে তাদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা সবাই কি রাষ্ট্রের সুযোগ্য নাগরিক হতে পেরেছি? বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল একজন ভাল নাগরিকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন-

“A good citizen must possess the knowledge and the capacity requisite for ruling as well as being ruled.” (Aristotle, 1960, P. 105)

অর্থাৎ নিজে সঠিক ভাবে শাসিত এবং অন্যকে শাসন করার জন্য পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং সামর্থ অর্জনই একজন সুনাগরিকের লক্ষ্য ও বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের সংবিধানের ২য় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশের ২১(১) ধারায় নাগরিকের কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে- “সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।” প্রকৃতপক্ষে এখানে বলা নাগরিক কর্তব্যের প্রথম ধাপ সংবিধান ও আইনের মাপকাঠিতে মেপে মতামত প্রদান করতে হবে – বোধ করি এটি সম্ভব নয়। কিন্তু আপনার দেওয়া মতামতের কারণে কি রাষ্ট্রীয় শৃংখলা বিঘ্নিত হতে পারে কিংবা একটা উদ্ভট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে জাতীয় সম্পত্তিকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে কি না সেটা ভাবার অবকাশ আছে বৈকি। অর্থাৎ মূলকথা হল আপনার কোঁদালকে কোঁদাল বলতে পারার (Call a Spade a Spade) বিষয়টি সুনিশ্চিত ও স্থায়ী রাখার জন্যই আপানাকে মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। অন্যথায় আপানার দেওয়া অযথা বা অসত্য বা উষ্কানিমূলক মতামতের কারণে রাষ্ট্রে যদি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তবে আপনার মতামত প্রদানের অধিকারটিও সংকুচিত হতে বাধ্য।

চার.
গণতন্ত্রের দোষাবলীর মধ্যে অন্যতম হলো এখানে তাড়াতাড়ি কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। কেননা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সকলের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। ফলশ্রুতিতে সময়ের দরকার হয় বেশি। কিন্তু বর্তমানকালের মতামত প্রদানের মাধ্যমগুলোতে এর বালাই নেই। এখানে মতামত দিয়েই মতামত যাচাই হয়। অর্থাৎ মতামত প্রদানের আগে যাচাই করার উপায় নেই যে আপানার মতামতটি সু-মতামত নাকি কু-মতামত। জার্মানির নাৎসি নেতা এডলফ হিটলারের তথ্য উপদেষ্টা গোয়েবলস বিশ্বাস করতেন, একটি মিথ্যা ১০ বার প্রচার করলে তা সত্যে পরিণত হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর দিকে এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অনেক গুজব ছড়িয়েছিলেন তিনি। তাই সত্য লুকাতে বা দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে আজগুবি কিছু ছড়ালে তা দুনিয়াব্যাপী গোয়েবলস স্টোরি (Geobles Story) নামে পরিচিতি পেয়ে আসছে। সম্প্রতি দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ছড়ানো হচ্ছে নানাধরনের গুজব, যাকে অনেকে বলছেন ‘গোয়েবলস স্টোরি’।

এসব গুজবে মতামত দেওয়ার নাম করে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়ে বিভিন্ন অসত্য, বানোয়াট, অযাচিত তথা মনগড়া বিষয় ছড়ানো হচ্ছে। এর ফলে একদিকে জাতিতে জাতিতে, মানুষে মানুষে বিভেদ ও রাষ্ট্রে বিশৃংখলা সৃষ্টি হচ্ছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে সৃষ্ট সহিংসতায় রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিনষ্ট হচ্ছে। নিউটনের তৃতীয় সূত্রে বলা হয়েছে- প্রত্যেকটি ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। তাই অবাধে মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ক্রিয়া যদি বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা হয় তবে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হলো কু-মতামত বা গুজব এবং পরবর্তীতে সৃষ্ট অনাকাঙ্খিত অবস্থা।

পাঁচ.
বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কাছে এক ভদ্রলোক লিখে পাঠিয়েছেন, আমি খুব সম্ভবত পাগল হয়ে যাচ্ছি; এমন পরিস্থিতিতে আমি কি করবো যদি বলতেন। আইনস্টাইনের উত্তর ছিল আপাতত সংবাদপত্র পড়া বাদ দিয়ে দিন, আশা করি এতেই আপনি ভালো থাকবেন। যদি এক শতাব্দী আগের পরামর্শই এমন হয় তাহলে তথ্য ও মতামত প্রবাহের এই স্বর্ণযুগে তিনি কী যে বলতেন, তা সহজেই ধারণা করা যায়। যে কোন বিষয়ে সকলের মতো আপনার মতামত থাকতেই পারে কিন্তু কোন কিছু আগে-পরে না ভেবে তা অবাধে প্রচার ও প্রকাশ করা ভালো মন্দ দুই ধরনের ফলই বয়ে আনতে পারে। বিখ্যাত কবি আর্নেস্ট হেমিংওয়েকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আপনি যা লেখেন তাই মাস্টার পিস, কী করে এটা সম্ভব? কবি জবাবে বলেছিলেন আমি এক পৃষ্ঠা মাস্টারপিস তৈরি করতে ৯৯ পৃষ্ঠার গার্বেজ উৎপাদন করি যেগুলোর স্থান হয় আমার ডাস্টবিনে। কবি মহাদয়ের ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে তখন ফেসবুক, টুইটার প্রভৃতি ছিল না তাহলে হয়তো বর্তমান কালের স্বঘোষিত শ্রেষ্ঠ লেখকদের মতো যা-ই লিখতেন তা-ই ফেসবুক, টুইটারে শেয়ার করতেন, ফলশ্রুতিতে পাঠকরা ৯৯টি গার্বেজের মাঝে ১টি মাস্টারপিসকে খুঁজেই পেতেন না।

বিজ্ঞজনেরা বলে থাকেন, মানুষের কথা বলা শিখতে লাগে দুই বছর কিন্তু অনেকেই সারাজীবনেও শিখতে পারে না যে ঠিক কখন কি বলা উচিত বা উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে মার্ক টোয়েনের ‘Knowing when to stop talking’ গল্পটি প্রণিধানযোগ্য। তাই সবশেষে মূলত আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে আমরা কিভাবে, কতটুকু বা কে কে মতামত প্রদান করবো বা ঠিক কখন মতামত প্রদান করতে বিরত থকবো। তা না হলে অধিক সন্ন্যাসীতে যেমন গাঁজন নষ্ট হয়, ঠিক তেমনি এই অবাধ মতামতের যাতাকলে পড়ে সু-মতামত বিলীন হয়ে যাবে। যার ফল সমাজ, রাষ্ট্র তথা সবাইকেই ভোগ করতে হবে। তাহলে এই সমস্যার কি সমাধান নেই ? উত্তর যদি ‘না’ হয় তাহলে এ নিয়ে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে বৈকি। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও সেই একই সমস্যা- Who will bell the cat ?

কিংকর দেবনাথ
সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

অন্যান্য

কথাটি “না” বলতে শিখুন।

Published

on

কথাটি "না" বলতে শিখুন।
আপনি, আপনার বন্ধু,বন্ধবী, আপনার সহকর্মী, শিক্ষক,পাশের বাসার লোক সবারি একটি পরিচয় আছে তা হলো তারা ‘মানুষ’। হয়তো, তার একটি নিজেস্ব ধর্ম আছে। যার আলোকেই তার জীবনটা পরিচালিত হচ্ছে। তার কাছে সেটার স্থান অনেক উঁচুতে। সেটা তার বিশ্বাস, দীর্ঘদিনের অভ্যাস, তার ঐতিহ্য। আপনি চাইলেই পরিবর্তন করতে পারবেন না। কিন্তু একটি কথা তার মনে দাগ কেটে যায়। আপনার প্রতি সেই ভালোবাসা, শ্রদ্ধা নিমিষেই চলে যায়। আমি আপনার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের কথা বলছি। ধরুন : আপনি একটা স্ট্যাটাস দিলেন- “এটা কেন ধর্মীয় রীতি হলো। এটার কোন অর্থ নেই। এটা সঠিক নয়। “
হ্যাঁ, আপনার কাছে হয়তো সঠিক নয়। কারন যে মানুষটা ওই রীতিটা পালন করছেন কারন তার কাছে তা সঠিক মনে হয়। তাই সে পালন করছে। কিন্তু আপনি কি করলেন? তার দীর্ঘদিনের একটা বিশ্বাসকে অবজ্ঞা করলেন। আমরা এটা প্রায়ই করি না???
করি,আমি ও যে করি না তা নয়। আমরা করি। হয়তো কেউ হঠাৎ মুখ থেকে বের করে ফেলি। এটা ঠিক কি ঠিক?
সমাজবিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা করলে দেখবেন, আপনি কোন না কোন ভাবে আপনার চারপাশের মানুষ দ্বারা প্রভাবিত। মানে, আপনার চারপাশের মানুষ কোন না কোন ভাবে আপনাকে সাহায্য করে থাকে। পেট,কিডনি, নাড়িভুড়ির গল্পটা পড়েছেন হয়তো। না হয়  সাধারন বিজ্ঞানের বাস্তুসংস্থান এর অধ্যায়টা পড়লে বুঝবেন। জীবনটা ঠিক এমনি। সবকিছুর সবার সাথে সবার সম্পর্ক নিবিড়। আচ্ছা, আমেরিকার সম্প্রতি বর্নবাদের কথায় ধরুন। কোন লাভ আছে সমাজের একটা অংশের মানুষের বিরুদ্ধে যাওয়ার? রাজনীতি একটু ভিন্ন জিনিস। কিছু স্বার্থপর মানুষের প্রতিযোগিতা। যেখানে প্রথমেই শিখানো হয়,সে আর তুমি ভিন্ন। তাই রাজনীতি থেকে সরে সমাজিক কথাই বলি। এ কথাগুলো তো শুনেছেন, মন ভাঙ্গা মন্দির/মসজিদ ভাঙ্গার সমান। যদিও এই কথাটা প্রেমের ক্ষেত্রে ব্যবহারিত  হয় বেশি। কিন্তু জানেন কি আপনার একটা কথায় আপনার সহকর্মী, কাছের বন্ধুর মন ভেঙ্গে যেতে পারে। সত্যিই ধর্মের জায়গাটা সবার কাছে অনেক বড় একটা স্থান। তাই আপনার সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, অাদর একটি মাত্র কথার মাধ্যমে বিলিন হতে দিয়েন না। প্রতিটি মানুষের কাছে তার ধর্মটা শ্রেষ্ঠ। আপনি যদি অন্যের কাছে আপনার ধর্মটাই বড় করে দেখাতে চেষ্টা করেন তাহলে আপনি বোকা, স্বার্থপর, অসামাজিক, ভন্ড। আর এই নিচু মনোভাব পৃথিবীর বুকে একটা কৃএিম সমস্যার জম্ম দিয়েছে যার নাম উগ্রবাদ। আর উগ্রবাদের সাথে জড়িত হিংসা,লোভ, যৃনা, পশুত্ব। যার শেষ পরিনিত যুদ্ধ,  বিনাশ, ধংস।
তাই আমাদের উঠিত, সকলকে সঠিকভাবে তার নিজেস্ব ধর্মটা পালন করতে দেওয়া যা দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব। আর চারপাশের মানুষের কথা চিন্তা করে আমাদের মনোভাব প্রকাশ করা উচিত। তাহলেই ভালো থাকবো আমি, আপনি,আপনার, সহপাঠী, বন্ধু, এবং সবাই।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

অন্যান্য

পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে

Published

on

পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে

নিঃসন্দেহে এ গ্রহের সবচেয়ে নির্যাতিত, নিষ্পেসিত, জনগোষ্ঠী ফিলিস্তিনিরা। দীর্ঘ সাত দশকেরও বেশী সময় ধরে তাদের উপর কেবলই ইসরাইলী অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে নি বরং দানব রাষ্ট্র ইসরাইল তাদেরকে করছে বাস্তুচ্যুত।

কামান, ট্যাংকের মর্টার শেল দিয়ে, কিংবা বোমারু বিমানের আঘাতে ছিনিয়ে নিচ্ছে শত শত নিরপরাধ ফিলিস্তিনীর(নারী, শিশু,যুবক যুবতী, বৃদ্ধ মানুষের) জীবন।
মানবতার ধ্বজ্বধারী, মানবাধিকারের তল্পাবহনকীর পশ্চিমাদেশগুলোয় ইসরাইলের অন্যতম সর্মথক, অস্ত্রের সরবরাহকারী, অর্থের যোগানদাতা। বিশ্বগণমাধ্যমগুলোর ভয়ংকার মিথ্যাচার,  পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরণ আর বিশ্বাস ঘাতক আরবদেশগুলোর পিন পতন নীরবতায় প্রমাণিত পৃথিবী গ্রাস করছে ফিলিস্তিনকে, ধেয়ে আসছে ফিলিস্তিনীদের দিকে। আর তাইতো ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি মোহাম্মদ দারউশ লিখেছেন তার বিখ্যাত কবিতা, পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে

পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে
আমাদের ঠেসে ধরছে একেবারে শেষ কোণায়

এই অত্যাচার সহ্য করতে আমরা আমাদের অঙ্গ প্রতঙ্গ গুলো ছিড়ে ফেলব
দুনিয়া আমাদেরকে গ্রাস করছে।
আমার মনে হয় আমরা যদি গম হতাম
তাহলে মরেও আবার বাচতে পারতাম।

আমার মনে হয় পৃথিবী আমাদের মা ছিলেন
তাই তিনি আমাদের প্রতি দয়া করবেন।

আমার মনে হয় আমরা পাথরের উপরে ছবি ছিলাম, আমাদের স্বপ্নগুলোকে আয়না হিসেবে বয়ে নিতে
আমরা তাদের মুখ দেখেছি,য়ারা আমাদের শেষ জনের হাতে মারা যাবে,
আত্মার শেষ প্রতিরক্ষার মধ্যে।

আমারা তাদের শিশুদের ভোজ নিয়ে কাদলাম
আমরা তাদের মুখ দেখছি যারা আমাদের সন্তানদের ছুড়ে ফেলবে, শেষ কোণার জানালাগুলির বাইরে।
আমাদের তারা গুলাকে ঝুলাবে।
শেষ সীমান্তের পরে আমাদের কোথায় যাওয়া উচিত?
শেষ আকাশের পরে পাখিরা কোথায় যাবে?
গাছগুলির কোথায় ঘুমানো উচিত
বাতাসের শেষ নিঃশ্বাসের পরে?

আমরা রক্তের স্রোত দিয়ে আমাদের নাম লিখব।
আমরা আমাদের মাংসপিন্ড দিয়ে শেষ হয়ে যাওয়া গানটির মাথা কেটে ফেলব।
আমরা এখানে শেষ প্রান্তে মরে যাব।
এখানে এবং এখানেই আমাদের রক্ত জলপাই গাছ রোপন করবে।

মাহমুদ দারউশ(

ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি)

 

মূলকবিতা

The earth is closing on us

Mohmoud Darwish

The Earth is closing on us
pushing us through the last passage
and we tear off our limbs to pass through.
The Earth is squeezing us.
I wish we were its wheat
so we could die and live again.
I wish the Earth was our mother
so she’d be kind to us.
I wish we were pictures on the rocks
for our dreams to carry as mirrors.
We saw the faces of those who will throw
our children out of the window of this last space.
Our star will hang up mirrors.
Where should we go after the last frontiers ?
Where should the birds fly after the last sky ?
Where should the plants sleep after the last breath of air ?
We will write our names with scarlet steam.
We will cut off the hand of the song to be finished by our flesh.
We will die here, here in the last passage.
Here and here our blood will plant its olive tree.

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

অন্যান্য

বাংলাদেশের ভূমিরূপ যেভাবে সৃষ্টি হয়েছে

Published

on

বাংলাদেশের ভূমিরূপ যেভাবে সৃষ্টি হয়েছে

অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ইতিহাস আমরা সবাই জানি। কিন্তু এর সঠিক ভৌগলিক ইতিহাস আমাদের প্রায় অনেকেরই অজানা। চলুন আজকে জেনে নেয়া যাক বাংলাদেশের আদি ইতিহাস।

আমাদের এই ব-দ্বীপের সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে এই ভূমিরূপের সৃষ্টি এবং আদি অবস্থা সম্পর্কেও।আমাদের অনেকের অজানা যে আমাদের এই ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেট বা এই ভারতীয় উপমহাদেশ পূর্বে মূলত এশিয়ার অংশ ছিলো না।ভূমিকম্প নিয়ে পরিচিতি থাকার সুবাদে টেকটোনিক প্লেট সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সবাই জানি।

জুরাসিক পিরিয়ডে,সেই ডায়নোসর যুগে অর্থ্যাৎ  আনুমানিক ১৪০ মিলিয়ন বছর পূর্বে এই ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট ছিল মূলত একটি বিশাল টেকটোনিক প্লেটের অংশ যার নাম ছিল গন্ডোয়ানাল্যান্ড।সেসময় পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ মেন্টল উথলে ওঠার ফলে গন্ডোয়ানাল্যান্ডের টেকটোনিক প্লেটে ফাটল ধরে এবং চার খন্ডে বিভক্ত হয়ে তা আফ্রিকান,এন্টার্কটিক,অস্ট্রেলীয় এবং ইন্ডিয়ান টেকটোনিক প্লেটে পরিণত হয়।আমাদের এই টেকটোনিক প্লেট মূলত ইন্দো-অস্ট্রেলীয় টেকটোনিক প্লেটের অন্তর্ভুক্ত যা মাদাগাস্কার থেকে বিভক্ত হয়েছিলো বলে ধারণা  করা হয়।

অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে আমাদের এই টেকটোনিক প্লেটের পুরুত্ব মাত্র ১০০ কিলোমিটার এর মতো যেখানে গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অন্যান্য অংশ গুলো ১৮০ কিলোমিটার কিংবা তারও বেশি পুরুত্ব সম্পন্ন।ফলে এর গতিবেগও ছিল সবচেয়ে বেশি যা ছিল ১৮ থেকে ২০ সে.মি করে প্রতি বছর,যেখানে অন্যান্য গুলো ছিলো ২-৪ সেন্টিমিটার করে প্রতি বছর।এই প্লেটের উত্তরমুখি আনুমানিক প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার যাত্রার পর আজ থেকে আনুমানিক ৪০-৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বে তা ইউরেশিয়ান,অর্থ্যাৎ ইউরোপ এবং এশিয়া যেই টেকটোনিক প্লেটের উপর অবস্থিত তার সাথে প্রবল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।এই যাত্রাকালে সৃষ্টি হয় ভারত মহাসাগর।আর ধারণা করা হয় সংঘর্ষের পর ইউরেশীয় প্লেটের ভূমিরূপকে ঘিরে থাকা টেথিস সাগর চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

দুটো টেকটোনিক প্লেটের যখন মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় তখন একটি অপরটির উপরে চলে যায়।এবং পাহাড় পর্বত বা আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয় ভেতরকার ভূমিরূপ বা শিলাস্তর উত্থিত হয়ে।

ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টাল টেকটোনিক প্লেটের সাথে প্রাথমিক মৃদু ধাক্কায় একাংশ যুক্ত হয় ইউরেশিয়ান প্লেট।তখন সমুদ্র তলদেশ থেকে উত্থিত হয় নেপাল এবং তিব্বত উপত্যকা। এরপরই এক প্রবল সংঘর্ষের ফলে বিশাল সীমানাজুড়ে ভূমিরূপে ভয়ানক সংকোচন ঘটে প্রবল ভাঁজ সৃষ্টি হয় এবং স্বাভাবিকভাবেই ভূমিরূপ উঁচু হয়ে যায়। যার ফলে সৃষ্টি হয় হিমালয়,পৃথিবীর নবীনতম পর্বতশ্রেণী এবং পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দু,মাউন্ট এভারেস্ট।এই সংঘর্ষ এখনো অব্যহত।এবং এর ফলে হিমালয়ের উচ্চতাও গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৫ মিলিমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে।এবং এই ইন্দোঅস্ট্রেলীয় প্লেট গড়ে ২ থেকে তিন সেন্টিমিটার করে উত্তরমুখী হয়ে সঞ্চরণশীল।

এইতো গেলো হিমালয় সৃষ্টি,এবার আসা যাক বঙ্গীয় ভূমিরূপ বা আমাদের এই ভূখণ্ড কিভাবে হলো এবং বাংলাদেশের পাহাড়গুলো কবেকার সৃষ্টি!

বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চল যেমন রংপুর,দিনাজপুর সহ উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু অঞ্চল গন্ডোয়ানাল্যান্ডে অন্তর্ভুক্ত থাকাকালীন সময় থেকেই ছিলো।কিন্তু বাকি অংশের কোনো অস্তিত্ব তখনো ছিলো না।এই অঞ্চল সৃষ্টি হয় হিমালয় সৃষ্টির পরপর।দুই টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট  হিমালয় অঞ্চল সুস্থিত অবস্থায় আসতে অতিবাহিত হয় অনেক অনেক যুগ।আর এই সুস্থিত হবার কালে এইসব উচ্চভূমির পাদদেশে এসে স্পর্শ করে সমুদ্র। হিমালয়ের সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় মেঘ বাধা পেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বিভিন্ন উচ্চভূমিতে ধসের ফলে সেই সময়কালে তখন অগভীর জলাশয় উৎপন্ন হওয়া শুরু হয়।এবং এর প্রবাহ থেকে বালি,মাটি,চুনাপাথর জমে পর্বতের নিমজ্জিত অংশগুলো ভাসমান হতে থাকে।অইসব উচ্চভূমি থেকে পানির প্রবাহে ভেসে এসে জমতে থাকা ভূ-ত্বকীয় উপকরণ থেকেই ধীরে ধীরে বঙ্গীয় ভূমি-রূপ সৃষ্টি হয়।সিলেট অঞ্চলে জমা চুনাপাথর অই সময়কার ভেসে আসা জলপ্রবাহেরই নিদর্শন

এরপর প্রায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত পৃথিবীর সমুদ্র তলদেশ অনেক নিচে নেমে যায় যার ফলে প্রচুর পলিমাটি জমা হয় এবং পানির গভীর প্রবাহ গুলোও থেকে যায়।পলি জমতে থাকে।যার ফলে একটা বিশাল ভূমিরূপকে পেঁচিয়ে ধরে শত শত নদী নিয়ে সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু হয় ব-দ্বীপের। যার ফলে বাংলাদেশের বেধিরভাগ অঞ্চলই সমতল। এদিকে ঠিক একই সময়ে পূর্বাংশের আরাকান অঞ্চলেরও গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন বিভিন্ন পাহাড়-পর্বতের উত্থান হয়। অইদিকে হিমালয়ের গঠন প্রক্রিয়াও তখন প্রায় সম্পূর্ণ হবার পথে।

আজ থেকে প্রায় ৫০-৫৩ লক্ষ বছর পূর্বে বার্মা রেঞ্জের সাথে ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টাল প্লেটের আবার কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়।এতে ধাবমান ইন্ডিয়ান প্লেটের সাথে বার্মা প্লেটের একপ্রকার ঘূর্ণণ গতি সৃষ্টি করে যার ফলে বঙ্গীয় উপকূলের ত্রিভুজাকৃতির চাপ পড়ে এবং পূর্বাংশে উঁচু নিচু ভাজের সৃষ্টি হয় যার থেকে বান্দরবান,সিলেট,চট্টগ্রাম,মেঘালয়,আসামের, ও আরাকান রাজ্যের পাহাড় শ্রেণীর সৃষ্টি হয়।কিছু জায়গার অধিক সংকোচনের ফলে উঁচু নিচু ভাজের পাহাড় পর্বত সৃষ্টি হয় বেশ কয়েকটি ধাপে, যেমনটা দেখতে পাই বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে।আবার কিছু মৃদু ভাজের পাহাড়শ্রেণী ও তৈরী হয়। সীতাকুণ্ড -মীরসরাই রেঞ্জ,,সিলেট রেঞ্জ,কুমিল্লার লালমাই,ময়মনসিংহের গারো পাহাড় এইসব মৃদু ভাঁজ যুক্ত পাহাড়। তারপর বছরের পর বছরের রূপান্তরিত রূপ আজকের এইসব পাহাড়-পর্বত।

সোর্সঃ
1.
http://eurasiatectonics.weebly.com/indian-plate.html
2.
http://onushilon.org/geography/bangladesh/vuprokriti.html
৩.
https://pubs.usgs.gov/gip/dynamic/himalaya.html

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

সর্বাধিক পঠিত