Connect with us

অন্যান্য

মার্গারেট থ্যাচার : দ্যা আয়রন লেডি

Published

on

মার্গারেট থ্যাচার : দ্যা আয়রন লেডি

উপনিবেশ পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থায় সারা পৃথিবীতে যখন ব্রিটিশদের প্রভাব কমে আসছিল, বিশ্ববাসী যখন ভুলতে বসেছিল ব্রিটিশরা একদিন তাবৎ দুনিয়া শাসন করেছিল, ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা,আমারিকা মহাদেশ ছিল তাদের করায়াত্তে, তখনই ব্রিটেনের ক্ষমতায় আসেন একজন নারী যিনি ব্রিটেনকে তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিতে লৌহ মানবী হয়ে আর্বিভূত হয়েছিলেন । তিনি মার্গারেট থ্যাচার, ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতায় ছিলেন একদশকেরও বেশী সময়।  দৃঢ় ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক দর্শন, শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি ও অভ্যন্তরীণনীতি এবং কঠোর সমাজতন্ত্র বিরোধী মনোভাব কারণে তিনি আয়রন লেডি হিসেবে খ্যাতি পান ।

Margaret Thatcher: Margaret Thatcher, prime minister 1979-90
ছবি : সংগৃহীত

মার্গারেট হিলডা রবার্টস মার্গারেট থ্যাচারের পুরো নাম। থ্যাচার জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯২৫ সালের ১৩ অক্টোবর লিংকনশায়ারের গ্রান্থামে। আলফ্রেড রবার্টস ও বিয়েট্রিশ ইথেল তাঁর বাবা ও মা। মার্গারেট থ্যাচার গ্রান্থামে বড় হয়েছেন। সেখানে তার বাবার দুটো মুদির দোকান ছিল। মার্গারেট থ্যাচারের বাবা স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং মেথডিস্ট চার্চে ধর্মযাজক হিসেবে কাজ করতেন। আলফ্রেড ১৯৪৫-১৯৪৬ সাল পর্যন্ত গ্রান্থামের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি হান্টিং টাওয়ার রোড প্রাইমারি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। অসামান্য মেধাবী মার্গারেট থ্যাচার বৃত্তি পেয়ে কেস্টেভেন অ্যান্ড গ্রান্থাম গার্লস স্কুলে যান। এট ছিল তখনকার সময়ের বিখ্যাত স্কুল। তার রিপোর্ট কার্ড থেকে জানা যায় তিনি খুবই পরিশ্রমী ছিলেন ছাত্রাবস্থায়। এ ছাড়াও তিনি পিয়ানো বাজাতে পারতেন। আবার খেলাধুলাসহ অন্যান্য বিষয়েও বেশ ভালো ছিলেন। যেমন ফিল্ড হকি, কবিতা আবৃত্তি, সাঁতার ও দৌড় প্রতিযোগিতায় ইত্যাদি এক্সট্রাকারিকুলাম এক্টিভিটিসে উত্তরোত্তর উন্নতি করছিলেন।

মার্গারেট থ্যাচার : দ্যা আয়রন লেডি
শৈশবে থ্যাচার, ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতিতে যোগদান :

 বিশ্ববিখ্যাত  অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রিতে দ্বিতীয় শ্রেণি নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন ১৯৪৭ সালে। কেমিস্ট্রি পড়ার সময়ই তিনি আইন বিষয়ে পড়ার প্রতি আগ্রহ হন। তখনই রাজনীতি করা নিয়ে ভাবছিলেন। এরপর তিনি নির্বাচনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজার্ভেটিভ অ্যাসোসিয়েশনে। ১৯৪৬ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজার্ভেটিভ অ্যাসোসিয়েশনেরপ্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন।

১৯৪৮ সালে মার্গারেট থ্যাচার পার্টি কনফারেন্সে যোগদান করেন এবং সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন। অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা ব্যক্তিরা তার প্রতি এতটাই মুগ্ধ ছিলেন যে তারা তাকে ডার্টফোর্ডের প্রার্থী হিসেবে আবেদনের জন্য প্রস্তাব করেন যদিও তিনি অনুমোদিত প্রার্থী তালিকার মধ্যে ছিলেন না। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি ডার্টফোর্ডের কনজার্ভেটিভ পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিজয়ের পর দেওয়া ডিনার পার্টিতে মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে দেখা হয় একজন সম্পদশালী ও সফল ব্যবসায়ী ডেনিস থ্যাচারের সঙ্গে। ১৯৫০ ও ১৯৫১ সালে লেবার পার্টির নিরাপদ আসন ডার্টফোর্ড থেকে তিনি সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন কিন্তু দুবারই ব্যর্থ হন তবে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনেন। একই সঙ্গে সবচেয়ে কম বয়সী এবং একমাত্র মহিলা প্রার্থী হিসেবে মিডিয়া আকর্ষণে সক্ষম হন মার্গারেট থ্যাচার। এ সময়ই মার্গারেট থ্যাচার ও ডেনিস থ্যাচারের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে ডেনিস থ্যাচার ও মার্গারেট থ্যাচার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৫১ সালে। ১৯৫৩ সালে তাদের যমজ সন্তান ক্যারল ও মার্ক জন্ম গ্রহণ করেন।

১৯৫৯ সালে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মার্গারেট থ্যাচার  মেম্বার অব পার্লামেন্ট নির্বাচিত হন। তার কৈশোরকালীন সময়েই প্রতিভা এবং কাজের প্রতি অনুপ্রেরণার কারণে মার্গারেট থ্যাচারের মধ্যে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল। যদিও তিনি এ ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন যে তার জীবদ্দশায় কেউ মহিলা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না কারণ পুরুষ জনগোষ্ঠী কুসংস্কারাচ্ছন্ন। ১৯৬৪ সালের নির্বাচনে কনজার্ভেটিভ পার্টির পরাজয়ের পর তিনি তার দলের ভূমি ও গৃহায়ণ দফতরের মুখপাত্র নির্বাচিত হন।

কনজার্ভেটিভ পার্টি ১৯৭৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে হেরে যায়। লেবার পার্টি সরকার গঠন করে। এর ফলে কনজার্ভেটিভ পার্টির সভাপতি এডওয়ার্ড হিথের নেতৃত্ব হুমকির মুখে পড়ে। যার ফলে মার্গারেট থ্যাচার হয়ে ওঠেন তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ দলে মার্গারেট থ্যাচার তখন দারুণভাবে জনপ্রিয়। মার্গারেট থ্যাচার হিথকে প্রথম ব্যালট নির্বাচনে পরাজিত করেন। দ্বিতীয় ব্যালট নির্বাচনে পরাজিত করেন হোয়াইট ল-কে। এর ফলে মার্গারেট হয়ে ওঠেন দলীয় প্রধান ও বিরোধীদলীয় নেত্রী।

প্রধানমন্ত্রী থ্যাচার

মার্গারেট থ্যাচার : দ্যা আয়রন লেডি
ছবি : সংগৃহীত

মার্গারেট থ্যাচার প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৭৯ সালের ৪ মে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে এসে ওঠেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থ্যাচার সাপ্তাহিকভাবে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করতেন। ১৯৮৬ সালের দিকে দ্য সানডে টাইমসের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে রানী এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতানৈক্যের সংবাদ দেয়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় বিশ্বজুড়ে। পরবর্তীতে প্রাসাদ থেকে এ দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়। থ্যাচার নিজেও পরবর্তীতে নিজের জীবনীগ্রন্থতে উল্লেখ করেন যে সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর রানীর সন্তোষজনক মনোভাব ছিল। তার সময়ে তিনি ট্রেড ইউনিয়নের ক্ষমতা প্রায় ধ্বংস করে ফেলতে সক্ষম হন। কারণ তার মতে এটি সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যাহত করে ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করে। ১৯৯০ সালের ১ নভেম্বর থ্যাচারের সবচেয়ে পুরনো ক্যাবিনেট মন্ত্রী গফ্রি হয়ি ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার হিসেবে পদত্যাগ করলে থ্যাচারের প্রধানমন্ত্রিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। পরের দিন মাইকেল হাসেলটিন কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেন। যদিও থ্যাচার প্রথম ব্যালট জয় পান কিন্তু মাইকেল যথেষ্ট সমর্থন পাওয়ায় দ্বিতীয় ব্যালট আদায় করে নিতে সক্ষম হন। তবে দ্বিতীয় ব্যালটে থ্যাচার চার ভোট কম পান। প্রাথমিকভাবে তিনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে ক্যাবিনেটের পরামর্শে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন। তারপর পরিত্যাগ করেন। এ সময় তিনি নিজেকে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে বিতাড়িত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। এ কারণে তিনি কখনো ক্ষমা করবেন না বলে জানান। থ্যাচারের পর জন মেজর কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের পর মার্গারেট থ্যাচার দুই বছর ফিনচলির এমপি ছিলেন। ১৯৯২ সালে তিনি ৬৬ বছর বয়সে হাউস অব কমনস থেকে পদত্যাগ করেন।

থ্যাচারিজম বা থ্যাচারবাদ :

 পৃথিবীতে বহুরাষ্ট্রনায়ক দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থেকেছেন কিন্তু খুব কম নেতার আর্দশ বা নীতি অনুকরণীয় মতবাদ বা আর্দশে পরিণত হয়েছে। অল্প যে কয়েকজন রাষ্ট্রনায়কের রাষ্ট্র পরিচালনার কৌশল, রাজনৈতিক আর্দশ, পররাষ্ট্রনীতি স্বকীয় মতবাদে পরিণত হয়েছে তাদের মতে অন্যতম হল মার্গারেট থ্যাচার । তাঁর রাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, রাজনৈতিক আর্দশকে থ্যাচারজিম বা থ্যাচারবাদ বলা হয়ে থাকে। ব্রিটিশ রাজনীতিতে থ্যাচারিজমের প্রভাব এতটাই যে থ্যাচার পরবর্তী যুগে  জন মেজর, টনি ব্লেয়ার, ডেভিট ক্যামেরান এমনকি এখন ও কনজারভেটিভ পার্টি থ্যাচারিজমের অনেক নীতি মেনে চলে।

 ১৯৮৩-১৯৮৯ সাল থ্যাচারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন  নাইজেল ল‘সন । তিনিই মূলত থ্যাচারিজমের ধারণা দেন এবং ব্যাখ্যা করেন।

থ্যাচারিজম সমর্থন করে, উদারতাবাদ, মুক্তবাজার অর্থনীতি, ব্যাক্তিস্বতন্ত্রবাদ,মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে । পাশাপাশি রাষ্ট্রের শক্তিশালী এবং কল্যানকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় থ্যাচারিজমের মূলনীতি।

থ্যাচারের অর্থনৈতিক আর্দশ বা ধারণাকে থ্যাচারাইট ইকোনমিক্স বলা হয়ে থাকে। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কেনেসীয় অর্থনৈতিক মতবাদকে প্রত্যাখান করে। কেনেসীয় অর্থনৈতিক মতবাদ রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলে থাকে। কিন্তু থ্যাচার ব্রিটেনের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য  সরকারী ব্যয় সংকোচন করেন। এছাড়া মনিটারিজম, মুদ্রস্ফীতি এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মত বিষয়গুলো গুরুত্ব পেত। থ্যাচার রাষ্ট্রয়াত্ত কোম্পানী গুলোকে বেসরকারীকরণ করে শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তোলেন।

থ্যাচারের পররাষ্ট্রনীতি :

 শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি, সন্ত্রাসবাদের প্রতি আপোষহীনতা, সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোরমনোভাবের জন্য মার্গারেট থ্যাচার লৌহমানবী হিসেবে অভিহিত হয়েছিলেন।

থ্যাচার আটলান্টিকতাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন অর্থাৎ উত্তর আটলান্টিকের একপাশের ইউরোপ মহাদেশের সাথে অন্যপাশের আমেরিকা মহাদেশের মেলবন্ধন বা সেতুবন্ধনে বিশ্বাসী ছিলেন। ট্রান্স আটলান্টিক রিলেশন ছিল তার প্রধান গুরুত্বের বিষয় যার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক গভীর করেন থ্যাচার ।  তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও ছিল যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ। থ্যাচার ও রিগ্যানের সময়কে একত্রে এজ অফ কনাজারভেটিজম বলা হত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তৎকালীন সময়ে লিবিয়া এবং রিয়াদে ব্রিটিশ নৌঘাটি ব্যবহার করতে দেন থ্যাচার। সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ইউরোপ এবং ব্রিটেনকে টার্গেট করে এসএস-২০ মিসাইল স্থাপন করেন তখন তিনি ব্রিটেনের ভূ-খন্ডে ক্রুশ মিসাইল এবং প্রেসিং মিসাইল স্থাপনের অনুমতি দেন।

থ্যাচারের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল তিনি ইউরোসংশয়বাদে বিশ্বাসী ছিলেন। অর্থাৎ তিনি মনে করতেন একক ইউরোপ গঠনের ধারণা ব্রিটেনের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকী স্বরূপ। ইউরোসংশয়বাদ তার চরিত্রের প্রধান দিক হলেও তিনি ১৯৭৩ সালে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইকোনমিক কমিটিতে প্রবেশকে সমর্থন করে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ১৯৮৬ সালে সিঙ্গেল ইউরোপীয় অ্যাক্টে স্বাক্ষর করেন। 

থ্যাচার সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের অন্যতম কট্টর সমালোচক ছিলেন । ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় তখন তিনি তার বিরোধিতা করেন। এসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ দিলে থ্যাচার তা সমর্থন করেন।  এমনকি ১৯৮০ সালে মস্কো অলিম্পিকে ব্রিটিশ অ্যাথলেটদের অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করেন তিনি।

সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সমাজতন্ত্রের ঘোর বিরোধী হলেও তিনি সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্ভাচেভের অন্যতম সমর্থক ছিলেন।১৯৮৪ সালে থ্যাচার গর্ভাচেভের আমন্ত্রণে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন। থ্যাচার ইউরোপীয় নেতা হিসেবে সর্বপ্রথম মিখাইল গর্ভাচেভের গ্লাসনাস্ত পেরেস্ত্রইকা সমর্থন করেন। ১৯৮৮ সালে গর্ভাচেভ- রিগ্যানের বৈঠকের পর স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছে বলে ঘোষণা দেন।

থ্যাচার দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরোধী ছিলেন।বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি তৎকালীন সময়ে কমনওয়েলথ ও ইউরোপীয়ান কমিউনিটি প্রদত্ত নিষেধাজ্ঞার বিরোধী ছিলেন থ্যাচার। তিনি মনে করতেন এতে দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি ভেঙে পড়বে এবং আরো বেশি বর্ণবাদী আচারণ করবে আফ্রিকান সরকার। ১৯৮৪ সালে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টকে ব্রিটেন সফরের আমন্ত্রণ জানান। নেলসন ম্যান্ডেলার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ব্রিটনে সফরে গিয়ে থ্যাচারের বর্ণবাদ বিরোধী মনোভাবে কারণে ভূয়সী প্রশংসা করেন।

থ্যাচার ১৯৮২ সালে প্রথম কোন সমাজতান্ত্রিকদেশ হিসেবে চীন সফর করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল চীনা নেতা দেওজিয়াও পিং এর  সাথে হংকং এর সার্বভৌমত্বের আলোচনা কর। ১৯৮৪ সালে জিয়াওপিং ও থ্যাচার উভয় নেতা হংকং এর স্থিতিশীলতা এবং উন্নতির জন্য বেইজিং এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

কম্বোডিয়া ভিয়েতনাম যুদ্ধে থ্যাচার খেমারুজদের সমর্থন করেন। তিনি খেমারুজদের জন্য স্পেশাল এয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সহায়তা পাঠান।

থ্যাচার জার্মাণীর একত্রীকরণের বিপক্ষে ছিলন। তিনি মনে করতেন জার্মাণীর একত্রীকরণ করলে ন্যাটো থেকে সরে দাড়াবে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যোগ দিবে।

১৯৯০ সালে সাদ্দাম হোসেন যখন কুয়েত দখলে করেছিল তখন থ্যাচার যুক্তরাষ্ট্রে সফরে ছিলেন এবং তিনি কুয়েত থেকে ইরাকী সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য সাদ্দাম হোসেনের সাথে আলোচনায় বসতে বুশকে চাপ প্রয়োগ করেন। যদিও বুশ এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে একমত ছিলেন না। থ্যাচার পরবর্তীতে উপসাগরীয় যুদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করেন।

ফকল্যান্ড যুদ্ধে জয়ী :

মার্গারেট থ্যাচারের সময়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল  ফকল্যান্ড যুদ্ধে। ১৯৮২ সালে আর্জেন্টিনা ব্রিটিশ শাসিত ফকল্যান্ড  দ্বীপপুঞ্জ দখল করে নেয়।  এসম তিনি ফকল্যান্ডে নৌবহর প্রেরণ করেন। ব্রিটিশ নৌবাহিনী টর্পেডো দিয়ে আর্জেন্টিনার নৌজাহাজ জেনারেল বলসেরানো ডুবিয়ে দেয়, এতে ৬৪৯ জন আর্জেন্টিনার সৈন্য এবং ২৫৫ জন ব্রিটিশ এবং ৩ জন স্থানীয়র মৃত্যু হয় ফলে ব্যাপক সমালোচনার  মুখে পড়েন থ্যাচার।

Margaret Thatcher: 1986: Margaret Thatcher on a Challenger tank
ছবি :সংগৃহীত

ফকল্যান্ড যুদ্ধে জয়ী হওয়ার কারণে তিনি ১৯৮৩ সালে নির্বাচনে পুণরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। যুদ্ধে সবচেয়ে সফল নেতা হিসেবে খ্যাতি পান।

লৌহ-মানবী বলার কারণ :

১৯৭৬ সালের ১৯ জানুয়ারি কেন্সিংটন টাউন হলে এক বক্তৃতায় তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিয়ে কঠোর আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন।  সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসী মনোভাবকে তাচ্ছিল্য করে তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্বের কর্তৃত্বের কাছে রাশিয়ানরা কিছুই নয়।’ এর উত্তরে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পত্রিকা ‘ক্রাস্নায়া জাভেজডা’ তাকে আয়রন লেডি বা লৌহমানবী বলে আখ্যা দেয় এবং তিনি আনন্দের সঙ্গে এ উপাধি গ্রহণ করেন।

সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক দেওয়া এই লৌহ-মানবী উপাধির যথার্থতা প্রমাণ করেছিলেন থ্যাচার তার

 ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা,বৈপ্লবিক অর্থনৈতি নীতির ও শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতির দ্বারা। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ফকল্যান্ড যুদ্ধে জয়ী হয়ে  মার্গারেট থ্যাচার  যেন প্রকৃত অর্থেই লৌহমানবী হিসেবে আর্বিভূত হয়েছিলেন। কেবল লৌহ-মানবী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন না থ্যাচার, তার ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তায় মুগ্ধ হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘দা বেস্ট মেন ইন ইংল্যান্ড’ অর্থাৎ ইংল্যান্ডের সেরা পুরুষ।

আয়রন লেডি ক্ষমতা থেকে বিদায় সুখকর ছিল না। ১৯৯২ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

“রাজনীতি করলে আপনার পিঠে কেউ ছুরি মারবে এমন ঝুঁকি থাকবেই । কিন্তু এটা আমি কখনো ক্ষমা করবো না যে আমাকে পার্লামেন্টের মাধ্যমে বিদায় নিতে দেয়া হয় নি। এটা আমি ভুলবো না” মার্গারেট থ্যাচারের তিক্ত অনুভূতির কথা

মৃত্যু

১৯৮৪ সালে ১২ অক্টোবর সকালে ব্রাইটন হোটেলে বোমা হামলা হত্যাচেষ্টায় তিনি অল্পের জন্য বেঁচে যান। এ হামলায় পাঁচজন নিহত হয়। পরবর্তীতে অবসর জীবনে মার্গারেট থ্যাচার ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল লন্ডনের রিজ হোটেলে অবস্থানকালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

রূপালী পর্দার আয়রন লেডি :

The Iron Lady Poster
ছবি : সংগৃহীত

ফিলিডা লয়েড মার্গারেট থ্যাচরকে রূপালী পর্দায় তুলে আনেন ২০১১ সালে  দ্যা আয়রন লেডি নামের চলচিত্রের মাধ্যমে। ঐ বছর অস্কার পুরষ্কার জিতে নেয়  চলচিত্রটি। প্রখ্যাত অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ যেন একদম সত্যিকারের থ্যাচার হয়ে উঠেছেন পর্দায়।  মেরিল স্ট্রিপ এর জায়গায় মার্গারেট থ্যাচারের ভূমিকায় অন্যকোন অভিনেত্রীকে এতটা মানাত না। দ্যা আয়রন লেডি চলচ্চিত্রটি একজন নারীর সামর্থ্যকে তার স্বামীর সম্মান এবং এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণাকেই উপজীব্য করে তৈরি হয়েছে। মার্গারেট থ্যাচারের সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে তার স্বামীর ভালোবাসা এবং সব সময় পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দেওয়াকে মুখ্য হিসেবে দেখানো হয়েছে। একজন নারী কিভাবে স্বামী,সন্তান ও পরিবারের ভালবাসা নিয়ে ব্রিটেনের রাষ্ট্রক্ষমতায় নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছিলেন না এবং লৌহমানবী হয়েছিলেন তা ফুটে ওঠে সিনেমাটিতে এবং বিশ্বব্যাপী দারুণ জনপ্রিয়তা পায় সিনেমাটি।

তথ্যসূত্র :

দ্যা গার্ডিয়ান

টেলিগ্রাফ

www.nytimes.com/

www.biography.com

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

অন্যান্য

কথাটি “না” বলতে শিখুন।

Published

on

কথাটি "না" বলতে শিখুন।
আপনি, আপনার বন্ধু,বন্ধবী, আপনার সহকর্মী, শিক্ষক,পাশের বাসার লোক সবারি একটি পরিচয় আছে তা হলো তারা ‘মানুষ’। হয়তো, তার একটি নিজেস্ব ধর্ম আছে। যার আলোকেই তার জীবনটা পরিচালিত হচ্ছে। তার কাছে সেটার স্থান অনেক উঁচুতে। সেটা তার বিশ্বাস, দীর্ঘদিনের অভ্যাস, তার ঐতিহ্য। আপনি চাইলেই পরিবর্তন করতে পারবেন না। কিন্তু একটি কথা তার মনে দাগ কেটে যায়। আপনার প্রতি সেই ভালোবাসা, শ্রদ্ধা নিমিষেই চলে যায়। আমি আপনার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের কথা বলছি। ধরুন : আপনি একটা স্ট্যাটাস দিলেন- “এটা কেন ধর্মীয় রীতি হলো। এটার কোন অর্থ নেই। এটা সঠিক নয়। “
হ্যাঁ, আপনার কাছে হয়তো সঠিক নয়। কারন যে মানুষটা ওই রীতিটা পালন করছেন কারন তার কাছে তা সঠিক মনে হয়। তাই সে পালন করছে। কিন্তু আপনি কি করলেন? তার দীর্ঘদিনের একটা বিশ্বাসকে অবজ্ঞা করলেন। আমরা এটা প্রায়ই করি না???
করি,আমি ও যে করি না তা নয়। আমরা করি। হয়তো কেউ হঠাৎ মুখ থেকে বের করে ফেলি। এটা ঠিক কি ঠিক?
সমাজবিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা করলে দেখবেন, আপনি কোন না কোন ভাবে আপনার চারপাশের মানুষ দ্বারা প্রভাবিত। মানে, আপনার চারপাশের মানুষ কোন না কোন ভাবে আপনাকে সাহায্য করে থাকে। পেট,কিডনি, নাড়িভুড়ির গল্পটা পড়েছেন হয়তো। না হয়  সাধারন বিজ্ঞানের বাস্তুসংস্থান এর অধ্যায়টা পড়লে বুঝবেন। জীবনটা ঠিক এমনি। সবকিছুর সবার সাথে সবার সম্পর্ক নিবিড়। আচ্ছা, আমেরিকার সম্প্রতি বর্নবাদের কথায় ধরুন। কোন লাভ আছে সমাজের একটা অংশের মানুষের বিরুদ্ধে যাওয়ার? রাজনীতি একটু ভিন্ন জিনিস। কিছু স্বার্থপর মানুষের প্রতিযোগিতা। যেখানে প্রথমেই শিখানো হয়,সে আর তুমি ভিন্ন। তাই রাজনীতি থেকে সরে সমাজিক কথাই বলি। এ কথাগুলো তো শুনেছেন, মন ভাঙ্গা মন্দির/মসজিদ ভাঙ্গার সমান। যদিও এই কথাটা প্রেমের ক্ষেত্রে ব্যবহারিত  হয় বেশি। কিন্তু জানেন কি আপনার একটা কথায় আপনার সহকর্মী, কাছের বন্ধুর মন ভেঙ্গে যেতে পারে। সত্যিই ধর্মের জায়গাটা সবার কাছে অনেক বড় একটা স্থান। তাই আপনার সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, অাদর একটি মাত্র কথার মাধ্যমে বিলিন হতে দিয়েন না। প্রতিটি মানুষের কাছে তার ধর্মটা শ্রেষ্ঠ। আপনি যদি অন্যের কাছে আপনার ধর্মটাই বড় করে দেখাতে চেষ্টা করেন তাহলে আপনি বোকা, স্বার্থপর, অসামাজিক, ভন্ড। আর এই নিচু মনোভাব পৃথিবীর বুকে একটা কৃএিম সমস্যার জম্ম দিয়েছে যার নাম উগ্রবাদ। আর উগ্রবাদের সাথে জড়িত হিংসা,লোভ, যৃনা, পশুত্ব। যার শেষ পরিনিত যুদ্ধ,  বিনাশ, ধংস।
তাই আমাদের উঠিত, সকলকে সঠিকভাবে তার নিজেস্ব ধর্মটা পালন করতে দেওয়া যা দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব। আর চারপাশের মানুষের কথা চিন্তা করে আমাদের মনোভাব প্রকাশ করা উচিত। তাহলেই ভালো থাকবো আমি, আপনি,আপনার, সহপাঠী, বন্ধু, এবং সবাই।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

অন্যান্য

পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে

Published

on

পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে

নিঃসন্দেহে এ গ্রহের সবচেয়ে নির্যাতিত, নিষ্পেসিত, জনগোষ্ঠী ফিলিস্তিনিরা। দীর্ঘ সাত দশকেরও বেশী সময় ধরে তাদের উপর কেবলই ইসরাইলী অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে নি বরং দানব রাষ্ট্র ইসরাইল তাদেরকে করছে বাস্তুচ্যুত।

কামান, ট্যাংকের মর্টার শেল দিয়ে, কিংবা বোমারু বিমানের আঘাতে ছিনিয়ে নিচ্ছে শত শত নিরপরাধ ফিলিস্তিনীর(নারী, শিশু,যুবক যুবতী, বৃদ্ধ মানুষের) জীবন।
মানবতার ধ্বজ্বধারী, মানবাধিকারের তল্পাবহনকীর পশ্চিমাদেশগুলোয় ইসরাইলের অন্যতম সর্মথক, অস্ত্রের সরবরাহকারী, অর্থের যোগানদাতা। বিশ্বগণমাধ্যমগুলোর ভয়ংকার মিথ্যাচার,  পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরণ আর বিশ্বাস ঘাতক আরবদেশগুলোর পিন পতন নীরবতায় প্রমাণিত পৃথিবী গ্রাস করছে ফিলিস্তিনকে, ধেয়ে আসছে ফিলিস্তিনীদের দিকে। আর তাইতো ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি মোহাম্মদ দারউশ লিখেছেন তার বিখ্যাত কবিতা, পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে

পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে
আমাদের ঠেসে ধরছে একেবারে শেষ কোণায়

এই অত্যাচার সহ্য করতে আমরা আমাদের অঙ্গ প্রতঙ্গ গুলো ছিড়ে ফেলব
দুনিয়া আমাদেরকে গ্রাস করছে।
আমার মনে হয় আমরা যদি গম হতাম
তাহলে মরেও আবার বাচতে পারতাম।

আমার মনে হয় পৃথিবী আমাদের মা ছিলেন
তাই তিনি আমাদের প্রতি দয়া করবেন।

আমার মনে হয় আমরা পাথরের উপরে ছবি ছিলাম, আমাদের স্বপ্নগুলোকে আয়না হিসেবে বয়ে নিতে
আমরা তাদের মুখ দেখেছি,য়ারা আমাদের শেষ জনের হাতে মারা যাবে,
আত্মার শেষ প্রতিরক্ষার মধ্যে।

আমারা তাদের শিশুদের ভোজ নিয়ে কাদলাম
আমরা তাদের মুখ দেখছি যারা আমাদের সন্তানদের ছুড়ে ফেলবে, শেষ কোণার জানালাগুলির বাইরে।
আমাদের তারা গুলাকে ঝুলাবে।
শেষ সীমান্তের পরে আমাদের কোথায় যাওয়া উচিত?
শেষ আকাশের পরে পাখিরা কোথায় যাবে?
গাছগুলির কোথায় ঘুমানো উচিত
বাতাসের শেষ নিঃশ্বাসের পরে?

আমরা রক্তের স্রোত দিয়ে আমাদের নাম লিখব।
আমরা আমাদের মাংসপিন্ড দিয়ে শেষ হয়ে যাওয়া গানটির মাথা কেটে ফেলব।
আমরা এখানে শেষ প্রান্তে মরে যাব।
এখানে এবং এখানেই আমাদের রক্ত জলপাই গাছ রোপন করবে।

মাহমুদ দারউশ(

ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি)

 

মূলকবিতা

The earth is closing on us

Mohmoud Darwish

The Earth is closing on us
pushing us through the last passage
and we tear off our limbs to pass through.
The Earth is squeezing us.
I wish we were its wheat
so we could die and live again.
I wish the Earth was our mother
so she’d be kind to us.
I wish we were pictures on the rocks
for our dreams to carry as mirrors.
We saw the faces of those who will throw
our children out of the window of this last space.
Our star will hang up mirrors.
Where should we go after the last frontiers ?
Where should the birds fly after the last sky ?
Where should the plants sleep after the last breath of air ?
We will write our names with scarlet steam.
We will cut off the hand of the song to be finished by our flesh.
We will die here, here in the last passage.
Here and here our blood will plant its olive tree.

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

অন্যান্য

বাংলাদেশের ভূমিরূপ যেভাবে সৃষ্টি হয়েছে

Published

on

বাংলাদেশের ভূমিরূপ যেভাবে সৃষ্টি হয়েছে

অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ইতিহাস আমরা সবাই জানি। কিন্তু এর সঠিক ভৌগলিক ইতিহাস আমাদের প্রায় অনেকেরই অজানা। চলুন আজকে জেনে নেয়া যাক বাংলাদেশের আদি ইতিহাস।

আমাদের এই ব-দ্বীপের সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে এই ভূমিরূপের সৃষ্টি এবং আদি অবস্থা সম্পর্কেও।আমাদের অনেকের অজানা যে আমাদের এই ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেট বা এই ভারতীয় উপমহাদেশ পূর্বে মূলত এশিয়ার অংশ ছিলো না।ভূমিকম্প নিয়ে পরিচিতি থাকার সুবাদে টেকটোনিক প্লেট সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সবাই জানি।

জুরাসিক পিরিয়ডে,সেই ডায়নোসর যুগে অর্থ্যাৎ  আনুমানিক ১৪০ মিলিয়ন বছর পূর্বে এই ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট ছিল মূলত একটি বিশাল টেকটোনিক প্লেটের অংশ যার নাম ছিল গন্ডোয়ানাল্যান্ড।সেসময় পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ মেন্টল উথলে ওঠার ফলে গন্ডোয়ানাল্যান্ডের টেকটোনিক প্লেটে ফাটল ধরে এবং চার খন্ডে বিভক্ত হয়ে তা আফ্রিকান,এন্টার্কটিক,অস্ট্রেলীয় এবং ইন্ডিয়ান টেকটোনিক প্লেটে পরিণত হয়।আমাদের এই টেকটোনিক প্লেট মূলত ইন্দো-অস্ট্রেলীয় টেকটোনিক প্লেটের অন্তর্ভুক্ত যা মাদাগাস্কার থেকে বিভক্ত হয়েছিলো বলে ধারণা  করা হয়।

অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে আমাদের এই টেকটোনিক প্লেটের পুরুত্ব মাত্র ১০০ কিলোমিটার এর মতো যেখানে গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অন্যান্য অংশ গুলো ১৮০ কিলোমিটার কিংবা তারও বেশি পুরুত্ব সম্পন্ন।ফলে এর গতিবেগও ছিল সবচেয়ে বেশি যা ছিল ১৮ থেকে ২০ সে.মি করে প্রতি বছর,যেখানে অন্যান্য গুলো ছিলো ২-৪ সেন্টিমিটার করে প্রতি বছর।এই প্লেটের উত্তরমুখি আনুমানিক প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার যাত্রার পর আজ থেকে আনুমানিক ৪০-৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বে তা ইউরেশিয়ান,অর্থ্যাৎ ইউরোপ এবং এশিয়া যেই টেকটোনিক প্লেটের উপর অবস্থিত তার সাথে প্রবল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।এই যাত্রাকালে সৃষ্টি হয় ভারত মহাসাগর।আর ধারণা করা হয় সংঘর্ষের পর ইউরেশীয় প্লেটের ভূমিরূপকে ঘিরে থাকা টেথিস সাগর চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

দুটো টেকটোনিক প্লেটের যখন মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় তখন একটি অপরটির উপরে চলে যায়।এবং পাহাড় পর্বত বা আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয় ভেতরকার ভূমিরূপ বা শিলাস্তর উত্থিত হয়ে।

ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টাল টেকটোনিক প্লেটের সাথে প্রাথমিক মৃদু ধাক্কায় একাংশ যুক্ত হয় ইউরেশিয়ান প্লেট।তখন সমুদ্র তলদেশ থেকে উত্থিত হয় নেপাল এবং তিব্বত উপত্যকা। এরপরই এক প্রবল সংঘর্ষের ফলে বিশাল সীমানাজুড়ে ভূমিরূপে ভয়ানক সংকোচন ঘটে প্রবল ভাঁজ সৃষ্টি হয় এবং স্বাভাবিকভাবেই ভূমিরূপ উঁচু হয়ে যায়। যার ফলে সৃষ্টি হয় হিমালয়,পৃথিবীর নবীনতম পর্বতশ্রেণী এবং পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দু,মাউন্ট এভারেস্ট।এই সংঘর্ষ এখনো অব্যহত।এবং এর ফলে হিমালয়ের উচ্চতাও গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৫ মিলিমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে।এবং এই ইন্দোঅস্ট্রেলীয় প্লেট গড়ে ২ থেকে তিন সেন্টিমিটার করে উত্তরমুখী হয়ে সঞ্চরণশীল।

এইতো গেলো হিমালয় সৃষ্টি,এবার আসা যাক বঙ্গীয় ভূমিরূপ বা আমাদের এই ভূখণ্ড কিভাবে হলো এবং বাংলাদেশের পাহাড়গুলো কবেকার সৃষ্টি!

বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চল যেমন রংপুর,দিনাজপুর সহ উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু অঞ্চল গন্ডোয়ানাল্যান্ডে অন্তর্ভুক্ত থাকাকালীন সময় থেকেই ছিলো।কিন্তু বাকি অংশের কোনো অস্তিত্ব তখনো ছিলো না।এই অঞ্চল সৃষ্টি হয় হিমালয় সৃষ্টির পরপর।দুই টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট  হিমালয় অঞ্চল সুস্থিত অবস্থায় আসতে অতিবাহিত হয় অনেক অনেক যুগ।আর এই সুস্থিত হবার কালে এইসব উচ্চভূমির পাদদেশে এসে স্পর্শ করে সমুদ্র। হিমালয়ের সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় মেঘ বাধা পেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বিভিন্ন উচ্চভূমিতে ধসের ফলে সেই সময়কালে তখন অগভীর জলাশয় উৎপন্ন হওয়া শুরু হয়।এবং এর প্রবাহ থেকে বালি,মাটি,চুনাপাথর জমে পর্বতের নিমজ্জিত অংশগুলো ভাসমান হতে থাকে।অইসব উচ্চভূমি থেকে পানির প্রবাহে ভেসে এসে জমতে থাকা ভূ-ত্বকীয় উপকরণ থেকেই ধীরে ধীরে বঙ্গীয় ভূমি-রূপ সৃষ্টি হয়।সিলেট অঞ্চলে জমা চুনাপাথর অই সময়কার ভেসে আসা জলপ্রবাহেরই নিদর্শন

এরপর প্রায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত পৃথিবীর সমুদ্র তলদেশ অনেক নিচে নেমে যায় যার ফলে প্রচুর পলিমাটি জমা হয় এবং পানির গভীর প্রবাহ গুলোও থেকে যায়।পলি জমতে থাকে।যার ফলে একটা বিশাল ভূমিরূপকে পেঁচিয়ে ধরে শত শত নদী নিয়ে সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু হয় ব-দ্বীপের। যার ফলে বাংলাদেশের বেধিরভাগ অঞ্চলই সমতল। এদিকে ঠিক একই সময়ে পূর্বাংশের আরাকান অঞ্চলেরও গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন বিভিন্ন পাহাড়-পর্বতের উত্থান হয়। অইদিকে হিমালয়ের গঠন প্রক্রিয়াও তখন প্রায় সম্পূর্ণ হবার পথে।

আজ থেকে প্রায় ৫০-৫৩ লক্ষ বছর পূর্বে বার্মা রেঞ্জের সাথে ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টাল প্লেটের আবার কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়।এতে ধাবমান ইন্ডিয়ান প্লেটের সাথে বার্মা প্লেটের একপ্রকার ঘূর্ণণ গতি সৃষ্টি করে যার ফলে বঙ্গীয় উপকূলের ত্রিভুজাকৃতির চাপ পড়ে এবং পূর্বাংশে উঁচু নিচু ভাজের সৃষ্টি হয় যার থেকে বান্দরবান,সিলেট,চট্টগ্রাম,মেঘালয়,আসামের, ও আরাকান রাজ্যের পাহাড় শ্রেণীর সৃষ্টি হয়।কিছু জায়গার অধিক সংকোচনের ফলে উঁচু নিচু ভাজের পাহাড় পর্বত সৃষ্টি হয় বেশ কয়েকটি ধাপে, যেমনটা দেখতে পাই বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে।আবার কিছু মৃদু ভাজের পাহাড়শ্রেণী ও তৈরী হয়। সীতাকুণ্ড -মীরসরাই রেঞ্জ,,সিলেট রেঞ্জ,কুমিল্লার লালমাই,ময়মনসিংহের গারো পাহাড় এইসব মৃদু ভাঁজ যুক্ত পাহাড়। তারপর বছরের পর বছরের রূপান্তরিত রূপ আজকের এইসব পাহাড়-পর্বত।

সোর্সঃ
1.
http://eurasiatectonics.weebly.com/indian-plate.html
2.
http://onushilon.org/geography/bangladesh/vuprokriti.html
৩.
https://pubs.usgs.gov/gip/dynamic/himalaya.html

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

সর্বাধিক পঠিত