Connect with us

অন্যান্য

আমাদের করোনা ভাইরাস, ধর্মানুভূতি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা

Published

on

আমাদের করোনা ভাইরাস, ধর্মানুভূতি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা

১. গত ৮ই মার্চ বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক ভাবে করোনা ভাইরাসে আক্রমণের শিকার হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি আক্রান্ত যে রোগীটি প্রথম মারা গিয়েছে তাঁর লাশ গ্রহণে আসে নি পরিবার। প্রশাসনের দুজন কর্তাব্যক্তি দূরে দাড়িয়ে আর আঞ্জুমান মু্ফিদুলের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে তাঁর সৎকার করেছে। ইতালি ফেরত আক্রান্ত আমাদের একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধার সংস্পর্শে এসে লোকটি আক্রান্ত হন। অতঃপর মারা যান এবং আত্নীয়হীন শেষ বিদায় লাভ করেন। ইতালি সহ করোনা ভাইরাসে আক্রমণের শিকার এমন অনেক দেশ থেকেই আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা সমসাময়িক সময়ে এদেশে এসেছেন। এসেই যথারীতি জড়িয়ে ধরা, গড়িয়ে পড়া এমনকি বিয়ের পিড়িতে বসে এলাকা সুদ্ধ মানুষের সঙ্গে তুমুল মাখামাখি আর মাতামাতি করেছে। টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা গেছে যারা অন্তত বিয়ে করতে পারেন নি (কপাল মন্দ!) তারা প্রিয়তম প্রেমিকাকে বাইকের পিছনে বসিয়ে ধুম থ্রির আমির খান হবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।করোনা ভাইরাস মুক্ত থাকতে কোয়ারান্টাইন, আইসোলেশন, সুপার স্প্রিডিং ডিজিস ইত্যাদি বিদেশি শব্দ না তারা বুঝেছে না আমরা তাদের বুঝিয়েছি। যিনি এই ভাইরাসটি বিদেশ থেকে বয়ে আনলেন তিনি যে আমাদের কত বড় সর্বনাশ করতে যাচ্ছেন তা আমরা মাথায় আনি নি। মানুষের শারীরিক সংস্পর্শ থেকে কিংবা সাধারণ নিঃশ্বাসের মাধ্যমেও যে রোগটা ছড়াতে পারে এটা আমরা আমলে নেই নি। তাইতো দলবেঁধে বিদেশ ফেরত বন্ধু, ভাই, মামা, চাচা, পাড়াতো ভাবীর জামাই ইত্যাদি যেই হোক না কেনো সকলের সঙ্গে দহরম মহরমে মেতে উঠছি। এই মরণঘাতী প্রতিরোধে আমরা এখন পর্যন্ত না সরকারকে সহযোগিতা করছি না নিজেরা সচেতন হচ্ছি।

আমাদের করোনা ভাইরাস, ধর্মানুভূতি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা
২.

যেহেতু করোনা ভাইরাস অতি ছোঁয়াচে ও মরণঘাতী তাই সরকার সংক্রমণ রোধে সকল ধরণের গণজমায়েত নিষিদ্ধ করেছে। এই সকল ধরনের মধ্যে আছে রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক (ও ধর্মীয় ! ) সভা – সম্মেলন এবং মানুষজন একত্রিত হয় এমন সব অনুষ্ঠান। আমি ধর্মীয় শব্দটিকে বন্ধনী আবদ্ধ করে বিস্ময় বোধক চিহ্ন যে কারণে দিয়েছি সেটা উল্লেখ করলে লোকে আমায় নাস্তিক উপাধি দেবে। বৈশ্বিক বিপর্যয় করোনার হাত থেকে যদিও বেঁচে যাই তবু উগ্রবাদীদের হাত থেকে না বাঁচার সম্ভাবনা আছে বিধায় আমি “ধর্মীয়” গণ জাময়েত যে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নেই সেটা নিয়ে আলোচনা করলাম না। বরঞ্চ গোঁড়া ও গোয়ার মুসলিমদের জন্য একটি কথা আমি জানাতে চাই যে এই স্বাস্থ্য ঝুঁকির সময়েও আমি মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করছি। এমনকি সর্বশেষ জুম্মায় ইমাম সাহেব কি বয়ান দিয়েছে সেটাও মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। স্পষ্ট মনে আছে তিনি বলেছিলেন ,” দেখুন স্রষ্টার খেলা এবার দেখুন ; যারা যারা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিলো তারা সকলে আজ আল্লাহর প্রতিশোধে করোনায় আক্রান্ত” । কথাটা শুনে পেট থেকে গলা পর্যন্ত একটি প্রশ্ন চলে এলেও বেশ কষ্টে মুখ চেপে সেটা বের হতে দেই নি। বলতে চেয়েছিলাম, “আপনারা যাদের মুসলমানদের নির্যাতনকারী হিসেবে বিবেচনা করছেন কই তারা তো একজনও করোনায় আক্রান্ত নন! যারা এ ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধে মারা যাচ্ছেন তারা সবাই আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষ । যদি আমাদের স্রষ্টা প্রতিশোধ পরায়ন হয়েই করোনাকে পৃথিবীতে পাঠালো তবে ক্ষমতাবানদের ছেড়ে সাধারণ মানুষদের কেন শেষ করছে?” কিন্তু প্রশ্নটা করলাম না এই ভেবে যে এমন বিষবাষ্প মূলক ধর্মীয় মতামত দেশের বেশিরভাগ জায়গাতেই দেওয়া হয়েছে। কত জায়গাতেই বা আমি আমার প্রশ্ন পৌঁছাতে পারবো৷ কত জনকেই বা বোঝানো যাবে স্রষ্টার বিশেষত্ব এই যে সে কখনো প্রতিশোধ পরায়ন হয় না।
আমাদের করোনা ভাইরাস, ধর্মানুভূতি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা

৩.

আখলাক মানে হচ্ছে সৎ চরিত্র, ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস। তাকওয়া দ্বারা বোঝায় কোনো অন্যায় থেকে বিরত থাকা ও স্রষ্টাকে ভয় করা। ইসলামি এসব শব্দকে ৯০ ভাগ মুসলমানের এদেশে যে যার নিজের মতো ব্যবহার করি আমরা। সৎ থাকার ফতোয়া দেই পেঁয়াজ বিক্রেতাকে যেন সে হুট করে দাম না বাড়ায়। কিন্তু ৫টাকার মাস্ক যখন আমি ৫০০ টাকায় বিক্রি করবো তখন আর ধর্মের সঙ্গে ব্যবসা মেলানো যাবে না! রিজিক বা ক্ষুধা মেটাবার মালিক আল্লাহ এটা বিশ্বাস করা সকল মুসলিমের দায়িত্ব। এই বিশ্বাস যার যত বেশি তাঁর তত ঈমানি শক্তি বেশি এটাই ধরা হয়। কিন্তু হাতে কটা টাকা বেশি থাকলে খাদ্য মজুত করে বাজারে সংকট তৈরিতে পিঁছপা হই না কেউ! আর আমাদের তৈরি সংকটকে পুঁজি করে চালের আড়ৎদার মূল্য বাড়িয়ে দিলেই তাকে দোজখের ভয় দেখাই। চালের মূল্য বাড়তি হওয়ায় গরীবের যে সমস্যা হচ্ছে সেখানে আমাদেরও যে হাত আছে তা বেমালুম ভুলে যাই। করোনা একটি বৈশ্বিক মানবিক বিপর্যয়। এই বিপর্যয় আমাদের দেশেও তাঁর ছায়া ফেলা শুরু করেছে। এসব বিপর্যয়ের মধ্যে মুমিন মুসলমানগণ পরীক্ষা দেবে এমনটাই জানানো আছে ইসলামি বই পত্রে। সেই পরীক্ষাটা হবে এমনই যে দুর্যোগের বাজারে কোন ব্যবসায়ী আখলাক ঠিক রেখেছে।সুযোগ থাকা সত্বেও কে কালোবাজারি করে নি সেটার হিসেব নেওয়া হবে। কাল কার ভাগ্যে কি আছে সেটা এক আল্লাহ ছাড়া কেই জানে না। তাই কে অর্থবিত্তের মালিক হয়েও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুদ করে নি সেটা পরীক্ষা নেওয়া হবে৷ তাজকিয়া শব্দের অর্থ পবিত্রতার সঙ্গে বৃদ্ধি করা। আমার মনে হয় করোনার এই পরিস্থিতি আমাদের তাজকিয়া অর্জনের পথেয়৷ মানবিকতার পরিচয় দিয়ে আমরা সকলে আমাদের ধন-সম্পদ ও ঈমান-আমলে তাজকিয়ার ছোঁয়া লাগাতে পারবো এমনটাই কামনা থাকবে।আমাদের করোনা ভাইরাস, ধর্মানুভূতি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা

৪.

করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয় নি। প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন প্রাণীকূল ও মানুষ্য প্রজাতির কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে৷ এই দূরে থাকার মাত্রা হিসেবে কোয়ারান্টাইন বা আইসোলেশন শব্দ গুলোকে পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোভিড ১৯ বা নভেল করোনা যেটাই বলি না কেন পুরো পৃথিবীকে নাড়িয়ে দেওয়া এই ভাইরাসটি হচ্ছে প্রচন্ড ছোঁয়াচে। তাই নিজে বাঁচতে হলে, ভালোবাসার মানুষদেরকে বাঁচাতে হলে আমাদের আলাদা হয়ে যেতে হবে৷ আসুন দেশের কল্যাণের জন্যই অন্তত একতাবদ্ধ না হই। দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালোবেসে আলাদা থাকি। মানুষের সংস্পর্শ থেকে নিজে দূরে থাকা এবং নিজের সংস্পর্শ থেকে অন্যদের দূরে রাখাই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমাদের প্রধান সামাজিক দায়বদ্ধতা।এরপর আছে করোনা নিয়ে ধর্মীয় রাজনীতিকে সামনে আনার চেষ্টা না করা এবং মানবিকতার দিকে দৃষ্টি রেখে বাজারকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা। এগুলোর সাথে সাথে কিছু ব্যক্তিগত অভ্যাসকে সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে৷ যেমন ব্রিটিশদের যেভাবে তাড়িয়েছি সেভাবে এদেশে তাদের প্রচলন করে দিয়ে যাওয়া করমর্দনকে বিতাড়িত করি। পরিষ্কার থাকা যেহেতু ঈমানের অঙ্গ তাই সেই অঙ্গগুলি শক্তিশালী করি৷ বাইরে থেকে এসে এবং দিনের মধ্যে কয়েকবার সাবান দিয়ে কচলিয়ে হাত ধুই৷ দাঁত খোঁচানো, নাকের ময়লা পরিষ্কার করা ইত্যাদি তো আমাদের জন্মগত অধিকার। ভোটের অধিকার নিয়ে যেখানে নানা অভিযোগ মনের মধ্যে চেপে রেখে দিব্যি ভালো আছি সেখানে নিজের চোখ,নাক ও মুখে অযথা হাত দেবার অধিকার নিজেরাই এবার হরণ করলে খুব একটা ক্ষতি হবে না।বরঞ্চ দেখবেন নিজেকেও সরকার দলীয় ক্ষমতাবান মন্ত্রী – এমপির মতো লাগছে। যদিও না লাগে তবুও অন্তত করোনার প্রভাব থেকে বেঁচে যাবেন।জানে বেঁচে গেলে নিশ্চয়ই একদিন না একদিন ভোটটাও দিতে পারবেন। যথাসম্ভব ঘরে থাকুন, পরিবারকে সময় দিন। বাসায় থেকে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেশোদ্ধারের এমন সুযোগ হেলায় হারাবেন না। আর অবশ্যই , কারো জ্বর – ঠান্ডা বা অসুস্থতার কথা শুনে জ্ঞাতি – গুষ্টি সকলে মিলে ঝাপিয়ে পড়বেন না৷ নয়তো আরণ্যক বসুর মতো প্রিয়তম কাউকে বলতে হতে পারে, “পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক; আমরা তখন প্রেমে পড়বো। এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব।মনে থাকবে?”

লেখক : শফিক মুন্সি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট। 

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

অন্যান্য

কথাটি “না” বলতে শিখুন।

Published

on

কথাটি "না" বলতে শিখুন।
আপনি, আপনার বন্ধু,বন্ধবী, আপনার সহকর্মী, শিক্ষক,পাশের বাসার লোক সবারি একটি পরিচয় আছে তা হলো তারা ‘মানুষ’। হয়তো, তার একটি নিজেস্ব ধর্ম আছে। যার আলোকেই তার জীবনটা পরিচালিত হচ্ছে। তার কাছে সেটার স্থান অনেক উঁচুতে। সেটা তার বিশ্বাস, দীর্ঘদিনের অভ্যাস, তার ঐতিহ্য। আপনি চাইলেই পরিবর্তন করতে পারবেন না। কিন্তু একটি কথা তার মনে দাগ কেটে যায়। আপনার প্রতি সেই ভালোবাসা, শ্রদ্ধা নিমিষেই চলে যায়। আমি আপনার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের কথা বলছি। ধরুন : আপনি একটা স্ট্যাটাস দিলেন- “এটা কেন ধর্মীয় রীতি হলো। এটার কোন অর্থ নেই। এটা সঠিক নয়। “
হ্যাঁ, আপনার কাছে হয়তো সঠিক নয়। কারন যে মানুষটা ওই রীতিটা পালন করছেন কারন তার কাছে তা সঠিক মনে হয়। তাই সে পালন করছে। কিন্তু আপনি কি করলেন? তার দীর্ঘদিনের একটা বিশ্বাসকে অবজ্ঞা করলেন। আমরা এটা প্রায়ই করি না???
করি,আমি ও যে করি না তা নয়। আমরা করি। হয়তো কেউ হঠাৎ মুখ থেকে বের করে ফেলি। এটা ঠিক কি ঠিক?
সমাজবিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা করলে দেখবেন, আপনি কোন না কোন ভাবে আপনার চারপাশের মানুষ দ্বারা প্রভাবিত। মানে, আপনার চারপাশের মানুষ কোন না কোন ভাবে আপনাকে সাহায্য করে থাকে। পেট,কিডনি, নাড়িভুড়ির গল্পটা পড়েছেন হয়তো। না হয়  সাধারন বিজ্ঞানের বাস্তুসংস্থান এর অধ্যায়টা পড়লে বুঝবেন। জীবনটা ঠিক এমনি। সবকিছুর সবার সাথে সবার সম্পর্ক নিবিড়। আচ্ছা, আমেরিকার সম্প্রতি বর্নবাদের কথায় ধরুন। কোন লাভ আছে সমাজের একটা অংশের মানুষের বিরুদ্ধে যাওয়ার? রাজনীতি একটু ভিন্ন জিনিস। কিছু স্বার্থপর মানুষের প্রতিযোগিতা। যেখানে প্রথমেই শিখানো হয়,সে আর তুমি ভিন্ন। তাই রাজনীতি থেকে সরে সমাজিক কথাই বলি। এ কথাগুলো তো শুনেছেন, মন ভাঙ্গা মন্দির/মসজিদ ভাঙ্গার সমান। যদিও এই কথাটা প্রেমের ক্ষেত্রে ব্যবহারিত  হয় বেশি। কিন্তু জানেন কি আপনার একটা কথায় আপনার সহকর্মী, কাছের বন্ধুর মন ভেঙ্গে যেতে পারে। সত্যিই ধর্মের জায়গাটা সবার কাছে অনেক বড় একটা স্থান। তাই আপনার সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, অাদর একটি মাত্র কথার মাধ্যমে বিলিন হতে দিয়েন না। প্রতিটি মানুষের কাছে তার ধর্মটা শ্রেষ্ঠ। আপনি যদি অন্যের কাছে আপনার ধর্মটাই বড় করে দেখাতে চেষ্টা করেন তাহলে আপনি বোকা, স্বার্থপর, অসামাজিক, ভন্ড। আর এই নিচু মনোভাব পৃথিবীর বুকে একটা কৃএিম সমস্যার জম্ম দিয়েছে যার নাম উগ্রবাদ। আর উগ্রবাদের সাথে জড়িত হিংসা,লোভ, যৃনা, পশুত্ব। যার শেষ পরিনিত যুদ্ধ,  বিনাশ, ধংস।
তাই আমাদের উঠিত, সকলকে সঠিকভাবে তার নিজেস্ব ধর্মটা পালন করতে দেওয়া যা দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব। আর চারপাশের মানুষের কথা চিন্তা করে আমাদের মনোভাব প্রকাশ করা উচিত। তাহলেই ভালো থাকবো আমি, আপনি,আপনার, সহপাঠী, বন্ধু, এবং সবাই।

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

অন্যান্য

পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে

Published

on

পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে

নিঃসন্দেহে এ গ্রহের সবচেয়ে নির্যাতিত, নিষ্পেসিত, জনগোষ্ঠী ফিলিস্তিনিরা। দীর্ঘ সাত দশকেরও বেশী সময় ধরে তাদের উপর কেবলই ইসরাইলী অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে নি বরং দানব রাষ্ট্র ইসরাইল তাদেরকে করছে বাস্তুচ্যুত।

কামান, ট্যাংকের মর্টার শেল দিয়ে, কিংবা বোমারু বিমানের আঘাতে ছিনিয়ে নিচ্ছে শত শত নিরপরাধ ফিলিস্তিনীর(নারী, শিশু,যুবক যুবতী, বৃদ্ধ মানুষের) জীবন।
মানবতার ধ্বজ্বধারী, মানবাধিকারের তল্পাবহনকীর পশ্চিমাদেশগুলোয় ইসরাইলের অন্যতম সর্মথক, অস্ত্রের সরবরাহকারী, অর্থের যোগানদাতা। বিশ্বগণমাধ্যমগুলোর ভয়ংকার মিথ্যাচার,  পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরণ আর বিশ্বাস ঘাতক আরবদেশগুলোর পিন পতন নীরবতায় প্রমাণিত পৃথিবী গ্রাস করছে ফিলিস্তিনকে, ধেয়ে আসছে ফিলিস্তিনীদের দিকে। আর তাইতো ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি মোহাম্মদ দারউশ লিখেছেন তার বিখ্যাত কবিতা, পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে

পৃথিবী আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে
আমাদের ঠেসে ধরছে একেবারে শেষ কোণায়

এই অত্যাচার সহ্য করতে আমরা আমাদের অঙ্গ প্রতঙ্গ গুলো ছিড়ে ফেলব
দুনিয়া আমাদেরকে গ্রাস করছে।
আমার মনে হয় আমরা যদি গম হতাম
তাহলে মরেও আবার বাচতে পারতাম।

আমার মনে হয় পৃথিবী আমাদের মা ছিলেন
তাই তিনি আমাদের প্রতি দয়া করবেন।

আমার মনে হয় আমরা পাথরের উপরে ছবি ছিলাম, আমাদের স্বপ্নগুলোকে আয়না হিসেবে বয়ে নিতে
আমরা তাদের মুখ দেখেছি,য়ারা আমাদের শেষ জনের হাতে মারা যাবে,
আত্মার শেষ প্রতিরক্ষার মধ্যে।

আমারা তাদের শিশুদের ভোজ নিয়ে কাদলাম
আমরা তাদের মুখ দেখছি যারা আমাদের সন্তানদের ছুড়ে ফেলবে, শেষ কোণার জানালাগুলির বাইরে।
আমাদের তারা গুলাকে ঝুলাবে।
শেষ সীমান্তের পরে আমাদের কোথায় যাওয়া উচিত?
শেষ আকাশের পরে পাখিরা কোথায় যাবে?
গাছগুলির কোথায় ঘুমানো উচিত
বাতাসের শেষ নিঃশ্বাসের পরে?

আমরা রক্তের স্রোত দিয়ে আমাদের নাম লিখব।
আমরা আমাদের মাংসপিন্ড দিয়ে শেষ হয়ে যাওয়া গানটির মাথা কেটে ফেলব।
আমরা এখানে শেষ প্রান্তে মরে যাব।
এখানে এবং এখানেই আমাদের রক্ত জলপাই গাছ রোপন করবে।

মাহমুদ দারউশ(

ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি)

 

মূলকবিতা

The earth is closing on us

Mohmoud Darwish

The Earth is closing on us
pushing us through the last passage
and we tear off our limbs to pass through.
The Earth is squeezing us.
I wish we were its wheat
so we could die and live again.
I wish the Earth was our mother
so she’d be kind to us.
I wish we were pictures on the rocks
for our dreams to carry as mirrors.
We saw the faces of those who will throw
our children out of the window of this last space.
Our star will hang up mirrors.
Where should we go after the last frontiers ?
Where should the birds fly after the last sky ?
Where should the plants sleep after the last breath of air ?
We will write our names with scarlet steam.
We will cut off the hand of the song to be finished by our flesh.
We will die here, here in the last passage.
Here and here our blood will plant its olive tree.

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

অন্যান্য

বাংলাদেশের ভূমিরূপ যেভাবে সৃষ্টি হয়েছে

Published

on

বাংলাদেশের ভূমিরূপ যেভাবে সৃষ্টি হয়েছে

অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ইতিহাস আমরা সবাই জানি। কিন্তু এর সঠিক ভৌগলিক ইতিহাস আমাদের প্রায় অনেকেরই অজানা। চলুন আজকে জেনে নেয়া যাক বাংলাদেশের আদি ইতিহাস।

আমাদের এই ব-দ্বীপের সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে এই ভূমিরূপের সৃষ্টি এবং আদি অবস্থা সম্পর্কেও।আমাদের অনেকের অজানা যে আমাদের এই ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেট বা এই ভারতীয় উপমহাদেশ পূর্বে মূলত এশিয়ার অংশ ছিলো না।ভূমিকম্প নিয়ে পরিচিতি থাকার সুবাদে টেকটোনিক প্লেট সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সবাই জানি।

জুরাসিক পিরিয়ডে,সেই ডায়নোসর যুগে অর্থ্যাৎ  আনুমানিক ১৪০ মিলিয়ন বছর পূর্বে এই ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট ছিল মূলত একটি বিশাল টেকটোনিক প্লেটের অংশ যার নাম ছিল গন্ডোয়ানাল্যান্ড।সেসময় পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ মেন্টল উথলে ওঠার ফলে গন্ডোয়ানাল্যান্ডের টেকটোনিক প্লেটে ফাটল ধরে এবং চার খন্ডে বিভক্ত হয়ে তা আফ্রিকান,এন্টার্কটিক,অস্ট্রেলীয় এবং ইন্ডিয়ান টেকটোনিক প্লেটে পরিণত হয়।আমাদের এই টেকটোনিক প্লেট মূলত ইন্দো-অস্ট্রেলীয় টেকটোনিক প্লেটের অন্তর্ভুক্ত যা মাদাগাস্কার থেকে বিভক্ত হয়েছিলো বলে ধারণা  করা হয়।

অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে আমাদের এই টেকটোনিক প্লেটের পুরুত্ব মাত্র ১০০ কিলোমিটার এর মতো যেখানে গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অন্যান্য অংশ গুলো ১৮০ কিলোমিটার কিংবা তারও বেশি পুরুত্ব সম্পন্ন।ফলে এর গতিবেগও ছিল সবচেয়ে বেশি যা ছিল ১৮ থেকে ২০ সে.মি করে প্রতি বছর,যেখানে অন্যান্য গুলো ছিলো ২-৪ সেন্টিমিটার করে প্রতি বছর।এই প্লেটের উত্তরমুখি আনুমানিক প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার যাত্রার পর আজ থেকে আনুমানিক ৪০-৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বে তা ইউরেশিয়ান,অর্থ্যাৎ ইউরোপ এবং এশিয়া যেই টেকটোনিক প্লেটের উপর অবস্থিত তার সাথে প্রবল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।এই যাত্রাকালে সৃষ্টি হয় ভারত মহাসাগর।আর ধারণা করা হয় সংঘর্ষের পর ইউরেশীয় প্লেটের ভূমিরূপকে ঘিরে থাকা টেথিস সাগর চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

দুটো টেকটোনিক প্লেটের যখন মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় তখন একটি অপরটির উপরে চলে যায়।এবং পাহাড় পর্বত বা আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয় ভেতরকার ভূমিরূপ বা শিলাস্তর উত্থিত হয়ে।

ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টাল টেকটোনিক প্লেটের সাথে প্রাথমিক মৃদু ধাক্কায় একাংশ যুক্ত হয় ইউরেশিয়ান প্লেট।তখন সমুদ্র তলদেশ থেকে উত্থিত হয় নেপাল এবং তিব্বত উপত্যকা। এরপরই এক প্রবল সংঘর্ষের ফলে বিশাল সীমানাজুড়ে ভূমিরূপে ভয়ানক সংকোচন ঘটে প্রবল ভাঁজ সৃষ্টি হয় এবং স্বাভাবিকভাবেই ভূমিরূপ উঁচু হয়ে যায়। যার ফলে সৃষ্টি হয় হিমালয়,পৃথিবীর নবীনতম পর্বতশ্রেণী এবং পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দু,মাউন্ট এভারেস্ট।এই সংঘর্ষ এখনো অব্যহত।এবং এর ফলে হিমালয়ের উচ্চতাও গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৫ মিলিমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে।এবং এই ইন্দোঅস্ট্রেলীয় প্লেট গড়ে ২ থেকে তিন সেন্টিমিটার করে উত্তরমুখী হয়ে সঞ্চরণশীল।

এইতো গেলো হিমালয় সৃষ্টি,এবার আসা যাক বঙ্গীয় ভূমিরূপ বা আমাদের এই ভূখণ্ড কিভাবে হলো এবং বাংলাদেশের পাহাড়গুলো কবেকার সৃষ্টি!

বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চল যেমন রংপুর,দিনাজপুর সহ উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু অঞ্চল গন্ডোয়ানাল্যান্ডে অন্তর্ভুক্ত থাকাকালীন সময় থেকেই ছিলো।কিন্তু বাকি অংশের কোনো অস্তিত্ব তখনো ছিলো না।এই অঞ্চল সৃষ্টি হয় হিমালয় সৃষ্টির পরপর।দুই টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট  হিমালয় অঞ্চল সুস্থিত অবস্থায় আসতে অতিবাহিত হয় অনেক অনেক যুগ।আর এই সুস্থিত হবার কালে এইসব উচ্চভূমির পাদদেশে এসে স্পর্শ করে সমুদ্র। হিমালয়ের সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় মেঘ বাধা পেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বিভিন্ন উচ্চভূমিতে ধসের ফলে সেই সময়কালে তখন অগভীর জলাশয় উৎপন্ন হওয়া শুরু হয়।এবং এর প্রবাহ থেকে বালি,মাটি,চুনাপাথর জমে পর্বতের নিমজ্জিত অংশগুলো ভাসমান হতে থাকে।অইসব উচ্চভূমি থেকে পানির প্রবাহে ভেসে এসে জমতে থাকা ভূ-ত্বকীয় উপকরণ থেকেই ধীরে ধীরে বঙ্গীয় ভূমি-রূপ সৃষ্টি হয়।সিলেট অঞ্চলে জমা চুনাপাথর অই সময়কার ভেসে আসা জলপ্রবাহেরই নিদর্শন

এরপর প্রায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত পৃথিবীর সমুদ্র তলদেশ অনেক নিচে নেমে যায় যার ফলে প্রচুর পলিমাটি জমা হয় এবং পানির গভীর প্রবাহ গুলোও থেকে যায়।পলি জমতে থাকে।যার ফলে একটা বিশাল ভূমিরূপকে পেঁচিয়ে ধরে শত শত নদী নিয়ে সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু হয় ব-দ্বীপের। যার ফলে বাংলাদেশের বেধিরভাগ অঞ্চলই সমতল। এদিকে ঠিক একই সময়ে পূর্বাংশের আরাকান অঞ্চলেরও গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন বিভিন্ন পাহাড়-পর্বতের উত্থান হয়। অইদিকে হিমালয়ের গঠন প্রক্রিয়াও তখন প্রায় সম্পূর্ণ হবার পথে।

আজ থেকে প্রায় ৫০-৫৩ লক্ষ বছর পূর্বে বার্মা রেঞ্জের সাথে ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টাল প্লেটের আবার কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়।এতে ধাবমান ইন্ডিয়ান প্লেটের সাথে বার্মা প্লেটের একপ্রকার ঘূর্ণণ গতি সৃষ্টি করে যার ফলে বঙ্গীয় উপকূলের ত্রিভুজাকৃতির চাপ পড়ে এবং পূর্বাংশে উঁচু নিচু ভাজের সৃষ্টি হয় যার থেকে বান্দরবান,সিলেট,চট্টগ্রাম,মেঘালয়,আসামের, ও আরাকান রাজ্যের পাহাড় শ্রেণীর সৃষ্টি হয়।কিছু জায়গার অধিক সংকোচনের ফলে উঁচু নিচু ভাজের পাহাড় পর্বত সৃষ্টি হয় বেশ কয়েকটি ধাপে, যেমনটা দেখতে পাই বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে।আবার কিছু মৃদু ভাজের পাহাড়শ্রেণী ও তৈরী হয়। সীতাকুণ্ড -মীরসরাই রেঞ্জ,,সিলেট রেঞ্জ,কুমিল্লার লালমাই,ময়মনসিংহের গারো পাহাড় এইসব মৃদু ভাঁজ যুক্ত পাহাড়। তারপর বছরের পর বছরের রূপান্তরিত রূপ আজকের এইসব পাহাড়-পর্বত।

সোর্সঃ
1.
http://eurasiatectonics.weebly.com/indian-plate.html
2.
http://onushilon.org/geography/bangladesh/vuprokriti.html
৩.
https://pubs.usgs.gov/gip/dynamic/himalaya.html

প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।

Continue Reading

সর্বাধিক পঠিত