ইংরেজ জাতি বা ব্রিটিশ জাতি যে শুধুমাত্র তাবৎ দুনিয়া শাসন ও শোষণ করেছে তা কিন্তু নয় বরং উপনিবেশিক আমলে তারা তাদের উপনিবেশগুলোতে যেমন বিভিন্ন শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও অবকাঠামো গড়ে তুলেছিল তেমনি বিভিন্ন খেলাধুলার প্রচলনে তারা রেখেছিলো অসামন্য অবদান। গোল বল ও উইলো ব্যাটের খেলা ক্রিকেটেকে ইংরেজরা তৎকালীন সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশ , অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ অন্যান্য জায়গায় নিয়ে যায় এবং এটি জনপ্রিয় খেলায় পরিণত হয়।
ছবি: ৬০ এর দশকের ক্রিকেট ম্যাচ সোর্স:wikimedia.org
যদিও শুরুর দিকে এটি কেবলই সাদা চামড়ার ইংরেজ এবং উপনিবেশগুলোতে তাদের অনুসারীদের খেলা ছিল কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে ক্রিকেট এ গ্রহের দ্বিতীয় জনপ্রিয় খেলায় পরিণত হয়েছে। ধারণা করা হয় ইংরেজদের পূর্বপুরুষ স্যাক্সন ও নরম্যান জাতিদ্বয় দক্ষিণ পূর্ব ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম ক্রিকেট খেলার প্রচলন করে। সেই অর্থে বলায় যায়, ইংল্যান্ডই হল ক্রিকেটের আদিভূমি তথা জন্মভূমি।
বিশ বছর পর আবারো ক্রিকেটের মহারণ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে তার পিতৃভূমিতে। ৩০ মে থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদার লড়াই, বিশ্বকাপ ক্রিকেট, চলবে আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত। ১৯৭৫, ১৯৭৯,১৯৮৩,১৯৯৯ এর পরে এবারো দ্বাদশ ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজক ইংল্যান্ড এবং সহ আয়োজক ওয়েলস। তারা আতিথ্য দিবে বাকী ক্রিকেট দুনিয়াকে। দ্বাদশ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের আয়োজন দেখেই বোঝা যাচ্ছে পূর্বের সকল আয়োজনকে ছাড়িয়ে যাবে এবারের আসর। ৩০ মে থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত দেড়মাস দুনিয়ার যত ক্রিকেট ভক্ত,সমর্থক ও ক্রিকেট বোদ্ধা রয়েছে তাদের সকলের চোখ আটকে থাকবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের স্টেডিয়মগুলোতে এবং টেলিভিশনের পর্দায়।
বিশবছর পর ক্রিকেট যখন তার মাতৃভূমিতে ফিরে এসছে তখন কোটি কোটি টাইগার ভক্ত ও সমর্থকের আশা ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ডেই রচিত হোক বাংলার মহাকাব্য। ক্যাপ্টেন দ্যা ফ্যান্টাস্টিক মাশরাফির নেতৃত্বে ওরা পনেরজন তাবৎ ক্রিকেট পরাশক্তিকে পরাজিত করে ছিনিয়ে আনবে স্বপ্নের সোনালী রাঙা ট্রফিটি আর বাকী দুনিয়া দেখবে ক্রিকেটের পরাশক্তি বাংলার উত্থান। ইংল্যান্ড যেমন ক্রিকেটের জন্মভূমি তেমনি বাংলার ক্রিকেটের জন্য এক পয়াভূমি। ১৯৯৯ সালে এই ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল টাইগাররা। প্রথম বিশ্বকাপে এসে নান্নু সুজনরা স্কটল্যান্ড ও ১৯৯২ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ান পাকিস্তানকে পরাজিত করে এক রুপকথার জন্ম দিয়েছিল।
ছবি: প্রথম বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় সোর্স:imgci.com
ক্রিকেট জন্মভূমি যদি হয় ইংল্যান্ড তবে সেই ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে অবস্থিত বিখ্যাত স্টেডিয়াম লডর্স হল ক্রিকেটের মক্কা। আর বাংলার ক্রিকেটের প্রাণ তামিম ইকবাল খানের যে এই লর্ডসেই আছে মহাকীর্তি।
ছবি : লর্ডসে সেঞ্চুরি উদযাপনে তামিম, সোর্স : প্রথম আলো
২০১০ সালে উইলো হাতে সাদা পোশাকে স্বয়ং ইংরেজদের বিরুদ্ধে মারকাটারি তামিম ১৬ টি চার ও ২ টি ছক্কা হাকিয়ে সেদিন ৯৪ বলে সেঞ্চুরি করে লর্ডসের অর্নাস বোর্ডে নামে লিখেয়েছিলন। শুধু কি তামিম সেদিন শাহাদাত হোসেনও তো পাঁচ উইকেট নিয়ে লর্ডসের অনার্স বোর্ডের নাম লিখিয়ে ফেলেছিল। শুধু যে ইংল্যান্ডের মাটিতেই বাংলার ক্রিকেটার ও ক্রিকেট দলের সাফল্য রয়েছে তা কিন্তু নয় বরং সহ আয়োজক ওয়েলেসে মাটিও যেন টাইগারদের জন্য পয়াভূমি। ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন স্টেডিয়ামে এখনো পর্যন্ত দুইটা ম্যাচ খেলে অপারজিত বাংলাদেশ। তাইতো সোফিয়া গার্ডেন হল তামিম, সাকিব, মুশফিকদের জন্য হোম অ্যাওয়ায়ে ফর হোম অর্থাৎ আমাদের ক্রিকেটের দ্বিতীয় বাড়ি এই কার্ডিফ। ক্রিকেটের ভাগ্যদেবী ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের মাটিতে যখন বাংলার ক্রিকেটের প্রতি এতই সদয় তখন বাংলার কোটি কোটি ভক্ত ভাবতেই পারে “ হোক না ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের মাটিতে বাংলার মহাকাব্যের রচনা।
২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদ অনেক উঁচু হওয়ার পিছনে রয়েছে শক্তিশালী কারণ। অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে বাংলাদেশ দল এবারে বিশ্বকাপে টক্কর দিবে তাবৎ ক্রিকেট পরাশক্তিকে। আমাদের এই দলের ভিত্তি যে পঞ্চপান্ডব ,মাশরাফি(২০৯ ম্যাচ) ,মুশফিক(২০৫ ম্যাচ), মাহামুদুল্লাহ(১৭৫ ম্যাচ), সাকিব (১৯৮ ম্যাচ), তামিম (১৯৩ ম্যাচ)।
রিকি পন্টিং এর মত কিংবদন্তি ক্রিকেটার যখন তামিম ,সাকিবকে নিয়ে বাজি ধরে তখন আমাদের ক্রিকেট সামর্থ্য নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে না। আভিজ্ঞ এই পাঁচ ক্রিকেটারের সাথে তরুণ মোস্তাফিজ, মিরাজ, মোসাদ্দেক, মিথুন, সৌম্য, সাব্বির সাইফউদ্দীন, রুবেলদের নিয়ে গড়া একাদশ যেকোন দলের জন্য যে কতটা ভয়ংকর হয়ে তার প্রমাণ তো বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে আয়ারল্যন্ড ও ওয়েস্টইন্ডিজ খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে। বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে টাইগাররা সর্বপ্রথম কোন ফাইনাল জিতে আইরিশ রূপকথার অংশ হয়ে গেছে।
এর আগে ২০০৯ ত্রিদেশী সিরিজের ফাইনাল,২০১২ সালের এশিয়াকাপ ফাইনাল, ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ ফাইনাল, ২০১৮ সালে নিদাস ট্রফি ফাইনাল, ২০১৮ সালের টিটয়েন্টি ফরম্যাটের ফাইনালে পরাজিত হয়ে “ফাইনালে চোকার” নামটা যখন গায়ে সেটে যাচ্ছিল তখনই বিশ্বকাপের আগে আয়রল্যান্ডে ত্রিদেশী সিরিজের ফাইনালে ক্রিকেটের বুনো সৌন্দার্য দানবীয় ওয়েস্টইন্ডিজকে পরাজিত করে ভ্রুকুটি দেওয়া “ফাইনালে চোকার” নামটি ইংলিশ চ্যানলে ছুড়ে দিয়েছে। আর ফিনিক্স পাখির মত এই প্রত্যাবর্তন যে কতটা রশদ যোগাবে তা কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুক বাংলার কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্ত বিশ্বাস করে।
এইবারের বিশ্বকাপ রাউন্ড রবিন পদ্ধতির অনুষ্ঠিত হবে অর্থাৎ প্রতিটি দল প্রতিটি দলের মুখোমুখি হবে মোট ৪৫ টি ম্যাচে। সেরা চারদল খেলবে সেমিফাইনাল, সেমিফাইনালে বিজয়ী দুইদল খেলবে ১৪ জুলাই লর্ডসে অনুষ্ঠিত হবে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ তথা ফাইনাল ম্যাচ। বি
ছবি:বিশ্বকাপ ট্রফি, source: cricketworldcup.com
সোনালী রংয়ের ট্রফিটা নিজেদের করে নিতে টাইগারদের একে একে লড়তে হবে স্বাগতিক ইংল্যান্ড, ক্রিকেটের একক পরাশক্তি আগের পাঁচ আসরের চ্যাম্পিয়ান অস্ট্রেলিয়া, ক্রিকেটের কথিত মোড়ল ভারত, ক্রিকেটের চোকার নিউজিল্যান্ড ও সাউথ আফ্রিকা, আনপ্রেডিক্টেবল টিম পাকিস্তান , সিংহলী সিংহ শ্রীলংঙ্কা, ক্রিকেটের বুনো সৌন্দার্য দানবীয় ওয়েস্টইন্ডিজ ও আফগান শক্তির বিরুদ্ধে।
২ জুন বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ সাউথ আফ্রিকার সাথে একটা ভাল শুরু এই সোনালী রংয়ের ট্রফিটার জয়যাত্রাকে সহজ করে দিতে পারে। পরিকল্পনা মাফিক ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলে এগিয়ে যাক টিম বাংলাদেশ আর ১৬ কোটি বাঙালির দোয়া আর ক্রিকেটের প্রতি অপরিসীম ভালবাসা ১৪ই জুলাই লডর্সের ফাইনালে বাংলাদেশকে পৌছে দিবে। তারপরে ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে ওরা ১১ জন এক এক জন লর্ডে পরিণত হবে আর জিতে নিবে সোনালী রংয়ের ট্রফিটা, রচনা করবে বাংলার মহাকাব্য এই প্রত্যাশা সবসময়।
প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।
বাংলাদেশ যুবারা জিতসে, অভিনন্দন জানান। ফুল দিন, সম্মানের সাথে ওদেরকে নিজেদের বাসায় পৌঁছিয়ে দিন।
তবে দয়া করে এখনই ফ্ল্যাট ঘোষনা কইরেন না। আকবর আলীর মা বা পারভেজ ইমনের বাবাকে গণভবনে ডাইকেন না। এদেরকে টেলিভিশন প্রোডাক্ট বানাবেন না। এদের দিয়ে এখুনি মডেলিং করানোরও দরকার নেই।এখনই ওদের কে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক স্টারের সাথে তুলনা কইরেন না।।ওদেরকে নিঝের পরিচয়ে সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে দিন।
বরং ওদেরকে আইসোলেট করুন। আইসোলেট করুন দেশের নোংরা ক্রিকেট সংস্কৃতি থেকে। ২০০৪ আন্ডার নাইন্টিনে শিখর ধাওয়ান ছিল ইন্ডিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান। ধাওয়ান জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে প্রায় অর্ধ যুগ পরে। ধাওয়ান এখনো উন্নতি করছে নিজের খেলায়, এখনো অজিদের সামনে পেলেই জ্বলে উঠছে বারবার।
সেই বিশ্বকাপের আরেকজন সুরেশ রায়না। প্রায় এক দশক দাপটের সাথে সাদা বলে খেলেছে রায়না৷ দলের বাইরে গেলেও রায়না এখনো আইপিএলের অন্যতম হট কেক।
একই বিশ্বকাপে আমাদের স্টার ছিল নাফিস ইকবাল। নাফিস ইকবালের লাস্ট যে খবর শুনেছিলাম, আইপিএল এ ফিজের দু ভাষি হিসেবে কাজ করতে নাকি ইন্ডিয়া গিয়েছিলেন দুই বছর আগে। আহারে আইপিএল!.
আরেকজন আফতাব আহমেদ। অনেক আগে কোন ছিনতাইকারী হারিকেন দিয়ে বাড়ি মেরে তার মুখ ভচকায়া দিয়েছে বলে পত্রিকায় খবর এসেছিল। এখন নাকি টুকটাক কোচিং করাচ্ছেন।
এহসানুল হক সেজান,আল শাহরিয়ার রোকনের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে?অনেক সম্ভাবনা নিয়ে এসেও মনে রাখার মতো কিছুই করতে পারেন নি তারা।।
নাঈম ইসলাম টিকে আছেন এখনো না থাকার মতো করেই। এবার তো বিপিএলও তাকে দেখা গেল না। ক্যারিয়ার সম্ভবত শেষ।
অনূর্ধ্ব ১৯ স্টার এনামুল, কোনো কাজে লাগল না। স্টার লিটন দাস দু তিনটা চার মেরেই কাজ শেষ মনে করে(যদিও ভালো করার যথেষ্ট সম্ভাবনা তার আছে)৷ শান্ত থেকে এখনো কিছু পাওয়া গেল না। মিস ডিরেকশনে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়া মিরাজ দলের বাইরে।মুস্তাফিজ আর রাবাদার অভিষেক কয়েক মাস আগে পরে।।শুরুতে ফিজকে অনেক বেশি সম্ভাবনাময় মনে হলেও এখন সে রাবাদার চাইতে অনেক পিছিয়ে।।
তবে যুব দল থেকে নিজেদের ক্যারিয়ারকে ভালো অবস্থায় কেউ নিতে পারেন নি এমন নয়।। এদের সংখ্যাটা কম।।মুশফিক,সাকিব,তামিম জ্বলন্ত উদাহরন।।
তাই,প্লিজ এই যুব দলটাকে হারাতে দিয়েন না।
এই দল যে বহু সাধনার ফসল সেটা বিদেশী ধারাভাষ্যকাররাও বারবার বলছিল। দু বছরে অনেক শ্রম দিয়ে এদেরকে তৈরি করা হয়েছে। প্লিজ এদের কেয়ার নিন।
ফ্লাট দিয়ে এখুনি অতি বিত্তবান বানাবেন না, এই বয়সে এতটা ভার নিতে পারবে না। গণভবন এদের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেবে। টিভি স্টার হয়ে গেলে ফেইম সিকিং প্রবনতা চলে আসতে পারে।
ওদেরকে পকেটে ১০ টাকা না ভরে পেছনে ১৫ টাকা ইনভেস্ট করুন। রেসিডেন্সি উন্নত করুন, খাবারের মান বাড়ান। স্থায়ীভাবে মেন্টাল স্ট্রেন্থ ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ দিন, রাখুন ট্যাক্টিকাল এনালাইজার।
আজকে ৫০ লাখ টাকার ফ্লাট না দিয়ে যদি এই ইনভেস্টগুলো করতে পারেন, ৪ বছর পর বিদেশী লীগ খেলে তারা ৪ কোটি টাকার এপার্টমেন্ট নিজেরাই কিনতে পারবে।
ভারত কীভাবে একজন যুবা কোহলীকে গ্রেট কোহলী করেছে সেই রোড ম্যাপটাই ফলো করুন প্লিজ।
দেশের এই যুবাদের হাত ধরে পথ দেখুক দেশের ক্রিকেট।
ওদের জন্য প্রার্থনা ও ভালোবাস !
লেখা: জয়নাল আবেদীন
প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।
৬ ফুট ৫ ইঞ্চি দেহের অধিকারী একজন ক্রিকেটারকে সতীর্থরা মজা করে ডাকতো এই নামটা! আরও সহজ করে দিলে একজন বোলারকে ডাকা হতো এই নামটা ধরে! তবে, যেমন তেমন বোলার নয় ; ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা একজন বোলার। যার বোলিং ছিলো বৈচিত্রে ভরপুর! টানা বল করে যেতে পারতেন একই ভাবে, ক্লান্তিহীন দেহে! নিখুঁত লাইন আর লেন্থে! তার এই নিখুঁত লাইন লেন্থ ছিলো, তখনকার ব্যাটসম্যানদের এক আতংকের নাম! সাথে তো দুই দিকেই বল সুইং করানোর ক্ষমতা তো ছিলোই। তবে ছিলো না, অতিরিক্ত গতি ; তবে তার মধ্যম গতির মাঝেও ব্যাটসম্যানদের কম্পন সৃষ্টি হয়ে যেতো!
ছবি : সংগৃহীত
এতোক্ষনে নিশ্চয় বুঝে গেছেন, কার কথা বলছি? হ্যাঁ! বলছিলাম, গ্লেন ডোনাল্ড ম্যাকগ্রার কথাই। সাবেক অজি পেসার ম্যাকগ্রাকে ডাকা হতো পিজিয়ন নামে।। এর কারন ছিলো তার চিকন পা।। এই ডাক নাম দিয়েছিলো তার নিউ সাউথ ওয়েলস সতীর্থ ব্রাড ম্যাকনামারা।।
ছবি : সংগৃহীত
যার ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে কিছু বলার নেই – এক কথায় অসাধারণ! ১২ নভেম্বর ১৯৯৩ সালে অভিষেক হওয়া এই ক্রিকেটার ক্রিকেটের অন্যন্য এক সৌন্দর্যের প্রতীক! ক্যারিয়ারটাই দেখুন –
★ ১২৪ টেস্ট ম্যাচে উইকেট সংখ্যা ৫৬৩!
যা আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে পেসারদের মাঝে ২য় সর্বোচ্চ উইকেট!
★ ২৫০ ওয়ানডে ম্যাচে উইকেট সংখ্যা ৩৮১! যা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট।
ইকোনমি মাত্র ৩.৮৮! যা তাকে আলাদা করে চেনায়।
ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩০০ উইকেট নেয়া বোলারদের মাঝে তার ইকোনমি ২য় সর্বনিম্ন!
★ ক্যারিয়ারে খেলেছেন মাত্র ২ টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ, তাতে উইকেট সংখ্যা ৫।
★ ক্যারিয়ারে খেলা ৪ বিশ্বকাপ আসরের (১৯৯৬,১৯৯৯,২০০৩,২০০৭) প্রতিবারই খেলেছেন ফাইনালে। আর চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ৩ বার!
★ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৪ বার অংশ নিয়ে ম্যাকগ্রার শিকার ৭১ উইকেট! যা বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী করে রেখেছে তাকে।
ছবি : সংগৃহীত
ক্রিকেটার হিসেবে কিংবদন্তির কাতারে থাকা ম্যাকগ্রা মানুষ হিসেবেও যে কিংবদন্তি সমতুল্য, তা বলার আক্ষেপ রাখেনা! ১৯৯৫ সালে জেন স্টিলের সাথে পরিচয়, অতঃপর মঞ্চায়ন হয় এক রুপকথা! ১৯৯৭ সালে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন প্রেমিকা জেন! তখন জেন, ম্যাকগ্রাকে তার ক্যারিয়ার থেকে সরে যেতে বললেও পিছু হটেননি ম্যাকগ্রা! ১৯৯৯ সালে তারা বিবাহ বান্ধনে আবদ্ধ হন। আর তাতেই জয় হয় ভালোবাসার! তবে ২০০৮ সালে ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হয়ে স্ত্রী পরলোক গমন করলে ২০০৯ সালে বিশ্বকে ক্যান্সার নিয়ে সচেতন করতে গড়ে তুলেন – ম্যাকগ্রা ফাউন্ডেশন! সেই ২০০৯ সাল থেকে এরপর প্রতি বছর হয়ে আসছে ‘গোলাপি টেস্ট’! স্তন ক্যান্সারের সচেতনতা বাড়াতে ও দাতব্য সংগ্রহে কাজ করে। এই টেস্টের একদিন পালন করা হয় ‘জেন ম্যাকগ্রা’ নামে।
আর এভাবেই ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন মানবিকতার দূত। গ্লেন ম্যাকগ্রা নামের অদ্ভুত এক পেসার ক্রিকেট হয়ে জীবনে মিশে গিয়ে হয়ে ওঠেন অসাধারণ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মাত্র ১টি অর্ধশত পূর্নকরা ম্যাকগ্রা এবার হাকালেন তার ২য় অর্ধশত! তবে তা ২২ গজে নয় ; জীবন মঞ্চে! আজ এই অসাধারণ মানুষটারই ৫০ তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন দ্য পিজিয়ন গ্লেন ম্যাকগ্রা!
লেখা : এস, এম তৌহিদ এলাহী
প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।
পৃথিবীর চতুর্থ ধনী ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশ ক্রিকেটবোর্ড। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা , ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেটে বোর্ডের পর ধনী ক্রিকেট বোর্ড হল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড,মোট সম্পদের পরিমাণ ৫২ মিলিয়ন ডলার। ইউনিলিভার বাংলাদেশ, কাতার ইয়ারওয়েজ, প্রাণ আর এফ এল গ্রুপ, প্যান প্যাসিফিক হোটেল এবং রিসোর্টস প্রধান স্পন্সর হিসেবে বিসিবিকে ব্যাপক অর্থের যোগান দিয়ে থাকে।
সাকিব, তামিম, মুশফিক , মাশরাফি, মাহামুদুল্লাহ, মুস্তাফিজ ওরা ১১ জন সহ সমগ্র বাংলার ক্রিকেটাররা ১১ দফা দাবী নিয়ে ধর্মঘটের ডাকে দিয়েছে সোমাবার থেকে। বিশ্বগণমাধ্যমের শিরোনাম এখন ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের বিষয়টি। ভারত, পাকিস্তান,অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড সহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসছে ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের বিষয়টি। টাইগাররা ব্যাটে বলে নৈপুণ্য দেখিয়ে বহুবার শিরোনাম হয়েছে বিশ্বগণমাধ্যমে কিন্তু দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম এবারের ধর্মঘট যেন আলাদাভাবে নজর কেড়েছে বিশ্ব গণমাধ্যমের ।
আলজাজিরার প্রকাশিত প্রতিবেদন, ছবি :সংগৃৃহীত
প্রভাবশালী গণমাধ্যম আল জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। যত সময় না তাদের ১১ দফা দাবী কার্যকর হচ্ছে তত সময় ক্রিকেট সংক্রান্ত কোন বিষয়ে অংশগ্রহন করবে না তারা।
হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদন, ছবি :সংগৃহীত
ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এর শিরোনাম ছিল ‘ ভারত সফরের আগে ক্রিকেটারদের এই ধর্মঘটে বিসিবি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে’। আরো উল্লেখ করেছে টি-২০ ক্যাপ্টেন সাকিব সহ , মুশফিক, মাহামুদুল্লাহ প্রেস কনফারেন্স করে বয়কটের ডাক দেয়। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটাররা সহ ৫০ এর বেশী ক্রিকেটাররা অংশ নিচ্ছে ধর্মঘটে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া এর শিরোনাম , ছবি : সংগৃহীত
ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়া প্রথম দিন ভারত ট্যুরের সম্ভব্যতা নিয়ে প্রশ্নতুলে শিরোনাম দিয়ে সংবাদ ছাপে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার দ্বিতীয় দিনের প্রতিবেদন, ছবি : সংগৃহীত
টাইমস অফ ইন্ডিয়া দ্বিতীয় দিনের প্রতিবেদনে বলছে , বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের ধর্মঘট ভারত সফরকে প্রভাবিত করবে না।
উইজডেনের শিরোনাম, ছবি :সংগৃহীত
ক্রিকেটের বিখ্যাত পোর্টাল উইজডেন ধর্মঘটের কারণে ভারত সফর নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে শিরোনাম দিয়ে ধর্মঘটের সংবাদ তুলে ধরে।
স্কাইস্পোর্টসের প্রতিবেদন, ছবি : সংগৃহীত
স্কাইস্পোর্টসের শিরোনাম ও ছিল ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের কারণে ভারত ট্যুর শঙ্কায় পড়েছে।
ক্রিকবাজের প্রতিবেদন ,ছবি : সংগৃহীত
ক্রিকবাজের শিরোনাম, নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ -ভারত সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে এ বিষয়ে সৌরভ গাঙ্গুলি আত্মবিশ্বাসী।
এছাড়া রয়টার্স, এফপি পাকিস্তানের দ্য ডন সহ বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের বিষয় প্রকাশিত হয়েছে যা বিশ্বব্যাপ্যী বিসিবি এর ইমেজ সংকটে ফেলে দিবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের। আমরা লেখকের চিন্তা ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল তাই সব সময় নাও থাকতে পারে।