Connect with us

অন্যান্য

উন্নয়ন এবং নারী ক্ষমতায়ন

Published

on

উন্নয়ন এবং নারী ক্ষমতায়ন

“শস্যক্ষেত্র উর্বর হল, পুরুষ চালাল হাল
নারী সে মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল”

কাজী নজরুলের কবিতার চরণ দুটিতে আমরা সমাজে নারীদের অবদানের তাৎপর্যতা লক্ষ্য করি। কাজী নজরুল প্রায় এক শতাব্দী পূর্বে সমাজে নারীর অবদানের কথা যেভাবে অকপটে বলে গেছেন আমরা   একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীদের অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করি। এখনো আমাদের  সমাজব্যবস্থা নারীদের পিছনে ফেলে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।যদিও সমাজের অর্ধেক অংশই নারী। একটি সমাজকে উন্নতির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে  হলে নারী পুরুষ উভয়কে সমানতালে এগিয়ে যেতে হবে।  নারীকে পুরুষের সহযোগী হয়ে সমাজ ও দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এগিয়ে আসতে হবে। যেখানে নারীরা পিছিয়ে আছে কয়েক হাজার মাইল! নারীদের এগিয়ে চলার জন্য প্রয়োজন  নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর অগ্রাধিকার।
এখন কথা হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন বলতে আমরা আসলে কি বুঝি? পুরুষদের পিছনে ফেলে,অবহেলিত করে নারীদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া অথবা র‍্যাডিক্যাল ফেমিনিস্টদের তত্ত্বমতে  নারীপ্রধান সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করা? না! এই দুটির কোনটাই বাস্তবিকপক্ষে নারীর ক্ষমতায়নকে বোঝায় না। সত্যিকারার্থে, নারীর ক্ষমতায়নের কোন সঠিক সংজ্ঞা নেই।

নারীর ক্ষমতায়ন বলতে, সমাজে নারী- পুরুষের সমতা অর্জন। অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যক্তির নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার অধিকার, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার ও পেশাগত দক্ষতা বাড়ানো বিশেষ করে রাজনীতি, অর্থনীতি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে পূর্ণ অধিকার পাওয়া। বিশ্বব্যাংকের সংজ্ঞানুযায়ী, ” ক্ষমতায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যা  ব্যক্তি বা দলের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।” অর্থাৎ একজন ব্যক্তিকে এমন সাবলীলভাবে গড়ে তোলা যেন সে ‘ পারিনা ‘ এই শব্দটাকে গ্রাহ্য না করে ‘পারি’ শব্দটাকে নিজের জীবনে যুক্তিযুক্ত করে তুলতে পারে।

আচ্ছা, সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন কেন দরকার? এবং সমাজে এর প্রয়োজনীয়তা কি? স্পষ্টভাবে বলতে গেলে নারীর ক্ষমতায়ন জরুরি শুধু সমাজ, দেশের উন্নয়নের জন্য না নারীর জন্যও তা প্রয়োজনীয়।  ক্ষমতায়ন নারীর নিজেদের মানবিক ও মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলে নারীকে প্রশিক্ষিত করে আর নারীকে শুধু প্রশিক্ষিত-ই করেনা কিভাবে  সমাজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব তা সম্পর্কেও নারীদের সচেতন করে তুলে।  আমরা জানি যে, ক্ষমতায়ন শব্দটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে, রাজনৈতিক স্থায়িত্বকে পুনর্গঠন করতে এবং সামাজিক কাঠামো পরিবর্তন করতে মূল চাবিকাঠি হিসেবে ভূমিকা পালন করে। নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ” নারীর সফল হওয়া মানেই একটি জাতির অধিক সফলতার দিকে ধাবিত হওয়া”। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান বলেছেন, ” উন্নয়নের প্রধান উপাদানই হল নারীর ক্ষমতায়ন”।

তাহলে ব্যাপারটা খুব সহজেই বোধগম্য যে, সমাজের উন্নতি নারীর সহযোগীতা ভিন্ন অসম্ভব।  কারণ একটা সমাজে নারী-পুরুষ সমানসমান অর্থাৎ সমাজের অর্ধেক জনসংখ্যাই নারী এবং নারীদের ক্ষমতায়ন ব্যতীত সমাজ বা দেশের উন্নয়ন শুধু অসম্ভব নয় উন্নতির অন্তরায়ও বটে!আসলে সমাজ কতটা নারীর ক্ষমতায়ন দিচ্ছে অথবা কতটা এগিয়েছে নারীরা? তা বিবেচনা করলে দেখা যাবে এখনো নারীরা কত পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্বে যদি দারিদ্রসীমা শুধু নারী- পুরুষের মাঝে বিবেচনা করা হয় তাহলে দেখা যায় যে, নারীরাই সবচেয়ে বেশি দরিদ্র। বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখতে পাই যে, বাংলাদেশের নারীরা সামঞ্জস্যহীনভাবে দরিদ্রতা ও বৈষম্যের শিকার। ২০১৮ এর এক তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ায় মাত্র ২০% নারী কৃষিক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজ করে যার পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য।

উন্নয়ন এবং নারী ক্ষমতায়ন

ছবি : সংগৃহীত

এছাড়াও পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীদের গৃহস্থালি কাজেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন অধিকার থাকেনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। এভাবে অর্ধেক জনসংখ্যাকে পিছনে ফেলে সমাজ তথা দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের একটি কথা খুব তাৎপর্যপূর্ণ।  তিনি সমাজকে দু চাকা বিশিষ্ট শকটের সাথে তুলনা করেছেন, যার একটি চাকা পুরুষ আরেক চাকা নারী।  এখন শকটের একটি চাকা বড় আরেকটি চাকা আকারে ছোট হয় তাহলে শকটের চলা অসম্ভব অর্থাৎ এটি এক স্থানেই ঘুরতে থাকবে এবং একসময় মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে! ঠিক তেমনি সমাজের অর্ধেক সংখ্যক নারী যখন সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকবে তখন সমাজের অবস্থাও দু চাকা বিশিষ্ট শকটের মতোই হবে এবং উন্নতির দোরগোড়ায় পৌঁছানোর আগেই স্থবির হয়ে পড়বে। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে নারীরা কিভাবে তাদের অবস্থান বদলে সমাজ তথা দেশের উন্নয়নের দিকে ধাবিত হতে পারে? আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি,  অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, ‘আত্মসচেতনতা’ বৃদ্ধি করতে হবে।  আত্মসচেতনতা মানে ব্যক্তির নিজের সম্পর্কে নিজেই উপলব্ধি করা, নিজেকে জানতে পারা ও বুঝতে পারা। আর এই সচেতনতা বাড়ানোর মূলশক্তি-ই হল শিক্ষা, শিক্ষাই হতে পারে প্রধান কেন্দ্রবিন্দু আত্মসচেতনতা বৃদ্ধির এবং নারীদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার প্রাথমিক হাতিয়ার। এ প্রসঙ্গে আফ্রিকান একটি প্রবাদের কথা উল্লেখ না করলেই নয়, “If you educate a man you educate an individual, but if you educate an women you educate a family ” নারী শিক্ষা কতটা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ  তা নিয়ে নেপোলিয়নও বলে গেছেন। তাহলে নারীর ক্ষমতায়ন হতে হলে আগে নারী শিক্ষা প্রয়োজনীয়।

নারীরা বাস্তবিক অর্থেই কি শিক্ষিত হচ্ছে? অথবা কতটুকু শিক্ষা নিতে পারছে ব্যাপারটা আসলে প্রশ্নাত্মক! আমরা যদি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বিশ্বের দিকে তাকাই তাহলে ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পারব যে,  নারীর শিক্ষাক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় কত পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু নারীদের অগ্রগতির জন্য অবশ্যই শিক্ষিত হওয়া জরুরী। প্রশ্ন হতে পারে বিশ্বায়নের এই যুগে এসেও নারীরা কেন এখনো পিছিয়ে  আছে অথবা কেনইবা ক্ষমতায়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছেনা? এক্ষেত্রে অনেক কারণ বিদ্যমান। প্রথম কারণ হিসেব যদি বলা হয় তাহলে বলব পুরুষের উপর নির্ভরশীলতা, এছাড়া নারীরা তাদের ঘরের অভ্যন্তরে ও বাইরে নানা ধরণের কাজ করে থাকলেও তার সঠিক মূল্যায়ন হয়না যা তাদেরকে আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়।

বর্তমানে নারীরা কর্মক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে ঠিক তেমনি তারা সহিংসতার শিকারও হচ্ছে বেশি যা কঠোর আকার ধারণ করেছে এর ভুক্তভোগী হচ্ছে বিশেষ করে কর্মজীবী মহিলারা। তারা পথেঘাটে, অফিসে এমনকি বাসেও আজকাল  নিরাপদ না। এর ফলে তাদের মাঝে কর্মবিমুখতার সৃষ্টি হচ্ছে।
জিন ইন(4Girls GLobal Leadership এর প্রতিষ্ঠাতা)  তাঁর ভাষ্যমতে, “দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি মিনিটে দুইজন মেয়ে অথবা মহিলা ধর্ষণের শিকার হয়। আমেরিকার মতন বিশ্বের সর্বোচ্চ সভ্য দেশেও বিদ্যুত চলে গেলে নারীরা সবচেয়ে অসহায়।  প্রতি এক মিনিটে নয়জন নারী ধর্ষণের শিকার।  প্রতিদিন তিনজন মহিলার অপমৃত্যু হয় তার স্বামী অথবা ছেলে বন্ধুর দ্বারা। এছাড়াও ১০০ মিলিয়নের বেশি মেয়ে শিশু হত্যা ও মেয়ে শিশুর ভ্রূণ  হত্যা করা হয়” এসব কারণগুলো নারীমুক্তির অবক্ষয় ঘটায় এবং নারীর ক্ষমতায়নেও ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে।

উন্নয়ন এবং নারী ক্ষমতায়ন

ছবি :সংগৃহীত

এখন আসি বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রাধিকার সম্পর্কে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটা উন্নয়নশীল দেশ যার অর্থনৈতিক উৎপাদন খুবই নিম্ন। বাংলাদেশের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী হওয়া সত্ত্বেও তারা পুরুষের তুলনায় সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে।  বাংলাদেশের নারীরা রাজনীতি, অর্থনীতি তো দূরের কথা তারা শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও অনেক পিছিয়ে। আমাদের দেশের এমন প্রত্যন্ত অঞ্চল রয়েছে যেখানে মেয়েদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ধাপ পেরিয়ে মাধ্যমিকে উঠতে না উঠতেই তাদেরকে বিয়ের পিঁড়িতে উঠিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে তারা তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি এমনকি নিজেদের যে মৌলিক অধিকার রয়েছে তা সম্পর্কেও অজ্ঞ থাকে। এবং তারাই আরেকটা অজ্ঞ সমাজের সূত্রপাত ঘটায়। একটি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হল সকল জাতিকে শিক্ষিত হতে হবে কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ জনসংখ্যা নারী যারা অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত।  বর্তমানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে কিন্তু আসল বিপত্তি ঘটে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে। তখন মেয়েদের পরিবার, সমাজ বাধা হয়ে দাঁড়ায় ফলে তারা অনেকেই থেমে যায় উচ্চশিক্ষার দোরগোড়ায় এসেও। উচ্চতর শিক্ষা ব্যতীত আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মনির্ভরশীল হওয়া সম্ভপর হয়না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় নারীরা উচ্চশিক্ষিত হওয়ার পরও ভালো চাকুরি পাচ্ছে না অথবা  উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যাওয়ার সুযোগটাও মেয়েদের পাওয়া দুষ্কর।  এছাড়াও মেয়েরা উচ্চশিক্ষা লাভ করার পরও পুরুষেরর উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে নির্ভরশীলতা যেন তাদের অস্থিমজ্জায় মিশে গেছে!

আমরা দেখতে পাই বর্তমান যুগে এসেও বেশিরভাগ পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিও সেই প্রাচীনতমই রয়ে গেছে তারা নারীদের সহযোগী না ভেবে তাদের উপর কর্তৃত্ব ফলায়। প্রাচীন রোমে নারীদেরকে পুরুষেরা নিজস্ব সম্পদ ভাবতো এবং জড়বস্তুর মত আচরণ করত। গ্রিসে প্লেটোর সময়ে নারীদের প্রধান ধর্মই ছিল স্বামী সেবা আর সন্তান লালন করা। ভারতীয় উপমহাদেশের দিকে তাকলে দেখতে পাই এখনো সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। মেয়েরা যদিও আগের চেয়ে উচ্চশিক্ষিত হচ্ছে কিন্তু কর্মসংস্থানে পদচারণা সেই তুলনাই অনেক কম। বাংলাদেশে বিসিএসের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে নারীরা প্রথম সুযোগ পায় ১৯৮৯ সালে, প্রশাসনে ২০০০ সালে এবং পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে প্রথম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে নারীর এএসপি নিয়োগ দেয়া হয়।
কিন্তু দেখা যায় যে, নারীরা বিসিএস পরীক্ষায়ও খুবই নগণ্য পরিমাণ বসে ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

উন্নয়ন এবং নারী ক্ষমতায়ন

ছবি:সংগৃহীত

আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশকে উন্নত করতে হলে অবশ্যই নারীদেরকে শিক্ষিত ও কর্মজীবী করে তুলতে হবে কারণ দেশের অর্ধাংশ পিছিয়ে থাকলে কোনক্ষেত্রেই  উন্নয়ন সম্ভব নয়। পুরুষের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন ঘটলে নারীরা সকল ক্ষেত্রে সমানভাবে ভূমিকা রাখতে পারবে, নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে, অন্যায় প্রতিরোধ করতে পারবে এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। বর্তমানে আশার কথা হলো নারীরা এখন সবক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে।  ২০১৯ এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে শিক্ষার হার ৭৪ শতাংশ এবং নারী শিক্ষার হার ৭১.২ শতাংশ। এক্ষেত্রে বোঝা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীরা আগের তুলনায় অনেক এগিয়েছে। বর্তমানে নারীরা সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম এমনকি খেলাধুলায়ও এগিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে সাংবাদিকতায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজম এন্ড কমিউনিকেশন মিডিয়া গাইডলাইন মাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকবছরের তথ্যানুযায়ী বলা যায়, সাংবাদিকতায় নারীর প্রতিনিধিত্ব হার গড়ে আট থেকে দশ শতাংশ বাড়ছে। ২০০৩ সালে যে হার আট শতাংশ ছিল তা ২০০৪ সালে বেড়ে ১৯ শতাংশ হয়েছে। ধীরগতিতে হলেও নারীরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিটা সেক্টরেই নারীদের অংশগ্রহণ লক্ষণীয় হারে বাড়ছে যা আশার আলো দেখাচ্ছে তবুও নারীরা নিরাপদ নয় তাদের নিজস্ব কর্মসংস্থানে।  তাই নারীমুক্তি আনতে হলে পুরুষদের নারীদের প্রতি সহযোগী ও সহকারী মনোভাব তৈরি করতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, ক্ষমতায়ন কোন মানবিক দর্শন নয়। নারী বা পুরুষ যেই হোন না কেন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন না হলে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়। তাই নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি নারীর শুভবুদ্ধির উদয় হোক, সকল মানসিক দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করুক এবং পুরুষের প্রতিযোগী না হয়ে সহযোগী হয়ে সমানতালে অগ্রসর হয়ে দেশ ও সমাজের উন্নয়ন বয়ে আনুক।

 

উন্নয়ন এবং নারী ক্ষমতায়ন

লিমা আক্তার

স্নাতক ৪র্থ বর্ষ,

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

অন্যান্য

কথাটি “না” বলতে শিখুন।

Published

on

কথাটি "না" বলতে শিখুন।
আপনি, আপনার বন্ধু,বন্ধবী, আপনার সহকর্মী, শিক্ষক,পাশের বাসার লোক সবারি একটি পরিচয় আছে তা হলো তারা ‘মানুষ’। হয়তো, তার একটি নিজেস্ব ধর্ম আছে। যার আলোকেই তার জীবনটা পরিচালিত হচ্ছে। তার কাছে সেটার স্থান অনেক উঁচুতে। সেটা তার বিশ্বাস, দীর্ঘদিনের অভ্যাস, তার ঐতিহ্য। আপনি চাইলেই পরিবর্তন করতে পারবেন না। কিন্তু একটি কথা তার মনে দাগ কেটে যায়। আপনার প্রতি সেই ভালোবাসা, শ্রদ্ধা নিমিষেই চলে যায়। আমি আপনার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের কথা বলছি। ধরুন : আপনি একটা স্ট্যাটাস দিলেন- “এটা কেন ধর্মীয় রীতি হলো। এটার কোন অর্থ নেই। এটা সঠিক নয়। “
হ্যাঁ, আপনার কাছে হয়তো সঠিক নয়। কারন যে মানুষটা ওই রীতিটা পালন করছেন কারন তার কাছে তা সঠিক মনে হয়। তাই সে পালন করছে। কিন্তু আপনি কি করলেন? তার দীর্ঘদিনের একটা বিশ্বাসকে অবজ্ঞা করলেন। আমরা এটা প্রায়ই করি না???
করি,আমি ও যে করি না তা নয়। আমরা করি। হয়তো কেউ হঠাৎ মুখ থেকে বের করে ফেলি। এটা ঠিক কি ঠিক?
সমাজবিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা করলে দেখবেন, আপনি কোন না কোন ভাবে আপনার চারপাশের মানুষ দ্বারা প্রভাবিত। মানে, আপনার চারপাশের মানুষ কোন না কোন ভাবে আপনাকে সাহায্য করে থাকে। পেট,কিডনি, নাড়িভুড়ির গল্পটা পড়েছেন হয়তো। না হয়  সাধারন বিজ্ঞানের বাস্তুসংস্থান এর অধ্যায়টা পড়লে বুঝবেন। জীবনটা ঠিক এমনি। সবকিছুর সবার সাথে সবার সম্পর্ক নিবিড়। আচ্ছা, আমেরিকার সম্প্রতি বর্নবাদের কথায় ধরুন। কোন লাভ আছে সমাজের একটা অংশের মানুষের বিরুদ্ধে যাওয়ার? রাজনীতি একটু ভিন্ন জিনিস। কিছু স্বার্থপর মানুষের প্রতিযোগিতা। যেখানে প্রথমেই শিখানো হয়,সে আর তুমি ভিন্ন। তাই রাজনীতি থেকে সরে সমাজিক কথাই বলি। এ কথাগুলো তো শুনেছেন, মন ভাঙ্গা মন্দির/মসজিদ ভাঙ্গার সমান। যদিও এই কথাটা প্রেমের ক্ষেত্রে ব্যবহারিত  হয় বেশি। কিন্তু জানেন কি আপনার একটা কথায় আপনার সহকর্মী, কাছের বন্ধুর মন ভেঙ্গে যেতে পারে। সত্যিই ধর্মের জায়গাটা সবার কাছে অনেক বড় একটা স্থান। তাই আপনার সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, অাদর একটি মাত্র কথার মাধ্যমে বিলিন হতে দিয়েন না। প্রতিটি মানুষের কাছে তার ধর্মটা শ্রেষ্ঠ। আপনি যদি অন্যের কাছে আপনার ধর্মটাই বড় করে দেখাতে চেষ্টা করেন তাহলে আপনি বোকা, স্বার্থপর, অসামাজিক, ভন্ড। আর এই নিচু মনোভাব পৃথিবীর বুকে একটা কৃএিম সমস্যার জম্ম দিয়েছে যার নাম উগ্রবাদ। আর উগ্রবাদের সাথে জড়িত হিংসা,লোভ, যৃনা, পশুত্ব। যার শেষ পরিনিত যুদ্ধ,  বিনাশ, ধংস।
তাই আমাদের উঠিত, সকলকে সঠিকভাবে তার নিজেস্ব ধর্মটা পালন করতে দেওয়া যা দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব। আর চারপাশের মানুষের কথা চিন্তা করে আমাদের মনোভাব প্রকাশ করা উচিত। তাহলেই ভালো থাকবো আমি, আপনি,আপনার, সহপাঠী, বন্ধু, এবং সবাই।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

অন্যান্য

পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে

Published

on

পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে

নিঃসন্দেহে এ গ্রহের সবচেয়ে নির্যাতিত, নিষ্পেসিত, জনগোষ্ঠী ফিলিস্তিনিরা। দীর্ঘ সাত দশকেরও বেশী সময় ধরে তাদের উপর কেবলই ইসরাইলী অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে নি বরং দানব রাষ্ট্র ইসরাইল তাদেরকে করছে বাস্তুচ্যুত।

কামান, ট্যাংকের মর্টার শেল দিয়ে, কিংবা বোমারু বিমানের আঘাতে ছিনিয়ে নিচ্ছে শত শত নিরপরাধ ফিলিস্তিনীর(নারী, শিশু,যুবক যুবতী, বৃদ্ধ মানুষের) জীবন।
মানবতার ধ্বজ্বধারী, মানবাধিকারের তল্পাবহনকীর পশ্চিমাদেশগুলোয় ইসরাইলের অন্যতম সর্মথক, অস্ত্রের সরবরাহকারী, অর্থের যোগানদাতা। বিশ্বগণমাধ্যমগুলোর ভয়ংকার মিথ্যাচার,  পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরণ আর বিশ্বাস ঘাতক আরবদেশগুলোর পিন পতন নীরবতায় প্রমাণিত পৃথিবী গ্রাস করছে ফিলিস্তিনকে, ধেয়ে আসছে ফিলিস্তিনীদের দিকে। আর তাইতো ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি মোহাম্মদ দারউশ লিখেছেন তার বিখ্যাত কবিতা, পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে

পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে
আমাদের ঠেসে ধরছে একেবারে শেষ কোণায়

এই অত্যাচার সহ্য করতে আমরা আমাদের অঙ্গ প্রতঙ্গ গুলো ছিড়ে ফেলব
দুনিয়া আমাদেরকে গ্রাস করছে।
আমার মনে হয় আমরা যদি গম হতাম
তাহলে মরেও আবার বাচতে পারতাম।

আমার মনে হয় পৃথিবী আমাদের মা ছিলেন
তাই তিনি আমাদের প্রতি দয়া করবেন।

আমার মনে হয় আমরা পাথরের উপরে ছবি ছিলাম, আমাদের স্বপ্নগুলোকে আয়না হিসেবে বয়ে নিতে
আমরা তাদের মুখ দেখেছি,য়ারা আমাদের শেষ জনের হাতে মারা যাবে,
আত্মার শেষ প্রতিরক্ষার মধ্যে।

আমারা তাদের শিশুদের ভোজ নিয়ে কাদলাম
আমরা তাদের মুখ দেখছি যারা আমাদের সন্তানদের ছুড়ে ফেলবে, শেষ কোণার জানালাগুলির বাইরে।
আমাদের তারা গুলাকে ঝুলাবে।
শেষ সীমান্তের পরে আমাদের কোথায় যাওয়া উচিত?
শেষ আকাশের পরে পাখিরা কোথায় যাবে?
গাছগুলির কোথায় ঘুমানো উচিত
বাতাসের শেষ নিঃশ্বাসের পরে?

আমরা রক্তের স্রোত দিয়ে আমাদের নাম লিখব।
আমরা আমাদের মাংসপিন্ড দিয়ে শেষ হয়ে যাওয়া গানটির মাথা কেটে ফেলব।
আমরা এখানে শেষ প্রান্তে মরে যাব।
এখানে এবং এখানেই আমাদের রক্ত জলপাই গাছ রোপন করবে।

মাহমুদ দারউশ(

ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি)

 

মূলকবিতা

The earth is closing on us

Mohmoud Darwish

The Earth is closing on us
pushing us through the last passage
and we tear off our limbs to pass through.
The Earth is squeezing us.
I wish we were its wheat
so we could die and live again.
I wish the Earth was our mother
so she’d be kind to us.
I wish we were pictures on the rocks
for our dreams to carry as mirrors.
We saw the faces of those who will throw
our children out of the window of this last space.
Our star will hang up mirrors.
Where should we go after the last frontiers ?
Where should the birds fly after the last sky ?
Where should the plants sleep after the last breath of air ?
We will write our names with scarlet steam.
We will cut off the hand of the song to be finished by our flesh.
We will die here, here in the last passage.
Here and here our blood will plant its olive tree.

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

অন্যান্য

বাংলাদেশের ভূমিরূপ যেভাবে সৃষ্টি হয়েছে

Published

on

বাংলাদেশের ভূমিরূপ যেভাবে সৃষ্টি হয়েছে

অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ইতিহাস আমরা সবাই জানি। কিন্তু এর সঠিক ভৌগলিক ইতিহাস আমাদের প্রায় অনেকেরই অজানা। চলুন আজকে জেনে নেয়া যাক বাংলাদেশের আদি ইতিহাস।

আমাদের এই ব-দ্বীপের সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে এই ভূমিরূপের সৃষ্টি এবং আদি অবস্থা সম্পর্কেও।আমাদের অনেকের অজানা যে আমাদের এই ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেট বা এই ভারতীয় উপমহাদেশ পূর্বে মূলত এশিয়ার অংশ ছিলো না।ভূমিকম্প নিয়ে পরিচিতি থাকার সুবাদে টেকটোনিক প্লেট সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সবাই জানি।

জুরাসিক পিরিয়ডে,সেই ডায়নোসর যুগে অর্থ্যাৎ  আনুমানিক ১৪০ মিলিয়ন বছর পূর্বে এই ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট ছিল মূলত একটি বিশাল টেকটোনিক প্লেটের অংশ যার নাম ছিল গন্ডোয়ানাল্যান্ড।সেসময় পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ মেন্টল উথলে ওঠার ফলে গন্ডোয়ানাল্যান্ডের টেকটোনিক প্লেটে ফাটল ধরে এবং চার খন্ডে বিভক্ত হয়ে তা আফ্রিকান,এন্টার্কটিক,অস্ট্রেলীয় এবং ইন্ডিয়ান টেকটোনিক প্লেটে পরিণত হয়।আমাদের এই টেকটোনিক প্লেট মূলত ইন্দো-অস্ট্রেলীয় টেকটোনিক প্লেটের অন্তর্ভুক্ত যা মাদাগাস্কার থেকে বিভক্ত হয়েছিলো বলে ধারণা  করা হয়।

অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে আমাদের এই টেকটোনিক প্লেটের পুরুত্ব মাত্র ১০০ কিলোমিটার এর মতো যেখানে গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অন্যান্য অংশ গুলো ১৮০ কিলোমিটার কিংবা তারও বেশি পুরুত্ব সম্পন্ন।ফলে এর গতিবেগও ছিল সবচেয়ে বেশি যা ছিল ১৮ থেকে ২০ সে.মি করে প্রতি বছর,যেখানে অন্যান্য গুলো ছিলো ২-৪ সেন্টিমিটার করে প্রতি বছর।এই প্লেটের উত্তরমুখি আনুমানিক প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার যাত্রার পর আজ থেকে আনুমানিক ৪০-৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বে তা ইউরেশিয়ান,অর্থ্যাৎ ইউরোপ এবং এশিয়া যেই টেকটোনিক প্লেটের উপর অবস্থিত তার সাথে প্রবল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।এই যাত্রাকালে সৃষ্টি হয় ভারত মহাসাগর।আর ধারণা করা হয় সংঘর্ষের পর ইউরেশীয় প্লেটের ভূমিরূপকে ঘিরে থাকা টেথিস সাগর চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

দুটো টেকটোনিক প্লেটের যখন মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় তখন একটি অপরটির উপরে চলে যায়।এবং পাহাড় পর্বত বা আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয় ভেতরকার ভূমিরূপ বা শিলাস্তর উত্থিত হয়ে।

ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টাল টেকটোনিক প্লেটের সাথে প্রাথমিক মৃদু ধাক্কায় একাংশ যুক্ত হয় ইউরেশিয়ান প্লেট।তখন সমুদ্র তলদেশ থেকে উত্থিত হয় নেপাল এবং তিব্বত উপত্যকা। এরপরই এক প্রবল সংঘর্ষের ফলে বিশাল সীমানাজুড়ে ভূমিরূপে ভয়ানক সংকোচন ঘটে প্রবল ভাঁজ সৃষ্টি হয় এবং স্বাভাবিকভাবেই ভূমিরূপ উঁচু হয়ে যায়। যার ফলে সৃষ্টি হয় হিমালয়,পৃথিবীর নবীনতম পর্বতশ্রেণী এবং পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দু,মাউন্ট এভারেস্ট।এই সংঘর্ষ এখনো অব্যহত।এবং এর ফলে হিমালয়ের উচ্চতাও গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৫ মিলিমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে।এবং এই ইন্দোঅস্ট্রেলীয় প্লেট গড়ে ২ থেকে তিন সেন্টিমিটার করে উত্তরমুখী হয়ে সঞ্চরণশীল।

এইতো গেলো হিমালয় সৃষ্টি,এবার আসা যাক বঙ্গীয় ভূমিরূপ বা আমাদের এই ভূখণ্ড কিভাবে হলো এবং বাংলাদেশের পাহাড়গুলো কবেকার সৃষ্টি!

বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চল যেমন রংপুর,দিনাজপুর সহ উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু অঞ্চল গন্ডোয়ানাল্যান্ডে অন্তর্ভুক্ত থাকাকালীন সময় থেকেই ছিলো।কিন্তু বাকি অংশের কোনো অস্তিত্ব তখনো ছিলো না।এই অঞ্চল সৃষ্টি হয় হিমালয় সৃষ্টির পরপর।দুই টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট  হিমালয় অঞ্চল সুস্থিত অবস্থায় আসতে অতিবাহিত হয় অনেক অনেক যুগ।আর এই সুস্থিত হবার কালে এইসব উচ্চভূমির পাদদেশে এসে স্পর্শ করে সমুদ্র। হিমালয়ের সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় মেঘ বাধা পেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বিভিন্ন উচ্চভূমিতে ধসের ফলে সেই সময়কালে তখন অগভীর জলাশয় উৎপন্ন হওয়া শুরু হয়।এবং এর প্রবাহ থেকে বালি,মাটি,চুনাপাথর জমে পর্বতের নিমজ্জিত অংশগুলো ভাসমান হতে থাকে।অইসব উচ্চভূমি থেকে পানির প্রবাহে ভেসে এসে জমতে থাকা ভূ-ত্বকীয় উপকরণ থেকেই ধীরে ধীরে বঙ্গীয় ভূমি-রূপ সৃষ্টি হয়।সিলেট অঞ্চলে জমা চুনাপাথর অই সময়কার ভেসে আসা জলপ্রবাহেরই নিদর্শন

এরপর প্রায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত পৃথিবীর সমুদ্র তলদেশ অনেক নিচে নেমে যায় যার ফলে প্রচুর পলিমাটি জমা হয় এবং পানির গভীর প্রবাহ গুলোও থেকে যায়।পলি জমতে থাকে।যার ফলে একটা বিশাল ভূমিরূপকে পেঁচিয়ে ধরে শত শত নদী নিয়ে সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু হয় ব-দ্বীপের। যার ফলে বাংলাদেশের বেধিরভাগ অঞ্চলই সমতল। এদিকে ঠিক একই সময়ে পূর্বাংশের আরাকান অঞ্চলেরও গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন বিভিন্ন পাহাড়-পর্বতের উত্থান হয়। অইদিকে হিমালয়ের গঠন প্রক্রিয়াও তখন প্রায় সম্পূর্ণ হবার পথে।

আজ থেকে প্রায় ৫০-৫৩ লক্ষ বছর পূর্বে বার্মা রেঞ্জের সাথে ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টাল প্লেটের আবার কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়।এতে ধাবমান ইন্ডিয়ান প্লেটের সাথে বার্মা প্লেটের একপ্রকার ঘূর্ণণ গতি সৃষ্টি করে যার ফলে বঙ্গীয় উপকূলের ত্রিভুজাকৃতির চাপ পড়ে এবং পূর্বাংশে উঁচু নিচু ভাজের সৃষ্টি হয় যার থেকে বান্দরবান,সিলেট,চট্টগ্রাম,মেঘালয়,আসামের, ও আরাকান রাজ্যের পাহাড় শ্রেণীর সৃষ্টি হয়।কিছু জায়গার অধিক সংকোচনের ফলে উঁচু নিচু ভাজের পাহাড় পর্বত সৃষ্টি হয় বেশ কয়েকটি ধাপে, যেমনটা দেখতে পাই বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে।আবার কিছু মৃদু ভাজের পাহাড়শ্রেণী ও তৈরী হয়। সীতাকুণ্ড -মীরসরাই রেঞ্জ,,সিলেট রেঞ্জ,কুমিল্লার লালমাই,ময়মনসিংহের গারো পাহাড় এইসব মৃদু ভাঁজ যুক্ত পাহাড়। তারপর বছরের পর বছরের রূপান্তরিত রূপ আজকের এইসব পাহাড়-পর্বত।

সোর্সঃ
1.
http://eurasiatectonics.weebly.com/indian-plate.html
2.
http://onushilon.org/geography/bangladesh/vuprokriti.html
৩.
https://pubs.usgs.gov/gip/dynamic/himalaya.html

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

সর্বাধিক পঠিত